মরক্কোর বিজয়ে ধর্মীয় তাৎপর্য না থাকলেও রাজনৈতিক তাৎপর্য অনস্বীকার্য।



আফ্রিকার সবচেয়ে পশ্চিমের দেশ মরক্কো। মরক্কো কেবলই প্রথম আফ্রিকান দেশ হিসেবে নয়, প্রথম আরব দেশ হিসেবেও সেমিফাইনালে জায়গা করে নিয়েছে। এবারের বিশ্বকাপে বিস্ময় মরক্কো। এখন অবশ্য অনেকেই মরক্কোর জয়কে অঘটন বলতে নারাজ। যে দল বেলজিয়ামকে হারিয়েছে,ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে ড্র করেছে, স্পেনকে হারিয়েছে, পর্তুগালকে ৯০ মিনিটের খেলায় হারিয়েছে, তাদের জয়কে অঘটন বলার উপায় নেই।

১৯৫৭ সালের ১৯শে অক্টোবর তারিখে, মরক্কো প্রথমবারের মতো আন্তর্জাতিক খেলায় অংশগ্রহণ করে; লেবাননের বৈরুতে অনুষ্ঠিত মরক্কো এবং ইরাকের মধ্যকার উক্ত ম্যাচটি ৩–৩ গোলের ড্র হয়।
মরক্কো এপর্যন্ত ৫ বার ফিফা বিশ্বকাপে অংশগ্রহণ করে, যার মধ্যে সেরা সাফল্য হচ্ছে ১৯৮৬ ফিফা বিশ্বকাপের ১৬ দলের পর্বে পৌঁছানো, যেখানে তারা পশ্চিম জার্মানির কাছে ১–০ গোলের ব্যবধানে পরাজিত হয়। অন্যদিকে, আফ্রিকা কাপ অফ নেশন্সে মরক্কো অন্যতম সফল দল, যেখানে তারা ১টি (১৯৭৬) শিরোপা অর্জন করে। এছাড়াও, মরক্কো ২০১৮ আফ্রিকান নেশন্স চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা লাভ করে।ফিফা বিশ্ব র‌্যাঙ্কিংয়ে, ১৯৯৮ সালের এপ্রিল মাসে প্রকাশিত র‌্যাঙ্কিংয়ে মরক্কো তাদের ইতিহাসে সর্বপ্রথম সর্বোচ্চ অবস্থান (১০ম) অর্জন করে।
মরক্কোর বেশিরভাগ মানুষই মুসলিম।সিআইএ দ্য ওয়ার্ল্ড ফ্যাক্টবুকের তথ্য মতে, মরক্কোর মোট জনসংখ্যার ৯৯ শতাংশ সুন্নি মুসলমান। দামেস্কের উমাইয়া খলিফার আদেশে উকবা ইবনে নাফি (রহ.)-এর নেতৃত্বে মরক্কোতে অভিযান চালানো হয়। ৬৭০ খ্রিস্টাব্দে তারা দেশটিতে প্রবেশ করে। দীর্ঘ ১০০ বছরে বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠী ও কলোনিকে একত্র করে একটি রাষ্ট্রের জন্ম দেয়। ইসলাম এখানে নিয়ে আসে উন্নত সংস্কৃতি ও উন্নত জীবনাচরণ। উন্নত আরবীয় সংস্কৃতিতে ছাপিয়ে যায় বারবার আর যাযাবর জীবন।
১৯১২ সালে ফরাসি ও স্প্যানিশ ঔপনিবেশিক শক্তি মরক্কোকে ভাগ করে নেয়। দেশটি স্বাধীন হয় ১৯৫৬ সালে।
কাতার বিশ্বকাপের মাঠে মরক্কোর ফুটবলাররা নিজেদের মুসলিম হিসেবে প্রদর্শন করেছেন।
স্পেনের বিপক্ষে পেনাল্টি শুটআউটের আগে পবিত্র কোরআন থেকে তেলাওয়াত করছিলেন তারা।
পর্তুগালের বিপক্ষে জয়ের পর তারা সেজদায় মাথা অবনত করেছেন, আল্লাহর কাছে কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন এভাবেই।
বিজয়ের পর মরক্কোর অনেক খেলোয়াড় তাদের জাতীয় পতাকার পাশাপাশি ফিলিস্তিনি পতাকা তুলে ধরে। তারা এমনকি ম্যাচের পর তোলা গ্রুপ ছবিতেও ফিলিস্তিনি পতাকা দোলায়।মরক্কোর স্ট্রাইকার আবদুল রাজ্জাক হামদাল্লাহ ফিলিস্তিনি পতাকা বহন করেন, স্টেডিয়ামে ফ্যানদের সামনে তা প্রদর্শন করেন।
আশরাফ দারি ফিলিস্তিনের পতাকা গায়ে জড়িয়ে মাঠে সমর্থন প্রকাশ করেছেন।আশরাফ হাকিমি জয়ের পরে মায়ের কাছে গ্যালারিতে ছুটে গিয়েছেন, সোফিয়ান বৌফল তার মায়ের সাথে নাচেন।
কোচ রাগরাগি সবার শেষে মাঠ ছাড়েন, আবেগ আর উল্লাস তাকে ছুঁয়ে গিয়েছিল।ম্যাচের পর সংবাদ সম্মেলনে তিনি কথা শুরু করেন, আল্লাহর শুকরিয়া জ্ঞাপন করে। “আলহামদুলিল্লাহ”
জেরুজালেমে হয়েছে উৎসব। ফিলিস্তিনিরা মরক্কোকে সমর্থন দিয়েছে, দিয়েছে আরব বিশ্বও। আরব বিশ্বে অনেকেই মনে করছেন এই জয় ‘একটা জবাব’। মরক্কোর কোচও অনেকটা সেই সুরে কথা বলেছেন।
মরক্কোর বিজয়ে ধর্মীয় তাৎপর্য না থাকলেও রাজনৈতিক তাৎপর্য অনস্বীকার্য।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

যে গাছ ইহুদিদের আশ্রয় দেবে অর্থাৎ ইহুদিদের বন্ধু গাছ

রক্তপাতহীন মক্কা বিজয়ের দিন আজ

খন্দক যুদ্ধ কারণ ও ফলাফল