বিবর্তনবাদ ও আমাদের সিলেবাস

 




অন দ্য অরিজিন অফ স্পেশিস ( On the Origin of Species ) নামে চার্লস ডারউইনের এই বইটি প্রকাশিত হয় ১৮৫৯ সালে। তার এই গ্রন্থে তিনি বিবর্তনবাদকে সংজ্ঞায়িত করতে গিয়ে বলেছেন, এটি এমন একটি প্রক্রিয়া যাতে কোনো প্রাণী ক্রমাগত অভিযোজনের ফলে আপন পরিবেশের জন্যে বিশেষায়িত হতে হতে এক সময় নতুন একটি প্রাণীতে রূপান্তরিত হয়।অর্থাৎ টিকে থাকার জন্যে খাবার সংগ্রহের লড়াইয়ে প্রাণীদের প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হতে হয়৷ অন্যের খাবার হওয়া থেকে নিজেকে রক্ষা করা এবং সন্তান জন্মদান করতেও তাদের সংগ্রাম করতে হয়৷ এসব কারণে তারা এক প্রজন্ম থেকে আরেক প্রজন্মে রূপান্তর ঘটাতে বাধ্য হয়৷ ইসলাম ধর্মবিশ্বাস অনুযায়ী আল্লাহ হচ্ছেন মানুষ ও সকল প্রাণীর স্রষ্টা, এবং প্রথম মানব-মানবী হচ্ছেন আদম এবং তার পাঁজরের হাড় থেকে তৈরি হাওয়া ।

