মজলিস উস শুরা / পরামর্শ সভা





#মো.আবু রায়হান
ইসলামী সমাজ ও রাষ্ট্র পরিচালনায় শুরার গুরুত্ব অনেক বেশি। শুরা আরবি শব্দ ।এর আভিধানিক অর্থ পরামর্শ, consultation ।মজলিস অর্থ আসর; সভা; সমিতি, council or legislature. মজলিস উস শুরার সম্মিলিত অর্থ পরামর্শ সভা, উপদেষ্টা পরিষদ । আধুনিক যুগের পার্লামেন্টের সঙ্গে মজলিস উস শুরার তুলনা চলে।মুসলিম দেশগুলোতে শুরা বর্তমানে খুব স্বাভাবিক একটি নিয়ম হিসেবে চালু আছে। যেসব মুসলিম দেশে একনায়কতন্ত্র, রাজতন্ত্র বা সামরিক স্বৈরশাসন চলছে, সেখানেও ‘শুরা কমিটি’, ‘শুরা কাউন্সিল’ বা ‘মজলিসে শুরা’ নামমাত্র চালু আছে।রাসুল (সা) প্রাক ইসলামি যুগের দারুন নাদওয়ার আদলে মজলিসে শুরা’গঠন করেন।খেলাফত বা রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে পরামর্শ নেওয়ার জন্য খলিফারা নির্দিষ্টসংখ্যক লোকের সমন্বয়ে ‘মজলিসে শুরা’ গঠন করতেন। কেননা আল্লাহ তাআলা মুসলমানদের গুণাবলির কথা বলতে গিয়ে উল্লেখ করেছেন, ‘এবং তারা নিজেদের মধ্যে পরামর্শের ভিত্তিতে কর্ম সম্পাদন করে।’ (সুরা শুরা, আয়াত ৩৮)
সূরা আলে ইমরানের ১৫৯ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে : ‘আল্লাহর দয়ায় তুমি তাদের প্রতি কোমলহৃদয় হয়েছিলে, যদি তুমি রূঢ় ও কঠোরচিত্ত হতে তবে তারা তোমার আশপাশ থেকে সরে পড়ত। সুতরাং তুমি তাদেরকে ক্ষমা কর, তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা কর এবং কাজে-কর্মে তাদের সাথে পরামর্শ কর।’পরামর্শের ভিত্তিতে কাজ করার মধ্যে যে কল্যাণ ও উপকারিতা নিহিত রয়েছে, তা মহানবী (সা.)-এর কথায়ই প্রমাণিত। হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, মহানবী (সা.) বলেন, ‘যদিও আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের পরামর্শের কোনো প্রয়োজন নেই, তবুও আল্লাহ তাআলা আমাকে পরামর্শের নির্দেশ দিয়েছেন, এতে বহু রহমত ও বরকত রয়েছে। যারা পরামর্শ করে কাজ করবে, তারা কখনো উত্তম দিকনির্দেশনা থেকে বঞ্চিত থাকবে না। আর যারা পরামর্শ করে কাজ করবে না, তারা কখনো ভ্রান্তি থেকে নিষ্কৃতি পাবে না।’ (বায়হাকি)আল্লাহর নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) অব্যাহত ওহির জ্ঞানে সমৃদ্ধ ছিলেন এবং আল্লাহ তাঁকে উন্নত নৈতিক গুণাবলি দ্বারা পরিচালিত করেছেন। তার পরও মহান আল্লাহ তাঁর নবীকে সাহাবিদের সঙ্গে পরামর্শের ভিত্তিতে কাজ করার পরামর্শ দিয়েছেন। আল্লাহ বলেন, ‘এবং কাজকর্মে তুমি তাদের সঙ্গে পরামর্শ করবে।’ (সুরা : আলে ইমরান, আয়াত : ১৫৯)আল্লাহর নবী (সা.) তাঁর জীবনে শুরা বা পরামর্শের নীতি গ্রহণ করেছেন। এ প্রসঙ্গে আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, ‘রাসুল (সা.)-এর চেয়ে নিজ সঙ্গী-সাথিদের সঙ্গে অধিক পরামর্শকারী আমি আর কাউকে দেখিনি।’ (ফাতহুল করীম ফী সিয়ামাতিন নাবিয়্যিল আমিন -পৃষ্ঠা ২৪)আল্লাহর নবীর জীবনে শুরাভিত্তিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের ভূরি ভূরি প্রমাণ আছে। ওহুদ যুদ্ধের আগে মদিনা নগরীর বাইরে গিয়ে, না ভেতর থেকে যুদ্ধ মোকাবেলা করা হবে, তা নিয়ে মহানবী (সা.) তাঁর সাহাবিদের সঙ্গে পরামর্শ করেন।
মহানবী (সা.)-এর পর খুলাফায়ে রাশেদার খলিফারা পরামর্শের ভিত্তিতে খেলাফত পরিচালনা করেছেন এবং দেশের সংকটকালে জ্ঞানী, বিচক্ষণ, দূরদর্শী ও ফকিহদের সঙ্গে পরামর্শ বৈঠক করতেন। হযরত আবু বকর (রা.) তাঁর খেলাফতকালে আনসার ও মুহাজির সাহাবিদের নিয়ে পরামর্শ করতেন। এসব বৈঠকে ওমর (রা.), ওসমান (রা.), আলী (রা.), আবদুর রহমান ইবনে আউফ (রা.), মুয়াজ ইবন জাবাল (রা.) প্রমুখ সাহাবিরা উপস্থিত থাকতেন। ওমর (রা.)-এর সময় রাষ্ট্রের যাবতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয় প্রথমে মজলিসে শুরায় উপস্থাপিত হতো। এখানে চুলচেরা বিশ্লেষণের পর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হতো। হযরত ওমর (রা.) বলেন, ‘পরামর্শ ছাড়া খেলাফত ব্যবস্থা চলতে পারে না।’ (মাআরেফুল কুরআন : পৃষ্ঠা ২১৪)
এটি দুই ভাগে বিভক্ত –
ক মজলিস আল খাস
খ মজলিস আল আম

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

যে গাছ ইহুদিদের আশ্রয় দেবে অর্থাৎ ইহুদিদের বন্ধু গাছ

রক্তপাতহীন মক্কা বিজয়ের দিন আজ

খন্দক যুদ্ধ কারণ ও ফলাফল