পোস্টগুলি

কেন বিপদে হতাশ হব না!

এক হজরত আইয়ুব (আ) ছিলেন রোমের অধিবাসী এবং মহান আল্লাহর নবী হজরত ইব্রাহিম (আ) এর বংশধর। হজরত ইব্রাহিম (আ.) এর পুত্র হজরত ইসহাক (আ)। হজরত ইসহাক (আ.) এর পুত্রের বংশধর হজরত আইয়ুব (আ.)। হজরত আইয়ুব (আ.) যেখানে বসবাস করতেন তাওরাতে তা বোসরা নামে উল্লেখ করা আছে। হজরত আইয়ুব (আ.) ছিলেন সে সময়ে বিশাল ধন সম্পদের মালিক। যাবতীয় সকল ধরনের সম্পত্তি তার কাছে ছিল। বিশাল পরিমান জমি-জমা, গৃহ-পালিত পশু এবং দাস-দাসী ছিল। সম্পদ ছাড়াও পরিবার পরিজন ও প্রচুর সন্তান নিয়ে সুখে ছিলেন তিনি। কিন্তু জীবনের ৭০ বছর বয়সে এসে মহান আল্লাহর কঠিন পরীক্ষায় একে একে তিনি সব হারাতে শুরু করেন। তিনি এক কঠিন চর্মরোগে আক্রান্ত হন। ধীরে ধীরে এই রোগ তাঁর সারা দেহে ছড়িয়ে পড়ে। রোগের তীব্রতা এত প্রকট ছিল যে, তাঁর শরীরে পচন ধরে এবং পোকা জন্মায়। এ ছাড়াও পচা অংশ এবং পুঁজ থেকে দুর্গন্ধ বের হতে থাকে। এর ফলে একে একে তাঁর ধনসম্পত্তি, জমি, টাকা-পয়সা, পশু, দাস-দাসী সবই হারিয়ে যায়। এক পর্যায়ে শহরের বাইরে একটি আস্তাকুড়ের পাশে আইয়ুব (আ) কে আশ্রয় নিতে হয়। তার এই বিপদে শুধু মাত্র একজন তাকে ছেড়ে যায় নি, তিনি মহান আল্লাহর প্রিয় বান্দা হজরত আইয়ুব (আ) এর...

যুগেযুগে অপবাদ অপনোদন

  যুগেযুগে নবী রাসুল ও তাদের অনুসারীরের বিরুদ্ধে মুশরিক, মুনাফেক ও কাফেরদের অপবাদ দেয়ার ষড়যন্ত্র ছিল, আছে ভবিষ্যতেও থাকবে। কিন্তু দিনশেষে সত্যের বিজয় অত্যাসন্ন। হজরত ইউসুফ (আ) বৈমাত্রেয় ভাইদের চক্রান্তে কূপে নিক্ষিপ্ত হওয়ার পর মিশরগামী ব্যবসায়ী কাফেলার মাধ্যমে কূপ থেকে উদ্ধার পান। অতঃপর ভাইয়েরা কাফেলার নিকট গোলাম হিসেবে ১৮ দিরহামের বিনিময়ে বিক্রি করে দেন। উক্ত কাফেলা ইউসুফ (আ)কে মিশরের উজিরের নিকট বিক্রয় করে দেয়। মিশরের উজিরের নিকট তিনি লালিতপালিত হন ।যখন ইউসুফ (আ) যৌবনে পদার্পণ করেন, তখন তার স্ত্রী জুলেখা তাকে ফুসলাইতে থাকেন। একদিন জুলেখা ঘরের সাতটি দরজা বন্ধ করে কুপ্রস্তাব দেন। হযরত ইউসুফ (আ) জুলেখার কুপ্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে দৌড় দিলে এক এক করে সাতটি বন্ধ দরজা খুলে যায়। সর্বশেষ দরজা খোলার পূর্বে জুলেখা ইউসুফ (আ)-এর পিছন থেকে তার জামা টেনে ধরলে সেই জামা ছিঁড়ে যায়। দরজা খুলেই জুলেখার স্বামীকে দণ্ডায়মান দেখতে পায়। তখন জুলেখা হযরত ইউসুফ (আ) সম্পর্কে মিথ্যা অপবাদ দেয়। পরবর্তী সময়ে উজির ইউসুফ (আ)কে জেলে দেন।ইউসুফ (আ.) ছিলেন ইমান ও নবুয়তের আলোয় আলোকিত। তাঁর বিবেক ছিল স্বচ্ছ। অন্তর ছি...

