সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

আল্লামা ইকবাল ও কর্ডোভা মসজিদ

 আল্লামা ইকবাল একাধারে একজন কবি, সাহিত্যিক, দার্শনিক, শিক্ষাবিদ ও মনীষী। আধুনিক বিশ্বে ইসলামের মর্মবাণীর সার্থক ব্যাখ্যাদাতা হিসেবে তাকে বিবেচনা করা হয়। সমাজ, রাষ্ট্র, বিজ্ঞান, ধর্ম, শিল্পবিজ্ঞানসহ নানা ক্ষেত্রে তার রয়েছে অবদান। এসব ক্ষেত্রে নিজস্ব চিন্তা উপদেশ ও দর্শন ছিল এই মহাকবির, যেগুলো তাকে নিয়ে গেছে খ্যাতির আসনে। দিয়েছে অনন্য সম্মান।১৮৭৭ সারের ৯ নভেম্বর অবিভক্ত ভারতের পাঞ্জাব প্রদেশের শিয়ালকোট শহরে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে তার জন্ম হয় আল্লামা মোহাম্মদ ইকবালের।

ধর্ম নিয়ে ইকবালের দর্শন হচ্ছে- ‘ধর্ম কোনো মতবাদ নয়, কোনো পৌরহিত্য নয়, কোনো অনুষ্ঠান নয়, বরং ধর্ম এমন একটি জীবনবিধান যা মানুষকে বিজ্ঞানের যুগেও তার দায়িত্ব পালনে প্রস্তুত করে এবং তার প্রতীতিকে দৃঢ় সক্ষম করে দেয়, যার ফলে সে সত্যোপলব্ধিতে সক্ষম হয়ে উঠে।’ তিনি আরও বলেন, ধর্ম পদার্থ বিদ্যাও নয়, রসায়ন শাস্ত্রেও নয় যে, ল্যবরেটরীতে তাকে Experiment ও পরীক্ষা করে বুঝতে হবে।

প্রায় সাত'শ বছর স্পেন শাসন করে মুসলমানরা। সেখানে মুসলমানদের অস্তিত্ব বিলীন হলেও তাদের কীর্তি অমর হয়ে ভাস্বর। ১২৩৬ সালে ক্যাসলের রাজা তৃতীয় ফার্ডিনান্দ ও রাণী ইসাবেলা মুসলমানদের নির্বিচারে হত্যা করে স্পেন দখল করে নেয় আর কর্ডোভা মসজিদকে রোমান ক্যাথলিক গির্জায় রুপান্তরিত করে৷ তখন থেকে একে বলা হয় দ্য মস্ক ক্যাথেড্রাল অব কর্ডোভা।
আল্লামা ইকবালের দীর্ঘদিনের ইচ্ছা ছিল কর্ডোভা মসজিদে দু’রাকাত নামাজ পড়ার। ১৯৩৩ সালে স্পেন সফরকালে আল্লামা ইকবাল এই মসজিদ পরিদর্শন করেন। মসজিদে নামাজ পড়া সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ হলেও শুধু আল্লামা ইকবালকে মসজিদে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয়। তবে, প্রবেশের পর ভেতর থেকে দরজা বন্ধ করে দিতে বলা হয়। মসজিদে প্রবেশ করেই উচ্চস্বরে আজান দেন আল্লামা ইকবাল। দীর্ঘ সাতশ’ বছর পর ওই মসজিদে এটিই ছিল প্রথম আজান। মসজিদের দেয়াল ও স্তম্ভগুলো দীর্ঘকাল পর আজানের ধ্বনি শুনতে পায়। আজানের পর জায়নামাজ বিছিয়ে দু’রাকাত নামাজ আদায় করেন ইকবাল। নামাজে এমন এক অবস্থা সৃষ্টি হয় যে, তিনি বেহুঁশ হয়ে যান। জ্ঞান ফেরার পর তিনি অশ্রুসিক্ত নয়নে মোনাজাত করেন। মোনাজাতের প্রতিটি বাক্যই কবিতার মতো করে আবৃত্তি করেছিলেন তিনি। ঐতিহাসিক কর্ডোভা মসজিদে নামাজ পড়ে তিনি তার আবেগকে ৭টি কবিতার মাধ্যমে প্রকাশ করেন। ‘বাবে জিবরিলে দোয়া’ শিরোনামে দীর্ঘ কবিতাটি ওই মসজিদে বসেই লিখেছিলেন তিনি।
اے حرم قرطبہ عشق سے تیرا وجود
عشق سراپا دوام جس میں نہیں رفت و بود
(To Love, you owe your being, O, Harem of Cordoba,
To Love, that is eternal; Never waning, never fading.)
বর্তমানের যাতে কেউ সেখানে নামাজ, রুকু কিংবা সেজদা দিতে না পারে। সে জন্য অত্যাধুনিক সিসি ক্যামেরা নিয়ন্ত্রিত বিশেষ সিকিউরিটি ফোর্স সার্বক্ষণিক পাহারায় নিয়োজিত। আজও সেখানে ক্রুশ টানিয়ে রাখা হয়েছে৷ ২০০০ সালের প্রথম দিকে স্প্যানিশ মুসলমানরা এই মসজিদের নামাজ আদায় করার দাবি জানালে তা প্রত্যাখ্যাত হয়। মুসলিম সভ্যতার অনন্য নিদর্শন এই কর্ডোভা মসজিদটি এখনও গির্জা হিসেবেই ব্যবহৃত হচ্ছে।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

