পোস্টগুলি

হুনাইনের যুদ্ধ

ছবি
#মো. আবু রায়হান ‎‎হুনাইনের যুদ্ধ মুসলমান কর্তৃক বেদুঈন গোত্র হাওয়াজিন ও তার উপশাখা সাকিফ এর বিরুদ্ধে ( হুনাইন হচ্ছে মক্কা ও তায়েফের মধ্যবর্তী একটি উপত্যকা ) ৬৩০ সালে সংঘঠিত একটি যুদ্ধ।বদর যুদ্ধের মতো এই যুদ্ধেও আল্লাহ তাআলা ফেরেশতা পাঠিয়ে মুসলমানদের গায়েবি সাহায্য করেন। তবে ফেরেশতারা বদরের মতো এই যুদ্ধে সরাসরি অংশগ্রহণ করেননি। সাধারণ মুসলমানরা তাদের অংশগ্রহণকে প্রত্যক্ষও করেনি। মক্কা বিজয়ের পর হাওয়াজিন গোত্র মক্কা থেকে তায়েফ পর্যন্ত বিস্তৃত তার শাখা গোত্রগুলোকে মুসলমানদের বিরুদ্ধে একত্র করে। চার হাজার সৈন্যবাহিনীর পাশাপাশি সেনানায়ক মালিক বিন আউফ পূর্ণ শক্তির সঙ্গে রণাঙ্গনে তাদের সুদৃঢ় রাখার জন্য এই কৌশল অবলম্বন করে যে যুদ্ধক্ষেত্রে সবার পরিবার-পরিজনও উপস্থিত থাকবে। প্রত্যেকে নিজেদের সহায়-সম্পত্তিও সঙ্গে রাখবে। উদ্দেশ্য হলো, কেউ যেন পরিবার-পরিজন ও সহায়-সম্পদের টানে রণক্ষেত্র ত্যাগ না করে। পরিবার-পরিজনসহ তাদের মোট সংখ্যা ছিল ২৪ থেকে ২৮ হাজার। এদিকে ৮ম হিজরীর ৬ই শাওয়াল দিবস রাসূলুল্লাহ (সা) মক্কা হতে রওয়ানা হলেন। এটি ছিল মক্কা আগমনের ঊনিশতম দিবস। নাবী কারীম (সাঃ)-এর সঙ্গে ছিল বার হাজা

মুতার যুদ্ধ যেখানে শহীদ হন তিন সেনাপতি

ছবি
#মো.আবু রায়হান মহানবী (সা) এর জীবদ্দশায় মুসলমানরা যেসব যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন মুতার যুদ্ধ ছিল সেসবের মধ্যে সবচেয়ে রক্তক্ষয়ী। এই যুদ্ধই খৃষ্টান অধ্যুষিত দেশসমূহ জয়ের দার খুলে দেয়। অষ্টম হিজরীর জমাদিউল আউয়াল অর্থাৎ ৬২৯ খ্রিষ্টাব্দ বা সেপ্টেম্বর মাসে এই যুদ্ধ সংঘটিত হয়। মুতা বর্তমানে জর্ডানের বালকা এলাকার নিকটবর্তী একটি জনপদ। এই জায়গা থেকে বায়তুল আকসা মসজিদের দূরত্ব মাত্র দুই মানযিল বা ৩২ মাইল । মুতার যুদ্ধ এখানেই সংঘটিত হয়েছিল। হজ্জ থেকে ফিরে এসে হযরত মুহাম্মদ (সা.) বিভিন্ন গোত্রীয় নেতাদের অনুরোধে নানা স্থানে ইসলামের দূত প্রেরণ করলেন। কোনো কোনো স্থানে মুসলিম দূতের প্রতি অশোভন ও বিরোধমূলক আচরণ করা হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে মহানবী বিভিন্ন স্থানে বিধর্মীদের বিরুদ্ধে কয়েকটি অভিযান প্রেরণ করেন। ইবনে হিশাম ও ওয়াকিদীর মতে, হযরত মুহাম্মদ (সা.) হোদায়বিয়া সন্ধি স্বাক্ষরের পর থেকে মক্কা বিজয় (৬৩০ খ্রি.) পর্যন্ত সময়ের মধ্যে মোট ১৭টি অভিযান পরিচালনা করেছিলেন। রাসুল (সা) উত্তরদিকে যে তিনটি অভিযান পরিচালনা করেছিলেন, মুতার যুদ্ধ তন্মধ্যে সর্বাধিক উল্লেখযোগ্য। রোমের কায়সারের গবর্ণর শরহাবিল ইবন

তাবুক যুদ্ধ/ তাবুক অভিযান ( ৬৩০ খ্রি.)

