সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

খয়বারের যুদ্ধ



#মো আবু রায়হান

খায়বারের যুদ্ধ ৬২৮ খ্রিষ্টাব্দে খয়বার নামক মরুভূমিতে বসবাসরত ইহুদিগণের সাথে মুসলিমগণের সঙ্ঘটিত একটি যুদ্ধ।মদীনা হতে ৬০ অথবা ৮০ মাইল উত্তরে খায়বর একটি বড় শহরের নাম। শহরটি অনেকগুলি দুর্গবেষ্টিত এবং চাষাবাদ যোগ্য জমি সমৃদ্ধ। খয়বরের জনবসতি দুটি অঞ্চলে বিভক্ত। প্রথম অঞ্চলটিতে ৫টি দুর্গ এবং দ্বিতীয় অঞ্চলটিতে ৩টি দুর্গ ছিল। প্রথম অঞ্চলটি দু’ভাগে বিভক্ত। এক ভাগের নাম নাত্বাত । এ ভাগে ছিল সবচেয়ে বড় নায়েম সহ তিনটি দুর্গ এবং আরেক ভাগের নাম শাক্ব। এভাগে ছিল বাকী দু’টি দুর্গ। অন্য অঞ্চলটির নাম কাতীবাহ । এ অঞ্চলে ছিল প্রসিদ্ধ ‘ক্বামূছ’ দুর্গসহ মোট ৩টি দুর্গ। দুই অঞ্চলের বড় বড় ৮টি দুর্গ ছাড়াও ছোট-বড় আরও কিছু দুর্গ ও কেল্লা ছিল। তবে সেগুলি শক্তি ও নিরাপত্তার দিক দিয়ে উপরোক্ত দুর্গগুলির সমপর্যায়ের ছিল না। খায়বরের যুদ্ধ মূলতঃ প্রথম অঞ্চলেই সীমাবদ্ধ ছিল।

হোদায়বিয়ার সন্ধি শেষে মদীনায় ফিরে রাসূলুল্লাহ (সা) পূরা যিলহাজ্জ ও মুহাররম মাসের অর্ধাংশ এখানে অবস্থান করেন। অতঃপর মুহাররম মাসের শেষভাগে কোন একদিন খয়বর অভিমুখে যাত্রা করেন। মুসলিম শক্তির বিরুদ্ধে যুদ্ধরত তিনটি শক্তি- কুরায়েশ, বনু গাতফান ও ইহুদী- এগুলির মধ্যে প্রধান কুরায়েশদের সাথে হোদায়বিয়ার সন্ধির ফলে বনু গাত্বফান ও বেদুঈন গোত্রগুলি এমনিতেই দুর্বল হয়ে পড়ে। বাকী রইল ইহুদীরা। যারা মদীনা থেকে বিতাড়িত হয়ে ৬০ বা ৮০ মাইল উত্তরে খায়বরে গিয়ে বসতি স্থাপন করে এবং সেখান থেকেই মুসলমানদের বিরুদ্ধে সকল প্রকারের ষড়যন্ত্র করে। এছাড়া মুহাম্মাদ কে হত্যা করার ষড়যন্ত্র এই খায়বার থেকে হত। বরং বলা চলে যে, খয়বর ছিল তখন মুসলমানদের বিরুদ্ধে পরিচালিত সকল ষড়যন্ত্রের কেন্দ্রবিন্দু। তাই এদেরকে দমন করার জন্য এই অভিযান পরিচালিত হয়।রাসূলের খয়বর অভিযানের গোপন খবর মুনাফিক নেতা আব্দুল্লাহ ইবনে উবাই আগেভাগেই তাদের জানিয়ে দিয়ে পত্র পাঠায়। তাতে তাদেরকে যুদ্ধের জন্য প্ররোচিত করা হয় এবং একথাও বলা হয় যে, তোমরা অবশ্যই জিতবে। কেননা মুহাম্মাদের লোকসংখ্যা অতীব নগণ্য এবং তারা প্রায় রিক্তহস্ত’। খয়বরের ইহুদীরা এই খবর পেয়ে তাদের মিত্র বনু গাত্বফানের নিকটে সাহায্য চেয়ে লোক পাঠায়। তাদেরকে বলা হয় যে, মুসলমানদের বিরুদ্ধে জয়লাভ করলে খয়বরের মোট উৎপন্ন ফসলের অর্ধেক তাদেরকে দেওয়া হবে’। উক্ত লোভনীয় প্রস্তাব পেয়ে বনু গাত্বফানের লোকেরা পূর্ণ প্রস্ত্ততি নিয়ে খয়বর অভিমুখে রওয়ানা হয়। কিছু দূর গিয়েই তারা পিছন দিকে শোরগোল শুনে ভাবল, হয়তবা মুসলিম বাহিনী তাদের সন্তানাদি ও পশুপালের উপরে হামলা চালিয়েছে। ফলে তারা খয়বরের চিন্তা বাদ দিয়ে স্ব স্ব গৃহ অভিমুখে প্রত্যাবর্তন করল। বলা বাহুল্য, এটা ছিল আল্লাহর অদৃশ্য সাহায্য। এর দ্বারা একথাও বুঝা যায় যে, মুসলমানদের ব্যাপারে তারা দারুণ ভীত ছিল। কেননা ইতিপূর্বে তারা খন্দকের যুদ্ধে পরাজিত হয়ে ফিরে এসেছে। এরপর সম্প্রতি কুরায়েশরা মুসলমানদের সঙ্গে হোদায়বিয়ায় সন্ধি চুক্তি করেছে। তাতে মুসলিম ভীতি আরও ব্যাপকতা লাভ করেছে।