যে গাছ ইহুদিদের আশ্রয় দেবে অর্থাৎ ইহুদিদের বন্ধু গাছ

মো.আবু রায়হান:  কিয়ামত সংঘটিত হবার  পূর্বে হযরত ঈসা (আ.) এর সঙ্গে দাজ্জালের জেরুজালেমে যুদ্ধ হবে। সেই যুদ্ধে ইহুদিরা দাজ্জালের পক্ষাবলম্বন করবে। হযরত ঈসা (আ.) দাজ্জালকে হত্যা করবেন।এদিকে  ইহুদিরা প্রাণ ভয়ে পালাতে চেষ্টা করবে।  আশেপাশের গাছ ও পাথর/ দেয়ালে আশ্রয় নেবে। সেদিন গারকাদ নামক একটি গাছ ইহুদিদের আশ্রয় দেবে। গারকাদ ইহুদীবান্ধব গাছ।গারকাদ একটি আরবি শব্দ। এর অর্থ হল কাটাওয়ালা ঝোঁপ।গারকাদ এর ইংরেজী প্রতিশব্দ Boxthorn। Boxএর অর্থ সবুজ ঝোঁপ এবং thorn এর অর্থ কাঁটা। এ ধরনের গাছ বক্সথর্ন হিসেবেই পরিচিত। এই গাছ চেরি গাছের মতো এবং চেরি ফলের মতো লাল ফলে গাছটি শোভিত থাকে।  ইসরায়েলের সর্বত্র বিশেষত অধিকৃত গাজা ভূখন্ডে গারকাদ গাছ ব্যাপকহারে  দেখতে পাওয়া যায়।ইহুদিরা কোথাও পালাবার স্থান পাবে না। গাছের আড়ালে পালানোর চেষ্টা করলে গাছ বলবে, হে মুসলিম! আসো, আমার পিছনে একজন ইহুদী লুকিয়ে আছে। আসো এবং তাকে হত্যা কর। পাথর বা দেয়ালের পিছনে পলায়ন করলে পাথর বা দেয়াল বলবে, হে মুসলিম! আমার পিছনে একজন ইহুদী লুকিয়ে আছে, আসো! তাকে হত্যা কর। তবে গারকাদ নামক গাছ ইহুদিদেরকে ...

