রক্তপাতহীন মক্কা বিজয়ের দিন আজ



মো.আবু রায়হানঃ আজ ২০ রমজান ঐতিহাসিক মক্কা বিজয়ের ১৪৩৩ তম বার্ষিকী।আজ থেকে ১৪৩৩ বছর আগে হিজরতের ৮ম বছরে ২০ রমজান তথা ৬৩০ খৃস্টাব্দে রাসুল (সা.) মক্কা বিজয় করেন। ইতিহাসে এই ঘটনা মক্কা বিজয় বা ফতেহ মক্কা নামে খ্যাত।২০ রমজান শুধু মক্কা বিজয়ই হয়নি বরং প্রিয় নবি স্বমহিমায় নিজ জন্মভূমিতে ফিরে এসেছিলেন।তাই ২০ রমজান ইসলামের ইতিহাসে অত্যন্ত তাৎপর্যবহ ঘটনার সাক্ষী হয়ে আছে।শুধু ইসলামের ইতিহাসে নয়, বিশ্ব ইতিহাসে অনন্য সাধারণ বৈশিষ্ট্য ও মর্যাদার অধিকারী হলো মক্কা বিজয়ের এ ঘটনা। পৃথিবীর আরম্ভ থেকে আজ পর্যন্ত যত যুদ্ধ ,বিজয় অভিযান, হয়েছে এসব যুদ্ধ ও অভিযানে একদল বিজয়ী হয়েছে আরেক দল পরাজয়কে বরণ করেছে। এসব যুদ্ধ পরিচালনা করেছেন দিগ্বিজয়ী ইতিহাসের মহানায়কেরা। তাদের মধ্যে হিটলার,আলেকজেন্ডার,আর নেপোলিয়ান বেনাপোর্টের বিজয় অভিযানগুলো ছিল রক্তপাতের ইতিহাস,মানুষের রক্তে হাত রঞ্জিত হবার ইতিহাস।একমাত্র ব্যতিক্রম ছিল হযরত মুহাম্মাদ (সা.) এর রক্তপাতহীন মক্কা বিজয়। ঐতিহাসিকদের মতে মক্কা বিজয় ইসলামের ইতিহাসে সর্বশ্রেষ্ঠ বিজয় যদিও আল কুরআনে হুদাইবিয়ার সন্ধিকেই ফাতহুম মুবিন বা প্রকাশ্য বিজয় বলে উল্লেখ করা হয়েছে।"নিশ্চয় আমরা আপনাকে দিয়েছি সুস্পষ্ট বিজয়।"(সুরা আল ফাতহ-১)।প্রকৃতপক্ষে হুদাইবিয়ার সন্ধি এবং মক্কা বিজয় দুটিই রাসুল (সা.) এর নেতৃত্বের অতুলনীয় দূরদর্শিতার ফল। হুদাইবিয়ার সন্ধির মাধ্যমে যে বিজয়ের সূত্রপাত হয়েছিল তার চূড়ান্ত রূপই ছিল মক্কা বিজয়। মক্কা অভিযানের আগে আল্লাহ তায়ালা রাসুল (সা.) কে মক্কা বিজয়ের আগাম সুসংবাদ দিয়েছিলেন। আল্লাহ বলেন, “যখন আসবে আল্লাহর সাহায্য ও বিজয়। আর আপনি মানুষকে দলে দলে আল্লাহ্‌র দ্বীনে প্রবেশ করতে দেখবেন।“ (সুরা নাসর আয়াত-১-২)। আল্লাহর সাহায্য অর্থ হলো, ইসলাম এবং মুসলিমদের কুফর ও কাফেরদের উপর বিজয় দান। আর বিজয় অর্থ হল, মক্কা বিজয়। আর বিজয় মানে কোন একটি সাধারণ যুদ্ধে বিজয় নয় বরং এর মানে হচ্ছে এমন একটি চুড়ান্ত বিজয় যার পরে ইসলামের সাথে সংঘর্ষ করার মতো আর কোন শক্তির অস্তিত্ব দেশের বুকে থাকবে না। একথাও সুস্পষ্ট হয়ে যাবে যে, বর্তমানে আরবে এ দ্বীনটিই প্রাধান্য বিস্তার করবে। যখন ৮ হিজরীতে এই মক্কা নগরী বিজয় হল তখন লোকেরা দলে দলে ইসলামে প্রবেশ করতে লাগল। আল্লাহ মক্কা বিজয়ের যে আগাম সংবাদ দিয়েছিলেন তা মক্কা বিজয়ের মাধ্যমে পূর্ণতা পেল।এছাড়া রাসূলুল্লাহ (সা.) মদীনায় স্বপ্ন দেখলেন তিনি সাহাবায়ে কেরামসহ মক্কায় নিৰ্ভয়ে ও নির্বিঘ্নে প্রবেশ করছেন এবং ইহরামের কাজ সমাপ্ত করে কেউ কেউ নিয়মানুযায়ী মাথা মুণ্ডন করেছেন, কেউ কেউ চুল কাটিয়েছেন এবং তিনি বায়তুল্লাহ প্রবেশ করেছেন ও বায়তুল্লাহর চাবি তার হস্তগত হয়েছে।এই স্বপ্নও ভবিষ্যতে মক্কা বিজয়ের ইঙ্গিত দেয়।