রাসূলুল্লাহ (সা) যুদ্ধ কৌশল বিবেচনা করে উত্তর দিকে সিরিয়ার পথ ধরে খায়বর অভিমুখে যাত্রা করলেন। যাতে বনু গাতফানের পক্ষ থেকে ইহুদীদের সাহায্য প্রাপ্তির পথ বন্ধ করা যায় এবং ইহুদীরাও এপথে পালিয়ে যাবার সুযোগ না পায়।খয়বরের সন্নিকটে ছাহবা নামক স্থানে অবতরণ করে আল্লাহর রাসূল (সা) আছরের ছালাত আদায় করেন। অতঃপর তিনি খাবার চাইলেন। কিন্তু কেবল ছাতু পাওয়া গেল। তিনি তাই মাখাতে বললেন। অতঃপর তিনি খেলেন ও ছাহাবায়ে কেরাম খেলেন। অতঃপর শুধুমাত্র কুলি করে একই ওযুতে মাগরিব পড়লেন। অতঃপর এশা পড়লেন।এটা নিঃসন্দেহে রাসূলের একটি মু‘জেযা, যেমনটি ঘটেছিল ইতিপূর্বে খন্দকের যুদ্ধে পেটে পাথর বাঁধা ক্ষুধার্ত নবী ও তাঁর ছাহাবীগণের খাদ্যের ব্যাপারে।রাসূল (সা)-এর নীতি ছিল কোথাও যুদ্ধের জন্য গেলে আগের দিন রাতে গিয়ে সেখানে অবস্থান নিতেন। অতঃপর সকালে হামলা করতেন। খায়বরের ক্ষেত্রেও তাই করলেন। তবে শিবিরের স্থান নির্বাচনের ব্যাপারে তিনি পূর্ব সিদ্ধান্ত বাতিল করে অভিজ্ঞ যুদ্ধ বিশারদ ছাহাবী হুবাব ইবনুল মুনযিরের পরামর্শকে অগ্রাধিকার দিয়ে খায়বরের এত নিকটে গিয়ে শিবির সন্নিবেশ করলেন, যেখান থেকে শহর পরিষ্কার দেখা যায়।

হযরত আলী সেনাদল নিয়ে খায়বরের শ্রেষ্ঠ ও সর্বাধিক মযবুত বলে খ্যাত ‘নায়েম’ দুর্গের সম্মুখে উপস্থিত হ’লেন ও তাদেরকে প্রথমে ইসলামের দাওয়াত দিলেন। ইহুদীরা এই দাওয়াত প্রত্যাখ্যান করল এবং তাদের নেতা মারহাব দর্পভরে কবিতা বলে এগিয়ে এসে দ্বন্দ্বযুদ্ধের আহবান জানালো। বীরকেশরী মারহাবকে এক হাযার যোদ্ধার সমকক্ষ মনে করা হ’ত। মারহাবের দর্পিত আহবানে সাড়া দিয়ে পাল্টা কবিতা বলে আমের ইবনুল আকওয়া‘ ঝাঁপিয়ে পড়লেন। কিন্তু তাঁর তরবারি আকারে ছোট থাকায় তার আঘাত মারহাবের পায়ের গোছায় না লেগে উল্টা নিজের হাঁটুতে এসে লাগে। যাতে তিনি আহত হন ও পরে মৃত্যুবরণ করেন। নিজের আঘাতে মৃত্যু হওয়ায় আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) বলেন যে, তিনি দ্বিগুণ ছওয়াবের অধিকারী হবেন।

