যুগেযুগে অপবাদ অপনোদন
যুগেযুগে নবী রাসুল ও তাদের অনুসারীরের বিরুদ্ধে মুশরিক, মুনাফেক ও কাফেরদের অপবাদ দেয়ার ষড়যন্ত্র ছিল, আছে ভবিষ্যতেও থাকবে। কিন্তু দিনশেষে সত্যের বিজয় অত্যাসন্ন। হজরত ইউসুফ (আ) বৈমাত্রেয় ভাইদের চক্রান্তে কূপে নিক্ষিপ্ত হওয়ার পর মিশরগামী ব্যবসায়ী কাফেলার মাধ্যমে কূপ থেকে উদ্ধার পান। অতঃপর ভাইয়েরা কাফেলার নিকট গোলাম হিসেবে ১৮ দিরহামের বিনিময়ে বিক্রি করে দেন। উক্ত কাফেলা ইউসুফ (আ)কে মিশরের উজিরের নিকট বিক্রয় করে দেয়। মিশরের উজিরের নিকট তিনি লালিতপালিত হন ।যখন ইউসুফ (আ) যৌবনে পদার্পণ করেন, তখন তার স্ত্রী জুলেখা তাকে ফুসলাইতে থাকেন। একদিন জুলেখা ঘরের সাতটি দরজা বন্ধ করে কুপ্রস্তাব দেন। হযরত ইউসুফ (আ) জুলেখার কুপ্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে দৌড় দিলে এক এক করে সাতটি বন্ধ দরজা খুলে যায়। সর্বশেষ দরজা খোলার পূর্বে জুলেখা ইউসুফ (আ)-এর পিছন থেকে তার জামা টেনে ধরলে সেই জামা ছিঁড়ে যায়। দরজা খুলেই জুলেখার স্বামীকে দণ্ডায়মান দেখতে পায়। তখন জুলেখা হযরত ইউসুফ (আ) সম্পর্কে মিথ্যা অপবাদ দেয়। পরবর্তী সময়ে উজির ইউসুফ (আ)কে জেলে দেন।ইউসুফ (আ.) ছিলেন ইমান ও নবুয়তের আলোয় আলোকিত। তাঁর বিবেক ছিল স্বচ্ছ। অন্তর ছিল পবিত্র। আল্লাহর নিদর্শন ও নির্দেশনা তাঁর সামনে ছিল। ফলে তিনি অপকর্মে লিপ্ত হননি। আল্লাহ তাঁকে অশ্লীল কাজ থেকে মুক্ত রেখেছেন। তিনি ছিলেন বিশুদ্ধচিত্ত আল্লাহর পূতপবিত্র বান্দা।ইউসুফ (আ.) প্রথম জীবনে ক্রীতদাস, পরবর্তীতে জেলের আসামি এবং শেষ জীবনে মিসরের ক্ষমতাধর রাজকর্মচারী বা মন্ত্রী হয়েছিলেন।
ষষ্ঠ হিজরিতে বনি মুস্তালিক যুদ্ধ থেকে ফেরার পথে হজরত আয়েশা সিদ্দিকা (রা.)-কে জড়িয়ে মুনাফিক সরদার আবদুল্লাহ ইবনে উবাই মিথ্যা অপবাদ রটিয়েছিল, ইতিহাসে যা 'ইফকের' ঘটনা নামে খ্যাত। এ ঘটনার কারণে প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মদ (সা) ও হজরত আয়েশা (রা.) তীব্রভাবে মর্মাহত হন।
অবশেষে দীর্ঘ এক মাস পর মহান আল্লাহ আয়াত নাজিল করেন 'নিশ্চয়ই যারা মিথ্যা অপবাদ রটনা করেছে তারা তোমাদেরই একটি দল। তোমরা একে নিজেদের জন্য খারাপ মনে কর না। বরং এটা তোমাদের জন্য কল্যাণকর। তাদের প্রত্যেকের জন্য ততটুকু, যতটুকু সে গুনাহ করেছে। আর অগ্রণী ভূমিকা পালনকারীর জন্য রয়েছে বিরাট শাস্তি।' (সূরা নূর আয়াত -১১)এ আয়াত নাযিল করার মাধ্যমে হজরত আয়েশা (রা.)-এর পবিত্রতা পরিচ্ছন্নতা এবং সতীত্ব প্রকাশ করে দেওয়া হয়েছে। এরপর মিথ্যা অপবাদের সাথে জড়িত ব্যক্তিদের অপরাধের দায়ে মিসত্বাহ বিন আসাস, হাসসান বিন সাবেত এবং হামনাহ বিনতে জাহশকে আশি দোররা কার্যকর করা হল।
দোষারোপ করা, কারও দুর্নাম করা তো দূরের কথা, কারও সম্পর্কে কিছু প্রমাণ ছাড়া বলাও যাবে না। অহেতুক মানুষকে দোষারোপ করা সামাজিক ব্যাধিতে পরিণত হয়েছে। নবী করিম (সা.) বলেছেন, মুমিনদের প্রতি তোমরা ভালো ধারণা পোষণ করবে। অনুমান করেও কিছু বলা যাবে না। কারণ আল্লাহ বলেন, হে মুমিনগণ, তোমরা অধিকাংশ অনুমান থেকে দূরে থাক। কারণ অনুমান কোনো কোনো ক্ষেত্রে পাপ (সুরা আল হুজরাত, আয়াত-১২)। কিছু পাপের কোনো কাফফারা হয় না। কাউকে মিথ্যা অপবাদ দেওয়া তেমনই একটি পাপ। রাসুল (সা.) বলেছেন, পাঁচটি পাপ এমন, যার কাফফারা নেই। তার মধ্যে তৃতীয়টি হলো, কোনো মুমিনকে অপবাদ দেওয়া (মুসনাদে আহমদ)।হাকিম ইবনে হেব্বান, আহমাদ ও বায্যার হজরত আবু হোরায়রা (রা.) কর্তৃক বর্ণনা করেন, একবার রসুলুল্লাহ (সা.)-এর সমীপে অভিযোগ এলো 'অমুক স্ত্রীলোক সারা রাত নামাজ পড়ে এবং প্রতিদিন রোজা রাখে; কিন্তু সে তার প্রতিবেশীদের (তিক্ত কথায়) দুঃখ দেয়।' রসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, 'তাতে কল্যাণ নেই, সে দোজখে যাবে।'
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন