ইবনুল হাইসাম সর্বপ্রথম ক্যামেরা উদ্ভাবনের ধারণা দেন





#মো.আবু রায়হান

ক্যামেরা বা আলোকচিত্র গ্রহণ ও ধারণের যন্ত্র আবিষ্কারেও রয়েছে মুসলিম অবদান। দৃশ্যমান স্থির বা গতিশীল ঘটনা ধরে রাখার জন্য এটি ব্যবহৃত হয়। আধুনিক আবিষ্কারগুলোর মধ্যে ক্যামেরা বহুল ব্যবহৃত এবং জনপ্রিয়। মোবাইল ফোনের কল্যাণে তা এখন মানুষের হাতে হাতে। মুসলিম বিজ্ঞানী নাম ইবনুল হাইসাম সর্বপ্রথম ক্যামেরা উদ্ভাবনের ধারণা দেন। ইবনুল হাইসাম ৯৫০ খ্রিষ্টাব্দে বুইদ আমিরাতের রাজধানী বর্তমান ইরাক এর বসরায় এক আরব পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। পূর্ণ নাম আবু আলি আল-হাসান ইবনে আল হাসান ইবন আল হাইসাম পশ্চিমা বিশ্বে তিনি তার ল্যাটিনকৃত নাম আল-হাজেন(Al hazen) হিসেবেও পরিচিত।ইবনুল হাইসাম একজন ইসলামি স্বর্ণযুগের একজন আরব গনিতবিদ, জ্যোতির্বিজ্ঞানী ও পদার্থবিজ্ঞানী। তিনি প্রায়শই আলোকবিজ্ঞানের জনক হিসেবে উল্লেখিত হন। ইবনুল হাইসাম বসরায় জন্মগ্রহণ করলেও তার কর্মজীবনের বেশিরভাগ কাটিয়েছেন ফাতেমীয় খিলাফতের রাজধানী কায়রোতে। সেখানে তিনি শিক্ষকতা ও গবেষণা করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। তাকে তার জন্মস্থান বসরার নামে আল-বসরি উপনামেও ডাকা হয়ে থাকে। ফার্সি ইতিহাসবিদ আবুল হাসান বায়হাকি তাকে দ্বিতীয় টলেমি বলে উল্লেখ করেছেন। ইবনুল হাইসাম আধুনিক আলোকবিজ্ঞানের চর্চার পথে পথিকৃত।সর্বপ্রথম ইবনুল হাইসামই দর্শনানুভূতির ব্যাখ্যায় প্রমাণ দিতে সক্ষম হয়েছিলেন যে আলো বস্তু হতে প্রতিফলিত হয়ে চোখে আসে বলেই তা দৃশ্যমান হয়। তিনি এটাও আলাদা করতে পেরেছিলেন দর্শনানুভূতির কেন্দ্র চোখে নয়, বরং মস্তিষ্কে। বহুমুখী প্রতিভাধর এ বিজ্ঞানী বিভিন্ন বিষয়ে প্রায় দুইশত গ্রন্থ রচনা করেন। এর মধ্যে অন্যান্য বিষয় ছাড়া অংকে ৪১টি, জ্যামিতিতে ২৬টি এবং ইস্তাম্বুলের অধ্যাপক ইসমাইল পাশা’র তথ্য অনুযায়ী পদার্থবিদ্যায় ১১টি গ্রন্থ রচনা করেন। এছাড়াও বিভিন্ন লাইব্রেরিতে তাঁর ১৩টি পদার্থবিজ্ঞানের বই পাওয়া গেছে। পদার্থবিদ্যায় তাঁর রচিত গ্রন্থ তুলনামূলক কম হলেও আলোকবিজ্ঞানের উপর রচিত ‘কিতাবুল মানাজির’ তাঁকে বিশিষ্ট স্থান দান করেছে।
ইবনুল হাইসাম এর সবচেয়ে বিখ্যাত কর্ম হচ্ছে তাঁর সাত খন্ডে রচিত গবেষণা গ্রন্থ কিতাব আল-মানাযির যা ১০১১ খ্রিষ্টাব্দ হতে ১০২১ খ্রিষ্টাব্দ এর মাঝামাঝি সময় রচিত। এই গ্রন্থে তাঁর প্রস্তাবিত তাত্তিক মতবাদ বিজ্ঞানে নতুন পথ খুলে দেয়। এতে তিনি প্রমাণ করার চেষ্টা করেন যে, চোখ থেকে আলোকরশ্মি বস্তুর উপরে পড়লেই সে বস্তুটা দেখা যায় না। বরং বস্তু থেকে আলো আমাদের চোখে এসে পড়লেই তবে সে বস্তু আমরা দেখতে পাই। তাঁর ‘কিতাবুল মানাজির’ গ্রন্থটি জিরার্ড ও উইটেলে কতৃক ল্যাটিনে অনূদিত হওয়ার ফলে এটি পড়ে তৎকালীন বহু পণ্ডিত অপটিকস বা আলোকবিজ্ঞানের প্রতি আকৃষ্ট হন। তাঁদের মধ্যে ফ্রান্সিস বেকন, রজার বেকন, লিউনার্দো দ্য ভিঞ্চি, পেকহাম, কেপলার, গ্যালিলিও গ্যালিলিই উল্লেখযোগ্য।এই বিজ্ঞানী ১০২১ সালে তাঁর আল মানাজির গ্রন্থে সর্বপ্রথম ক্যামেরা উদ্ভাবনের ধারণা দেন।তিনি পিনহোল ক্যামেরা নামে একটি ক্যামেরা তৈরি করেছিলেন,যাকে পৃথিবীর প্রথম ক্যামেরা হিসাবে বিবেচনা করা হয়। এটি ছিল আলো নিরোধক একটি কাটের বাক্স। এর কোনো এক পৃষ্ঠে ছোট একটি ছিদ্র হতো, একটি পিন দিয়ে ছিদ্র করলে যতটুকু ছিদ্র হয় ঠিক ততটুকু। তাই এই ক্যামেরার নাম ছিল পিনহোল ক্যামেরা। তবে পূর্ণাঙ্গ ক্যামেরা আবিষ্কার হতে আরো বহু বছর কেটে যায়। এরপর কয়েক ধাপে ক্যামেরায় নতুনত্ব যুক্ত করেন বিজ্ঞানীরা। অবশেষে ১৯৭৫ সালে কোডাকের স্টিভেন স্যাসোন প্রথম ডিজিটাল ক্যামেরা জনসম্মুখে নিয়ে আসেন।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

যে গাছ ইহুদিদের আশ্রয় দেবে অর্থাৎ ইহুদিদের বন্ধু গাছ

রক্তপাতহীন মক্কা বিজয়ের দিন আজ

খন্দক যুদ্ধ কারণ ও ফলাফল