সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

মরক্কো - স্পেন ফুটবল ও ভূখন্ড বিবাদ


প্রতিবেশী দুই দেশ স্পেন ও মরক্কো। কিন্তু বিশ্ব ফুটবলে দুই দেশের পার্থক্য চোখে পড়ার মতোই। বিশ্বকাপ, ইউরো—সবই জিতেছে স্পেন। আর মরক্কোর সেরা সাফল্য ১৯৭৬ সালের আফ্রিকান নেশনস কাপ জয়। ফিফা র‌্যাঙ্কিংয়েও দুই দলের পার্থক্য স্পষ্ট। স্পেন আছে ৭ নম্বরে, মরক্কোর অবস্থান ২২-এ। দুই দলের আগের তিনবারের সাক্ষাতে পাল্লাটা স্বাভাবিকভাবেই ঝুঁকে আছে স্পেনের দিকে। মুখোমুখি ৩ ম্যাচের ২টিতেই জিতেছে স্পেন, অন্য ম্যাচটি হয়েছে ড্র।
কিন্তু মঞ্চটা যখন বিশ্বকাপের, পরিসংখ্যান আর র‌্যাঙ্কিংয়ের পার্থক্য অনেক সময় শুধুই মায়াবী বিভ্রম। আর এবারের বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্বেও সেটা দেখা গেছে অনেকবার।প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনাল খেলে মরক্কো! তাও আবার সাবেক বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন স্পেনকে হারিয়ে। এরপর পর্তুগালকে হারিয়ে সেমিতে মরক্কো। মরক্কোর ফুটবল ইতিহাসে এখন পর্যন্ত এর চেয়ে বড় দিন আর আসেনি।
উত্তর আফ্রিকায় স্পেনের দুই সার্বভৌম ভূখণ্ড সুটা এবং মেলিল্লা। কিন্তু মরক্কোর কাছে ‘সুটা এবং মেলিল্লা তাদের জায়গা যা স্পেন কয়েকশ বছর ধরে জবরদখল করে রেখেছে।তবে আফ্রিকায় মরক্কোর লাগোয়া স্পেনের এই দুই শহরের মালিকানা নিয়ে দুই দেশের মধ্যে ঝগড়া মাঝে মধ্যেই ফুঁসে ওঠে। বিশেষ করে অবৈধ অভিবাসন ইস্যুতে।আপাতদৃষ্টিতে এই দুই এলাকার ওপর মরক্কোর মালিকানা দাবিকে যৌক্তিক মনে হওয়া অস্বাভাবিক নয়। এই ভূখণ্ড দুটো আফ্রিকায়। কিন্তু এগুলোর ওপর যাদের মালিকানা সেই স্পেনের অবস্থান ইউরোপে।
সেই বিচারে সুটা এবং মেলিল্লা ওপর স্পেনের মালিকানা ইউরোপীয় উপনিবেশবাদের একটি নমুনা। এবং জমির মালিকানা নিয়ে অন্য সব বিরোধের মত এখানেও রয়েছে ইতিহাস, আবেগ আর অহংকার।
খ্রিস্টানরা স্পেন থেকে মূর মুসলিমদের বিতাড়িত করার পর পর্যায়ক্রমে সুটা এবং মেলিল্লা দখল করে নেয় স্পেন।পঞ্চদশ শতাব্দিতে স্পেন ভূমধ্যসাগরের অন্য তীরে মেলিল্লা কব্জা করে। মেলিল্লা দখলের প্রায় দুশ বছর পর সপ্তদশ শতাব্দীতে সুটাও দখলে নেয় স্পেন।১৯৫৬ সালে ফ্রান্সের কাছ থেকে মরক্কো স্বাধীনতা পেলেও সুটা এবং মেলিল্লার নিয়ন্ত্রণ ছাড়েনি স্পেন। মরক্কো এবং আরব বিশ্বের অন্যান্য দেশের শত চেষ্টাও কাজে আসেনি। মুসলমানদের কাছে সুটা এবং মেলিল্লা ইউরোপীয় খ্রিষ্টান শক্তির কাছে তাদের পরাজয় এবং অপমানের স্মৃতি-চিহ্ন।
মরক্কোর একজন ঐতিহাসিক লিখেছেন, “পুরনো সেই ক্ষত এখনো সারেনি এবং তা সারবেও না যতদিন না ঐ দুই ভূখণ্ড আবারো মুসলমানদের নিয়ন্ত্রণে আসে।“
এই জবরদখল চলছে প্রায় পাঁচশ বছর ধরে। স্বাধীনতার পর শহর দুটি ফিরিয়ে দেওয়ার জোর দাবি জানিয়েছে আসছে মরক্কো। কিন্তু এখন পর্যন্ত তাদের সেই দাবির প্রতি সম্মান জানায়নি স্পেন।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

