অভিশপ্ত ইহুদি জাতির লাঞ্ছনার ইতিহাস


পৃথিবীতে ইহুদিদের মোট সংখ্যা দেড় কোটির মতো।পৃথিবীতে একমাত্র ইহুদি রাষ্ট্র ইসরায়েল। ইসরায়েলে ইহুদির সংখ্যা ৫৪ লাখ, অবশিষ্ট প্রায় এক কোটি ইহুদি সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে আছে। এর মধ্যে আমেরিকায় ৭০ লাখ, কানাডায় চার লাখ আর ব্রিটেনে তিন লাখ ইহুদি থাকে। ইহুদিরা মার্কিন জনসংখ্যার মাত্র ২ শতাংশ, আর পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার মাত্র ০.২ শতাংশ। অর্থাৎ পৃথিবীর প্রতি ৫০০ জনে একজন ইহুদি! পৃথিবীতে ইহুদি এবং মুসলিমদের অনুপাত ১ঃ১০০।
বিশ্বের বুকে জাতি হিসেবে ইহুদিদের চক্রান্ত, ষড়যন্ত্র ,গাদ্দারি ও অপকর্মের ইতিহাস সর্বজনবিদিত। কোরআনে কারিমে তাদের অভিশপ্ত ও লাঞ্ছিত জাতি হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।সুদখোর ও ধনলিপ্সু জাতি হিসেবেও তাদের একটা পরিচয় রয়েছে। এ জাতি যুগ যুগ ধরে খোদাদ্রোহিতা, কুফরি ও তাদের খারাপ কর্মকাণ্ডের জন্য মানুষের কাছে অত্যন্ত ঘৃণাভরে পরিচিতি পেয়ে এসেছে। জন্মগতভাবেই এই জাতি খুবই চতুর ও ধুরন্ধর হওয়ায় বিভিন্ন ছলচাতুরী দিয়ে মানুষকে বশীভূত রাখার কৌশল অবলম্বন করে। এর মাধ্যমে তারা অন্যের ওপর দিয়ে যুগে যুগে তাদের নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রেখেছে।
এত সব অপকর্ম ও কুকীর্তি ইহুদিদের পরিণত করেছে আল্লাহর অভিশপ্ত জাতিতে। আল্লাহ তাআলা এ জন্য যুগে যুগে তাদের ওপর নাজিল করেছেন তাঁর আজাব। আর তারা বারবার আল্লাহর গজবের শিকার হয়ে লাঞ্ছিত হতে থাকে।কোরআনের ভাষায় ‘আর তাদের ওপর আরোপ করা হলো লাঞ্ছনা ও পরমুখাপেক্ষিতা।’ (সুরা বাকারা আয়াত - ৬১)এ আয়াতের তাফসিরে তাফসিরকারগণ বলেন, ‘তারা যত ধন-সম্পদের অধিকারীই হোক না কেন, বিশ্ব সম্প্রদায়ের মধ্যে তুচ্ছ ও নগণ্য বলে বিবেচিত হবে। যার সংস্পর্শ্বে আসবে সেই তাদের অপমানিত করবে এবং দাসত্বের শৃঙ্খলে জড়িয়ে রাখবে।’ (তাফসিরে ইবনে কাসির, ১/২৮২)
এভাবে ক্রমাগত গজব ও লাঞ্ছনার শিকার হয়ে এরা বিভিন্ন দেশে আশ্রয় নিতে থাকে এবং পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ে। কিন্তু পৃথিবীর কোথাও এদের ঠাঁই হয়নি। পরিণামে তাদের শুধু শোচনীয় অবস্থার সম্মুখীনই হতে হয়েছে। পৃথিবীর কোথাও তারা কোনো দিনও স্থায়ীভাবে বাস করতে পারেনি। মধ্যপ্রাচ্য তো বটেই, শুধু ইউরোপেই তারা ৪৭ বার বহিষ্কৃত হয়েছে! সময়ের পরিক্রমায় তারা সারা পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়ে।
