পোস্টগুলি

আমরা মুসাফির

ছবি
আবদুল্লাহ বিন ‘উমার (রাঃ) বর্ণনা করেছেন যে রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম) তার কাঁধ ধরে বললেন, “এ দুনিয়াতে তুমি (এমনভাবে) থাকো, যেন তুমি একজন অপরিচিত বা একজন মুসাফির।” ইবনে ‘উমার (রাঃ) বলতেন, “যদি তুমি সন্ধ্যা পর্যন্ত বেঁচে থাকো, তবে সকাল পর্যন্ত বেঁচে থাকার আশা করো না। যদি তুমি সকাল পর্যন্ত বেঁচে থাকো, তবে সন্ধ্যার প্রত্যাশা করো না। সুস্থ থাকা অবস্থায় তুমি অসুস্থতার জন্য নিজেকে প্রস্তুত করো, আর বেঁচে থাকা অবস্থায় নিজেকে প্রস্তুত করো মৃত্যুর জন্য।” (সাহিহ বুখারি – কিতাবুর রিকাক, হাদিস ৬৪১৬) হযরত ইমাম গাজ্জালি (রহ.) একটি উদাহরণ দিয়েছেন। একটি জাহাজ কোথাও যাচ্ছে। জাহাজের যাত্রীরা সবাই মুসাফির। পথিমধ্যে একটি দ্বীপের দেখা পেলে জাহাজের ক্যাপ্টেন দ্বীপে জাহাজটিকে নোঙ্গর করে, যাতে সফরের জন্য প্রয়োজনীয় রসদসামগ্রী ও জ্বালানী নেয়া যায়। জাহাজের ক্যাপ্টেন ঘোষণা করে, আমরা কয়েক ঘণ্টা এখানে যাত্রাবিরতি করব, যাত্রীদের কেউ চাইলে জাহাজ থেকে নেমে ঘুরেফিরে আসতে পারেন। ঘোষণার পর যাত্রীরা সবাই জাহাজ থেকে নেমে পড়ে এবং দ্বীপটিকে দেখার জন্য ছোট ছোট দলে বিভক্ত হয়ে পড়ে। দ্বীপটি ছিল দেখতে খুব সুন্দর,...

বন্ধুত্ব

ছবি
বন্ধু নির্বাচনে ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বনের নির্দেশ দিয়ে প্রিয়নবি (সা) বলেন, ‘মানুষ তার বন্ধু স্বভাবী হয়, তাই তাকে লক্ষ্য করা উচিত, সে কার সঙ্গে বন্ধুত্ব করছে।’ (তিরমিজি)রাসুলুল্লাহ (সা) বন্ধুত্বের উদাহরণ দিয়ে বলেন, ‘সৎ সঙ্গী এবং অসৎ সঙ্গীর উদাহরণ হচ্ছে আতর বিক্রয়কারী এবং কামারের হাপরের ন্যায়। আতর ওয়ালা তোমাকে নিরাশ করবে না; হয় তুমি তার কাছ থেকে ক্রয় করবে কিংবা তার কাছে সুঘ্রাণ পাবে। আর কামারের হাপর, হয় তোমার বাড়ি জ্বালিয়ে দেবে, নচেৎ তোমার কাপড় পুড়িয়ে দেবে আর না হলে দুর্গন্ধ পাবে।’ (বুখারি) হযরত ইমাম জাফর আস-সাদিক (রহ) বলেন, ‘পাঁচ ব্যক্তির সঙ্গে বন্ধুত্ব করা সমীচীন নয়। তারা হলো-মিথ্যাবাদী, নির্বোধ, ভীরু, পাপাচারী ও কৃপণ ব্যক্তি।হাদিসে এসেছে-'জ্ঞানী শত্রু, নির্বোধ বন্ধু অপেক্ষা শ্রেয়।' (মিজানুল হিকমাহ : ১০২৬৮) বন্ধু মনোনয়নে হযরত আলী (রা.)-এর উক্তিটি প্রণিধানযোগ্য। তিনি বলেছেন, 'নির্বোধের বন্ধুত্ব থেকে দূরে থাকো। কারণ সে উপকার করতে চাইলেও তার দ্বারা তোমার ক্ষতি হয়ে যাবে।' (দিওয়ানে আলী) ’ইমাম গাজ্জালি (রহ.) কারো সঙ্গে বন্ধুত্ব করতে হলে তিনটি গুণের দিকে লক্ষ রাখ...

