কাফের ফতোয়ার ডিলারশিপ

 

আজকাল ওয়াজ মাহফিল কিংবা বিভিন্ন আলোচনা সভায় কতিপয় আলেম ওলামা একজন অপর জনকে হরহামেশাই কাফের ফতোয়া দিয়ে তৃপ্তির ঢেকুর তুলছেন।এই জনপদে কয়েক বছর ধরে কাউকে কাফের ফতোয়া দেওয়ার হার বৃদ্ধি পেয়েছে।
যে ব্যক্তি নিজেকে মুমিন বা বিশ্বাসী বলে দাবি করছেন তাকে অবিশ্বাসী বা কাফির বলে আখ্যা দেওয়াকে সাধারণভাবে ‘‘তাকফীর’’ বলা হয়।মুসলিম উম্মাহর মধ্যে প্রকাশিত প্রথম বিভ্রান্তিগুলোর অন্যতম ছিল ‘‘তাকফীর’’ বা মুসলিমকে কাফির বলা। দ্বিতীয় হিজরী শতকে বিদ্যমান বিভ্রান্ত ফিরকাগুলোর মধ্যে একটি বিষয়ে মিল ছিল, তা হলো, নিজেদের ছাড়া অন্যান্য মুসলিমকে কাফির বলে গণ্য করা। এদের মধ্যে ‘‘খারিজী’’ ফিরকার আকীদার মূল ভিত্তিই ছিল ‘‘তাকফীর’’। অন্যান্য ফিরকাও পাপের কারণে বা মতভেদীয় বিষয়ে ভিন্নমতের কারণে মুসলিমদেরকে ঢালাওভাবে কাফির বলতে থাকে।
'আলেমগণ’ ও চার মাজহাবের ইমামগণ একমত যে, নিছক মতপার্থক্যের কারণে কাউকে অবিশ্বাসী বা কাফের বলা জায়েজ বা বৈধ নয়। অনুরূপভাবে কাউকে সুনির্দিষ্টভাবে নাম উল্লেখ করে কাফের ঘোষণা করা যাবে না। আল বাহনাসাবি এ প্রসঙ্গে যথার্থই বলেছেন, ‘কারণ এ বিষয়টি নির্ধারণ করা একান্তভাবে একজন উপযুক্ত বিচারকের কাজ; তাই কাউকে অবিশ্বাসী ঘোষণা করার কোনো অনুমতি কোনো অভিজ্ঞ ব্যক্তিকে দেয়া হয়নি।’ যদি কোনো মুসলমান এমন কথা বলে বা এমন কাজ করে, যার কুফরির পর্যায়ে পড়ার কেবল একটা সম্ভাবনা থাকে, তাহলেও তাকে ধর্মত্যাগী বা অবিশ্বাসী বলা যাবে না। ইমাম আবু হানিফার মতে, কোনো কথার যদি ৯৯ শতাংশই অবিশ্বাসের বোঝায় এবং মাত্র ১ শতাংশ বিশ্বাস (ঈমান) অবশিষ্ট থাকে তাহলে তাকে কাফের বলা যাবে না।
হাদিসে বলা হয়েছে :‘কোনো ব্যক্তি যদি (অন্যায়ভাবে) তার মুসলমান ভাইকে ‘কাফির’ বলে, নিঃসন্দেহে তাদের যেকোনো একজনের প্রতি কুফরি আপতিত হবে। তার কথায় বাস্তবতা না থাকলে কুফরি তার নিজের দিকেই বর্তাবে।’ (বুখারি : ২/৯০১, মুসলিম : হাদিস ১১১)
এই হাদিস থেকে স্পষ্টভাবে জানা যায়, অকাট্য প্রমাণ ছাড়া কোনো মুসলমানকে ‘কাফির’ বলা হারাম। এমনকি অজ্ঞতাবশত কেউ শরিয়তের কোনো বিধান অস্বীকার বা বিরোধিতা করলেও তার বিষয়টি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখতে হবে। (মুখতাসারু ফতোয়া মিসরিয়া : ৫৭২; আল আওয়াসেম : ৪/১৭৪)
কোনো ঈমানদারকে ফাসেক বলে সম্বোধন করাও গুনাহ। কারণ, ফাসেক অর্থ অপরাধী। সাধারণত অপরাধ করলেই অপরাধী হয়। অন্যথায় অপরাধী বলা গুনাহ। এ মর্মে রাসুল (সা.) বলেন, কোনো ব্যক্তি অপর ব্যক্তিকে ফাসেক বলবে না এবং কুফরির অপবাদও দেবে না। কেননা, যদি সেই ব্যক্তি প্রকৃতপক্ষে সেইরূপ না হয়, তবে তার অপবাদ নিজের ওপরই প্রত্যাবর্তন করবে। (বুখারি : ৬১১৪) রাসুলুল্লাহ (সা) বলেন,
‘‘মুসলিমকে গালি দেওয়া পাপ এবং তার সাথে যুদ্ধ করা কুফরী।’’(বুখারী, আস-সহীহ ১/২৭ (কিতাবুল ঈমান, বাবু খাওফিল মুমিন), ৫/২২৪৭, ৬/২৫৯২; মুসলিম, আস-সহীহ ১/৮১ (কিতাবুল ঈমান, বাবু কাওলিন নাবিয়্যি... সিবাবুল মুমিন)

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

যে গাছ ইহুদিদের আশ্রয় দেবে অর্থাৎ ইহুদিদের বন্ধু গাছ

রক্তপাতহীন মক্কা বিজয়ের দিন আজ

খন্দক যুদ্ধ কারণ ও ফলাফল