ছবি
#মো. আবু রায়হান তাবুক যুদ্ধ/ তাবুক অভিযান ( ৬৩০ খ্রি.) ছিল রাসূল (সা )-এর জীবনের শেষ যুদ্ধ এবং যা রোমকদের বিরুদ্ধে পরিচালিত হয়। তৎকালীন সময়ের অর্ধেক পৃথিবীর একচ্ছত্র শাসক রোম সম্রাটের সিরিয় গবর্ণরের বিরুদ্ধে ৮ম হিজরীর জুমাদাল ঊলা মাসে পরিচালিত ‘মুতা’ অভিযানে এক অসম যুদ্ধে রোমকদের পিছুটানের ফলে আরব উপদ্বীপে মুসলিম শক্তির শ্রদ্ধাপূর্ণ প্রভাব বিস্তৃত হয়। তাতে যুগ যুগ ধরে রোমকদের শাসন-শোষণে নিষ্পিষ্ট আরবদের মধ্যে স্বাধীনতার স্বপ্ন জাগরিত হয়। বিশেষ করে আরব ভূখন্ডের সীমান্তবর্তী রোম শাসিত শাম রাজ্যের জন্য তা একটি বিরাট চ্যালেঞ্জ হিসাবে দেখা দেয়। আল্লাহ তাআলা এ যুদ্ধের প্রক্কালে কুরআনে উল্লেখ করেন, ‘যদি তোমরা অভিযানে বের না হও, তবে আল্লাহ তোমাদের কঠিন শাস্তি দেবেন এবং তোমাদের স্থলে অন্য কোনো জাতিকে নিয়ে আসবেন। আর তোমরা কিন্তু তার কোনো ক্ষতি করতে পারবে না। আল্লাহ সব বিষয়ে সর্বশক্তিমান। (সুরা তাওবা, আয়াত ৩৯)আলোচ্য আয়াত তাফসিরে এসেছে, ‘তাবুক যুদ্ধের পটভূমিতে নাজিল হয়েছে এ আয়াত। যুদ্ধের নির্দেশ আসার পরও যারা নানা কারণে পিছিয়ে পড়েছিল, এই আয়াতে তাদের কঠিন শাস্তি দেওয়ার ঘোষণা দেয়া হয়েছে। তাবু

খন্দক যুদ্ধ কারণ ও ফলাফল

ছবি
#মো. আবু রায়হান ইসলামের যুদ্ধগুলোর মধ্যে খন্দকের যুদ্ধ অন্যতম। ৫ হিজরির শাওয়াল মাসে খন্দকের যুদ্ধ সংঘটিত হয়। নবীজি (সা.) মদিনায় আসার আগে সেখানে বড় দুটি ইহুদি সম্প্রদায় বসবাস করত। বনু নাজির ও বনু কোরায়জা। ইহুদিদের প্ররোচনায় কুরাইশ ও অন্যান্য গোত্র মদিনার মুসলমানদের সঙ্গে যুদ্ধ করার প্রস্তুতি গ্রহণ করে। খন্দকের এই যুদ্ধ ছিল মদিনার ওপরে গোটা আরব সম্প্রদায়ের এক সর্বব্যাপী হামলা এবং কষ্টকর অবরোধের এক দুঃসহ অভিজ্ঞতা। এসময় ২৭দিন ধরে আরব ও ইহুদি গোত্রগুলি মদিনা অবরোধ করে রাখে। পারস্য থেকে আগত সাহাবি সালমান ফারসির পরামর্শে হযরত মুহাম্মদ (স:) মদিনার চারপাশে পরিখা খননের নির্দেশ দেন। প্রাকৃতিকভাবে মদিনাতে যে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ছিল তার সাথে এই ব্যবস্থা যুক্ত হয়ে আক্রমণ কারীদেরকে নিষ্ক্রিয় করে ফেলে। জোটবাহিনী মুসলিমদের মিত্র মদিনার ইহুদি বনু কোরায়জা গোত্রকে নিজেদের পক্ষে আনে যাতে তারা দক্ষিণ দিক থেকে শহর আক্রমণ করে। কিন্তু মুসলিমদের তৎপরতার ফলে তাদের জোট ভেঙে যায়। মুসলিমদের সুসংগঠিত অবস্থা, জোটবাহিনীর আত্মবিশ্বাস হ্রাস ও খারাপ আবহাওয়ার কারণে শেষপর্যন্ত আক্রমণ ব্যর্থ হয়।এই যুদ্ধে জয়ের ফলে ইসল