রাসুল (সা.) ৬২২ খৃস্টাব্দে মক্কা থেকে মদিনায় হিজরত করেন । এরপর মক্কার কুরাইশদের সঙ্গে বদর, উহুদ, খন্দক যুদ্ধ সহ অসংখ্য খন্ড যুদ্ধ সংঘটিত হয়। হিজরতের ষষ্ঠ বছর অর্থাৎ ৬২৮ খৃস্টাব্দে রাসুল (সা.) ওমরার উদ্দেশ্যে মক্কা অভিমুখে বওনা হন।হুদায়বিয়া নামক স্থানে পৌঁছলে মক্কার কুরাইশরা তাঁর পথ রোধ করে।এতে কুরাইশ নেতৃবর্গ ও রাসুল (সা.)-এর মধ্যে ১০ বছরের জন্য একটি সন্ধি স্বাক্ষরিত হয়। যা ইতিহাস হুদাইবিয়ার সন্ধি্র নামে পরিচিত।হুদাইবিয়া সন্ধি্র তৃতীয় ধারা মোতাবেক মুসলমান ও কুরাইশরা যে কোন গোত্রের সাথে মৈত্রীচুক্তি করতে পারবে। এ ধারা অনুযায়ী মক্কার বনু খোজা গোত্র মুসলমানদের সঙ্গে এবং বনু বকর গোত্র  কুরাইশদের সঙ্গে মৈত্রী চুক্তি করে। এ সন্ধি  দু’বছর গত হয় এবং উভয় পক্ষ নিরাপদে, সুখ-শান্তিতে বসবাস করছিল। সন্ধির ফলে মুসলমানগণ হিজরতের সপ্তম বর্ষে পূর্ণ স্বাধীনতাসহ বায়তুল্লাহ্ জিয়ারতের জন্য মক্কা নগরীতে যান এবং হাজার হাজার মূর্তিপূজারী মুশরিক শত্রুর চোখের সামনে নিজেদের ইসলামি দায়িত্ব ও ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান পালন করেন। এদিকে রাসুল (সা) শামে (সিরিয়া) তিন হাজার সৈন্যের একটি দল প্রেরণ করেন। মুসলিম সেনাবাহিনী এ সমরাভিযান থেকে নিরাপদে ফিরে আসতে পেরেছিল এবং মাত্র তিন জন অধিনায়ক ও কয়েকজন সৈন্য ছাড়া। ইসলামের সামরিক শক্তি দুর্বল হয়ে গেছে এবং মুসলমানরা লড়াই করার মনোবল হারিয়ে ফেলেছে, একথা ভেবে কুরাইশরা ,বিরাজমান শান্ত পরিবেশ নষ্ট করার সিদ্ধান্ত নেয়। প্রথমে তারা বনু বকর গোত্রের মাঝে অস্ত্র বিতরণ করে এবং তাদেরকে মুসলমানদের মিত্র বনু খোজা গোত্রের ওপর রাতের আঁধারে আক্রমণ করার জন্য প্ররোচিত করে। এ দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে পূর্বশত্রুতা ছিল। ঐসময় বনু খোজা গোত্র ওয়াতির নামক জলাশয়ের পাশে বসবাস করত, যা ছিল মক্কার নিম্নভূমিতে অবস্থিত (মুজামুল বুলদান)।কুরাইশদের প্ররোচনায় বনু বকর গোত্র ওয়াতির–এ নিভৃত পল্লিতে রাতের অন্ধকারে বনুু খোজা গোত্রের ঘুমন্ত বা ইবাদত-বন্দেগীরত মানুষের ওপর অতর্কিত হামলা করে হত্যা করে, আরেক অংশকে বন্দী ও তাদের সম্পদ লুণ্ঠন করে নিয়ে যায়। এমনকি কুরাইশ নেতা ইকরিমা বিন আবু জাহেল, ছাফওয়ান বিন উমাইয়া এবং খোদ হুদায়বিয়া সন্ধিতে কুরাইশ পক্ষের আলোচক ও স্বাক্ষর প্রদানকারী সোহায়েল বিন আমর সশরীরে উক্ত হামলায় অংশগ্রহণ করে। (তারীখে তাবারী)।

প্রাণের ভয়ে ওয়াতির কিছু মানুষ কাবায় আশ্রয় নিলে নিরীহ নিরস্ত্র মানুষকেও কুরাইশরা হত্যা করে। এভাবে তারা হুদায়বিয়ার সন্ধি ভঙ্গ করে দু’বছর ধরে বিরাজমান শান্ত অবস্থাকে যুদ্ধ ও রক্তপাতে রূপান্তরিত করেছিল। এ ঘটনার প্রতিকারের জন্য বনু খোজা সম্প্রদায় গোত্রপতি আমর ইবনে সালিমকে মদিনায় তাদের মিত্র মুসলমানদের কাছে পাঠায়। রাসুল (সা.) এর প্রতিকারের জন্য দূত মারফত মক্কার কুরাইশ নেতাদের তিন দফা জানিয়ে দেন-
এক.খোজা গোত্রের নিহতদের রক্তপণ শোধ করতে হবে। অথবা
দুই. কুরাইশদের কর্তৃক বনু বকরের সাথে তাদের মৈত্রীচুক্তি বাতিল ঘোষণা করতে হবে। অথবা
তিন.এ ঘোষণা দিতে হবে যে, হুদাইবিয়ার সন্ধি বাতিল করা হয়েছে এবং কুরাইশরা যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত।কুরাইশদের পক্ষ হতে কারতা বিন উমর তৃতীয় শর্তটি গ্রহণ করে। পরবর্তীকালে তারা অবশ্য এর জন্য অনুতপ্ত হয়েছিল। আরেকটি বর্ণনামতে হুদাইবিয়ার সন্ধি নবায়ন করার জন্য কুরাইশরা নিজেদের নেতা আবু সুফিয়ানকে মদীনায় প্রেরণ করে।কিন্তু সব ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয় । ফলে ঐতিহাসিক হুদাইবিয়ার সন্ধি রদ হয়ে যায়।
