ইউরোপের খলনায়ক সার্বিয়া
মধ্য ও দক্ষিণ-পূর্ব ইউরোপের একটি স্থলবেষ্টিত দেশ সার্বিয়া। বলকান উপদ্বীপের মধ্যভাগে অবস্থান। এটি পানোনীয় সমভূমির দক্ষিণাংশে, বলকান উপদ্বীপের মধ্যভাগে অবস্থিত। দেশটির উত্তরে হাঙ্গেরি, পূর্বে রোমানিয়া ও বুলগেরিয়া, দক্ষিণে আলবেনিয়া ও উত্তর মেসিডোনিয়া, এবং পশ্চিমে মন্টিনিগ্রো, ক্রোয়েশিয়া এবং বসনিয়া ও হার্জেগোভিনা। এর রাজধানীর নাম বেলগ্রেড।
সার্বিয়ার আয়তন ৭৭ হাজার ৪৭৪ বর্গকিলোমিটার (কসোভো বাদ দিয়ে)।। ২০১৮ সালের এক হিসাব অনুযায়ী, দেশটির জনসংখ্যা ৭০ লাখ ৫৮ হাজার ৩২২ (কসোভো বাদ দিয়ে)।জাতিগোষ্ঠীর সার্ব ৮৩.৩ শতাংশ, হাঙ্গেরিয়ান ৩.৫ শতাংশ, রোমা ২.১ শতাংশ, বসনিয়াক ২ শতাংশ, অন্যান্য ৯.১ শতাংশ। সংবিধান অনুযায়ী সার্বিয়া একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র, যেখানে বসবাসকারীরা তাদের ইচ্ছা অনুযায়ী ধর্ম পালন করতে পারে। তবে দেশটির ৮৪ শতাংশ মানুষ খ্রিষ্টান ধর্মালম্বী। এছাড়া রোমান ক্যাথলিকদের সংখ্যা মোট জনসংখ্যার ৬ শতাংশ এবং মুসলিম ৩ শতাংশ। অন্যান্য ধর্মালম্বী রয়েছে আরও ৭ শতাংশ।
সার্বিয়ার অফিসিয়াল ভাষা সার্বিয়ান। দেশটির ৮০ শতাংশের অধিক মানুষ এই ভাষায় কথা বলে। এছাড়া দেশটির প্রায় ১৫ শতাংশ ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী হাঙ্গারিয়ান, বসনিয়ান, ক্রোয়েশিয়ান, আলবেনিয়ান, রোমানিয়ান, বুলজেরিয়ান এবং রাশিয়ান ভাষায় কথা বলে।
নবম শতকে ভাস্তিমিরভিচ রাজবংশ কর্তৃক সার্বিয়ার প্রথম রাজ্য ‘রাস্কা‘ প্রতিষ্ঠিত হয়। এর পরে এটি নিমানজিচ রাজবংশের অধীনে সার্বীয় রাজতন্ত্র ও সাম্রাজ্যে প্রসারিত হয়।ষোড়শ শতাব্দীর মাঝামাঝি অটোমানরা এর দখল নেয়। পরের শতাব্দীতে এটি হেবসবার্গ সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত হয়। আধুনিক যুগে বিভিন্ন সময়ে সার্বিয়া বিভিন্ন নামে পরিচিত ছিল। এর মধ্যে স্বায়ত্বশাসিত রাজ্য (১৮১৭-১৮৭৮), স্বাধীন রাজ্য (১৮৭৮-১৯১৮), সার্ব, ক্রোট, ও স্লোভেন দের রাজ্যের অংশ (১৯১৮-১৯৪১), নাৎসি অধিকৃত রাষ্ট্র (১৯৪১-১৯৪৪), ইয়ুগোস্লাভ যুক্তরাষ্ট্রের অধীনস্থ সমাজবাদী প্রজাতন্ত্র (১৯৪৫-১৯৯২), গণতন্ত্রী ইয়ুগোস্লাভ যুক্তরাষ্ট্রের অধীনস্থ একটি প্রজাতন্ত্র (১৯৯২-২০০৩),বিংশ শতাব্দীর বেশিরভাগ সময় সার্বিয়া ছিল সাবেক যুগোস্লোভিয়ার অবিচ্ছেদ্য অংশ। ২০০৬ সালে যুগোস্লোভিয়া রাষ্ট্রে ভাঙ্গন ধরে এবং তা থেকে আধুনিক সার্বিয়া, ক্রোয়েশিয়া, স্লোভেনিয়া, বসনিয়া ও হার্জেগোভিনা, কসোভো, উত্তর মেসিডোনিয়া এবং মন্টিনিগ্রোর সৃষ্টি হয়।সার্বিয়া ও মন্টেনেগ্রোর অংশ (২০০৩-২০০৬) এবং সবশেষে সার্বীয় প্রজাতন্ত্র (২০০৬ এর জুন ৫ এ ঘোষিত)। প্রথমদিকে কসোভো সার্বিয়ার অংশ ছিল। কিন্তু রক্তক্ষয়ী গৃহযুদ্ধ ও ন্যাটোর হস্তক্ষেপের মাধ্যমে ২০১২ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে আলাদা হয়ে যায় সেটি। তবে আজও কসোভোকে স্বাধীন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দেয়নি সার্বিয়া।
