বসনিয়ার সেব্রেনিচা হত্যাকাণ্ড





দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপের মাটিতে সবচেয়ে ভয়াবহ হত্যাযজ্ঞের ঘটনা ঘটে বসনিয়ার যুদ্ধে। এই যুদ্ধের প্রধান শিকার হয় মূলত বসনিয়ার মুসলমানরা।

সমাজতান্ত্রিক যুগোস্লাভিয়া প্রজাতন্ত্র ভেঙে ছয়টি স্বাধীন দেশ আত্মপ্রকাশ করে। ১৯৯২ সালের ১ মার্চ যুগোস্লাভিয়ার কাছ থেকে স্বাধীনতা পায় বসনিয়া-হার্জেগোভিনা। কিন্তু সদ্য স্বাধীন দেশটির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে তখন শুরু হয় দ্বন্দ্ব। তিন জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে বসনিয়াক নামে পরিচিতরা ছিল সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমান। তারা ছিল স্বাধীন বসনিয়া গঠনের পক্ষে। অপর দুই জাতি বসনীয় ক্রোয়েট ও বসনীয় সার্বরাও নতুন করে বিচ্ছিন্ন হওয়ার দাবি তোলে। ক্রোয়েটরা প্রতিবেশী ক্রোয়েশিয়ার আর সার্বরা সার্বিয়ার সঙ্গে এক হয়ে যেতে চায়।
‘বসনিয়ার কসাই’ নামে কুখ্যাত ম্লাদিচের নেতৃত্বে সার্ব সেনারা বসনিয়ার একের পর এক এলাকার দখল নিতে শুরু করে। নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষায় ক্রোয়েট ও মুসলমানরাও পাল্টা প্রতিরোধ গড়ে তোলার চেষ্টা করলে সংঘাত ছড়িয়ে পড়ে।
১৯৯৫ সালের গোড়ার দিকে জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মহল সার্বদের প্রতি বসনিয়া থেকে সেনা প্রত্যাহারের আহ্বান জানায়। কিন্তু তারা আহ্বানে সাড়া দেয় না। ফলে বিমান হামলা শুরু করে ন্যাটো। যৌথ হামলার মুখে পিছু পিছু হটতে বাধ্য হয় সার্বরা। কিন্তু পরাজয়ের আগে ইতিহাসের নৃশংসতম গণহত্যা চালায় ম্লাদিচ বাহিনী।জাতিসংঘের ৮১৯ নম্বর প্রস্তাব অনুযায়ী, সেব্রেনিচা শহরটি নিরাপদ অঞ্চল বলে ঘোষণা করা হয়েছিল। বিধান লংঘন করে সার্বরা সেব্রেনিচায় আশ্রয় নেওয়া কয়েক লাখ নিরস্ত্র মুসলমানের ওপর সর্বাত্মক হামলা চালায় ।১৯৯৫ সালের ১১ জুলাই আন্তর্জাতিক আইনের তোয়াক্কা না করে আট হাজার মুসলমানকে হত্যা করে ম্লাদিচের নেতৃত্বাধীন বাহিনী। এটি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপের সবচেয়ে বড় গণহত্যা। নিহতের বেশিরভাগই ছিল বৃদ্ধ ও যুবক।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

যে গাছ ইহুদিদের আশ্রয় দেবে অর্থাৎ ইহুদিদের বন্ধু গাছ

রক্তপাতহীন মক্কা বিজয়ের দিন আজ

খন্দক যুদ্ধ কারণ ও ফলাফল