সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

একজন রাখালের আল্লাহ ভীতি

 

একবার হযরত উমর ফারুক ( রা. ) সফরে ছিলেন। সফরের যা খাবার ছিল তা ফুরিয়ে গেল। সামনে দেখলেন এক রাখাল জঙ্গলে ছাগলের পাল চরে বেড়াচ্ছে। আরববাসীদের মধ্যে এ নিয়ম ছিল যে, তারা মেহমানদারী হিসেবে মূল্য ব্যতীত দুধ পান করাত। তাই ওমর (রা) পালের রাখালের নিকট গিয়ে বললেন, আমি একজন মুসাফির। আমার সফরের সব খাবার শেষ হয়ে গেছে। তুমি একটি বকরীর দুধ দোহন করে আমাকে দাও, আমি পান করব। রাখাল উত্তর দিল, আপনি একজন মুসাফির, আপনাকে দেওয়ার জন্য আমি সম্পূর্ণ প্রস্তুত। কিন্তু সমস্যা হল, এ সমস্ত বকরীর মালিক আমি নই। এগুলোর মালিক অন্য একজন। আমার শুধু এগুলো চড়ানোর দায়িত্ব। এগুলো আমার নিকট আমানত স্বরূপ। তাই শরীয়তের দৃষ্টিকোণ থেকে আমি আপনাকে এগুলোর দুধ পান করানো বৈধ মনে করি না।
এরপর হযরত ওমর ফারুক ( রা.) রাখালকে আরো কঠিনভাবে পরীক্ষা করতে গিয়ে বললেন, দেখ ভাই! আমি তোমাকে একটি লাভের কথা বলছি। যার ভেতরে তোমারও লাভ রয়েছে, আমারও লাভ রয়েছে। আর সেটি হচ্ছে যে, তুমি বকরীর পাল হতে একটি বকরী আমার কাছে বিক্রি করে দাও। তুমি টাকাগুলো পেয়ে গেলে, আর আমি বকরী পেয়ে গেলাম। পথে যেখানেই দরকার হবে, সেখানেই বকরীর দুধ পান করে নেব। বাকী রইল মালিকের কথা। তুমি মালিককে গিয়ে বলবে, হুজুর একটি বকরীকে বাঘে খেয়ে ফেলেছে আর সে তোমার কথা বিশ্বাসও করবে। কারণ সাধারণত জঙ্গলে বাঘ বকরী খেয়েই থাকে। এভাবে আমরা উভয়েই লাভবান হয়ে যাব। রাখাল এ সব প্রস্তাব শুনে বলে উঠল, হে ভাই! যদি আমরা এসব করি তবে আল্লাহ কোথায় গেলেন? আমরা ইচ্ছা করলে একাজ এখানে করতে পারি এবং মালিককেও সন্তোষজনক জবাব দিতে পারব। কিন্তু এ মালিকের আরও একজন মালিক আছে। তার কাছে গিয়ে কি জবাব দিব? তাই আমি এ কাজ করার জন্য প্রস্তুত নই।
হযরত ওমর ( রা.) –এর পরীক্ষা নেয়া উদ্দেশ্য ছিল। তাই যখন তিনি রাখালের এ জবাব শুনলেন, তখন বলে উঠলেন, যতক্ষণ পর্যন্ত তোমার মত মানুষ এ পৃথিবীতে বাকী থাকবে, ততক্ষণ পর্যন্ত কোন জালেম অন্যের উপর জুলুম করতে পারবে না। আর যতক্ষণ মানুষের অন্তরে আল্লাহর ভয়, আখিরাতের চিন্তা, আল্লাহর সন্মুখে দাঁড়িয়ে জবাবদিহীর কথা স্মরণ থাকবে, ততক্ষণ পর্যন্ত অন্যায় ও জুলুম করতে পারবে না। আর বাস্তবে এটাকেই তাকওয়া বলে।তাকওয়া তথা আল্লাহভীতি হলো, আল্লাহর আদেশগুলো বাস্তবায়ন এবং নিষেধগুলো পরিহার করার মাধ্যমে আল্লাহর শাস্তি থেকে আত্মরক্ষা করা। আলী (রা.)-কে তাকওয়া বা আল্লাহভীতি সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, ‘তাকওয়া হলো মহামহিম আল্লাহর ভয়, পবিত্র কোরআন অনুযায়ী আমল, অল্পে তুষ্টি, মৃত্যুদিনের প্রস্তুতি।’ (আদাবুল ইসলাম - ১/১২) তাকওয়া বা খোদাভীতি সম্পর্কে আল্লাহ মহাগ্রন্থ আল কুরআনে বলেছেন : ‘নিশ্চয়ই আল্লাহর কাছে তোমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তি অধিক সম্মানিত যিনি তোমাদের মধ্যে সর্বাধিক খোদাভীরু। নিঃসন্দেহে আল্লাহ সব কিছু জানেন এবং সব বিষয়ে অবহিত।’ (সুরা হুজরাত আয়াত - ১০)

