পোস্টগুলি

মহানবীর সমর নীতি

ছবি
#মো. আবু রায়হান মহানবী (সা.) যখন ইসলামের বাণী প্রচার আরম্ভ করেন তখন যুদ্ধবিগ্রহ ছিল সমাজের সাধারণ নিয়ম। যুদ্ধবিগ্রহে লিপ্ত থাকা দিনগুলোকে ‘আইয়াম আল-আরব’ (আরবের যুগ) বলা হতো। (History of Arabs, P. 87-89; সিরাতে মুস্তফা, পৃষ্ঠা ৫৬; সিরাতুন্নবী : ৪/২৬৮)তাগলিক গোত্র ও বকর গোত্রের দাহিস নামে এক ঘোড়া যুবিয়ান গোত্রের আল-গাব্বা নামক এক উটের মধ্যে প্রতিযোগিতায় যুবিয়ানদের অনিয়মের আশ্রয়কে কেন্দ্র করে কয়েক দশক ধরে এ যুদ্ধ চলতে থাকে। বিখ্যাত মুয়াল্লাকা কবি আনতারা বিন শাদদাদ আল-আবশির হস্তক্ষেপের ফলে এ যুদ্ধের পরিসমাপ্তি ঘটে। (সিরাতে মুস্তফা, পৃষ্ঠা ৫৭ ও ৫৮; কিতাব আল আগানি : ৪/১৪০-১৫২; History of Arabs, P. 82.)কুরাইশ ও হাওয়জিন গোত্রের মধ্যে এক যুদ্ধ পাঁচ বছর স্থায়ী ছিল। যুদ্ধটি হারাম মাসে শুরু হয়েছিল বলে একে ফুজ্জার(গর্হিত) যুদ্ধ নামে অভিহিত করা হয়। আর একটি যুদ্ধ হয়েছিল মদিনার আউস এবং খাজরাজ গোত্রের মধ্যে। মহানবী(সা.)-এর মদিনা সনদের ফলে এ যুদ্ধের অবসান ঘটে। ঐতিহাসিকদের মতে, মুহাম্মদ(সা.) তাঁর জীবদ্দশায় ২৭টি বড় ধরনের যুদ্ধ(গাজওয়া), ৬০টি ছোটখাটো দ্বন্দ্ব-সংঘর্ষ (সারিয়া) সরাসরি পরিচালনা করেছেন। (ইসলামী

মুহাম্মদ (সা.) এর পরিবার পরিজন

ছবি
#মো আবু রায়হান বংশ ধারা : মুহাম্মদ (সা.) বিন আবদুল্লাহ বিন আবদুল মুত্তালিব বিন হাশেম বিন আবদে মানাফ বিন কুসাই বিন কিলাব বিন মোররা বিন কাআব বিন লুয়াই বিন গালেব বিন ফেহের (তাঁর উপাধি ছিল কোরাইশ। এখান থেকে কোরাইশ বংশের প্রচলন) বিন মালেক বিন নজর বিন কানানা বিন খোজাইমা বিন মোদরাকা বিন ইলিয়াস বিন মুজার বিন নেজার বিন মাআদ বিন আদনান। (এ পর্যন্ত সব ঐতিহাসিকের ঐক্য আছে। এ বংশলতিকা হযরত ইসমাইল ও ইব্রাহিম (আ.) হয়ে হযরত আদম (আ.) পর্যন্ত পৌঁছেছে।) নাম : মুহাম্মদ (সা.)। উপনাম : আবুল কাসেম। পিতা : আবদুল্লাহ বিন আবদুল মুত্তালিব (আবদুল মুত্তালিবের দশ সন্তানের সর্বকনিষ্ঠ)। মাতা : আমেনা বিনতে ওহ্হাব। দাদা : আবদুল মুত্তালিব বিন হাশেম। দাদি : ফাতেমা বিনতে আমর। নানা : ওয়াহাব বিন আবদে মানাফ। নানি : বোররা বিনতে ওমজা। জন্মস্থান : মক্কা (বর্তমান সৌদি আরবে অবস্থিত)। জন্ম সাল- ৫৭০ খ্রি.। রাসুলুল্লাহ (সা.) এর জন্ম তারিখ নিয়ে ঐতিহাসিকগণের মাঝে অনেক মতভেদ রয়েছে। উপমহাদেশের প্রখ্যাত মুফাসসির ও মুফতি জনাব শফি সাহেব (রহমতুল্লাহি আলাইহি) সিরাতে খাতামুল আম্বিয়া গ্রন্থে লিখেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) এর জন্ম রবিউল আউয়াল মাসের ১