সার্বিয়ার রাজনীতি একটি সংসদীয় প্রতিনিধিত্বমূলক বহুদলীয় গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র কাঠামোয় সংঘটিত হয়। সরকারপ্রধান হলেন প্রধানমন্ত্রী। রাষ্ট্রের নির্বাহী ক্ষমতা সরকারের উপর ন্যস্ত। আইন প্রণয়নের ক্ষমতা সরকার এবং আইনসভা উভয়ের উপর ন্যস্ত। বিচার বিভাগ নির্বাহী বিভাগ ও আইনসভা হতে স্বাধীন।
পার ক্যাপিটা হিসাবে সার্বিয়ার জিডিপির পরিমাণ ৫ হাজার ৯০০ ইউএস ডলার, যা গোটা ইউরোপের মধ্যে সপ্তম সর্বনিম্ন। অথচ যুগোস্লাভিয়া যুগে সার্বিয়া ছিল ইউরোপের সবচেয়ে প্রগতিশীল অর্থনীতিগুলোর মধ্যে একটি। দেশটির রাজধানী বেলগ্রেডকে একসময় ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের বর্তমান প্রশাসনিক রাজধানী ব্রাসেলসের সঙ্গে তুলনা করা হতো।সে সময় বেলগ্রেডকে ইউরোপের সেরা শহরগুলোর একটি হিসেবে বিবেচনা করা হতো। সার্বিয়াতে দুর্নীতি ও অপরাধপ্রবণতার মাত্রা অনেক বেশি। এ ছাড়া ক্রমাগত মুদ্রাস্ফীতি দেশটির অর্থনীতিতে ঋণাত্মক প্রভাব সৃষ্টি করেছে। ২০১৭ সালে প্রকাশিত এক জরিপ অনুযায়ী দেশটির শতকরা ২০ দশমিক ৩ ভাগ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করেন।'
সার্বিয়ার সব থেকে জনপ্রিয় খেলা হল ফুটবল। দেশটির ১ লাখ ৪৬ হাজারের অধিক মানুষ সার্বিয়া ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনে রেজিষ্ট্রারকৃত ফুটবল প্লেয়ার।সার্বিয়া এপর্যন্ত ১২ বার ফিফা বিশ্বকাপে অংশগ্রহণ করেছে, যার মধ্যে সেরা সাফল্য হচ্ছে যুগোস্লাভিয়া হিসেবে ১৯৩০ এবং ১৯৬২ ফিফা বিশ্বকাপে চতুর্থ স্থান অর্জন করা। অন্যদিকে, উয়েফা ইউরোপীয় চ্যাম্পিয়নশিপে সার্বিয়া (যুগোস্লাভিয়া হিসেবে) এপর্যন্ত ৫ বার অংশগ্রহণ করেছে, যার মধ্যে সেরা সাফল্য হচ্ছে ১৯৬০ এবং উয়েফা ইউরো ১৯৬৮-এ রানার-আপ হওয়া।দ্রাগান স্তোয়কোভিচ, সাভো মিলোশেভিচ, নিকোলা জিগিচ, ভ্লাদিমির ইয়োগোভিচ এবং স্তিয়েপান বোবেকের মতো খেলোয়াড়গণ সার্বিয়ার জার্সি গায়ে মাঠ কাঁপিয়েছেন। এছাড়াও জনপ্রিয় খেলার মধ্যে রয়েছে বাস্কেটবল, টেনিস, ভলিবল, ওয়াটার পোলো এবং হ্যান্ডবল।
মুসলিম গণহত্যা
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর বসনিয়া-হার্জেগোভিনা, সার্বিয়া, মন্টেনেগ্রো, ক্রোয়েশিয়া, স্লোভেনিয়া, ও মেসিডোনিয়ার মতো বলকান রাষ্ট্রগুলো যুগোশ্লাভিয়ার ফেডারেল গণপ্রজাতন্ত্রের অংশ হয়ে যায়। ১৯৮০তে যুগোশ্লাভিয়ার দীর্ঘসময়ের নেতা জোসিপ ব্রজ টিটোর মৃত্যুর পরে, যুগোশ্লাভিয়ার অন্তর্গত বিভিন্ন প্রজাতন্ত্রের মধ্যে বৃদ্ধি পেতে থাকা জাতীয়তাবাদ তাদের ফেডারেশনকে ছিন্নভিন্ন করে ফেলার আশঙ্কা নিয়ে হাজির হয়।