এরপর মারহাব পুনরায় গর্বভরে কবিতা আওড়াতে থাকে ও মুসলিম বাহিনীর প্রতি দ্বন্দ্ব যুদ্ধের আহবান জানাতে থাকে। তখন প্রধান সেনাপতি আলী (রা) তার দর্প চূর্ণ করার জন্য নিজেই এগিয়ে গেলেন এবং গর্বভরে কবিতা বলে সিংহের মত ঝাঁপিয়ে পড়ে তাকে এক আঘাতেই শেষ করে দিলেন। এভাবে তাঁর হাতেই মূলতঃ নায়েম’ দুর্গ জয় হয়ে গেল। খায়বরের যুদ্ধে কাফিরদের পরাজিত করে বিখ্যাত কামুস দুর্গ জয় করে অসাধারণ শৌর্যবীর্যের পরিচয় দেন। তাঁর বীরত্বে সন্তুষ্ট হয়ে মহানবী (সা.) তাঁকে ‘আসাদুল্লাহ বা আল্লাহর বাঘ’ উপাধিতে ভূষিত করেন।
হযরত আলী (রা)'র ঐতিহাসিক খয়বর বিজয়কে স্মরণ করে বিশ্বের মুসলমানদের জাগিয়ে তোলার জন্য তার এক অমর ইসলামী গানে লিখেছিলেন:
খয়বর-জয়ী আলী হায়দর, জাগো জাগো আরবার!
দাও দুশমন-দুর্গ-বিদারী দ্বিধারী জুলফিকার।।
এস শেরে-খোদা ফিরিয়া আরবে
ডাকে মুসলিম 'ইয়া আলী' 'ইয়া আলী' রবে;
হায়দরি-হাঁকে তন্দ্রা-মগনে করো করো হুঁশিয়ার।।
আল্ বোর্জের চূড়া গুঁড়া-করা গোর্জ আবার হানো;
বেহেশতি সাকি, মৃত এ জাতিরে আবে-কওসর দানো।
আজি বিশ্ব-বিজয়ী জাতি যে বেঁহুশ,
দাও তারে নব কুয়ত ও জোশ্;
এস নিরাশার মরু-ধূলি উড়ায়ে দুল‌্দুল‌্-আস্ওয়ার।।
নায়েম দুর্গ জয়ের পর দ্বিতীয় প্রধান দুর্গ ছাব বিন মু‘আয দুর্গটি বিজিত হয় হযরত হুবাব বিন মুনযির আনছারী (রাঃ)-এর নেতৃত্বে তিনদিন অবরোধের পর। এই দুর্গটি ছিল খাদ্য সম্ভারে পূর্ণ। আর এই সময় মুসলিম সেনাদলে দারুণ খাদ্য সংকট দেখা দেয়। তখন এই দুর্গটি জয়ের জন্য আল্লাহর নিকটে রাসূল (সা) বিশেষ দো‘আ করেন এবং সেদিনই সন্ধ্যার পূর্বে দুর্গ জয় সম্পন্ন হয়। এই সময় ক্ষুধার তাড়নায় মুসলিম সেনাদলের কেউ কেউ গাধা যবহ করে তার গোশত রান্না শুরু করে দেয়। এ খবর রাসূলের কর্ণগোচর হলে তিনি গৃহপালিত গাধার গোশত খাওয়া নিষিদ্ধ করে দেন। এই দুর্গ থেকে সেই আমলের প্রচলিত কিছু ট্যাংক ও কামান (মিনজানীক্ব ও দাববাবাহ) হস্তগত হয়। যা দুর্গ দুয়ার ভাঙ্গা এবং পাহাড়ের চূড়া বা উচ্চ ভূমিতে আগুনের গোলা নিক্ষেপের কাজে পরবর্তী যুদ্ধগুলিতে খুবই কার্যকর ফল দেয়। যেমন অত্যন্ত মযবুত ‘নেযার’ দুর্গটি জয় করার সময় আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) উক্ত ট্যাংক ও কামানের গোলা ব্যবহার করে সহজ বিজয় অর্জন করেন। ইসলামের ইতিহাসে এটিই ছিল যুদ্ধে সর্বপ্রথম কামান ব্যবহারের ঘটনা। নাত্বাত ও শাক্ব অঞ্চলে ৫টি দুর্গের পতনের পর রাসূলুল্লাহ (সা) কাতীবাহ অঞ্চলে গমন করেন ও তাদেরকে অবরোধ করেন। পরে তাদের উপরে কামানের গোলা নিক্ষেপের হুমকি দিলে ১৪দিন পর তারা বেরিয়ে এসে আত্মসমর্পণ করে ও সন্ধির প্রস্তাব দেয়। অতঃপর সন্ধি চুক্তির মাধ্যমে কাতীবাহ অঞ্চলের তিনটি দুর্গ বিজিত হয়। এভাবে খায়বর বিজয় সম্পন্ন হয়।
কাতীবাহ’ অঞ্চলের বিখ্যাত ‘ক্বামূছ’ দুর্গের অধিপতি মদীনা হ’তে ইতিপূর্বে বিতাড়িত বনু নাযীর গোত্রের নেতা আবুল হুক্বাইক্ব-এর দুই ছেলে সন্ধির বিষয়ে আলোচনার জন্য রাসূলের নিকটে আসেন। আলোচনায় স্থির হয় যে, দুর্গের মধ্যে যারা আছে, তাদের সবাইকে মুক্তি দেওয়া হবে। তাদের সোনা-রূপাসহ অন্যান্য সকল সম্পদ মুসলমানদের অধিকারভুক্ত হবে। ইহুদীরা সপরিবারে দুর্গ ত্যাগ করে চলে যাবে। সুনানে আবুদাঊদের বর্ণনায় এসেছে যে, নিজ নিজ বাহনের উপরে যতটুকু মাল-সম্পদ নেওয়া সম্ভব ততটুক নেওয়ার অনুমতি তাদের দেওয়া হয়। কিন্তু আবুল হুকাইকের ছেলেরা সন্ধিচুক্তি ভঙ্গ করে অনেক মাল লুকিয়ে ফেলে। বিশেষ করে মদীনা থেকে বহিষ্কৃত হবার সময় গোত্র নেতা হুয়াই বিন আখত্বাব একটি চামড়ার মশক ভরে যে সম্পদ ও অলংকারাদি এনেছিল, সেই মশকটা তারা লুকিয়ে ফেলে। এতদ্ব্যতীত কেনানা বিন আবুল হুকাইকের নিকটে বনু নাযীরের যে মূল্যবান সম্পদরাজি গচ্ছিত ছিল, সেগুলি সে বিজন প্রান্তরের এক স্থানে মাটির তলে পুঁতে রাখে। তাকে জিজ্ঞেস করা হ’লে সে উক্ত বিষয়ে অজ্ঞতা প্রকাশ করে। রাসূলুল্লাহ (সা) তখন কেনানাকে বললেন, উক্ত সম্পদ যদি আমরা তোমার নিকট থেকে বের করতে পারি, তাহ’লে তোমাকে হত্যা করব কি’? সে বলল, হাঁ। ইতিমধ্যে কেননাহর জনৈক চাচাতো ভাই স্থানটির সন্ধান দেয় এবং গচ্ছিত সম্পদের কিছু অংশ পাওয়া যায়। অতঃপর বাকী মালামাল সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে সে আগের মতই অজ্ঞতার ভান করে। তখন তাকে রাসূলুল্লাহ (সা) হযরত যুবায়ের (রাঃ)-এর হাতে সমর্পণ করে বলেন,একে শাস্তি দিতে থাক, যতক্ষণ না তার নিকটে যা আছে, তা সব তুমি বের করে নিতে পার’। এর মধ্যে আধুনিক যুগের পুলিশ রিম্যান্ডের দলীল পাওয়া যায়। হযরত যুবায়ের (রা) তার বুকে চকমকি পাথর দিয়ে আঘাত করতে থাকেন তাতে সে মৃত্যুর কাছাকাছি পৌঁছে যায় । অতঃপর তাকে মুহাম্মাদ বিন মাসলামাহর হাতে সমর্পণ করা হ’ল। তিনি তাকে তার ভাই মাহমূদ বিন মাসলামাহকে হত্যার বদলা স্বরূপ হত্যা করেন। মাহমূদ বিশ্রাম গ্রহণের জন্য নায়েম দুর্গের দেয়ালের পাশে বসেছিলেন। তখন কেনানাহ তার উপরে একটি পাথরের চাকি নিক্ষেপ করে তাকে হত্যা করেছিল। তবে ইবনুল ক্বাইয়িম বলেন, সন্ধিচুক্তি ভঙ্গ করে সম্পদ গোপন করার অপরাধে আল্লাহর রাসূল (সা) আবুল হুকাইকের দুই ছেলেকে হত্যা করার নির্দেশ দেন।