এদিকে গোপনীয়তা বজায় রেখে রাসুল (সা.) মক্কা অভিযানের প্রস্তুতি শুরু করেন। বনু সুলাইম, বনু আশজা, বনু মুযায়না, বনু গিফার এবং বনু আসলাম গোত্রের অনেকেই প্রস্তুতি নিয়ে মদীনা থেকে রাসুল (সা.) এর সাথে বের হন। এ দলের সাথে খালিদ বিন ওয়ালিদ ছিলেন। আবার অনেকেই পথিমধ্যে যোগ দেন। ইবনে হিশাম বলেন,“মুসলিম বাহিনীর সেনা সংখ্যা দশ হাজারে উপনীত হয়।” এরপর তিনি আরো বলেন,“ বনি সালীম গোত্র থেকে সাতশ’এবং আরেকটি বর্ণনানুসারে এক হাজার যোদ্ধা, বনী গিফার গোত্র থেকে চারশ’ যোদ্ধা, আসলাম গোত্র থেকে চারশ’ যোদ্ধা, মাযীনাহ্ গোত্র থেকে এক হাজার তিনশ’ যোদ্ধা এবং বাকী অংশ মুহাজির, আনসার ও তাঁদের মিত্রগণ এবং বনী তামীম, কাইস ও আসাদ গোত্র থেকে কতিপয় লোকের সমন্বয়ে গঠিত।”এভাবে মুসলমানদের মোট সৈন্য সংখ্যা দাঁড়ায় ১০,০০০।যেখানে হুদাইবিয়ার সন্ধির সময় মাত্র ১৪০০ জন মুসলমান উপস্থিত ছিলেন। হযরত মুহাম্মদ (সা.) ১০ রমজান ৮ম হিজরি মদিনা থেকে মক্কার উদ্দেশে যাত্রা করেন।মদীনা দেখভালের দায়িত্বে নিযুক্ত করে যান আবু রুহম কুলছূম আল-গেফারী (রা)কে । "Allah's Messenger (S.A.W.) travelled in the month of Ramadan and he fasted till he reached (a place called) 'Usfan’, then he asked for a tumbler of water and drank it by the daytime so that the people might see him. He broke his fast till he reached Makkah." Ibn Abbas used to say, "Allah's Apostle fasted and sometimes did not fast while traveling, so one may fast or may not (on journeys)" (Sahih Bukhari- 4279)


রাসুল (সা.) মক্কার উপকণ্ঠে এসে মারাউজ জাহরান নামক গিরি উপত্যকায় তাঁবু স্থাপন করলেন। রান্নার জন্য আলাদা আলাদা চুলার ব্যবস্থা করলেন, যাতে করে শত্রুর মনে ভয় সৃষ্টি হয়ে যায়।মুসলিম সৈন্যবহিনী মক্কার কাছাকাছি মারাউজ জাহরানে পৌঁছলে দীর্ঘ ২১ বছরের নিষ্ঠুরতার পুরোহিত আবু সুফিয়ান হাকিম ইবনে নিজাম ও বুদাইলকে সঙ্গে নিয়ে গোপনে মুসলমানদের সংখ্যা-শক্তি দেখতে বের হলেন। হযরত আববাস (রা.) এর হাতে আবু সুফিয়ান বন্দি হয়ে রাসুল (সা.)–এর কাছে আনীত হন।মক্কা বিজয়ের আগের ইসলাম ও মুসলমানদের অনেক ক্ষতি করেছিল আবু সুফিয়ান। সে বারবার মদীনা আক্রমণের ষড়যন্ত্র করেন এবং একাধিকবার রাসূল (সা.)-কে হত্যার গোপন চক্রান্ত করে।সে হিসেবে আবু সুফিয়ান তাকে দেখা মাত্রই হত্যা করার কথা ছিল। কিন্তু মুসলিম বাহিনী তা না করে আবু সুফিয়ানকে বিশ্বনবির কাছে হস্তান্তর করেন। কিন্তু রাসুল (সা.) তার প্রতি করুণার দৃষ্টি প্রসারিত করে বললেন,যাও, আজ আর তোমাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে না। আল্লাহ তোমাকে ক্ষমা করে দিন। তিনি সমস্ত ক্ষমা প্রদর্শনকারীর চেয়ে শ্রেষ্ঠ ক্ষমা প্রদর্শনকারী। আবু সুফিয়ানের সঙ্গে এই আচরণ ছিল সম্পূর্ণ অভিনব। রহমাতুল্লিল আলামীনের এই আচরণে আবু সুফিয়ানের হৃদয় ও মন বিগলিত হয়ে ভাবান্তরের সৃষ্টি হল। তিনি বুঝতে পারলেন মক্কায় সৈন্য নিয়ে আসার পেছনে এই মহানুভব ব্যক্তির হৃদয়ে না প্রতিশোধ গ্রহণের মানসিকতা আছে আর না আছে দুনিয়াবী রাজা-বাদশাহের ন্যায় কোন স্পর্ধা-অহংকার। এ কারণেই তাকে মুক্তি দেয়া সত্ত্বেও তিনি মক্কায় ফিরে না গিয়ে ইসলাম কবুল করে মুসলমানদের দলে অন্তর্ভুক্ত হলেন।
