পোস্টগুলি

মদিনার ইমাম ইমাম মালিক (রহ.)

ছবি
ইমাম মালেক ইবনে আনাস (রহ.) একজন যুগশ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিস, ফিকহবিদ ও মুজতাহিদ ছিলেন। তিনি মুসলমানদের প্রধান চার ইমামের একজন। মালেকী মাযহাব তারই প্রণীত মূলনীতির উপর প্রতিষ্ঠিত। তার সংকলিত মুয়াত্তা বিখ্যাত এবং প্রাচীনতম হাদীসগ্রন্থ। ইমাম মালিক ইবনে আনাস (রহ.) আরবের এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পরিবার ইসলামের আবির্ভাবের আগে ও পরে আরবে গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক মর্যাদার অধিকারী ছিল। এই পরিবারের পূর্বপুরুষরা এসেছিলেন ইয়েমেন থেকে। ইমাম মালিক পবিত্র মদীনা নগরীতে এক সম্ভ্রান্ত শিক্ষানুরাগী মুসলিম পরিবারে জন্মলাভ করেন। তাঁর নাম মালেক, উপনাম আবু আবদুল্লাহ, উপাধি ইমামু দারিল হিজরাহ। পিতার নাম আনাস। জন্মের সন নিয়ে কিছু মতামত থাকায় ইমাম যাহাবী রহ. বলেন : বিশুদ্ধ মতে ইমাম মালিক -এর জন্ম সন হল ৯৩ হিজরী, যে সনে রাসূলুল্লাহ সা.-এর খাদেম আনাস বিন মালিক রা. মৃত্যুবরণ করেন।এবং ইমাম আবু হানিফা (রহ.)-এর চেয়ে ১৩ বছরের ছোট। ইমাম মালিক ইবনে আনাস মদিনায় শিক্ষা লাভ করেন। তাঁর দাদা, বাবা ও চাচা সবাই হাদিসবেত্তা ছিলেন এবং ছোটবেলা থেকেই বালক মালিককে হাদিস এবং জ্ঞানের অন্যান্য বিষয়ে শিক্ষা দেন।তাঁর পিতা তাব...

ফিকহশাস্ত্রের উদ্ভাবক আবু হানিফা (রহ)

ছবি
আবু হানিফা আল-নোমান ইবনে সাবিত ইবনে যুতা ইবনে মারযুবান উপনাম ইমাম আবু হানিফা নামেই সমধিক পরিচিত ছিলেন। ফিকহশাস্ত্রের একজন প্রখ্যাত বিশেষজ্ঞ এবং হিজরী প্রথম শতাব্দীর একজন গুরুত্বপূর্ণ ইসলামী ব্যক্তিত্ব। ইসলামী ফিকহের সর্বাধিক প্রসিদ্ধ ও পরিচিত চারটি "সুন্নি মাযহাবের" একটি “হানাফি মাযহাব”-এর প্রধান ব্যক্তিত্ব ছিলেন তিনি। কিছু অনুসারী তাকে সুন্নি ইসলামে আল-ইমাম আল-আজম ("সর্বশ্রেষ্ঠ ইমাম") এবং সিরাজ আল-আ'ইম্মা ("ইমামদের বাতি") বলে অভিহিত করেন। মুজতাহিদ ইমামদের মধ্যে তাঁর জন্মই সর্বপ্রথম। বংশ হিসেবে তিনি ইরানি ও পারস্য দেশের অধিবাসী ছিলেন। উমাইয়া খলিফা আবদুল মালিক ইবনে মারওয়ানের রাজত্বকালে ইমাম আবু হানিফা জন্মগ্রহণ করেন। হিজরি ৮০ সনে, মোতাবেক ৭০০ খ্রিস্টাব্দে কুফায় জন্মগ্রহণ করেন। তার ছয় বছর বয়সে আবদুল মালিক মৃত্যুবরণ করেন। ষোল বছর বয়সে তিনি পিতার সাথে হজ্জে গিয়েছিলেন। তার পিতা সাবিত বিন যুতী কাবুল, আফগানিস্তানের একজন ব্যবসায়ী ছিলেন।তাঁর বাবা বিশিষ্ট সাহাবি হজরত আলী (রা.)-এর খেদমতে হাজির হয়ে তাঁর দোয়া লাভ করতে সমর্থ হয়েছিলেন। প্রথমত তিনি কুফা শহরেই ...