দায়িত্ব পালনে বাড়াবাড়ি না করি

  হযরত ওমর(রা) তখন মুসলিম জাহানের দ্বিতীয় খলিফা। তিনি প্রায় রাতে ছদ্মবেশে বের হতেন। জনগণের সুখ দুঃখ দেখার জন্য। এমনই এক রাতে বের হয়ে সুরেলা আওয়াজ শুনতে পেলেন। একটি লোক গান গাইছিল।তাঁর সন্দেহ হলো। তিনি প্রাচীরে উঠে দেখলেন, পাশের ঘরে এক পুরুষ বসে আছে। তার পাশে মদ ভর্তি একটি পাত্র ও গ্লাস। অদূরে এক মহিলাও সঙ্গে রয়েছে।খলিফা চিৎকার করে বললেন, ওরে আল্লাহর দুশমন! তুই কি মনে করেছিস যে, তুই আল্লাহর নাফরমানী করবি, আর তিনি তোর গোপন অভিসারের কথা ফাঁস করবেন না? জবাবে সে বললো, “আমিরুল মোমেনীন, তাড়াহুড়ো করবেন না। আমি যদি একটি গুনাহও করে থাকি, তবে আপনি করেছেন তিনটি গুনাহ। প্রথমত: আল্লাহ তায়ালা মানুষের দোষত্রুটি খুঁজে বেড়াতে নিষেধ করেছেন কিন্তু আপনি দোষ ত্রুটি খুঁজছেন। দ্বিতীয়ত:আল্লাহ আদেশ দিয়েছেন কারো বাড়িতে ঢুকলে দরজা দিয়ে ঢুকতে, কিন্তু আপনি প্রাচীর ডিঙ্গিয়ে ঘরে প্রবেশ করেছেন। তৃতীয়ত:আল্লাহ নির্দেশ দিয়েছেন যে, নিজের বাড়ি ছাড়া অন্যের বাড়িতে অনুমতি নিয়ে ঢুকতে।কিন্তু আপনি আমার অনুমতি ছাড়াই আমার বাড়িতে প্রবেশ করেছেন।” এ জবাব শুনে হযরত ওমর(রা) নিজের ভুল স্বীকার করলেন এবং তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা...