মক্কা নগরের চারপাশে প্রায় এক হাজার ফিট উঁচু পাহাড়। চারকোণে ৪টি প্রবেশ পথ ছিল। এ জন্য মক্কায় প্রবেশের জন্য রাসুল (সা) মুসলমান সৈন্যদের চারটি ভাগে বিভক্ত করলেন। প্রথম ভাগের দলনেতা ছিলেন হযরত যুবায়ের (রা.)। দ্বিতীয় দলের দলনেতা ছিলেন হযরত আবু উবায়দা (রা.)। তৃতীয় দলের নেতা ছিলেন হযরত সাদ বিন উবাদা (রা.)। চতুর্থ দলের দল নেতা ছিলেন হযরত খালিদ বিন ওয়ালিদ (রা.)। ১৭ রমজান মঙ্গলবার সকালে আল্লাহর রাসূল (সা) মারাউজ জাহরান ত্যাগ করে মক্কায় প্রবেশের জন্য যাত্রা শুরু করলেন।তার আগে রাসুল (সা.)সাহাবায়ে কিরামের বিভিন্ন দলকে মক্কার বিভিন্ন দিক থেকে প্রবেশের নির্দেশ দিলেন এবং বললেন, কাউকে আক্রমণ করবে না। কোনো সাধু–সন্ন্যাসীকে হত্যা করবে না, বালক–বালিকা ও শিশুদের হত্যা করবে না, নারীদের হত্যা করবে না, বৃক্ষনিধন করবে না, শস্যক্ষেত্র ধ্বংস করবে না, ঘরবাড়িতে অগ্নিসংযোগ করবে না এবং আত্মসমর্পণকারীকে আঘাত করবে না।মক্কার কোনো অধিবাসীকে হত্যা করবে না। তবে কেউ যদি তোমাদের ওপর অস্ত্র ওঠায়; তবে তোমরা শুধুমাত্র আত্ম্ররক্ষার জন্য অস্ত্র ধারণ করবে। কিছু সংখ্যক নির্বোধ মক্কাবাসি এদের মধ্যে ইকরিমা বিন আবু জাহল, ছাফওয়ান বিন উমাইয়া, সোহায়েল বিন আমর প্রমুখের নেতৃত্বে মক্কার খান্দামা পাহাড়ের কাছে গিয়ে একত্রিত হলো মুসলিম বাহিনীকে বাধা দেওয়ার জন্য। এদের মধ্যে কুরায়েশ মিত্র বনু বকরের জনৈক বীর পুঙ্গব হামাস বিন ক্বায়েস ছিল। যে ব্যক্তি মুসলমানদের মোকাবিলার জন্য ধারালো অস্ত্র শান দিয়েছিল এবং মুসলমানদের ধরে এনে তার স্ত্রীর গোলাম বানাবার অহংকার প্রদর্শন করে স্ত্রীর সামনে কবিতা পাঠ করেছিল।

খালিদ বিন ওয়ালিদ যখন রাসুলের আদেশে রওনা দিলেন। তাঁর কাফেলা খান্দামায় পৌঁছানোর পর কুরাইশদের তীর বর্ষণের ফলে খালিদের কাফেলার দু’জন শাহাদত বরণ করেন। তাঁরা দল থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিলেন। যারা শাহাদত করেন - কুরয বিন জাবের আল-ফিহরী এবং খুনায়েস বিন খালেদ বিন রাবিয়াহ।তাদের নাম নিয়ে বিভ্রাট আছে। Allah's Messenger (S.A.W.) ordered Khalid bin Al-Walid to enter Makkah from its upper part from Kada while the Prophet (S.A.W.) himself entered from Kuda (hill in Makkah). Two men from the cavalry of Khalid bin Al-Walid named Hubaish bin Al-Ashar and Kurz bin Jabir Al-Fihri were martyred on that day. (Sahih Bukhari: 4280)। খালিদ বিন ওয়ালিদের পাল্টা আক্রমণে কুরাইশদের ১২-১৩ জন লোক নিহত হয়।ভয়ে তাদের মধ্যে পালানোর হিড়িক পড়ে যায়। অতঃপর খালেদ মক্কার গলিপথ সমূহ অতিক্রম করে ছাফা পাহাড়ে উপনীত হলেন। অন্যদিকে বামবাহুর সেনাপতি হযরত যুবায়ের (রা.) মক্কার উপরিভাগ দিয়ে প্রবেশ করে হাজূন নামক স্থানে অবতরণ করলেন। একইভাবে হযরত আবু উবায়দা (রা.)পদাতিক বাহিনী নিয়ে বাত্বনে ওয়াদীর পথ ধরে মক্কায় পৌঁছে যান।হতাহতের বিষয়টি জানতে পেরে রাসূল (সা.) খালিদের কাছে এর কৈফিয়ত তলব করলেন।খালিদ বিস্তারিত বর্ণনা দেন। রাসুল (সা.) বলেছিলেন, আল্লাহর ফয়সালা এ রকমই ছিল।রাসুল (সা.) মক্কা অভিমুখে রওনা দিলেন। Aishah (R.A.) said:“During the year of the Conquest (of Makkah), the Prophet (S.A.W.) entered Makkah through Kada which was at the upper part of Makkah.” (Sahih Bukhari-4290)।