একজন নুরসি ও তাঁর রিসালা-ই-নুর

ছবি
সাঈদ নুরসি (১৮৭৭-১৯৬০) যিনি বদিউজ্জামান নামেও পরিচিত । তিনি ছিলেন একজন সুন্নি মুসলিম ধর্মতাত্ত্বিক। নুরসির জন্ম ১৮৭৭ সালে। উসমানীয় সাম্রাজ্যের অন্তর্গত পূর্ব আনাতোলিয়ার বিতলিস ভিলায়েত প্রদেশের নুরস নামকগ্রামে।পিতা মির্জা আর মা নুরী ’ র চতুর্থ সন্তান সাঈদ নুরসীদের পরিবারটি ছিল কুর্দি গোত্রভুক্ত।এই শিশুর নাম ছিল সাঈদ , মানে ভাগ্যবান। নুরসে জন্ম নিয়েছেন- তাই নুরসি। বাল্যকালে প্রাথমিক শিক্ষার হাতেখড়ি হয় মুহাম্মদ এফেন্দির মাদ্রাসায়। এরপর ১৮৮৮ সালে শাইখ আমিন এফেন্দির মাদ্রাসা এবং পরে আরো বেশ কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অধ্যায়ন শেষে শাইখ মুহাম্মাদ জালালির কাছ থেকে শিক্ষাসনদ লাভ করেন। ‘ বদিউজ্জামান ’ তার সম্মানসূচক খেতাববা যুগের বিশ্বয় ( Wonder of the age) । ইংরেজিতে বলা হতো ‘ দি মোস্ট ইউনিক অ্যান্ড সুপিরিয়র পারসন অব দ্য টাইম ’ । তিনি ধর্মীয় বিতর্কে পারদর্শিতা দেখান। তিরিশের দশকে তুরস্ক থেকে যখন কামাল আতাতুর্কের নেতৃত্বে ইসলামের নাম-নিশানা মুছে ফেলা হয় , মানুষকে ধর্মচর্চা থেকে জোর করে বিমুখ করে বিস্মৃত করা হয় তাদের ঈমানি চেতনা , ধর্মীয় সঙ্কটের নিদারুণ সেই ক্রান্তিকালে উস্তাদ বদিউজ্জামান সাঈদ...

হযরত আবদুল কাদের জিলানী (রহঃ)-এর জীবনের তিন ঘটনা

আবদুল কাদের জিলানি (রহ.) জিলান শহরের নাইফে ৪৭০ হিজরির রমজানে/১০৭৭ খ্রিষ্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেন। জিলান শহর হচ্ছে কাস্পিয়ান সাগরের দক্ষিণ তীরবর্তী পর্বতঘেরা অঞ্চল। তাঁর পিতার নাম ছিল সৈয়দ আবু সালেহ মুসা জেঙ্গি এবং মাতার নাম ছিল সৈয়দা উম্মুল খায়ের ফাতিমা। পিতার দিক দিয়ে তিনি ছিলেন হজরত ইমাম হাসান (রা.) –এর বংশধর আর মায়ের দিক থেকে ছিলেন হজরত ইমাম হুসাইন (রা.)–এর বংশধর। হাসানি ও হুসাইনি দুই পবিত্র রক্তধারার সম্মিলন ঘটেছিল তাঁর মধ্যে। বাবার দিক থেকে বড়পীর আব্দুল কাদের জিলানি (রহ.) হজরত আলী (রা.)-এর ১১তম বংশধর। মায়ের দিক থেকে তিনি হজরত আলী (রা.)-এর অষ্টাদশ বংশধর। তাঁকে নিয়ে অনেক কথা , কিংবদন্তি বিদ্যমান সমাজে। গভীর শ্রদ্ধা আর ভালোবাসায় ভক্তরা তাঁকে স্মরণ করেন। এক হযরত আবদুল কাদের জিলানী (রহঃ)-এর বাল্যশিক্ষা মক্তবে শুরু হয়। প্রথম দিন মক্তবে গিয়ে দেখেন অন্যান্য ছাত্রদের ভিড়ে বসার কোনো জায়গা নেই। হঠাৎ করে উপর হতে গায়বী আওয়াজ আসল, হে মক্তবের ছাত্ররা! আল্লাহর অলির বসার স্থান প্রসস্ত করে দাও। গায়বী আওয়াজ আসার সাথে সাথে সকল ছাত্ররা চেপে বসলেন। হযরত আবদুল কাদের জিলানী (রহ.) এর বসার ব্যবস্থা হয়ে ...