সংগ্রামী নারী নুসাইবা বিনতে কাব

ছবি
#মো আবু রায়হান ইসলামের সোনালি ইতিহাস রচনায় যেসব নারীর আত্মত্যাগ সবচেয়ে বেশি, তাঁদের একজন উম্মে আম্মারা নুসাইবা বিনতে কাব (রা.)। তিনি একজন বিশিষ্ট আনসারি নারী সাহাবি। মদিনার প্রসিদ্ধ আনসার গোত্র বনু নাজ্জারে তাঁর জন্ম। নুসাইবা বিনতে কাব ছিলেন আব্দুল্লাহ্ ইবনে কাব এর বোন। তিনিই প্রথম নারী যিনি ইসলামের জন্য যুদ্ধের ময়দানে গিয়ে যুদ্ধ করেছেন। উম্মে আম্মারা (রা.)-এর পুরো নাম ছিল নুসাইবা বিনতে কাব বিন আমর বিন নাজ্জার। নুসাইবা বিনতে কাব যিনি উম্মে উমর বা উম্মে আম্মারা নামে অধিক পরিচিত। স্বামী জায়েদ ইবনে আসেম ইবনে কাব (রা.)। দুই ছেলে আব্দুল্লাহ্ ও হাবিব ইবনে জায়েদ আল-আনসারী। উম্মে আম্মারা (রা.), তাঁর স্বামী ও দুই ছেলে উহুদ যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন।তিনি পরে বিন আমর কে বিবাহ করেন এবং আরো এক পুত্র তামীম ও এক কন্যা সন্তান খাওলাহ্কে জন্ম দেন।হিজরতপূর্ব মদিনায় যেসব নারী প্রথমে ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন, তিনি ছিলেন তাঁদের অন্যতম। উম্মে আম্মারা রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সঙ্গে উহুদ, খাইবার, মক্কা অভিযান, হুনাইন যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। তিনি হিজরতের আগে বাইয়াতে আকাবার শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিল। এ ছাড়া আবু বকর (র

খয়বারের যুদ্ধ

ছবি
#মো আবু রায়হান খায়বারের যুদ্ধ ৬২৮ খ্রিষ্টাব্দে খয়বার নামক মরুভূমিতে বসবাসরত ইহুদিগণের সাথে মুসলিমগণের সঙ্ঘটিত একটি যুদ্ধ। মদীনা হতে ৬০ অথবা ৮০ মাইল উত্তরে খায়বর একটি বড় শহরের নাম। শহরটি অনেকগুলি দুর্গবেষ্টিত এবং চাষাবাদ যোগ্য জমি সমৃদ্ধ। খয়বরের জনবসতি দুটি অঞ্চলে বিভক্ত। প্রথম অঞ্চলটিতে ৫টি দুর্গ এবং দ্বিতীয় অঞ্চলটিতে ৩টি দুর্গ ছিল। প্রথম অঞ্চলটি দু’ভাগে বিভক্ত। এক ভাগের নাম নাত্বাত । এ ভাগে ছিল সবচেয়ে বড় নায়েম সহ তিনটি দুর্গ এবং আরেক ভাগের নাম শাক্ব। এভাগে ছিল বাকী দু’টি দুর্গ। অন্য অঞ্চলটির নাম কাতীবাহ । এ অঞ্চলে ছিল প্রসিদ্ধ ‘ক্বামূছ’ দুর্গসহ মোট ৩টি দুর্গ। দুই অঞ্চলের বড় বড় ৮টি দুর্গ ছাড়াও ছোট-বড় আরও কিছু দুর্গ ও কেল্লা ছিল। তবে সেগুলি শক্তি ও নিরাপত্তার দিক দিয়ে উপরোক্ত দুর্গগুলির সমপর্যায়ের ছিল না। খায়বরের যুদ্ধ মূলতঃ প্রথম অঞ্চলেই সীমাবদ্ধ ছিল। হোদায়বিয়ার সন্ধি শেষে মদীনায় ফিরে রাসূলুল্লাহ (সা) পূরা যিলহাজ্জ ও মুহাররম মাসের অর্ধাংশ এখানে অবস্থান করেন। অতঃপর মুহাররম মাসের শেষভাগে কোন একদিন খয়বর অভিমুখে যাত্রা করেন। মুসলিম শক্তির বিরুদ্ধে যুদ্ধরত তিনটি শক্তি- কুরায়েশ, বনু গাতফান