খন্দক যুদ্ধ কারণ ও ফলাফল

#মো. আবু রায়হান ইসলামের যুদ্ধগুলোর মধ্যে খন্দকের যুদ্ধ অন্যতম। ৫ হিজরির শাওয়াল মাসে খন্দকের যুদ্ধ সংঘটিত হয়। নবীজি (সা.) মদিনায় আসার আগে সেখানে বড় দুটি ইহুদি সম্প্রদায় বসবাস করত। বনু নাজির ও বনু কোরায়জা। ইহুদিদের প্ররোচনায় কুরাইশ ও অন্যান্য গোত্র মদিনার মুসলমানদের সঙ্গে যুদ্ধ করার প্রস্তুতি গ্রহণ করে। খন্দকের এই যুদ্ধ ছিল মদিনার ওপরে গোটা আরব সম্প্রদায়ের এক সর্বব্যাপী হামলা এবং কষ্টকর অবরোধের এক দুঃসহ অভিজ্ঞতা। এসময় ২৭দিন ধরে আরব ও ইহুদি গোত্রগুলি মদিনা অবরোধ করে রাখে। পারস্য থেকে আগত সাহাবি সালমান ফারসির পরামর্শে হযরত মুহাম্মদ (স:) মদিনার চারপাশে পরিখা খননের নির্দেশ দেন। প্রাকৃতিকভাবে মদিনাতে যে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ছিল তার সাথে এই ব্যবস্থা যুক্ত হয়ে আক্রমণ কারীদেরকে নিষ্ক্রিয় করে ফেলে। জোটবাহিনী মুসলিমদের মিত্র মদিনার ইহুদি বনু কোরায়জা গোত্রকে নিজেদের পক্ষে আনে যাতে তারা দক্ষিণ দিক থেকে শহর আক্রমণ করে। কিন্তু মুসলিমদের তৎপরতার ফলে তাদের জোট ভেঙে যায়। মুসলিমদের সুসংগঠিত অবস্থা, জোটবাহিনীর আত্মবিশ্বাস হ্রাস ও খারাপ আবহাওয়ার কারণে শেষপর্যন্ত আক্রমণ ব্যর্থ হয়।এই যুদ্ধে জয়ের ফলে ইসল...

উটের যুদ্ধ ইসলামের প্রথম ভাতৃঘাতি যুদ্ধ

#মো.আবু রায়হান উটের যুদ্ধ বা উষ্ট্রের যুদ্ধ বা জামালের যুদ্ধ ( Battle of the Camel) ৬৫৬ খ্রিষ্টাব্দের শেষের দিকে ইরাকের বসরায় সংঘটিত হয়। এটি ইসলামের ইতিহাসের প্রথম গৃহযুদ্ধ।এই যুদ্ধ ছিল ইসলামের চতুর্থ খলিফা হযরত আলী এর বিরুদ্ধে হযরত তালহা-জুবায়ের ও আয়েশা (রা)সম্মলিত যুদ্ধ। পটভূমি হযরত ওসমান (রা) এর বিভিন্ন প্রদেশে প্রাদেশিক শাসনকর্তা নিয়োগ নিয়ে একদল তার বিরুদ্ধে অভিযোগ টেনে বিদ্রোহ শুরু করে।হযরত ওসমান বিভিন্নভাবে তাদের শান্ত করার চেষ্টা করতে থাকেন। তাদের কথামত মিশরের গভর্নরকে প্রতিস্থাপন করে আবু বকরের ছেলে মুহাম্মদ ইবনে আবু বকর কে নিয়োগ করলেও বিদ্রোহীরা শান্ত হয় নি। তারা নানাভাবে অভিযোগ টেনে এনে ওসমান (রা) এর অপসারণের দাবী করতে থাকে। ওসমান সবকিছু মীমাংসার আশ্বাস দিলেও তারা ৬৫৬ সালের ১৭ জুন তারা বাড়ি অবরুদ্ধ করে এবং এক পর্যায়ে তারা তার কক্ষে প্রবেশ করে কুরআন তেলাওয়াত করা অবস্থায় হত্যা করে।ওসমান (রা.)-এর হত্যাকাণ্ডের পর আলী (রা.) খলিফা হন। কিন্তু দুঃখজনকভাবে ক্ষমতা গ্রহণ করে যখনই আলী (রা.) ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার কাজে হাত দেন তখনই ধর্মীয় ও রাজনৈতিক দূরদর্শিতার অভাবের কার...