সম্রাট হুমায়ুনের লাইব্রেরি যেটির সিঁড়ি থেকে পড়ে তিনি মৃত্যুবরণ করেন
ছবির ঘরটি দ্বিতীয় মোগল সম্রাট হুমায়ুনের ব্যক্তিগত লাইব্রেরি। শত বছর পেরিয়েও আজও মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে এই লাইব্রেরি। বলা হয়ে থাকে এটি সম্রাট হুমায়ুনের জ্ঞান চর্চার বাতিঘর। ভারতে এটি হুমায়ুন লাইব্রেরি হিসেবে পরিচিত। লাইব্রেরির নির্মাণ ও স্থাপত্যশৈলী অনেক দৃষ্টিনন্দন। এটি অষ্টভুজাকৃতির নির্মাণ শিল্প।দিন শেষে অস্তমিত যাওয়া সূর্যের রোদ লাল বেলেপাথর থেকে খুব সুন্দরভাবে অবলোকন করা যায়। ভারতের দিল্লির পুরান কেল্লার ভেতরে এই লাইব্রেরির অবস্থান। সম্রাট হুমায়ুন না থাকলেও আজও মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে তার জ্ঞান চর্চার বাতিঘর হুমায়ুন লাইব্রেরি।
যদিও এর নির্মাণ আদেশ সম্রাট বাবরের সময় হয়েছিলো, কিন্তু হঠাৎ মৃত্যুর জন্য সম্রাট বাবরের জীবদ্দশায় এর নির্মাণ কাজ শেষ হয়নি। সম্রাট হুমায়ুন শের শাহের কাছে পরাজিত হলে দুর্গের দখল চলে যায় শের শাহের কাছে, ফলে এর নির্মাণকাজ স্থগিত হয়ে যায়। দ্বিতীয়বার হিন্দুস্তানের সম্রাট হওয়ার পর সম্রাট হুমায়ুন এর নির্মাণ কাজ শেষ করান। শের শাহের সম্মানে স্থাপনাটির নামকরণ করা হয় 'শের মণ্ডল'। সম্রাট হুমায়ুন এই স্থাপনাটি তার ব্যক্তিগত লাইব্রেরি হিসেবে ব্যবহার করতেন। এখান থেকে তিনি আকাশ পর্যবেক্ষণও করতেন। সেই হিসেবে স্থাপনাটিকে হিন্দুস্তানের প্রথমদিককার মানমন্দির বলা যায়। তবে সবচাইতে দুঃখের ব্যাপার হলো যে, সম্রাট হুমায়ুন তাঁর এই লাইব্রেরির সিঁড়ি থেকে পড়ে গিয়েই মৃত্যুবরণ করেছিলেন।
নামাজের আযান শুরু হলে সেই আযানকে সম্মান জানানোর জন্য সম্রাট হুমায়ুন সবসময়ই বিশেষ একটি কাজ করতেন।নামাযের আযান শোনা মাত্রই তিনি যেখানেই থাকুন না কেন, হাঁটু ভাজ করে পশ্চিম দিকে মুখ করে বসে পড়তেন তিনি। দীর্ঘদিনের অভ্যাসবশত সম্রাট সেদিনও সিঁড়িতে বসে পড়তে চাইলেন। শীতের কারণে এসময় সম্রাটের গায়ে পশুর চামড়া দিয়ে বানানো লম্বা একধরনের ওভারকোট ছিলো। সম্রাট যখন হাঁটু ভাজ করে বসতে গেলেন, তখনই লম্বা ওভারকোটের একাংশ তার পায়ে সাথে আটকে গেলো। কিছু বুঝে ওঠার আগেই সম্রাট মাথা নিচের দিকে দিয়ে সিঁড়ির নিচের ধাপে পড়ে গেলেন। মাথা নিচে থাকায় মাথায় প্রচণ্ড আঘাতে জ্ঞান হারিয়ে ফেললেন। আঘাতের কারণে সম্রাটের ডান কান দিয়ে তখন ফোঁটায় ফোঁটায় রক্ত ঝরছিলো।
মুহূর্তেই হৈচৈ পড়ে গেলো। অচেতন সম্রাটকে মূল প্রাসাদে নিয়ে যাওয়া হলো। এর কিছুক্ষণ পরই সম্রাট জ্ঞান ফিরে পেলেন। তবে মাথার আঘাত তাকে প্রচণ্ড দুর্বল করে ফেলতে লাগলো।রাজকীয় চিকিৎসকরা দ্রুত সম্রাটের চিকিৎসা শুরু করে দিলেন। তবে অবস্থা যতটুকু মনে দেখাচ্ছিলো, বাস্তব অবস্থা এর চেয়েও খারাপ। চিকিৎকরা বুঝে গেলেন, পরিস্থিতি তাদের আওতার বাইরে। যেকোনো সময় যেকোনো কিছু হয়ে যেতে পারে। তাদের করার মতো আর কিছুই নেই। অবশেষে মাথায় আঘাত পাওয়ার দু'দিন পর, অর্থাৎ, ২৬ জানুয়ারি সবাইকে শোকের সাগরে ভাসিয়ে সম্রাট হুমায়ুনের জীবনাবসান ঘটলো।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন