পৃথিবী চন্দ্রকে সঙ্গে নিয়ে সূর্যের চারদিকে আবর্তিত



প্রাচীনকালে জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা মনে করতেন, মহাবিশ্বের সব কিছুই পৃথিবীকে কেন্দ্র করে ঘুরে। কিন্তু “পৃথিবী স্থির।” এ ধারণাটা পরবর্তী বিজ্ঞানীদের দৃষ্টিতে ভুল প্রমাণিত হয়।পৃথিবী চন্দ্রকে সঙ্গে নিয়ে সূর্যের চারদিকে আবর্তিত হয় ঘণ্টায় ৬,০০০ মাইল বেগে এবং সূর্যের চারদিকে একটি আবর্তন সমাপ্ত করতে সময় নেয় প্রায় ৩৬৫ দিন ৬ ঘন্টা, ৪৬ মিনিট ৪৮ সেকেন্ড। এবং বছরে বিভিন্ন ঋতুর পরিবর্তন ঘটায়। যখন কুরআনে মাজিদ অবতীর্ণ হয়, তখন বিশ্বাস করা হত, সূর্যই ঘোরে, পৃথিবী স্থির।

গণিতবিদ টলেমি বলেছেন, আদিম যুগ থেকে মানুষের মনে একটি ধারণা ছিল যে, পৃথিবী স্থির একটি গ্রহ। মহাবিশ্বের সকল কিছু পৃথিবী কে কেন্দ্র করে ঘুরপাক খায়। পিটারসনের পিথাগোরাস পৃথিবীর ঘূর্ণয়নের কথা বললেও তিনি এ মতবাদ প্রমাণ করতে সক্ষম হননি। ষষ্ঠ শতাব্দীর শেষে সপ্তম শতাব্দীর শুরুর দিকে গ্যালিলীও পৃথিবীর ঘূর্ণয়নের ব্যাপারে প্রমাণ করতে দূরবীক্ষণ যন্ত্র আবিষ্কার করেন। পোল্যান্ডের একজন জ্যোতিবিজ্ঞানী যার নাম “কোপানিকাস” (১৪৭৩-১৫৪৩) প্রথম বলেন, পৃথিবীও ঘোরে। কিন্তু কেউই তার উক্তিটি বিশ্বাস করেনি।
অথচ কুরআন মাজিদে এই সত্য অবতীর্ণ হয়েছে, বিজ্ঞানযুগের অনেক পূর্বে।কুরআনুল কারীম আজ থেকে প্রায় সাড়ে ১৪শত বছর আগেই একথা বলে দিয়েছে যে, চন্দ্র, সূর্য ওপৃথিবীসহ মহাবিশ্বের প্রতিটি নক্ষত্র,গ্রহ,ও উপগ্রহই নিজ নিজ কক্ষপথে বিচরণ করছে ।
সুরা আম্বিয়া ৩৩ নং আয়াতে বলা হয়েছে -
“এবং তিনিই দিবা-নিশি এবং চন্দ্র-সূর্য সৃষ্টি করেছেন। সবাই আপন আপন কক্ষ পথে বিচরণ করে।”
বিশ্বখ্যাত মুফাসসীরে কুরআন, বিজ্ঞানী আল্লামা ত্বানত্ববী আল জাওহারী রহ. স্বীয় তাফসীর গ্রন্থে সূরা আম্বিয়ার অত্র আয়াতের ব্যাখ্যায় লিখেছেন যে, উক্ত আয়াতটি ব্যাপক অর্থ সম্বলিত। অর্থাৎ সূর্য, চন্দ্র, তারকা ও পৃথিবী, মোটকথা প্রত্যেকটি নক্ষত্র নিজ নিজ কক্ষপথে ঘুরছে। (আল জাওয়াহিরু ফী তাফসীরিল কুরআনিল কারীম : ১০/১৯৯)
আল্লাহ তায়ালা বলেন, “সূর্য তার নির্দিষ্ট অবস্থানে আবর্তন করে। এটা পরাক্রমশালী, সর্বজ্ঞ আল্লাহর নির্ধারণ। চন্দ্রের জন্যে আমি বিভিন্ন মনযিল নির্ধারিত করেছি। অবশেষে সে পুরাতন খর্জুর শাখার অনুরূপ হয়ে যায়। সূর্যের পক্ষে চন্দ্রকে নাগাল পাওয়া সম্ভব নয়। রাতের পক্ষেও দিনের অগ্রবতী হওয়া সম্ভব নয়। প্রত্যেকেই আপন আপন কক্ষপথে পরিভ্রমণ করে।” ( সুরা ইয়াসিন - ৩৮-৪০)
সুরা যুমারের ৫ নং আয়াতে বলা হয়েছে -“তিনি আসমান ও জমিন সৃষ্টি করেছেন যথাযথভাবে। তিনি রাত্রিকে দিবস দ্বারা আচ্ছাদিত করেন এবং দিবসকে রাত্রি দ্বারা আচ্ছাদিত করেন এবং তিনি সূর্য ও চন্দ্রকে কাজে নিযুক্ত করেছেন।প্রত্যেকেই বিচরণ করে নির্দিষ্ট সময়কাল পর্যন্ত জেনে রাখুন, তিনি পরাক্রমশালী, ক্ষমাশীল।”
এই আয়াত দ্বারাও পৃথিবী ঘুর্নায়মানের ইঙ্গিত পাওয়া যায়।কারনে আয়াতে বলা হয়েছে সৌরজগতের প্রত্যেকেই বিচরণ করতেছে নির্দিষ্ট সময়কাল পর্যন্ত।আর পৃথিবীও যেহেতু সৌরজগতের একটি গ্রহ সুতরাং পৃথিবীর ঘুর্নায়মান হওয়াটাই স্বাভাবিক।
চাঁদ বা সূর্য কখনও ওঠে বা নামে না। পৃথিবী সূর্যের চারপাশে ঘুরছে চাঁদকে নিয়ে আর চাঁদ ঘুরছে পৃথিবীর চারপাশে।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

যে গাছ ইহুদিদের আশ্রয় দেবে অর্থাৎ ইহুদিদের বন্ধু গাছ

রক্তপাতহীন মক্কা বিজয়ের দিন আজ

খন্দক যুদ্ধ কারণ ও ফলাফল