আনসার ও মুহাজির পরিবেষ্টিত হয়ে রাসূলুল্লাহ (সা) উটে চড়ে ক্রীতদাস উসামা ইবনে জায়েদের সঙ্গে অবনত মস্তকে সবার শেষে সাদা ও কালো পতাকা নিয়ে সামনের দিক থেকে বিনা বাধায় মক্কায় প্রবেশ করেন।তাঁর মাথায় ছিল লৌহ শিরস্ত্রাণ এবং তার ওপর ছিলো কালো পাগড়ী বাঁধা ।এসময় তিনি উচ্চস্বরে সূরা আল ফাতাহ তেলাওয়াত করছিলেন। Narrated Abdullah bin Mughaffal (R.A.), who said:“I saw Allah's Messenger (S.A.W.) reciting Surat Al-Fath on his she-camel on the day of the Conquest of Makkah.” (Sahih Bukhari-5034)।রাসুলের মধ্যে ছিল বিনয় ও নম্রতা। মক্কা বিজয়ের এই ঘটনার সাথে আধুনিক কালের কোন রাজ্য জয়ের ঘটনাকে তুলনা করলেই ইসলাম ও জাহিলিয়াতের পার্থক্যটা স্পষ্টভাবে ধরা পড়ে। জাহিলিয়াতের পুজারিরা বিজয়কে মনে করে নিজেদেরই কৃতিত্বের ফসল। তাই বিজয় উৎসবের নামে তারা প্রকাশ করে দানবীয় উল্লাস। আর সেই দানবীয় উল্লাসের শিকার হয় অসহায় ও নিরস্ত্র মানুষ।আল্লাহর রাসুল (সা.) মক্কা জয়ের আগেই মক্কাবাসীদের মন জয় করাকে বড় বিজয় মনে করলেন। সব ধরণের রক্তপাত, ক্ষয়ক্ষতি ও জানমালের নিরাপত্তা বিধানে রাসূল (সা.) নিরাপদ ও সংরক্ষিত অঞ্চল ঘোষণা করেন। তিনি বলেন, ১.যারা নিজের ঘরের দরজা বন্ধ করে থাকবে তারা নিরাপদ, ২.যারা আবু সুফিয়ানের ঘরে আশ্রয় নেবে তারা নিরাপদ এবং ৩.যারা কাবা ঘরে আশ্রয় নেবে তারাও নিরাপদ এবং ৪.যে নিরস্ত্র থাকবে সেও নিরাপদ।
রাসুল (সা) ওছমান বিন তালহাকে ডেকে তার কাছ থেকে কাবা ঘরের চাবি নিয়ে দরজা খুলে ভেতরে প্রবেশ করেন। তিনি সেখানে বহু মূর্তি ও ছবি দেখতে পান।রাসুল (সা.) প্রথমে মূর্তিগুলো সরানোর নির্দেশ দিলেন। তখন কাবা ঘরে ৩৬০টি মূর্তি ও কাবার দেয়ালে অসংখ্য চিত্র অঙ্কিত ছিল। সকল দেব-দেবীর মূর্তি ভেঙ্গে ধ্বংস করে ফেলা হলো। এরপর রাসুল (সা.) কুরআনের নিম্নোক্ত আয়াত পাঠ করলেন,"বল, সত্য এসেছে এবং মিথ্যা বিলুপ্ত হয়েছে। নিশ্চয়ই মিথ্যা বিলুপ্ত হতে বাধ্য।"(সুরা বনু ইসরাঈল আয়াত-৮১)।Narrated by Abdullah (R.A.), who said:'When the Prophet (S.A.W.) entered Makkah on the day of the Conquest, there were 360 idols around the Kaaba. The Prophet (S.A.W.) started striking them with a stick he had in his hand and was saying, "Truth has come and Falsehood will neither start nor will it reappear.”(Sahih Bukhari: 4287)।ইবনে মাসউদ (রা) বলেন, মক্কা বিজয়ের দিন রাসুল (সা.) যখন মক্কায় প্রবেশ করেন, তখন বায়তুল্লাহর চতুৰ্পার্শ্বে তিনশ ষাটটি মূর্তি স্থাপিত ছিল। রাসুল (সা.) যখন সেখানে পৌঁছেন, তখন তাঁর মুখে এ আয়াতটি উচ্চারিত হচ্ছিল, এবং তিনি স্বীয় ছড়ি দ্বারা প্রত্যেক মূর্তির বক্ষে আঘাত করে যাচ্ছিলেন।(বুখারী-২৪৭৮, ৪৭২০, মুসলিম- ১৭৮১)।তিনি আরও পড়েন, “বলুন, ‘সত্য এসেছে এবং অসত্য না পারে নূতন কিছু সৃজন করতে, আর না পারে পুনরাবৃত্তি করতে।”(সুরা সাবা আয়াত-৪৯)।সুতরাং সত্য প্রতিষ্ঠিত হলে মিথ্যা অপসৃত হবেই। অন্য আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেন, “কিন্তু আমি সত্য দ্বারা আঘাত হানি মিথ্যার উপর; ফলে তা মিথ্যাকে চূর্ণ-বিচূর্ণ করে দেয় এবং তৎক্ষণাৎ মিথ্যা নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়।(সূরা আল আম্বিয়া- ১৮)।