ইহুদি জাতির সঙ্কটকাল শুরু হয় ৫৮৭ খ্রিষ্টপূর্বে। এই বছর থেকেই শুরু হয় শক্তিশালী সাম্রাজ্যগুলোর শাসনামল। ইহুদিদের আদি বাসস্থান ভূমধ্যসাগরীয় এলাকাগুলো পর্যায়ক্রমে শাসন করে ব্যাবিলনীয়, পারসিক, আলেক্সান্ডার, টলেমি বংশ, মেক্কাবি, রোমান, বিজন্টিক সাম্রাজ্য, আরব মুসলমান, তুর্কি মুসলমান এবং ব্রিটিশরা।
দেশ থেকে বিতাড়িত হয়ে ইহুদিরা বিভিন্ন দেশে আশ্রয় নেয়। তবে কোনো দেশেই তারা স্থানীয় জনসাধারণের সাথে মিশে যায়নি। নিজেদের স্বাতন্ত্র্য বজায় রাখার প্রবণতা এবং সাধারণ খ্রিষ্টান কর্তৃক ইহুদিদের ‘যিশুর হত্যাকারী’ রূপে চিহ্নিত করার ফলেই ইহুদিরা খ্রিষ্টানদের সাথে একত্রে সমাজ গড়ে তুলতে পারেনি। ভালো ব্যবসায়ী বলে এবং সুদব্যবসায়ের মাধ্যমে প্রায় প্রতিটি দেশেই ইহুদিরা বাণিজ্যের ক্ষেত্রে নিজেদের প্রাধান্য বিস্তার করতে সমর্থ হয়। এটিও খ্রিষ্টানদের রোষের একটি কারণ ছিল।
ইহুদিরা এমন এক গাদ্দার জাতি, যাদের বিশ্বাস ঘাতকতা, চুক্তি ভঙ্গ এবং রসূলুল্লাহ (সা:) কে হত্যার ব্যর্থ ষড়যন্ত্র ইত্যাদি দুষ্কর্মের বিবরণ সমস্ত সীরাত গ্রন্থে বিশদ ভাবে বর্ণিত হয়েছে। খোদ কোরআনুল কারীমের সূরা হাশরে বনি নজির এবং সূরা আহজাবে বনি কোরাযার বিস্তারিত বর্ণনা রয়েছে। রসূলুল্লাহ (সা:) ও মুসলমানদের বিরুদ্ধে ঘৃণ্য ষড়যন্ত্র চক্রান্তের পরিণতিতে রসূলুল্লাহ (সা:)-এর যুগেই তারা মদিনা হতে সম্পূর্ণভাবে বিতাড়িত হয়ে যায়। যদিও ছিটেফোঁটা কিছু ইহুদি বিক্ষিপ্তভাবে বিভিন্ন স্থানে বসবাস করছিল, তাদের ব্যাপারে হাদিসে স্পষ্ট ঘোষণা রয়েছে; ‘আখরিজুল ইহুদা মিন জাযিরাতিল আরব’। অর্থাৎ ‘জাযিরাতুল আরব হতে ইহুদিদের বিতাড়িত করো’।
১৯২০ সালে ইংল্যান্ড থেকে এদের বিতাড়িত করা হয়। ফ্রান্স একবার ১৩০৬ সালে, দ্বিতীয়বার ১৩৯৪ সালে, ১৩৭০ সালে বেলজিয়াম, ১৩৮০ সালে চেকোশ্লোভাকিয়া, ১৪৪৪ সালে হল্যান্ড, ১৫৪০ সালে ইতালি, ১৫৫১ সালে জার্মানি এবং ১৫১০ সালে রাশিয়া ইহুদিদের তাদের নিজ নিজ দেশ থেকে বিতাড়িত করে। তার মধ্যে নির্মমভাবে বিতাড়িত হয়েছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়। জার্মানির হিটলার এদের পাইকারিভাবে হত্যা করে বাকিগুলোকে বিদায় করে দেন। হিটলারের নেতৃত্বে প্রায় ষাট লক্ষ ইহুদীকে হত্যা করে নাৎসী বাহিনী। ১৯৩৯ সালের দিকে সেখানে ছিল ৭০ লাখ ইহুদির বাস। সেখানে হত্যা করা হয় ৬০ লাখ ইহুদিকে। অধিকৃত পেল্যান্ডে হত্যা করা হয়েছিল ৩০ লাখ ও সোভিয়েত ইউনিয়নে ১০ লাখ ইহুদিকে। নেদারল্যান্ড, ফ্রান্স, বেলজিয়াাম, যুগোস্লাভিয়া ও গ্রিসে হত্যা করা হয় আরো হাজার হাজার ইহুদি। হিটলার বলেছিল, 'আমি চাইলে সব ইহুদীদের হত্যা করতে পারতাম। কিন্তু কিছু ইহুদী বাচিয়ে রেখেছি,,এই জন্যে যে, যাতে পৃথিবীর মানুষ বুঝতে পারে, আমি কেন ইহুদী হত্যায় মেতেছিলাম।'যেখানেই গেছে, সেখানেই ইহদিরা ঘৃণার পাত্র হয়েছে, কোনো কোনো সময় হয়েছে বিতাড়িত। হিটলার ইহুদিদের কেন এত বেশি ঘৃণা করতেন তা এখনো জানা যায়নি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে এখন পর্যন্ত গবেষকরা অনেক গবেষণা করেছেন কিন্তু কোনো সঠিক তথ্য উপস্থাপন করতে পারেননি। তবে এটা নিশ্চিত যে হিটলার ইহুদিদের বিশ্বাসঘাতক এবং বেইমান জাতি হিসাবে জানতেন।