ডারউইনের এই মতবাদ প্রথমেই বিজ্ঞানীদের সমালোচনার মুখে পড়ে কারণ সেসময়ে জীবের পরিবর্তন বা উৎপত্তির/ এক প্রজাতি থেকে আরেক প্রজাতির উদ্ভবের ধারণা ('এসব পরীক্ষণীয় ছিল না') প্রচলিত ছিল। লন্ডনের গির্জাগুলো ডারউইনের বিবর্তনবাদ তত্ত্বকে নাকচ করে দেয়৷ কিন্তু তাঁর বন্ধু ও সহকর্মীদের কাছে প্রশংসার সাথে গৃহীত হয় এটি৷ তবে প্রাকৃতিক নির্বাচন বিষয়টি কম গ্রহণযোগ্যতা পায়৷ এ কারণে ‘অন দ্য অরিজিনস অফ স্পিশিস’ বইটি ছয়বার সংশোধন করতে হয় ডারউইনকে৷
আদি পিতা আদম (আ.)-এর সৃষ্টি নিয়ে ডারউইন ও বিভিন্ন বস্তুবাদী গবেষক, দার্শনিক নানা বক্তব্য-বিবৃতি দিয়েছেন। যেমন—আদি মানব সম্প্রদায় বানর ছিল! কালের আবর্তনে পর্যায়ক্রমে বানর থেকে মানবে রূপান্তরিত হয়েছে। কিন্তু প্রশ্ন হলো, বর্তমান যুগে কি বিশ্বের কোথাও একটি বানর মানবে রূপান্তরিত হয়ে জীবন যাপন করছে? কিংবা কোনো বানরের গর্ভ থেকে মানব সন্তান ভূমিষ্ঠ হয়েছে ও বেঁচে আছে? এর জবাব হলো নেতিবাচক। এটা সকলের জানা। আদি মানব কী বস্তু থেকে সৃষ্টি তা মহাগ্রন্থ আল-কোরআনে মহান আল্লাহ স্পষ্ট ভাষায় ঘোষণা করেছেন যে ‘কাদামাটি থেকে মানব সৃষ্টির সূচনা।’ (সুরা সাজদাহ, আয়াত : ৭),অন্য আয়াতে এসেছে, ‘আমি মানবের পচা কাদা থেকে তৈরি বিশুদ্ধ ঠনঠনে মাটি।’ (সুরা হিজর, আয়াত : ২৬)অন্য আয়াতে এসেছে, ‘পোড়া মাটির মতো শুষ্ক মাটি থেকে (মানুষকে) সৃষ্টি করেছি।’ (সুরা আর-রহমান, আয়াত : ১৪) আরো ইরশাদ হয়েছে, ‘আল্লাহ তাকে নিজ হাতে সৃষ্টি করেছেন।’ (সুরা সোয়াদ, আয়াত : ৭৫) আদম (আ.) মাটির সারাংশ থেকে সৃষ্টি। কিন্তু মা হাওয়া (আ.) কী দিয়ে সৃষ্টি—সে সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, ‘অতঃপর তিনি তার (আদম) থেকে তার যুগল (হাওয়াকে) সৃষ্টি করেছেন।’ (সুরা জুমার, আয়াত : ৬)আরো ইরশাদ হয়েছে, ‘তিনি তার (আদম) থেকে তার সঙ্গিনীকে সৃষ্টি করেছেন আর বিস্তার করেছেন তাদের দুইজন থেকে অগণিত নারী-পুরুষ।’ (সুরা নিসা, আয়াত : ১)।মহান আল্লাহ এই ধরণিতে মাটি থেকে একজন প্রতিনিধি সৃষ্টি করেন এবং তারপর তা থেকে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে এই মানবজাতি।মহান আল্লাহর ভাষায়, ‘হে মানবমণ্ডলী! আমি তোমাদের এক পুরুষ ও এক নারী থেকে সৃষ্টি করেছি। আর তোমাদের বিভিন্ন বংশ ও গোত্রে বিভক্ত করেছি, যেন তোমরা পরস্পরে পরিচিতি লাভ করতে পারো।’ (সুরা হুজুরাত, আয়াত : ১৩) পৃথিবীতে প্রথম মানব আদম (আ.) মাটি থেকে এবং প্রথম মানবী হাওয়া (আ.) আদমের পাঁজরের বাঁকা হাড় থেকে সৃষ্টি। এতদ্ব্যতীত সকল মানব-মানবী এক ফোঁটা অপবিত্র তরল পদার্থ (বীর্য) থেকে অদ্যাবধি সৃষ্টি হয়ে চলেছে। এ সম্পর্কে মহান আল্লাহ বলেন, ‘অতঃপর আমি তোমাদের মাটি থেকে সৃষ্টি করেছি। এরপর বীর্য থেকে, জমাট বাঁধা রক্ত থেকে, এরপর পূর্ণ আকৃতি ও অপূর্ণ আকৃতি বিশিষ্ট গোশত পিণ্ড থেকে, তোমাদের কাছে ব্যক্ত করি।’ (সুরা হজ্জ, আয়াত : ৫)
বাংলাদেশে ২০১৩ সালে শিক্ষার আধুনিকায়নের নামে নতুন একটি বাতিল বিষয়বস্তু ডারউইনের বিবর্তনবাদ শিক্ষা নবম-দশম শ্রেণি থেকে শুরু করে মাস্টার্স শ্রেণি পর্যন্ত পাঠ্যবইয়ে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। সাধারণ বিজ্ঞান, নবম ও দশম শ্রেণি, পৃষ্ঠা নং-১০০ থেকে ১১২ পর্যন্ত, জীব বিজ্ঞান, নবম ও দশম শ্রেণি, পৃষ্ঠা নং-২৭০ থেকে ২৭৬ পর্যন্ত, জীব বিজ্ঞান ২য় পত্র, (গাজী পাবলিশার্স-ঢাকা), একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণি, পৃষ্ঠা নং-২৮৭ থেকে ৩০০ পর্যন্ত, সমাজ বিজ্ঞান, একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণি, পৃষ্ঠা নং-২৫১ থেকে ২৫৬ পর্যন্ত পাঠ বিবর্তনবাদের আলোকেই লেখা হয়েছে।স্নাতক পর্যায়ে বিবর্তনের উপর স্বতন্ত্র পূর্ণাঙ্গ বই রয়েছে। বিবর্তনবাদের প্রতিপাদ্যবিষয় হলো সৃষ্টিকর্তার ধারণা থেকে মানুষকে বের করে দেয়া।কারণ, ডারউইনবাদ বা নব্য ডারউইনবাদ-এর বক্তব্য ‘সব কিছু প্রকৃতি থেকে সৃষ্টি হয়েছে। তুরস্কে সরকার সেদেশের জাতীয় পাঠ্যক্রম থেকে বিবর্তনবাদের তত্ত্ব বাদ দেয়া হয়েছে । সউদি আরবের পর তুরস্ক দ্বিতীয় দেশ যারা বিবর্তনবাদ পড়ানো বন্ধ করে দিয়েছে। ভারতের কেন্দ্রীয় প্রাথমিক শিক্ষামন্ত্রী সত্যপাল সিংহ ২০১৮ সালে মহারাষ্ট্রে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে বলেন ,মানুষ বিবর্তনের মাধ্যমে আসেনি! শুধু তাই নয়, চার্লস ডারউইনের তত্ত্বও বিজ্ঞানসম্মত ভাবে ভুল!এমনই দাবি করে বসলেন তিনি।এখানেই থেমে থাকেননি সত্যপাল। তিনি জানান, স্কুল-কলেজের পাঠ্যবিষয় থেকে এখনই সরিয়ে দেওয়া উচিত ওই তথ্য।তিনি বলেন, “মানুষের বিবর্তন নিয়ে ডারউইনের তথ্য ভুল। বানর থেকে নয়, মানুষ প্রথম থেকেই পৃথিবীতে মানুষ হিসাবে আবির্ভূত হয়েছিল!” সত্যপালের আরও দাবি, “আমাদের পূর্বপুরুষরা কখনও বলেননি বা লিখে যাননি যে বানর থেকে মানুষে পরিবর্তন হতে দেখেছেন তাঁরা। শুধু তাই নয়, কোনও বই বা আমাদের ঠাকুরদাদের মুখে শোনা গল্পেও এমন কোনও কথার উল্লেখ পাওয়া যায়নি।”

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

যে গাছ ইহুদিদের আশ্রয় দেবে অর্থাৎ ইহুদিদের বন্ধু গাছ

রক্তপাতহীন মক্কা বিজয়ের দিন আজ

খন্দক যুদ্ধ কারণ ও ফলাফল