একজন রাখালের আল্লাহ ভীতি

  একবার হযরত উমর ফারুক ( রা. ) সফরে ছিলেন। সফরের যা খাবার ছিল তা ফুরিয়ে গেল। সামনে দেখলেন এক রাখাল জঙ্গলে ছাগলের পাল চরে বেড়াচ্ছে। আরববাসীদের মধ্যে এ নিয়ম ছিল যে, তারা মেহমানদারী হিসেবে মূল্য ব্যতীত দুধ পান করাত। তাই ওমর (রা) পালের রাখালের নিকট গিয়ে বললেন, আমি একজন মুসাফির। আমার সফরের সব খাবার শেষ হয়ে গেছে। তুমি একটি বকরীর দুধ দোহন করে আমাকে দাও, আমি পান করব। রাখাল উত্তর দিল, আপনি একজন মুসাফির, আপনাকে দেওয়ার জন্য আমি সম্পূর্ণ প্রস্তুত। কিন্তু সমস্যা হল, এ সমস্ত বকরীর মালিক আমি নই। এগুলোর মালিক অন্য একজন। আমার শুধু এগুলো চড়ানোর দায়িত্ব। এগুলো আমার নিকট আমানত স্বরূপ। তাই শরীয়তের দৃষ্টিকোণ থেকে আমি আপনাকে এগুলোর দুধ পান করানো বৈধ মনে করি না। এরপর হযরত ওমর ফারুক ( রা.) রাখালকে আরো কঠিনভাবে পরীক্ষা করতে গিয়ে বললেন, দেখ ভাই! আমি তোমাকে একটি লাভের কথা বলছি। যার ভেতরে তোমারও লাভ রয়েছে, আমারও লাভ রয়েছে। আর সেটি হচ্ছে যে, তুমি বকরীর পাল হতে একটি বকরী আমার কাছে বিক্রি করে দাও। তুমি টাকাগুলো পেয়ে গেলে, আর আমি বকরী পেয়ে গেলাম। পথে যেখানেই দরকার হবে, সেখানেই বকরীর দুধ পান করে নেব। ...

অনুপম চরিত্রের অধিকারী ইমাম বুখারী

ইমাম বুখারী (জন্ম ১৯৪ হি.-মৃত্যু ২৫৬ হি. ), আরব রীতি অনুযায়ী বংশধারাসহ পুরো নাম হলো মুহাম্মদ বিন ইসমাইল বিন ইবরাহীম বিন মুগীরাহ বিন বারদিযবাহ একজন বিখ্যাত হাদীসবেত্তা ছিলেন। তিনি বুখারী শরীফ নামে হাদীসের সংকলন করেন, যা মুসলমানদের নিকট হাদীসের সবোর্ত্তম গ্রন্থ হিসেবে বিবেচিত। বুখারা তাঁর জন্মস্থান বলে তাকে বুখারী বলা হয়। তাঁর জীবনের অসংখ্য ঘটনার মধ্যে একটি হলো - ইমাম বুখারী একবার একটি থলের ভিতর একহাজার স্বর্ণমুদ্রা নিয়ে হাদীস সন্ধানের জন্য সফরে বের হলেন। সফর অবস্থায় কোন এক চোর এই স্বর্ণমুদ্রাগুলো দেখে ফেলে এবং তা চুরি করার জন্য ইমাম বুখারীর পিছু নেয়। কিন্তু চোর তা চুরি করার সকল প্রকার চেষ্টা করা সত্ত্বেও ব্যর্থ হয়। পথিমধ্যে ইমাম বুখারী পানি পথে ভ্রমণের জন্য জাহাজে আরোহণ করলে চোরও তার সাথে যাত্রা শুরু করে। সেখানেও সে চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। পরিশেষে চোর মুদ্রাগুলো চুরি করার নতুন এক কৌশল অবলম্বন করে। সে এই বলে চিৎকার করতে থাকে যে, এই জাহাজে উঠার পর আমার একহাজার স্বর্ণমুদ্রা চুরি হয়ে গেছে। মুদ্রাগুলো একটি থলের ভিতর ছিল। সে থলেটির ধরনও বর্ণনা করল, যা সে ইতিপূর্বে ইমামের কাছে দেখেছিল।...

