অস্ত্রোপচারের নানা যন্ত্র আবিষ্কারে মুসলিম বিজ্ঞানী




#মো.আবু রায়হান
অস্ত্রোপচারের বিভিন্ন যন্ত্র আবিষ্কারে মুসলিম বিজ্ঞানীরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। দশম শতাব্দীর মুসলিম সার্জন আল- জাহরাউয়ি আধুনিক যুগে ব্যবহৃত হয় এমন অনেক যন্ত্র উদ্ভাবন করেন। আবুল কাসিম খালাফ ইবনে আল আব্বাস আল জাহরাউয়ি (৯৩৬–১০১৩ ‎‎) ছিলেন একজন আরব মুসলিম চিকিৎসক। জাহরাউয়ির জন্ম ৯৩৬ খ্রিস্টাব্দে স্পেনের আন্দালুসিয়ার আজহারা শহরে। পশ্চিমা বিশ্বে তিনি অ্যালবুকাসিস নামে পরিচিত।তাকে মধ্যযুগের মুসলিম বিশ্বের সবচেয়ে মহৎ শল্যবিদ এবং তাকে আধুনিক শল্যচিকিৎসার জনক বলে গণ্য করা হয়।চিকিৎসাবিজ্ঞান নিয়ে তার লেখা বইয়ের নাম ‘কিতাব আল তাসরিফ’। এটি চিকিৎসা সংক্রান্ত ৩০ খণ্ডের বিশ্বকোষ। অস্ত্রোপচার থেকে শুরু করে মেডিসিন, অর্থোপেডিকস, প্যাথলজি, দন্তবিজ্ঞান, শিশু চিকিৎসাসহ চিকিৎসাবিজ্ঞানের নানা বিষয় অন্তর্ভুক্ত ছিল এই গ্রন্থে। বলা যায় এই গ্রন্থের পেছনেই তিনি তার সারা জীবন দিয়েছেন। বইটিতে খুঁটিনাটি নানা বিষয় সংযোজন করতে তার লেগেছিল ৫০ বছরেরও বেশি সময়। এই গ্রন্থের সব থেকে বড় খণ্ড ‘অন সার্জারি অ্যান্ড ইনস্ট্রুমেন্টস’ লেখা হয়েছে শল্যচিকিৎসা নিয়ে। এই বইটি বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয় হওয়ার কারণ মূলত এটাই। এই খণ্ডে তিনি প্রায় দুই শতাধিক অস্ত্রোপচারের বর্ণনা দেন। এছাড়া সেই গ্রন্থে ছিল প্রায় ২০০টি অস্ত্রোপচার সরঞ্জামের ছবি। এই সরঞ্জামের ছবি তিনি নিজেই এঁকেছিলেন। এসব যন্ত্রপাতির মধ্যে অন্যতম ছিল দাঁত তোলা, দাঁতের গোড়া পরিষ্কার, চোখের ছানি অপারেশন, ভাঙা হাড় বের করার, জরায়ুর মুখ প্রশস্ত করার, মৃত ভ্রণকে বের করাসহ নানা ধরনের যন্ত্র। এই সব যন্ত্র কখন কোথায় কীভাবে ব্যবহার করা হবে তার বিস্তারিত বর্ণনা দিয়েছেন এই গ্রন্থে। অন সার্জারি অ্যান্ড ইনস্ট্রুমেন্টস খণ্ডটিকে বলা হয় পৃথিবীর প্রথম সচিত্র সার্জিক্যাল গাইড।আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞানে অপারেশন করার জন্য যেসব সরঞ্জাম ব্যবহার করা হয়, তার অনেকগুলোই দশম শতাব্দীতে মুসলিম শল্যবিদ আল জাহরাউয়ির উদ্ভাবিত দ্রব্যাদির মতো। তার উদ্ভাবিত হালকা ছুরি, অস্থি কাটার ছুরি, ছোট সাঁড়াশি, চোখের অপারেশনে ব্যবহৃত সূক্ষ্ম কাঁচিসহ ২০০ প্রকার শল্যচিকিৎসার যন্ত্রপাতি আধুনিক যুগের যে কোন শল্যবিদের অতি পরিচিত জিনিস। ক্যাপসুলের আবিষ্কারকও আল-জাওয়াহিরি।
ত্রয়োদশ শতাব্দীর অপর মুসলিম চিকিৎসাবিজ্ঞানী ইবনে নাফিস উইলিয়াম হার্ভে রক্ত পরিসঞ্চালন পদ্ধতি আবিষ্কারের ৩০০ বছর আগেই এ প্রক্রিয়ার বর্ণনা দিয়েছিলেন। রক্ত চলাচল সম্বন্ধে তৎকালীন প্রচলিত গ্যালেনের মতবাদকে ভুল প্রমাণ করে চিকিৎসাবিজ্ঞানে ১৩০০ শতাব্দীতে বিপ্লবের সূচনা করেছিলেন ইবনে নাফিস।ইবনে নাফিস (১২১৩ - ১২৮৮) একজন বিখ্যাত আরব বিজ্ঞানী ও চিকিৎসাবিদ ছিলেন। ১২১৩ খ্রিস্টাব্দে ইবনুন নাফিস সিরিয়ার দামেস্ক শহরে জন্মগ্রহণ করেন। তার প্রকৃত নাম আলা আল-দিন আবু আল-হাসান আলী ইবন আবি-হাজম আল-কারশি আল-দিমাশকি। মিশরের কায়রোতে কর্মজীবন অতিবাহিত করেন। তাঁর সময়কার মুসলিম চিকিৎসকরা আফিম ও অ্যালকোহলের সংমিশ্রণে এমন এক সুই উদ্ভাবন করেন, যা দিয়ে যে কাউকে বেহুঁশ ও অচেতন করা যেত। আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞানেও এই পদ্ধতির ব্যাপক ব্যবহার দেখা যায়।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

যে গাছ ইহুদিদের আশ্রয় দেবে অর্থাৎ ইহুদিদের বন্ধু গাছ

রক্তপাতহীন মক্কা বিজয়ের দিন আজ

খন্দক যুদ্ধ কারণ ও ফলাফল