কেয়ামতের আগে নারীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে

ছবি
রাসুল (সা.) বলেন, ‘কিয়ামতের আলামত হচ্ছে, নারীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে এবং পুরুষের সংখ্যা কমে যাবে। এমনকি পঞ্চাশ জন নারীর দেখাশুনার জন্যে মাত্র একজন পুরুষ থাকবে।’ (বুখারি, অধ্যায় : কিতাবুল ইলম) এই হাদিসের ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে, কেয়ামতের পূর্বে ফিতনার সময় ব্যাপক যুদ্ধ হবে। যুদ্ধে যেহেতু কেবল পুরুষেরাই অংশগ্রহণ করে থাকে তাই যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে পুরুষেরা অকাতরে নিহত হবে। ফলে পুরুষের তুলনায় নারীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে, ইমাম ইবনে হাজার আসকালানি (র.) এই মতটিকে প্রত্যাখ্যান করে বলেন, হাদিসের প্রকাশ্য অর্থ হলো, কোনো কারণ ছাড়াই শুধু কিয়ামতের আলামত হিসেবে নারীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে। আল্লাহ তায়ালা আখেরি জামানায় পুরুষের তুলনায় বেশি নরী সৃষ্টি করবেন। বর্তমানে এ আলামতটি প্রকাশিত হতে দেখা যাচ্ছে। কোনো কোনো দেশে জরিপ করে দেখা গেছে, পুরুষের তুলনায় নারীর সংখ্যা অনেক বেশি। ভবিষ্যতে আরো বৃদ্ধি পাবে। মোটকথা স্বভাবগত ও যুদ্ধ উভয় কারণে পুরুষের সংখ্যা কমতে পারে। বর্তমানে সারা বিশ্বের গড় অনুপাতের ১০০ নারী এবং ১০৫ পুরুষ। ২০১ দেশের আদমশুমারির ভিত্তিতে তৈরি রিপোর্টে বলা হয়েছে, ২৫ দেশে নারীর সংখ্যা বেশি।যে সব দেশে নারী বেশী ...

বিবর্তনবাদ ও আমাদের সিলেবাস

ছবি
  অন দ্য অরিজিন অফ স্পেশিস ( On the Origin of Species  ) নামে চার্লস ডারউইনের এই বইটি প্রকাশিত হয় ১৮৫৯ সালে। তার এই গ্রন্থে তিনি বিবর্তনবাদকে সংজ্ঞায়িত করতে গিয়ে বলেছেন, এটি এমন একটি প্রক্রিয়া যাতে কোনো প্রাণী ক্রমাগত অভিযোজনের ফলে আপন পরিবেশের জন্যে বিশেষায়িত হতে হতে এক সময় নতুন একটি প্রাণীতে রূপান্তরিত হয়।অর্থাৎ টিকে থাকার জন্যে খাবার সংগ্রহের লড়াইয়ে প্রাণীদের প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হতে হয়৷ অন্যের খাবার হওয়া থেকে নিজেকে রক্ষা করা এবং সন্তান জন্মদান করতেও তাদের সংগ্রাম করতে হয়৷ এসব কারণে তারা এক প্রজন্ম থেকে আরেক প্রজন্মে রূপান্তর ঘটাতে বাধ্য হয়৷ ইসলাম ধর্মবিশ্বাস অনুযায়ী আল্লাহ হচ্ছেন মানুষ ও সকল প্রাণীর স্রষ্টা, এবং প্রথম মানব-মানবী হচ্ছেন আদম এবং তার পাঁজরের হাড় থেকে তৈরি হাওয়া । ডারউইনের এই মতবাদ প্রথমেই বিজ্ঞানীদের সমালোচনার মুখে পড়ে কারণ সেসময়ে জীবের পরিবর্তন বা উৎপত্তির/ এক প্রজাতি থেকে আরেক প্রজাতির উদ্ভবের ধারণা ('এসব পরীক্ষণীয় ছিল না') প্রচলিত ছিল। লন্ডনের গির্জাগুলো ডারউইনের বিবর্তনবাদ তত্ত্বকে নাকচ করে দেয়৷ কিন্তু তাঁর বন্ধু ও সহকর্মীদের কাছে প্রশংস...

দিল্লি দাঙ্গা বিশ্লেষণ

ছবি
  দিল্লি দাঙ্গার এক বছর পূর্তি হলো গতকাল। এটি দিল্লি দাঙ্গা বলতে আমি নারাজ বরং সুপরিকল্পিতভাবে মুসলিম নিধনের প্রক্রিয়া ছিল এটি। বিশ্লেষক আলী রীয়াজ বলেন, " দিল্লিতে যা ঘটছে তা ‘দাঙ্গা’ নয়, একে যারা দাঙ্গা বলছেন তাঁরা ইচ্ছায় বা অজ্ঞতাবশত ভারতের গেরুয়া বাহিনীর ভাষ্যকার হচ্ছেন। একে ‘সিএএ-বিরোধী ও সমর্থকদের সংঘর্ষ’ বলতে আমি নারাজ। যা ঘটছে তা হচ্ছে রাষ্ট্রের সমর্থনপুষ্ট গেরুয়া সন্ত্রাসী আক্রমণ— মুসলিম জনগোষ্ঠী তার প্রথম লক্ষ্যবস্তু কিন্তু একমাত্র লক্ষ্যবস্তু নয়। আগামীতে অন্যরাও আক্রান্ত হবেন। লক্ষ্যবস্তু হচ্ছে বহুত্ববাদী ভারত।"ফেব্রুয়ারিতে ভারতে নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদকে কেন্দ্র করে রাজধানী দিল্লির বিভিন্ন জায়গার পরিবেশ উত্তপ্ত হয়ে উঠে। ২৩ ফেব্রুয়ারি থেকেই শহরের উত্তর-পূর্ব প্রান্তে তা পুরোদস্তুর সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় রূপ নেয়।প্রায় টানা পাঁচদিন ধরে চলে এই সহিংসতা - আর দিল্লির বিস্তীর্ণ একটা অংশ কার্যত মৃত্যুপুরীর চেহারা নেয়। দাঙ্গায় অন্তত ৪০জন মুসলিম ও ১৩ জন হিন্দু নিহত হয়েছিলেন। যে অভিযুক্তদের এখনও পর্যন্ত গ্রেপ্তার করা হয়েছে তাদের মধ্যে মুসলিমের সংখ্যাই ...