আরো বলেন,“আল্লাহ মিথ্যাকে মুছে দেন এবং নিজ বাণী দ্বারা সত্যকে প্রতিষ্ঠিত করেন। অন্তরে যা আছে সে বিষয়ে তিনি তো সবিশেষ অবহিত ৷” (সুরা আশ-শূরা-২৪)। অতঃপর রাসুল (সা.) তার সঙ্গী-সাথীদের নিয়ে কাবায় দু'রাকাত নামাজ আদায় করেন।কেউ এই নামাজকে শুকরিয়ার নামাজ বলেছেন। কোন কোন বিদ্বান একে ‘তাহিইয়াতুল মসজিদ’ দু’রাকাত নামাজ বলেছেন।জন্মভূমি মক্কা হতে বিতাড়িত হওয়ার ৭ বছর ৩ মাস ২৭ দিন পর বিজয়ী বেশে পুনরায় মক্কায় ফিরে এলেন মক্কার শ্রেষ্ঠ সন্তান বিশ্ব মানবতার মুক্তিরদূত, নবীকুল শিরোমণি, শেষনবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)। বিনা যুদ্ধেই মক্কার নেতারা তাঁর নিকটে আত্মসমর্পণ করেন। মক্কার সকল নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিবর্গ এতদিন যারা মুসলমানদের গালাগালি করেছে, মারধর করেছে, তাদের ঘরবাড়ি থেকে বিতাড়ন করেছে, লুটপাট করেছে, মুসলমানদের সম্পদ দখল করে নিয়েছে, রাসুল (সা.) এর চাচা হযরত হামযার কলিজা চিবিয়ে খেয়েছে, রাসুল (সা.) কে হত্যার ষড়যন্ত্র করেছে, মক্কা থেকে হিজরত করতে বাধ্য করেছে তারাসহ সর্বস্তরের মানুষ আজ তার সামনে উপস্থিত। তিনি দরজার দুই পাশ ধরে নীচে দন্ডায়মান কুরায়েশদের উদ্দেশ্যে এক সংক্ষিপ্ত ভাষণ দেন- তিনি ভাষণে সাম্য, মৈত্রী ও একতার কথা বললেন, ‘হে কুরাইশগণ! অতীতের সকল ভ্রান্ত ধারণা মন থেকে মুছে ফেলো, কৌলীন্যের গর্ব ভুলে যাও, সকলে এক হও। সকল মানুষ সমান, এ কথা বিশ্বাস করো।কুরআনের আয়াতের উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি বলেন, “হে মানুষ! আমি তোমাদের সকলকেই এক নারী ও পুরুষ হতে সৃষ্টি করেছি এবং তোমাদিগকে গোত্রে ও শাখায় পৃথক করেছি, যাতে তোমরা পরস্পর পরিচিত হতে পারো। নিশ্চয় তোমাদের মধ্যে আল্লাহর কাছে সেই বেশি সম্মানিত, যে বেশি পরহেজগার।”’ (সুরা- হুজরাত আয়াত-১৩)। রাসুল (সা.) জনগণকে উদ্দেশ্য করে বললেন-
"হে কুরাইশগণ, তোমাদের প্রতি আমার কি রকম আচরণ করা উচিৎ বলে মনে কর?"
এবং তারা বলল, "করুণা, হে আল্লাহর নবী। আমরা আপনার কাছ থেকে ভালো ছাড়া কিছুই আশা করি না।"
এরপর রাসুল (সা.) ঘোষণা করলেন,
"আমি তোমাদের ঠিক তাই বলব যা নবি ইউসুফ (আ.) তার ভাইদেরকে বলেছিলেন। আজ তোমাদের প্রতি আমার কোন অভিযোগ নেই।"(সুরা ইউসুফ আয়াত-৯২)। তোমরা যেতে পারো কারণ তোমরা মুক্ত।("O Quraish, what do you expect from me today?"
And they said, "Mercy, O Prophet of Allah. We expect nothing but good from you."
After their reply, Messenger of Allah (S.A.W.) declared:
" Today I will speak to you as Yusuf spoke to his brothers. I will not harm you and Allah will forgive you for He is Merciful and Loving. Go you are free.)"রাসূলের (সা.) এ ভাষণ শুনে আর তার আচরণ দেখে সমবেত সবাই ঘোষণা করলেন, সত্যি আপনি আল্লাহর নবী; আপনি কোন দেশ বিজয়ী সাধারণ বীর যোদ্ধা বা বাদশাহ নন।বিশ্বনবি (সা) এর ভাষণে মক্কার চরম শত্রুরাও মুগ্ধ হয়েছিলেন। ভালোবাসার আবেগে আপ্লুত হয়েছিলেন।এভাবেই ঘোষিত হয়েছিল পবিত্র নগরীরি ঐতিহাসিক মক্কা বিজয়। যা বিশ্ব মানবতার জন্য এক মহান শিক্ষা।William Muir বলেন, The magnanimity with which Muhammad treated a people which had so long hated and rejected him was worthy of admiration.