সম্রাট হুমায়ুনের লাইব্রেরি যেটির সিঁড়ি থেকে পড়ে তিনি মৃত্যুবরণ করেন

ছবি
ছবির ঘরটি দ্বিতীয় মোগল সম্রাট হুমায়ুনের ব্যক্তিগত লাইব্রেরি। শত বছর পেরিয়েও আজও মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে এই লাইব্রেরি। বলা হয়ে থাকে এটি সম্রাট হুমায়ুনের জ্ঞান চর্চার বাতিঘর। ভারতে এটি হুমায়ুন লাইব্রেরি হিসেবে পরিচিত। লাইব্রেরির নির্মাণ ও স্থাপত্যশৈলী অনেক দৃষ্টিনন্দন। এটি অষ্টভুজাকৃতির নির্মাণ শিল্প।দিন শেষে অস্তমিত যাওয়া সূর্যের রোদ লাল বেলেপাথর থেকে খুব সুন্দরভাবে অবলোকন করা যায়। ভারতের দিল্লির পুরান কেল্লার ভেতরে এই লাইব্রেরির অবস্থান। সম্রাট হুমায়ুন না থাকলেও আজও মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে তার জ্ঞান চর্চার বাতিঘর হুমায়ুন লাইব্রেরি। যদিও এর নির্মাণ আদেশ সম্রাট বাবরের সময় হয়েছিলো, কিন্তু হঠাৎ মৃত্যুর জন্য সম্রাট বাবরের জীবদ্দশায় এর নির্মাণ কাজ শেষ হয়নি। সম্রাট হুমায়ুন শের শাহের কাছে পরাজিত হলে দুর্গের দখল চলে যায় শের শাহের কাছে, ফলে এর নির্মাণকাজ স্থগিত হয়ে যায়। দ্বিতীয়বার হিন্দুস্তানের সম্রাট হওয়ার পর সম্রাট হুমায়ুন এর নির্মাণ কাজ শেষ করান। শের শাহের সম্মানে স্থাপনাটির নামকরণ করা হয় 'শের মণ্ডল'। সম্রাট হুমায়ুন এই স্থাপনাটি তার ব্যক্তিগত লাইব্রেরি হিসেবে ব্যবহার করতেন। এখা...

শেরশাহর সমাধিসৌধ

ছবি
  শেরশাহ ভারতবর্ষের সম্রাট ও শূর রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা। শেরশাহ ছিলেন বিহারের অন্তর্গত সাসারামের জায়গিরদার হাসান খান শূরের পুত্র। ১৫৩৭ সালে নতুন মুঘল সম্রাট হুমায়ুন যখন অন্যত্র অভিযানে ব্যস্ত ছিলেন, সেই সময় শেরশাহ শুরি বাংলা জয় করে সুরি সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন। হুমায়ুন বাংলা অভিমুখে অগ্রসর হলে শেরশাহ বাংলা ত্যাগ করেন। ১৫৩৯ খ্রিস্টাব্দে চৌসার যুদ্ধে (বক্সারের নিকটে) হুমায়ুনকে পরাভূত করে তিনি ‘শাহ’ উপাধি গ্রহণ করেন এবং বাংলা পুনর্দখল করে খিজির খানকে এর শাসনকর্তা নিযুক্ত করেন। পরবর্তী বছর পুনরায় হুমায়ুনকে পরাজিত ও ভারতবর্ষ থেকে বিতাড়িত করে তিনি দিল্লির সিংহাসন অধিকার করেন। ১৫৪৫ সালে চান্দেল রাজপুতদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের সময় কালিঞ্জর দুর্গে বারুদের বিস্ফোরণে শেরশাহ সুরির মৃত্যু হয়। সাসারামে একটি কৃত্রিম হ্রদের মাঝখানে তার ১২২ ফুট উঁচু নয়নাভিরাম সমাধিসৌধটি আজও বিদ্যমান। তার সমাধি ইন্দো-ইসলামিক স্থাপত্যের উদাহরণ। এটি মীর মুহাম্মদ আলীওয়াল খান ডিজাইন করেছিলেন।

বসনিয়ার সেব্রেনিচা হত্যাকাণ্ড

ছবি
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপের মাটিতে সবচেয়ে ভয়াবহ হত্যাযজ্ঞের ঘটনা ঘটে বসনিয়ার যুদ্ধে। এই যুদ্ধের প্রধান শিকার হয় মূলত বসনিয়ার মুসলমানরা। সমাজতান্ত্রিক যুগোস্লাভিয়া প্রজাতন্ত্র ভেঙে ছয়টি স্বাধীন দেশ আত্মপ্রকাশ করে। ১৯৯২ সালের ১ মার্চ যুগোস্লাভিয়ার কাছ থেকে স্বাধীনতা পায় বসনিয়া-হার্জেগোভিনা। কিন্তু সদ্য স্বাধীন দেশটির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে তখন শুরু হয় দ্বন্দ্ব। তিন জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে বসনিয়াক নামে পরিচিতরা ছিল সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমান। তারা ছিল স্বাধীন বসনিয়া গঠনের পক্ষে। অপর দুই জাতি বসনীয় ক্রোয়েট ও বসনীয় সার্বরাও নতুন করে বিচ্ছিন্ন হওয়ার দাবি তোলে। ক্রোয়েটরা প্রতিবেশী ক্রোয়েশিয়ার আর সার্বরা সার্বিয়ার সঙ্গে এক হয়ে যেতে চায়। ‘বসনিয়ার কসাই’ নামে কুখ্যাত ম্লাদিচের নেতৃত্বে সার্ব সেনারা বসনিয়ার একের পর এক এলাকার দখল নিতে শুরু করে। নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষায় ক্রোয়েট ও মুসলমানরাও পাল্টা প্রতিরোধ গড়ে তোলার চেষ্টা করলে সংঘাত ছড়িয়ে পড়ে। ১৯৯৫ সালের গোড়ার দিকে জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মহল সার্বদের প্রতি বসনিয়া থেকে সেনা প্রত্যাহারের আহ্বান জানায়। কিন্তু তারা আহ্বানে সাড়া দেয় না। ফলে বিমান হামলা শুরু করে ন...