খয়বর বিজয়ের পর রাসূল (সা) যখন একটু নিশ্চিন্ত হ’লেন, তখন বনু নাযীর গোত্রের অন্যতম নেতা ও কোষাধ্যক্ষ সালাম বিন মুশকিমের স্ত্রী যয়নব বিনতুল হারেছ তাকে বকরীর ভূনা রান হাদিয়া পাঠায়। সে আগেই জেনে নিয়েছিল যে, রাসূল (সা) রানের গোশত পসন্দ করেন। এজন্য উক্ত মহিলা উক্ত রানে ভালভাবে বিষ মিশিয়ে দিয়েছিল। রাসূল (সা) গোশতের কিছু অংশ চিবিয়ে ফেলে দেন, গিলেননি। অতঃপর বলেন, এই হাড্ডি আমাকে বলছে যে, সে বিষ মিশ্রিত। রাসূলুল্লাহ (সা) তখন উক্ত মহিলাকে ডেকে জিজ্ঞেস করলে সে কৈফিয়ত দিয়ে বলে, এর দ্বারা আমার উদ্দেশ্য ছিল এই যে, যদি এই ব্যক্তি বাদশাহ হন, তাহলে আমরা তার থেকে নিষ্কৃতি পাব। আর যদি নবী হন, তাহলে তাকে বিষয়টি জানিয়ে দেওয়া হবে। তখন রাসূল (সা) তাকে ক্ষমা করে দেন। কিন্তু সাথী বিশর ইবনুল বারা বিন মারূর এক গ্রাস চিবিয়ে খেয়ে ফেলেছিলেন। যাতে তিনি মারা যান। ফলে তার বদলা স্বরূপ ঐ মহিলাকে হত্যা করা হয়।