মরুভূমির জাহাজ উট

ছবি
সুরা গাশিয়ার ১৭ নম্বর আয়াতে আল্লাহ বলেন, ‘তারা কি উটের প্রতি লক্ষ করে না যে তা কিভাবে সৃষ্টি করা হয়েছে?’উটকে বলা হয় 'মরুভূমির জাহাজ'। আরবিতে একে বলা হয় ‘সাফিনাতুস সাহরা’।কারণ, উট মরুভূমিতে ৬ থেকে ১০ দিন পর্যন্ত কোন খাবার, এমনকি পানিও গ্রহণ না করে বেঁচে থাকতে পারে! এদের নাক, কান ও চোখ এমনভাবে গঠিত যে মরূভূমির ধূলিকণা কর্তৃক এরা খুব সহজে আক্রান্ত হয় না! মরুযাত্রীদের কাছে তাই উট খুবই উপকারী আর প্রয়োজনীয় একটা প্রাণী!উট ২০০-৩০০ কেজি পর্যন্ত বোঝা নিয়েও স্বাভাবিকভাবে চলাফেরা করতে পারে। তৎকালীন সময় আরবের বণিকদের ব্যাবসায়িক পণ্য নেওয়ার মাধ্যম ছিল উট। উটের পিঠে অস্থায়ী ঘর বানিয়ে সে যুগের লাক্সারি ভ্রমণ করা হতো। মরুভূমির প্রচণ্ড তাপমাত্রায় নির্বিঘ্নে পথ চলার এক অসাধারণ ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে মরুজাহাজ নামে খ্যাত উটকে। ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায়ও পানিবিহীন বাঁচতে পারে লাগাতার ১০ দিন। এর শরীরে আল্লাহ এমন অসাধারণ ক্ষমতা দিয়েছেন যে প্রতিকূল পরিস্থিতিতে নিজেকে মানিয়ে নিতে সক্ষম, যা অন্য কোনো প্রাণীর মধ্যে নেই। মরুভূমির ৪৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস গরমেও উটের শরীর থেকে ঘাম নির্গত হয় না। (হায়াতুল হায়ওয়ান)এ

আরব উপদ্বীপ বা জাজিরাতুল আরব

ছবি
  আরব উপদ্বীপ যা জাজিরাতুল আরব নামেও পরিচিত।জাজিরা আরবি শব্দ যার অর্থ উপদ্বীপ।আরব উপদ্বীপটি তিন দিক সাগর এবং এক দিক স্থলভাগ দ্বারা বেষ্টিত হওয়ায় আরববাসীরা একে জাজিরাতুল আরব বলে। এটি পশ্চিম এশিয়ার একটি উপদ্বীপ, যা আফ্রিকার উত্তর পূর্বে অবস্থিত। এটি এশিয়া মহাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল হিসেবে বিবেচিত এবং এটি অঢেল খনিজ তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাসে সমৃদ্ধ। আরব উপদ্বীপের জল সীমান্তের পশ্চিমে রয়েছে লোহিত সাগর, উত্তর-পূর্বে রয়ছে পারস্য উপসাগর ও দক্ষিণ-পূর্বে রয়েছে ভারত মহাসাগর।এই উপদ্বীপে অবস্থিত দেশসমূহের মধ্যে রয়েছে সৌদি আরব, ওমান, কুয়েত, বাহরাইন, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও কাতার ও ইয়েমেন ।