মাতৃভাষা চর্চায় ইসলাম

ছবি
#মো. আবু রায়হান মা মাতৃভাষা ও মাতৃভূমি মানুষের অতি আবেগের তিনটি অনুসঙ্গ। ভাষা সদা প্রবাহমান ও পরিবর্তনশীল। সেহিসেবে ভাষা বৈচিত্র মহান আল্লাহর অনুপম নিদর্শন। বর্তমানে ভাষা বিজ্ঞানীদের মতে পৃথিবীতে ছয় থেকে সাত হাজার ভাষা রয়েছে। শুধু এশিয়ায় প্রচলন আছে দুই হাজার ২০০ ভাষার। অবশ্য অধিকাংশ ভাষায়ই খুব অল্প সংখ্যক লোক কথা বলে। দশ লক্ষ বা ততোধিক লোক কথা বলে এমন ভাষার সংখ্যা প্রায় ২০০। আবার পাঁচ কোটি বা ততোধিক লোক কথা বলে এমন ভাষার সংখ্যা মাত্র ২৩টি। তবে দশ কোটি বা ততোধিক লোক কথা বলে এমন ভাষার সংখ্যা মাত্র বারোটি। লোক সংখ্যা বিচারে এই বারোটি ভাষা হচ্ছে (১) মান্ডারিন চীনা (২) ইংরেজি (৩) স্পেনীয় (৪) হিন্দি (৫) আরবি (৬) বাংলা (৭) রুশ (৮) পুর্তগীজ (৯) জাপানী (১০) জার্মান (১১) মালয়-ইন্দোনেশীয় ও (১২) ফরাসী। প্রথমে বহু ভাষা গড়ে উঠলেও বিভিন্ন কার্যকারণে ও প্রক্রিয়ায় বর্তমানে মাত্র স্বল্পসংখ্যক ভাষায়ই পৃথিবীর অধিকাংশ মানুষ কথা বলে। পবিত্র কোরআনে কারিমে এরশাদ হয়েছে, ‘তার নিদর্শনাবলীর মধ্যে এক নিদর্শন এই যে, নভোমণ্ডল ও ভূ-মণ্ডলের সৃজন এবং তোমাদের ভাষা ও বর্ণের বৈচিত্র। নিশ্চয় এতে জ্ঞানীদের জন্য নিদর্শনাবলী ...

একজন সংবাদকর্মী কেমন হবেন?

ছবি
একজন সাংবাদিককে হতে হবে সত্য প্রকাশে নির্ভীক এবং নিঃসঙ্কোচে তা প্রকাশ করার প্রবল ইচ্ছা।সাদাকে সাদা এবং কালোকে কালো বলার সৎ সাহস। কলম চলবে নির্যাতিত ও অসহায়দের পক্ষে। অন্যায়ের বিরুদ্ধে হবেন আপোষহীন। দলবাজি চাটুকারিতা ও সত্য ঘটনাকে আড়াল করা, অন্যায়ভাবে ভাবে কাউকে ফাঁসানো সাংবাদিকদের কাজ নয়। ঘটনার গভীরে গিয়ে সত্য উন্মোচন ও তা জনগণের কাছে উপস্থাপন করা সাংবাদিকের অন্যতম কাজ। সত্য গোপন করে মিথ্যা ও গোঁজামিল সংবাদ দিয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত করা সাংবাদিকতার এথিকসের পরিপন্থি । অসত্য সংবাদ সমাজে শুধু নৈরাজ্যই সৃষ্টি করে না বরং এর ক্ষত ও প্রভাব থেকে যায় বহুদিন। আল্লাহ তায়ালা সূরা বাকারার ৪২ নম্বর আয়াতে এরশাদ করেন, ‘এবং তোমরা সত্যকে মিথ্যার সঙ্গে মিশিও না এবং জেনে-বুঝে সত্য গোপন করো না।’ রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘মিথ্যা সংবাদ প্রচার করা, মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়া কবিরা গুনাহ।’ বুখারি, মুসলিম।কোরআনে আল্লাহ বলেন, ‘হে বিশ্বাসীরা! আল্লাহকে ভয় কর এবং সত্য কথা সোজাভাবে বল। (সূরা আল আহজাব, আয়াত ৭০) সূরা সাবা’তে হুদহুদ পাখির সংবাদ প্রচারের ধরন বড় চমৎকারভাবে আলোচনা করা হয়েছে। সংবাদ কেমন...