এই যুদ্ধে বিভিন্ন সময়ের সংঘর্ষে সর্বমোট শহীদ মুসলমানের সংখ্যা ছিল ১৬ জন। তন্মধ্যে ৪ জন কুরায়েশ, ১ জন আশজা‘ গোত্রের, ১ জন আসলাম গোত্রের, ১ জন খায়বর বাসী ও বাকী ৯ জন ছিলেন আনছার। তবে এ বিষয়ে ১৮, ১৯, ২৩ বিভিন্ন মতভেদ রয়েছে। ইহুদী পক্ষে মোট ৯৩ জন নিহত হয়।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

সুফফা ইসলামের প্রথম আবাসিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান

মো.আবু রায়হান:  সুফফা মসজিদে নববির একটি স্থান। যেখানে একদল নিঃস্ব মুহাজির যারা মদিনায় হিজরত করেন এবং বাসস্থানের অভাবে মসজিদে নববির সেই স্থানে থাকতেন।এটি প্রথমদিকে মসজিদ উত্তর-পূর্ব কোণায় ছিল এবং রাসুলের আদেশে এটাকে পাতার ছাউনি দিয়ে ছেয়ে দেয়া হয় তখন থেকে এটি পরিচিতি পায় আল-সুফফা বা আল-জুল্লাহ নামে। ( A Suffah is a room that is covered with palm branches from date trees, which was established next to Al-Masjid al-Nabawi by Islamic prophet Muhammad during the Medina period.)। মোটকথা রাসুল (সা) মসজিদে-নববির চত্ত্বরের এক পাশে আস সুফফা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। সুফফা হলো ছাদবিশিষ্ট প্রশস্ত স্থান। সুফফার আকৃতি ছিল অনেকটা মঞ্চের মতো, মূল ভূমির উচ্চতা ছিল প্রায় অর্ধমিটার। প্রাথমিক পর্যায়ে এর দৈর্ঘ্য ছিল ১২ মিটার এবং প্রস্থ ছিল ৮ মিটার। মসজিদে নববির উত্তর-পূর্বাংশে নির্মিত সুফফার দক্ষিণ দিকে ছিল রাসুলুল্লাহ (সা.) ও তাঁর স্ত্রীদের অবস্থানের হুজরা এবং সংলগ্ন পশ্চিম পাশে ছিল মেহরাব।আসহাবে সুফফা অৰ্থ চত্বরবাসী। ঐ সকল মহৎ প্ৰাণ সাহাবি আসহাবে সুফফা নামে পরিচিত, যারা জ্ঞানার্জনের জন্য ভোগবিলাস ত্যা...