ওকাজ মেলা

ছবি
#মো. আবু রায়হান জাহেলি যুগের একটি ঐতিহ্যবাহী মেলার নাম ছিল ওকাজ মেলা।ওকাজ মেলা যদিও প্রাক ইসলামি যুগে নৈতিকতা ও সামাজিক কুসংস্কারের চরম সীমায় পৌঁছে গিয়েছিল। তথাপিও সে সময় ওকাজ মেলায় বসত কবি-সাহিত্যিকদের আসর। সে সাহিত্য পরিষদে প্রকাশ পেতো অনেক প্রশংসনীয় চারিত্রিক গুণ। সে সময় সাহিত্য পাঠ, কবিতা আবৃত্তি, বাগ্মিতা এবং কাব্যপ্রেম ছিল অনত্যম। মূলত এ কবিতা আবৃত্তি ও বাগ্মিতাকে কেন্দ্র করেই মক্কার অদূরে অবস্থিত ওকাজ নামক স্থানে এ মেলার সূচনা হয়েছিল। পৃথিবীর ইতিহাসে তা ওকাজ মেলা নামে পরিচিত হয়েছিল। উকাজ মেলার এই সাহিত্যসভায় কবিতা-প্রতিযোগিতায় মূল বিচারকের ভূমিকায় থাকতেন কবি নাবিগা জুবিয়ানি। কথিত আছে, উকাজ মেলার কাব্যপ্রতিযোগিতার শ্রেষ্ঠ কবিতাগুলোকে দামি মিসরীয় কাপড়ে সোনালি অক্ষরে লিখে বর্তমান সময়ের দেয়ালিকার মতো পবিত্র কাবা ঘরে দেয়ালে ঝুলিয়ে রাখা হতো।এই কবিতাগুলোকে তাই মুয়াল্লাকাত বা ঝুলন্ত কবিতা বলা হতো। এই কবিতাগুলো কবি হাম্মাদ আর রাবিয়া আব্বাসি যুগ এ সংকলন করেন। এ মুয়াল্লাকাত বা ঝুলন্ত কবিতার মধ্যে -ইমরুল কায়েস ,ত্বরফা বিন আল আবদ ,যুহায়ের বিন আবি সুলমা ,লাবিদ বিন রাবিয়া, আমর বিন ক

মজলিস উস শুরা / পরামর্শ সভা

ছবি
#মো.আবু রায়হান ইসলামী সমাজ ও রাষ্ট্র পরিচালনায় শুরার গুরুত্ব অনেক বেশি। শুরা আরবি শব্দ ।এর আভিধানিক অর্থ পরামর্শ, consultation ।মজলিস অর্থ আসর; সভা; সমিতি, council or legislature. মজলিস উস শুরার সম্মিলিত অর্থ পরামর্শ সভা, উপদেষ্টা পরিষদ । আধুনিক যুগের পার্লামেন্টের সঙ্গে মজলিস উস শুরার তুলনা চলে।মুসলিম দেশগুলোতে শুরা বর্তমানে খুব স্বাভাবিক একটি নিয়ম হিসেবে চালু আছে। যেসব মুসলিম দেশে একনায়কতন্ত্র, রাজতন্ত্র বা সামরিক স্বৈরশাসন চলছে, সেখানেও ‘শুরা কমিটি’, ‘শুরা কাউন্সিল’ বা ‘মজলিসে শুরা’ নামমাত্র চালু আছে।রাসুল (সা) প্রাক ইসলামি যুগের দারুন নাদওয়ার আদলে মজলিসে শুরা’গঠন করেন।খেলাফত বা রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে পরামর্শ নেওয়ার জন্য খলিফারা নির্দিষ্টসংখ্যক লোকের সমন্বয়ে ‘মজলিসে শুরা’ গঠন করতেন। কেননা আল্লাহ তাআলা মুসলমানদের গুণাবলির কথা বলতে গিয়ে উল্লেখ করেছেন, ‘এবং তারা নিজেদের মধ্যে পরামর্শের ভিত্তিতে কর্ম সম্পাদন করে।’ (সুরা শুরা, আয়াত ৩৮) সূরা আলে ইমরানের ১৫৯ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে : ‘আল্লাহর দয়ায় তুমি তাদের প্রতি কোমলহৃদয় হয়েছিলে, যদি তুমি রূঢ় ও কঠোরচিত্ত হতে তবে তারা তোমার আশপাশ থেক