মুসলিমরা কেন নির্যাতিত ও ইতিহাসের একটি গল্প


গল্পটি বলেন তুর্কি প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান।
"মঙ্গোল সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা চেঙ্গিস খানের নাতি হালাকু খান ইরাকের বাগদাদ শহর দখল করার পর, শহরের শুরু থেকে শেষ আগুন লাগিয়ে দেয়।আমীর আলীর মতে, ‘বাগদাদ আক্রমণে যে ধ্বংসলীলা অনুষ্ঠিত হয় তা থেকে অন্যান্য শহরে কি ঘটেছিল তার আভাস পাওয়া যায়। তিনদিন ধরে শহরের পথে রক্তের স্রোত প্রবাহিত হয়েছিল এবং তাইগ্রিস নদীর পানি মাইলের পর মাইল রক্তে লাল হয়ে উঠেছিল।"
ঐতিহাসিকদের কারো কারো মতে প্রায় ৪ লক্ষ মানুষকে হালাকু খান হত্যা করে।ইবনে খলদুনের মতে, মোঙ্গলদের আক্রমণের ফলে ১,৬০,০০০ লোক প্রাণ হারায়, মতান্তরে ২০,০০,০০০ অধিবাসীদের ১৬,০০,০০০ লোক মারা যায়।
দজলা ফোরাত নদী রক্তিম বর্ণ ধারণ করে।  শত শত বছরের পরিশ্রমে নির্মিত বাগদাদের মসজিদ,প্রাসাদ, লাইব্রেরী এবং বাসভবনগুলো মাটির সাথে মিশিয়ে দেয় হালাকু খানের সেনাবাহিনী। বাগদাদ ধ্বংসের নিষ্ঠুরতা সম্পর্কে ব্রাউন বলেন, ‘সম্ভবত কখনোই এত বড় ও সমৃদ্ধশালী একটি সভ্যতা এত দ্রুত অগ্নিশিখায় বিধ্বস্ত ও রক্তধারায় নিশ্চিহ্ন হয়নি।
এরপর এই জালিম হালাকু খান বাগদাদের সবচেয়ে বড় আলেমের সাথে দেখা করতে চাইলো। কিন্তু, কোনো আলেম-ই হালুকু খানের সামনে যেতে রাজি হয়নি। অবশেষে কাদিখান নামের এক তরুণ মাদ্রাসা শিক্ষক, যার এখনো ঠিক মতো মুখে দাঁড়িও উঠেনি, তিনি হালাকু খানের সাথে দেখা করতে রাজি হন।

হালাকু খানের সাথে দেখা করতে যাবার সময়ে তরুণ আলেম তার সাথে একটা উট, একটা ছাগল এবং একটা রাতা মোরগ নিয়ে যান। এবং এগুলো হালাকু খানের রাজ প্রসাদের সামনে রাখেন।

হালাকু খান তরুণ আলেমকে দেখে বললেন, "আমার সাথে দেখা করার জন্যে তোমাকে ছাড়া আর কোনো বড় আলেমকে বুঝি তারা খুঁজে পায়নি?"
তরুণ আলেম হালাকু খানকে বললেন, "আপনি যদি উঁচু-লম্বা-বড়সড় কারো সাথে দেখা করতে চান, তাহলে বাইরে একটা উট আছে; আপনি যদি দাঁড়ি-ওয়ালা কারো সাথে দেখা করতে চান, তাহলে বাইরে একটা ছাগল আছে; আর আপনি যদি জ্বালাময়ী কণ্ঠের কারো সাথে দেখা করতে চান, তাহলে বাইরে একটা রাতা মোরগ আছে। আপনি আপনার পছন্দ অনুযায়ী যে কাউকে ডাকতে পারেন।
তরুণ আলেমের কথা শুনা হালাকু খান বুঝলেন যে, ছেলেটির দাঁড়ি না থাকলেও, এবং বসয় বেশি না হলেও ভালোই জানে। এরপর, তরুণ আলেমকে হালাকু খান বললেন, "আচ্ছা, বলো তো, আমাকে বাগদাদে কেন আসতে হলো, এর কারণ কি?"
তরুণ আলেম জবাবে বললেন, "তোমাকে এখানে নিয়ে এসেছে আমাদের কর্মফল। আমরা আল্লাহর দেয়া নেয়ামতের গুরুত্ব বুঝিনি। আমরা ভোগবাদিতা ও আনন্দে মেতে উঠেছি। আমরা ধন-সম্পদ, ঘর-বাড়ি, এবং বড় বড় পদের পিছনে ছুটে চলছিলাম। তাই আল্লাহ তায়ালা তাঁর নিয়ামতগুলো তুলে নেয়ার জন্যে, এবং আমাদেরকে শিক্ষা দেয়ার জন্যে তোমাকে এখানে পাঠিয়েছেন।"
এরপর, হালাকু খান বলেন, "আচ্ছা, তাহলে বলো তো, আমাকে এখান থেকে আবার বের করে দিতে পারে, এমন কী আছে?"
তরুণ আলেম কাদিখান বলেন, "যদি আমরা মুসলিমরা আল্লাহর দেয়া নেয়ামতের গুরুত্ব বুঝতে পারি, এবং আমরা মুসলিমরা যদি একে অপরের পিছনে লেগে না থাকি, তাহলে তুমি আর এখানে থাকতে পারবে না।
এরদোয়ান বলেন - প্রিয় ভাইয়েরা, আমি কি বলতে চেয়েছি, আপনারা বুঝেছেন? আমরা নিজেরা একে অপরের বিরুদ্ধাচরণ বাদ দিতে হবে। এবং সবাইকে কেবল আল্লাহর জন্যে ভালোবাসতে হবে। যদি আমরা একে অপরের বিরুদ্ধাচরণ করতে থাকি, তাহলে আমাদের অবস্থাও বাগদাদের মুসলিমদের মতো হবে

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

যে গাছ ইহুদিদের আশ্রয় দেবে অর্থাৎ ইহুদিদের বন্ধু গাছ

রক্তপাতহীন মক্কা বিজয়ের দিন আজ

খন্দক যুদ্ধ কারণ ও ফলাফল