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

সুফফা ইসলামের প্রথম আবাসিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান

মো.আবু রায়হান:  সুফফা মসজিদে নববির একটি স্থান। যেখানে একদল নিঃস্ব মুহাজির যারা মদিনায় হিজরত করেন এবং বাসস্থানের অভাবে মসজিদে নববির সেই স্থানে থাকতেন।এটি প্রথমদিকে মসজিদ উত্তর-পূর্ব কোণায় ছিল এবং রাসুলের আদেশে এটাকে পাতার ছাউনি দিয়ে ছেয়ে দেয়া হয় তখন থেকে এটি পরিচিতি পায় আল-সুফফা বা আল-জুল্লাহ নামে। ( A Suffah is a room that is covered with palm branches from date trees, which was established next to Al-Masjid al-Nabawi by Islamic prophet Muhammad during the Medina period.)। মোটকথা রাসুল (সা) মসজিদে-নববির চত্ত্বরের এক পাশে আস সুফফা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। সুফফা হলো ছাদবিশিষ্ট প্রশস্ত স্থান। সুফফার আকৃতি ছিল অনেকটা মঞ্চের মতো, মূল ভূমির উচ্চতা ছিল প্রায় অর্ধমিটার। প্রাথমিক পর্যায়ে এর দৈর্ঘ্য ছিল ১২ মিটার এবং প্রস্থ ছিল ৮ মিটার। মসজিদে নববির উত্তর-পূর্বাংশে নির্মিত সুফফার দক্ষিণ দিকে ছিল রাসুলুল্লাহ (সা.) ও তাঁর স্ত্রীদের অবস্থানের হুজরা এবং সংলগ্ন পশ্চিম পাশে ছিল মেহরাব।আসহাবে সুফফা অৰ্থ চত্বরবাসী। ঐ সকল মহৎ প্ৰাণ সাহাবি আসহাবে সুফফা নামে পরিচিত, যারা জ্ঞানার্জনের জন্য ভোগবিলাস ত্যা...

খন্দক যুদ্ধ কারণ ও ফলাফল

#মো. আবু রায়হান ইসলামের যুদ্ধগুলোর মধ্যে খন্দকের যুদ্ধ অন্যতম। ৫ হিজরির শাওয়াল মাসে খন্দকের যুদ্ধ সংঘটিত হয়। নবীজি (সা.) মদিনায় আসার আগে সেখানে বড় দুটি ইহুদি সম্প্রদায় বসবাস করত। বনু নাজির ও বনু কোরায়জা। ইহুদিদের প্ররোচনায় কুরাইশ ও অন্যান্য গোত্র মদিনার মুসলমানদের সঙ্গে যুদ্ধ করার প্রস্তুতি গ্রহণ করে। খন্দকের এই যুদ্ধ ছিল মদিনার ওপরে গোটা আরব সম্প্রদায়ের এক সর্বব্যাপী হামলা এবং কষ্টকর অবরোধের এক দুঃসহ অভিজ্ঞতা। এসময় ২৭দিন ধরে আরব ও ইহুদি গোত্রগুলি মদিনা অবরোধ করে রাখে। পারস্য থেকে আগত সাহাবি সালমান ফারসির পরামর্শে হযরত মুহাম্মদ (স:) মদিনার চারপাশে পরিখা খননের নির্দেশ দেন। প্রাকৃতিকভাবে মদিনাতে যে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ছিল তার সাথে এই ব্যবস্থা যুক্ত হয়ে আক্রমণ কারীদেরকে নিষ্ক্রিয় করে ফেলে। জোটবাহিনী মুসলিমদের মিত্র মদিনার ইহুদি বনু কোরায়জা গোত্রকে নিজেদের পক্ষে আনে যাতে তারা দক্ষিণ দিক থেকে শহর আক্রমণ করে। কিন্তু মুসলিমদের তৎপরতার ফলে তাদের জোট ভেঙে যায়। মুসলিমদের সুসংগঠিত অবস্থা, জোটবাহিনীর আত্মবিশ্বাস হ্রাস ও খারাপ আবহাওয়ার কারণে শেষপর্যন্ত আক্রমণ ব্যর্থ হয়।এই যুদ্ধে জয়ের ফলে ইসল...

কাবা ঘর নির্মাণের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস

মো. আবু রায়হানঃ কাবা মুসলমানদের কিবলা, অর্থাৎ যে দিকে মুখ করে নামাজ পড়ে বা সালাত আদায় করে, পৃথিবীর যে স্থান থেকে কাবা যে দিকে মুসলমানগণ ঠিক সে দিকে মুখ করে নামাজ আদায় করেন। হজ্জ এবং উমরা পালনের সময় মুসলমানগণ কাবাকে ঘিরে তাওয়াফ বা প্রদক্ষিণ করেন।কাবা শব্দটি এসেছে আরবি শব্দ মুকাআব অর্থ ঘন থেকে।কাবা একটি বড় ঘন আকৃতির ইমারত। (The Kaaba, meaning cube in Arabic, is a square building elegantly draped in a silk and cotton veil.)।যা সৌদি আরবের মক্কা শহরের মসজিদুল হারাম মসজিদের মধ্যখানে অবস্থিত। প্রকৃতপক্ষে মসজিদটি কাবাকে ঘিরেই তৈরি করা হয়েছে।কাবার ভৌগোলিক অবস্থান ২১.৪২২৪৯৩৫° উত্তর ৩৯.৮২৬২০১৩° পূর্ব।পৃথিবীর সর্বপ্রথম ঘর বায়তুল্লাহ বা পবিত্র কাবা ঘর ।আল্লাহ বলেন, নিশ্চয় সর্বপ্রথম ঘর যা মানুষের জন্য নির্মিত হয়েছে তা মক্কা নগরীতে। (সুরা আল ইমরান - ৯৬)। “প্রথম মাসজিদ বায়তুল্লাহিল হারাম তারপর বাইতুল মাকদিস, আর এ দুয়ের মধ্যে সময়ের ব্যবধান হলো চল্লিশ বছরের”।(মুসলিম- ৫২০)। ভৌগোলিকভাবেই গোলাকার পৃথিবীর মধ্যস্থলে কাবার অবস্থান। ইসলামের রাজধানী হিসেবে কাবা একটি সুপরিচিত নাম। পৃথিবীতে মাটির সৃষ্টি ...