সুফফা ইসলামের প্রথম আবাসিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান

মো.আবু রায়হান:  সুফফা মসজিদে নববির একটি স্থান। যেখানে একদল নিঃস্ব মুহাজির যারা মদিনায় হিজরত করেন এবং বাসস্থানের অভাবে মসজিদে নববির সেই স্থানে থাকতেন।এটি প্রথমদিকে মসজিদ উত্তর-পূর্ব কোণায় ছিল এবং রাসুলের আদেশে এটাকে পাতার ছাউনি দিয়ে ছেয়ে দেয়া হয় তখন থেকে এটি পরিচিতি পায় আল-সুফফা বা আল-জুল্লাহ নামে। ( A Suffah is a room that is covered with palm branches from date trees, which was established next to Al-Masjid al-Nabawi by Islamic prophet Muhammad during the Medina period.)। মোটকথা রাসুল (সা) মসজিদে-নববির চত্ত্বরের এক পাশে আস সুফফা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। সুফফা হলো ছাদবিশিষ্ট প্রশস্ত স্থান। সুফফার আকৃতি ছিল অনেকটা মঞ্চের মতো, মূল ভূমির উচ্চতা ছিল প্রায় অর্ধমিটার। প্রাথমিক পর্যায়ে এর দৈর্ঘ্য ছিল ১২ মিটার এবং প্রস্থ ছিল ৮ মিটার। মসজিদে নববির উত্তর-পূর্বাংশে নির্মিত সুফফার দক্ষিণ দিকে ছিল রাসুলুল্লাহ (সা.) ও তাঁর স্ত্রীদের অবস্থানের হুজরা এবং সংলগ্ন পশ্চিম পাশে ছিল মেহরাব।আসহাবে সুফফা অৰ্থ চত্বরবাসী। ঐ সকল মহৎ প্ৰাণ সাহাবি আসহাবে সুফফা নামে পরিচিত, যারা জ্ঞানার্জনের জন্য ভোগবিলাস ত্যা...

খন্দক যুদ্ধ কারণ ও ফলাফল

#মো. আবু রায়হান ইসলামের যুদ্ধগুলোর মধ্যে খন্দকের যুদ্ধ অন্যতম। ৫ হিজরির শাওয়াল মাসে খন্দকের যুদ্ধ সংঘটিত হয়। নবীজি (সা.) মদিনায় আসার আগে সেখানে বড় দুটি ইহুদি সম্প্রদায় বসবাস করত। বনু নাজির ও বনু কোরায়জা। ইহুদিদের প্ররোচনায় কুরাইশ ও অন্যান্য গোত্র মদিনার মুসলমানদের সঙ্গে যুদ্ধ করার প্রস্তুতি গ্রহণ করে। খন্দকের এই যুদ্ধ ছিল মদিনার ওপরে গোটা আরব সম্প্রদায়ের এক সর্বব্যাপী হামলা এবং কষ্টকর অবরোধের এক দুঃসহ অভিজ্ঞতা। এসময় ২৭দিন ধরে আরব ও ইহুদি গোত্রগুলি মদিনা অবরোধ করে রাখে। পারস্য থেকে আগত সাহাবি সালমান ফারসির পরামর্শে হযরত মুহাম্মদ (স:) মদিনার চারপাশে পরিখা খননের নির্দেশ দেন। প্রাকৃতিকভাবে মদিনাতে যে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ছিল তার সাথে এই ব্যবস্থা যুক্ত হয়ে আক্রমণ কারীদেরকে নিষ্ক্রিয় করে ফেলে। জোটবাহিনী মুসলিমদের মিত্র মদিনার ইহুদি বনু কোরায়জা গোত্রকে নিজেদের পক্ষে আনে যাতে তারা দক্ষিণ দিক থেকে শহর আক্রমণ করে। কিন্তু মুসলিমদের তৎপরতার ফলে তাদের জোট ভেঙে যায়। মুসলিমদের সুসংগঠিত অবস্থা, জোটবাহিনীর আত্মবিশ্বাস হ্রাস ও খারাপ আবহাওয়ার কারণে শেষপর্যন্ত আক্রমণ ব্যর্থ হয়।এই যুদ্ধে জয়ের ফলে ইসল...

কাবা ঘর নির্মাণের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস

মো. আবু রায়হানঃ কাবা মুসলমানদের কিবলা, অর্থাৎ যে দিকে মুখ করে নামাজ পড়ে বা সালাত আদায় করে, পৃথিবীর যে স্থান থেকে কাবা যে দিকে মুসলমানগণ ঠিক সে দিকে মুখ করে নামাজ আদায় করেন। হজ্জ এবং উমরা পালনের সময় মুসলমানগণ কাবাকে ঘিরে তাওয়াফ বা প্রদক্ষিণ করেন।কাবা শব্দটি এসেছে আরবি শব্দ মুকাআব অর্থ ঘন থেকে।কাবা একটি বড় ঘন আকৃতির ইমারত। (The Kaaba, meaning cube in Arabic, is a square building elegantly draped in a silk and cotton veil.)।যা সৌদি আরবের মক্কা শহরের মসজিদুল হারাম মসজিদের মধ্যখানে অবস্থিত। প্রকৃতপক্ষে মসজিদটি কাবাকে ঘিরেই তৈরি করা হয়েছে।কাবার ভৌগোলিক অবস্থান ২১.৪২২৪৯৩৫° উত্তর ৩৯.৮২৬২০১৩° পূর্ব।পৃথিবীর সর্বপ্রথম ঘর বায়তুল্লাহ বা পবিত্র কাবা ঘর ।আল্লাহ বলেন, নিশ্চয় সর্বপ্রথম ঘর যা মানুষের জন্য নির্মিত হয়েছে তা মক্কা নগরীতে। (সুরা আল ইমরান - ৯৬)। “প্রথম মাসজিদ বায়তুল্লাহিল হারাম তারপর বাইতুল মাকদিস, আর এ দুয়ের মধ্যে সময়ের ব্যবধান হলো চল্লিশ বছরের”।(মুসলিম- ৫২০)। ভৌগোলিকভাবেই গোলাকার পৃথিবীর মধ্যস্থলে কাবার অবস্থান। ইসলামের রাজধানী হিসেবে কাবা একটি সুপরিচিত নাম। পৃথিবীতে মাটির সৃষ্টি ...