রাসুলুল্লাহ (সা.) সংঘাত ও রক্তপাত এড়ানোর সাধারণ নির্দেশনা জারি করেন। তবু বিক্ষিপ্ত ঘটনায় ১২-১৪ জন মানুষ নিহত হয়। রহমতের নবী মুহাম্মদ (সা.) সে মানবিক ক্ষমার দিন চার পুরুষ ও দুই নারীর বিরুদ্ধে মৃত্যু পরোয়ানা জারি করেন। সাদ (রা.) থেকে বর্ণিত, বিজয়ের দিন রাসুলুল্লাহ (সা.) মক্কায় সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করেন। তবে চার পুরুষ ও দুই নারী ছাড়া। তিনি বলেন, তাদের যদি কাবার গিলাফ আঁকড়ে ধরা অবস্থায়ও পাও তবু তাদের হত্যা করো।’ (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস-২৬৮৩)। কোনো কোনো বর্ণনায় নয় জনের কথা আছে।তারা হলেন-১.আব্দুল উযযা বিন খাত্বাল (২-৩) তার দুই দাসী, যারা রাসূলকে ব্যঙ্গ করে গান গাইত ৪.সারাহ- যে আব্দুল মুত্ত্বালিবের সন্তানদের কারো দাসী ছিল। এই দাসীই মদীনা থেকে গোপনে হাতেব বিন আবী বালতা‘আহর পত্র বহন করেছিল। ৫.ইকরিমা বিন আবু জাহেল ৬.আব্দুল্লাহ বিন সা‘দ বিন আবী সারাহ ৭. হারেছ বিন নুফাইল বিন ওয়াহাব ৮.মিক্বইয়াস বিন হুবাবাহ ৯.হোবার ইবনুল আসওয়াদ। পরে এদের মধ্যে চারজনকে হত্যা করা হয় এবং পাঁচ জনকে ক্ষমা করা হয়। তারা সবাই ইসলাম কবুল করেন।যাদেরকে হত্যা করা হয়, তারা হ’ল- ১.আব্দুল উযযা ইবনু খাত্বাল। সেও ইসলাম গ্রহণ করে। রাসুলুল্লাহ (সা.) তাকে সদকা আদায়ের জন্য পাঠালে সহকর্মীকে হত্যা করে সে মক্কায় পালিয়ে যায় এবং ইসলাম ত্যাগ করে। সে কা‘বা গৃহের গেলাফ ধরে ঝুলছিল। জনৈক সাহাবি এখবর দিলে রাসূল (সা.) তাকে হত্যার নির্দেশ দেন।সাঈদ ইবনে হুরাইস মাখজুমি এবং আবু জাররাহ আসলামি (রা.) তাকে হত্যা করেন।২.হুবাবা ইবনে মুকিস। এ ব্যক্তি ইতিপূর্বে মুসলমান হয়ে জনৈক আনছার ছাহাবীকে হত্যা করে মুরতাদ হয়ে মুশরিকদের সঙ্গে মিলিত হয়েছিল। নামিলা বিন আবদুল্লাহ তাকে হত্যা করেন। ৩. হুওয়াইরিছ বিন নুক্বাইয বিন ওয়াহাব। এ ব্যক্তি মক্কায় রাসূলকে কঠিনভাবে কষ্ট দিত। এ ব্যক্তি মক্কা থেকে মদীনায় প্রেরণের সময় রাসূল-কন্যা হযরত ফাতেমা ও উম্মে কুলছূমকে তীর মেরে উটের পিঠ থেকে ফেলে দিয়েছিল। হযরত আলী তাকে হত্যা করেন। ৪.ইবনু খাত্বালের দুই দাসীর মধ্যে একজন।মনিবের সঙ্গে কবিতা ও গানে গানে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর বিরুদ্ধে কুৎসা রচনা করত। তাকে একজনকে হত্যা করা হয়।
ক্ষমাপ্রাপ্ত পাঁচজন হলেন ১. আব্দুল্লাহ ইবনু আবী সারাহ সে ইতিপূর্বে একবার ইসলাম কবুল করে মুরতাদ হয়ে যায়। মক্কা বিজয়ের দিন হযরত ওসমান তাকে সাথে নিয়ে রাসূলের দরবারে এসে আশ্রয় প্রার্থনা করেন। ২.ইকরিমা বিন আবু জাহল। তার স্ত্রী এসে আশ্রয় প্রার্থনা করলে তাকে আশ্রয় দেওয়া হয়। পরে ইয়ামনের পথে পলায়নরত ইকরিমাকে স্ত্রী গিয়ে নিয়ে আসেন। ৩. হোবার ইবনুল আসওয়াদ। এ ব্যক্তি রাসূলের গর্ভবতী কন্যা যয়নবকে হিজরতের সময় তীক্ষ্ণ অস্ত্র দিয়ে আঘাত করেছিল। যাতে তিনি আহত হয়ে উটের পিঠের হাওদা থেকে নীচে পাথরের উপরে পতিত হন এবং তাঁর গর্ভপাত হয়ে যায়। মক্কা বিজয়ের দিন এই ব্যক্তি পালিয়ে যায়। পরে মুসলমান হয় । ৪.ইবনু খাত্বালের দুই গায়িকা দাসীর মধ্যে একজনের জন্য আশ্রয় চাওয়া হয়। অতঃপর সে ইসলাম কবুল করে। ৫. সারাহর জন্যও আশ্রয় প্রার্থনা করা হয় এবং সেও ইসলাম কবুল করে।