অস্ত্রোপচারের নানা যন্ত্র আবিষ্কারে মুসলিম বিজ্ঞানী

ছবি
#মো.আবু রায়হান অস্ত্রোপচারের বিভিন্ন যন্ত্র আবিষ্কারে মুসলিম বিজ্ঞানীরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। দশম শতাব্দীর মুসলিম সার্জন আল- জাহরাউয়ি আধুনিক যুগে ব্যবহৃত হয় এমন অনেক যন্ত্র উদ্ভাবন করেন। আবুল কাসিম খালাফ ইবনে আল আব্বাস আল জাহরাউয়ি (৯৩৬–১০১৩ ‎‎) ছিলেন একজন আরব মুসলিম চিকিৎসক। জাহরাউয়ির জন্ম ৯৩৬ খ্রিস্টাব্দে স্পেনের আন্দালুসিয়ার আজহারা শহরে। পশ্চিমা বিশ্বে তিনি অ্যালবুকাসিস নামে পরিচিত।তাকে মধ্যযুগের মুসলিম বিশ্বের সবচেয়ে মহৎ শল্যবিদ এবং তাকে আধুনিক শল্যচিকিৎসার জনক বলে গণ্য করা হয়।চিকিৎসাবিজ্ঞান নিয়ে তার লেখা বইয়ের নাম ‘কিতাব আল তাসরিফ’। এটি চিকিৎসা সংক্রান্ত ৩০ খণ্ডের বিশ্বকোষ। অস্ত্রোপচার থেকে শুরু করে মেডিসিন, অর্থোপেডিকস, প্যাথলজি, দন্তবিজ্ঞান, শিশু চিকিৎসাসহ চিকিৎসাবিজ্ঞানের নানা বিষয় অন্তর্ভুক্ত ছিল এই গ্রন্থে। বলা যায় এই গ্রন্থের পেছনেই তিনি তার সারা জীবন দিয়েছেন। বইটিতে খুঁটিনাটি নানা বিষয় সংযোজন করতে তার লেগেছিল ৫০ বছরেরও বেশি সময়। এই গ্রন্থের সব থেকে বড় খণ্ড ‘অন সার্জারি অ্যান্ড ইনস্ট্রুমেন্টস’ লেখা হয়েছে শল্যচিকিৎসা নিয়ে। এই বইটি বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয় হওয়ার কারণ...

ইবনুল হাইসাম সর্বপ্রথম ক্যামেরা উদ্ভাবনের ধারণা দেন

ছবি
#মো.আবু রায়হান ক্যামেরা বা আলোকচিত্র গ্রহণ ও ধারণের যন্ত্র আবিষ্কারেও রয়েছে মুসলিম অবদান। দৃশ্যমান স্থির বা গতিশীল ঘটনা ধরে রাখার জন্য এটি ব্যবহৃত হয়। আধুনিক আবিষ্কারগুলোর মধ্যে ক্যামেরা বহুল ব্যবহৃত এবং জনপ্রিয়। মোবাইল ফোনের কল্যাণে তা এখন মানুষের হাতে হাতে। মুসলিম বিজ্ঞানী নাম ইবনুল হাইসাম সর্বপ্রথম ক্যামেরা উদ্ভাবনের ধারণা দেন। ইবনুল হাইসাম ৯৫০ খ্রিষ্টাব্দে বুইদ আমিরাতের রাজধানী বর্তমান ইরাক এর বসরায় এক আরব পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। পূর্ণ নাম আবু আলি আল-হাসান ইবনে আল হাসান ইবন আল হাইসাম পশ্চিমা বিশ্বে তিনি তার ল্যাটিনকৃত নাম আল-হাজেন(Al hazen) হিসেবেও পরিচিত।ইবনুল হাইসাম একজন ইসলামি স্বর্ণযুগের একজন আরব গনিতবিদ, জ্যোতির্বিজ্ঞানী ও পদার্থবিজ্ঞানী। তিনি প্রায়শই আলোকবিজ্ঞানের জনক হিসেবে উল্লেখিত হন। ইবনুল হাইসাম বসরায় জন্মগ্রহণ করলেও তার কর্মজীবনের বেশিরভাগ কাটিয়েছেন ফাতেমীয় খিলাফতের রাজধানী কায়রোতে। সেখানে তিনি শিক্ষকতা ও গবেষণা করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। তাকে তার জন্মস্থান বসরার নামে আল-বসরি উপনামেও ডাকা হয়ে থাকে। ফার্সি ইতিহাসবিদ আবুল হাসান বায়হাকি তাকে দ্বিতীয় টলেমি বলে উল্ল...