ফিলিস্তিনে ইহুদি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলনের অংশ হিসেবে ১৬১৬ সালে world zionist organaisation ব্রিটেনের পররাষ্ট্র দপ্তরের সঙ্গে আলোচনায় লিপ্ত হয় এবং এর ফলে ১৯১৭ সালে ব্রিটিশ সরকার কুখ্যাত ‘ব্যালফর’ ঘোষণায় ফিলিস্তিনে ইহুদিদের জাতীয় আবাসভূমি স্থাপনের দাবি সমর্থন করে। এই কুখ্যাত বেলফোর’ ঘোষণায় ফিলিস্তিনে ১৯১৮ সালে ইহুদির সংখ্যা যেখানে ছিল মাত্র কয়েক হাজার, সেখানে ১৯৪১ সালে তা গিয়ে দাঁড়ায় দুই লাখ ৫০ হাজারে।
কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ অ্যামেরিকায় ওই ইহুদিদের বসবাসের ব্যবস্থা সম্ভব থাকলেও ব্রিটেনের কারণে ছয় লাখ ইহুদিকে আরবের প্রতিবাদ সত্ত্বেও ফিলিস্তিনে এনে বসানো হয়। এভাবে ফিলিস্তিন বিভক্ত হয়ে গেল। শুরু হলো অত্যাচারের স্টিমরোলার। ১০০ দিনের মধ্যে ১৭ হাজার মুসলিম নিহত। ২০ এপ্রিল ১৯৪৮ প্রস্তাবটি সাধারণ পরিষদে স্থগিত করা হয় সাময়িকভাবে। ১৪ মে ইহুদি নেতা বেন গুরিয়ান স্বাধীন ইহুদি রাষ্ট্র ঘোষণা দেয় কোনো সিদ্ধান্ত ছাড়াই। এর এক মিনিট পর আমেরিকা দেয় তাদের স্বীকৃতি।
ইসরায়েল রাষ্ট্রও তাদের লাঞ্ছনার একটি অংশ। যদিও বাহ্যিকভাবে তাদেরকে শক্তিধর ও সম্পদশালী ও সম্মানী মনে হয়, বাস্তব কথা হলো, এ রাষ্ট্র ইসরায়েলের নয়; বরং আমেরিকা ও ব্রিটেনের একটি ঘাঁটি ছাড়া আর কিছুই নয়।অনেকে ইসরায়েলকে আমেরিকার ৫১ তম স্টেট বলে থাকেন। এ রাষ্ট্র নিজস্ব শক্তির ওপর নির্ভর করে এক মাসও টিকতে পারবে কি না সন্দেহ। পাশ্চাত্যের খ্রিস্টান শক্তি ইসলামী বিশ্বকে দুর্বল করার উদ্দেশ্যে তাদের মাঝখানে ইসরায়েল নাম দিয়ে একটি সামরিক ঘাঁটি প্রতিষ্ঠা করেছে। এ রাষ্ট্র আমেরিকা ও ইউরোপীয়দের দৃষ্টিতে একটি অগণিত আজ্ঞাবহ ষড়যন্ত্রকেন্দ্র ছাড়া অন্য কোনো গুরুত্ব বহন করে না। পাশ্চাত্য শক্তিবলয় বিশেষ করে আমেরিকার সঙ্গে নানা ধরনের প্রকাশ্য ও গোপন চুক্তি সম্পাদনের মাধ্যমে তাদের মদদপুষ্ট ও আশ্রিত হয়ে নিছক ক্রীড়নকরূপে নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রেখেছে। তা-ও অত্যন্ত লাঞ্ছনা ও অবমাননার ভেতর দিয়ে।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

যে গাছ ইহুদিদের আশ্রয় দেবে অর্থাৎ ইহুদিদের বন্ধু গাছ

রক্তপাতহীন মক্কা বিজয়ের দিন আজ

খন্দক যুদ্ধ কারণ ও ফলাফল