খন্দক যুদ্ধ কারণ ও ফলাফল

#মো. আবু রায়হান ইসলামের যুদ্ধগুলোর মধ্যে খন্দকের যুদ্ধ অন্যতম। ৫ হিজরির শাওয়াল মাসে খন্দকের যুদ্ধ সংঘটিত হয়। নবীজি (সা.) মদিনায় আসার আগে সেখানে বড় দুটি ইহুদি সম্প্রদায় বসবাস করত। বনু নাজির ও বনু কোরায়জা। ইহুদিদের প্ররোচনায় কুরাইশ ও অন্যান্য গোত্র মদিনার মুসলমানদের সঙ্গে যুদ্ধ করার প্রস্তুতি গ্রহণ করে। খন্দকের এই যুদ্ধ ছিল মদিনার ওপরে গোটা আরব সম্প্রদায়ের এক সর্বব্যাপী হামলা এবং কষ্টকর অবরোধের এক দুঃসহ অভিজ্ঞতা। এসময় ২৭দিন ধরে আরব ও ইহুদি গোত্রগুলি মদিনা অবরোধ করে রাখে। পারস্য থেকে আগত সাহাবি সালমান ফারসির পরামর্শে হযরত মুহাম্মদ (স:) মদিনার চারপাশে পরিখা খননের নির্দেশ দেন। প্রাকৃতিকভাবে মদিনাতে যে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ছিল তার সাথে এই ব্যবস্থা যুক্ত হয়ে আক্রমণ কারীদেরকে নিষ্ক্রিয় করে ফেলে। জোটবাহিনী মুসলিমদের মিত্র মদিনার ইহুদি বনু কোরায়জা গোত্রকে নিজেদের পক্ষে আনে যাতে তারা দক্ষিণ দিক থেকে শহর আক্রমণ করে। কিন্তু মুসলিমদের তৎপরতার ফলে তাদের জোট ভেঙে যায়। মুসলিমদের সুসংগঠিত অবস্থা, জোটবাহিনীর আত্মবিশ্বাস হ্রাস ও খারাপ আবহাওয়ার কারণে শেষপর্যন্ত আক্রমণ ব্যর্থ হয়।এই যুদ্ধে জয়ের ফলে ইসল...

কাবা ঘর নির্মাণের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস

মো. আবু রায়হানঃ কাবা মুসলমানদের কিবলা, অর্থাৎ যে দিকে মুখ করে নামাজ পড়ে বা সালাত আদায় করে, পৃথিবীর যে স্থান থেকে কাবা যে দিকে মুসলমানগণ ঠিক সে দিকে মুখ করে নামাজ আদায় করেন। হজ্জ এবং উমরা পালনের সময় মুসলমানগণ কাবাকে ঘিরে তাওয়াফ বা প্রদক্ষিণ করেন।কাবা শব্দটি এসেছে আরবি শব্দ মুকাআব অর্থ ঘন থেকে।কাবা একটি বড় ঘন আকৃতির ইমারত। (The Kaaba, meaning cube in Arabic, is a square building elegantly draped in a silk and cotton veil.)।যা সৌদি আরবের মক্কা শহরের মসজিদুল হারাম মসজিদের মধ্যখানে অবস্থিত। প্রকৃতপক্ষে মসজিদটি কাবাকে ঘিরেই তৈরি করা হয়েছে।কাবার ভৌগোলিক অবস্থান ২১.৪২২৪৯৩৫° উত্তর ৩৯.৮২৬২০১৩° পূর্ব।পৃথিবীর সর্বপ্রথম ঘর বায়তুল্লাহ বা পবিত্র কাবা ঘর ।আল্লাহ বলেন, নিশ্চয় সর্বপ্রথম ঘর যা মানুষের জন্য নির্মিত হয়েছে তা মক্কা নগরীতে। (সুরা আল ইমরান - ৯৬)। “প্রথম মাসজিদ বায়তুল্লাহিল হারাম তারপর বাইতুল মাকদিস, আর এ দুয়ের মধ্যে সময়ের ব্যবধান হলো চল্লিশ বছরের”।(মুসলিম- ৫২০)। ভৌগোলিকভাবেই গোলাকার পৃথিবীর মধ্যস্থলে কাবার অবস্থান। ইসলামের রাজধানী হিসেবে কাবা একটি সুপরিচিত নাম। পৃথিবীতে মাটির সৃষ্টি ...