উপরিউক্ত ৯ জনের তালিকা ছাড়াও অন্য কয়েকজনের নাম পাওয়া যায়। ফলে সর্বমোট সংখ্যা দাঁড়ায় ১৪ জন। যার মধ্যে ৮ জন পুরুষ ও ৬ জন নারী।যাদের মধ্যে প্রসিদ্ধ কয়জনের অন্যতম ছিলেন আবু সুফিয়ানের স্ত্রী হিন্দ বিনতে ওৎবা। যিনি মক্কা বিজয়ের দিন মুসলমান হন। অন্যজন হ’লেন হামযাহ (রাঃ)-এর হত্যাকারী ওয়াহশী বিন হারব, যিনি পরে মদীনায় গিয়ে ইসলাম কবুল করেন। অন্যজন হ’লেন বিখ্যাত কবি কা‘ব বিন যুহায়ের, যিনি পরে রাসূলের নামে প্রশংসা মূলক কবিতা লিখে মদীনায় গিয়ে ইসলাম কবুল করেন। রাসূল (ছাঃ) খুশী হয়ে তাকে নিজের চাদর উপহার দেন বলে উক্ত কবিতাটি কাসিদা বুরদাহ নামে পরিচিতি লাভ করে।মক্কাবাসীর আত্মসমর্পণের পর মুহাম্মাদের সম্মান বৃদ্ধি পায়। আরব অঞ্চল হতে সকল কূটনৈতিক প্রতিনিধিগণ তাকে স্বীকৃতি দিতে মদিনায় আসেন। এই বিজয়ের ফলে মুসলমানদের পক্ষে আরবের অন্যান্য এলাকা বিজয় করা সহজসাধ্য হয়ে পড়ে।মক্কা বিজয়ের পর পবিত্র কাবাঘর শিরক ও মূর্তির অবিচার থেকে মুক্ত হয়। আরবে ইসলামের অগ্রযাত্রা অপরিহার্য হয়ে ওঠে এবং সমগ্র আরব উপদ্বীপ মদিনার ইসলামী রাষ্ট্রকে রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে স্বীকৃতি দেয় এবং সমীহ করতে শুরু করে।মক্কা বিজয়ের মাত্র ১৯ দিন পর সংঘটিত হুনাইনের যুদ্ধে নওমুসলিম কুরাইশরা বীরত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল।মক্কা বিজয়ের মধ্য দিয়ে চিরদিনের জন্য মিথ্যার ওপর সত্যের জয় হয়। অন্ধকারের ওপর আলোর জয় হয়।ইতিহাস যাদের মহানায়ক বলে হিটলার, আলেকজান্ডার, আর নেপোলিয়ান বেনাপোর্টের বিজয় অভিযানগুলো ছিল রক্তপাতের ইতিহাস,মানুষের রক্তে হাত রঞ্জিত হবার ইতিহাস।চেঙ্গিস হালাকু খানের যুদ্ধ ও অভিযান ছিল হিংস্রতা ,বর্বরতায় আর নিরীহ নিরপরাধ মানুষের রক্তের হোলিখেলা।আধুনিক বিশ্বেপ্রথম বিশ্বযুদ্ধে ৯০ লক্ষ যোদ্ধা ও ৫০লক্ষ নিরীহ মানুষ নিহত হয়।প্রায় এককোটি সৈন্য এবং ২কোটি ১০ লক্ষ সাধারণ মানুষ আহত হয় এ যুদ্ধের অন্য ফল হলো-ইনফ্লুয়েঞ্জায় বিশ্বব্যাপী ৫কোটি মানুষের মৃত্যু হয়।বলশেভিকরা ১৯১৭ সালে রাশিয়ার এবং ফ্যাসিস্টরা ১৯২২ সালে ইতালির ক্ষমতায় আরোহণ করে লাখ লাখ মানুষকে হত্যা করে ।দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে পৃথিবীর ইতিহাসে একমাত্র পারমাণবিক অস্ত্রের প্রয়োগ প্রভৃতি ঘটনায় এই যুদ্ধে প্রায় ৫কোটি থেকে সাড়ে ৮ কোটি মানুষ মৃত্যুবরণ করে। এসব পরিসংখ্যান এটাই প্রমাণ করে যে এসবই পৃথিবীর ইতিহাসে নৃশংসতম যুদ্ধ।সেহিসেবে মুসলমানদের মক্কা বিজয় ছিল দুএকটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা বাদে সবচেয়ে শান্তিপূর্ণ,নিরাপদ ও রক্তপাতহীন। মহানবী (সা.) এর শান্তিপূর্ণ মক্কা বিজয় মানবেতিহাসের এক চমকপ্রদ অধ্যায়। কার্যত তিনি বিনা যুদ্ধে, বিনা রক্তপাতে, বিনা ধ্বংসে মক্কা জয় করেন।ঐতিহাসিক P.K Hitti বলেন, Hardly a triumphal entry in ancient annals is comparable to this. (History of the Arabs P-118)

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

যে গাছ ইহুদিদের আশ্রয় দেবে অর্থাৎ ইহুদিদের বন্ধু গাছ

খন্দক যুদ্ধ কারণ ও ফলাফল