হুদায়বিয়ার সন্ধি ও শর্তসমূহ

ছবি
#মো আবু রায়হান ইসলামের ইতিহাসে তথা বিশ্বের ইতিহাসে ‘হুদায়বিয়ার সন্ধি’ এক যুগান্তকারী ঘটনা। বিশ্বের ইতিহাসে এ সন্ধি এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করে। এ সন্ধিতে সাক্ষর করে মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা) এক অসাধারণ রাজনৈতিক প্রতিভা ও দূরদর্শিতার পরিচয় দেন। তাই হুদায়বিয়ার সন্ধি মহানবী (সা) এর জীবনে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে। মহানবী (সা.)কে অত্যাচার-নির্যাতনের মাধ্যমে কুরাইশরা এক পর্যায়ে তাঁকে মদিনায় হিজরতে বাধ্য করেছিল। হিজরতের পরেও মহানবী (সা.) ও ইসলামকে নিশ্চিহ্ন করার জন্য তারা আপ্রাণ চেষ্টা করেছে। বদর, ওহুদ, খন্দকের মতো যুদ্ধ মহানবী (সা.) ও ইসলামকে নিশ্চিহ্ন করার অভিপ্রায়েই কুরাইশরা সংঘটিত করেছিল। আর এ উদ্দেশ্যে ইহুদি-খ্রিস্টানদের সহযোগিতা পেয়েও মুসলমানদের অগ্রযাত্রাকে রুখতে পরেনি। এক সময় তাদের সাথেই হুদায়বিয়ার সন্ধিতে বসতে হয়েছে। আর সন্ধির সুযোগে মহানবী (সা.) দেশে-বিদেশে ইসলামের আহ্বান পৌঁছিয়ে ইসলামের দ্রুত বিস্তার ঘটাতে সক্ষম হন। হুদায়বিয়ার সন্ধির পটভূমি- দীর্ঘদিন মাতৃভূমি মক্কা ছেড়ে এসে মহানবী (সা.)-এর প্রাণ চঞ্চল হয়ে উঠেছিল। কাবা শরীফ জিয়ারত করবার মহান আল্লাহ তায়ালার প

মদিনা সনদ ও প্রধান ধারা

ছবি
#মো. আবু রায়হান ৬২২ খ্রিষ্টাব্দে মক্কা থেকে হিজরতের পর রাসূলুল্লাহ (সা) মদিনায় বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠী ও ইহুদিদের মধ্যে সামাজিক ঐক্য ও রাজনৈতিক সমীকরণ, জাতীয় নিরাপত্তা, ভ্রাতৃত্ব, সম্প্রীতি ও ধর্মীয় সহিষ্ণুতার মাধ্যমে একটি প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে চুক্তি সম্পাদন করেছেন, যা ইতিহাসে মদিনা সনদ (Charter of Madinah) নামে পরিচিতি লাভ করে। এটাই ইতিহাসে প্রথম লিখিত সংবিধান (The first written constitution)। ইবনে হিশাম (র.) তাঁর 'সিরাতুননবী (সা.)' গ্রন্থে এ সনদের ৫৩টি ধারার বর্ণনা করেছেন। [ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ থেকে বাংলা ভাষায় অনূদিত এই গ্রন্থের দ্বিতীয় খণ্ডের (ঢাকা১৯৯৪, পৃ. ১৬৩-১৭১) তবে উইলিয়াম মন্টেগোমারি ওয়াট তাঁর Muhammad at Medina  গ্রন্থে এই সনদের (পৃ. ২২১-২২৫) ৪৭টি ধারা উল্লেখ করেছেন]।ইয়াসরিববাসীর সঙ্গে স্বাক্ষরিত এই সনদের মাধ্যমে ইসলামী রাষ্ট্রের ভিত্তি স্থাপিত হয়। এই সনদই ইসলামের নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-কে নব প্রতিষ্ঠিত মদিনা রাষ্ট্রের সর্বময় কর্তৃত্ব প্রদান করে। এই সনদ স্বাক্ষরিত হওয়ার পর ইয়াসরিব উপত্যকার নাম পরিবর্তিত হয়ে মদিনাতুন্নবী বা নবীর শহর নাম ধারণ করে

হিজরতের পটভূমি ও বিশ্বইতিহাসে প্রভাব

ছবি
#মো. আবু রায়হান ইসলামের ইতিহাসে হিজরত যুগান্তকারী ঘটনা। বৈশ্বিক ইতিহাসেও হিজরত সর্বাধিক তাৎপর্যবহ ও সুদূরপ্রসারী ঘটনা। ‘যোসেফ হেল’ যথার্থই বলেছেন, ‘Hijrat is the Greatest Turning Point in the History of Islam’অর্থাৎ হিজরত ইসলামের মোড় পরিবর্তনকারী মহান ঘটনা।ইসলামের ইতিহাসে বৃহৎ দিগন্তের উন্মোচন করে। এটি দ্বীন ও মানবতার বৃহত্তম স্বার্থে ত্যাগ, বিসর্জনের এক সাহসী পদক্ষেপ। হিজরত হিজরত' শব্দটি হিজরান অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। হিজরত শব্দের আভিধানিক অর্থ ছেড়ে দেওয়া, বর্জন করা। অর্থাৎ অসন্তুষ্টিচিত্তে কোনো কিছু ত্যাগ করা। to depart, to shift, abandonment, to give up one’s own land, to migrate from one place to another place সর্বসাধারণের মধ্যে প্রচলিত অর্থে দেশ ত্যাগ করাকে হিজরত বলা হয়। শরিয়তের পরিভাষায় দারুল কুফর তথা কাফিরদের দেশ ত্যাগ করে দারুল ইসলাম তথা মুসলমানদের দেশে গমন করার নাম হিজরত (রুহুল মা'আনি)। মোল্লা আলী কারি (রহ.) মিশকাত শরিফের ব্যাখ্যাগ্রন্থ মিরকাতে বলেন, ধর্মীয় কারণে কোনো দেশ ত্যাগ করাও হিজরতের অন্তর্ভুক্ত। “Leaving home and place for the sake of God is and settling in other