১৯৯২ সালে বসনিয়া–হার্জেগোভিনা ছিল একটি বহুজাতিক প্রজাতন্ত্র। প্রজাতন্ত্রটির অধিবাসীদের মধ্যে ৪৪% ছিল বসনিয়, ৩২.৫% ছিল সার্ব, ১৭% ছিল ক্রোট এবং বাকিরা অন্যান্য জাতিভুক্ত। সাধারণভাবে, বসনিয়রা ইসলাম ধর্মের অনুসারী, সার্বরা অর্থোডক্স খ্রিস্টধর্মের অনুসারী এবং ক্রোটরা ক্যাথলিক খ্রিস্টধর্মের অনুসারী। এসময় প্রজাতন্ত্রটির রাষ্ট্রপতি ছিলেন আলিয়া ইজেতবেগোভিচ, একজন বসনিয় মুসলিম। ১৯৯২ সালের প্রথমদিকেই স্লোভেনিয়া ও ক্রোয়েশিয়া যুগোস্লাভিয়া থেকে স্বাধীনতা ঘোষণা করে, এবং সার্ব–নিয়ন্ত্রিত যুগোস্লাভিয়ার অংশ হিসেবে থাকার কোনো ইচ্ছে ইজেতবেগোভিচের ছিল না। ফলে তিনি স্বাধীনতার উদ্দেশ্যে বসনিয়া–হার্জেগোভিনায় একটি গণভোটের আয়োজন করেন। গণভোটে অংশগ্রহণকারীদের সিংহভাগ স্বাধীনতার পক্ষে ভোটদান করে, কিন্তু বসনিয় সার্ব জনসাধারণ এই গণভোট বর্জন করে।
পরবর্তী কয়েক বছরে, সার্ব-আধিপত্যশীল যুগোশ্লাভ সেনাবাহিনীর মদদপুষ্ট বসনিয় সার্ব বাহিনীসমূহ বসনিয় (বসনিয়ান মুসলিম) ও ক্রোয়েশীয় বেসামরিক ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে গণহত্যামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করে।
১৯৯৫ সালের ১১ জুলাই সার্বীয় বাহিনী বসনিয়ার পূর্বাঞ্চলীয় সেব্রেনিৎসা এলাকা দখল করে। জাতিসঙ্ঘের পক্ষ থেকে ‘নিরাপদ অঞ্চল’ ঘোষিত হওয়া সত্ত্বেও এবং জাতিসঙ্ঘের ডাচ শান্তিরক্ষীদের উপস্থিতিতেই সেব্রেনিৎসায় চালানো হয় নারকীয় গণহত্যা ও জাতিগত শুদ্ধি অভিযান।
বসনিয়ার সার্ব জেনারেল রাতকো ম্লাডিক গণহত্যার সময় এক টিভি চ্যানেলকে দেয়া সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, শহরটি আমরা সার্বিয়ার জনগণকে উপহার হিসেবে দিয়েছি।
সেব্রেনিৎসা দখলের প্রথমদিন থেকেই সার্বীয় বাহিনী স্থানীয় বসনিয় জনগোষ্ঠীর সব পুরুষকে আলাদা করে নেয়। পরে তাদেরকে গণহারে হত্যা করে। ১১ জুলাই থেকে ২২ জুলাই পর্যন্ত প্রতিদিন সেব্রেনিৎসার কোথাও না কোথাও এই গণহারে হত্যার ঘটনা ঘটেতে থাকে। হত্যার শিকার ব্যক্তিদেরকে মৃত্যুর আগে নিজেদের কবর খনন করতে সার্বীয় বাহিনী বাধ্য করে।
সার্ব বাহিনী সেখানে জাতিসঙ্ঘের ডাচ শান্তিরক্ষীদের সামনেই ৮ হাজার ৩৭২ জন বসনিয় মুসলমানকে হত্যা করে মাটিচাপা দেয়। এই গণহত্যা চলার সময় জাতিসংঘ নীরবতা পালন করলেও পরে একে ‘জাতিগত শুদ্ধি অভিযান’ বলে স্বীকৃতি দেয়।
বসনিয়া ১৯৯২ সালের মার্চ মাসে সাবেক ইউগোস্লাভিয়া থেকে গণভোটের মাধ্যমে স্বাধীনতা অর্জন করে। আর ওই স্বাধীনতা বানচাল করতেই সার্বরা বসনিয়ার মুসলমানদের ওপর ঝাপিয়ে পড়ে।
১৯৯২ থেকে ১৯৯৫ সাল পর্যন্ত বসনিয়ায় সার্ব বাহিনীর হামলায় দুই লাখের বেশি বসনিয় মুসলমান নিহত ও প্রায় বিশ লাখ শরণার্থী হয়। তবে সেব্রেনিৎসার গণহত্যাকেই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপের সবচেয়ে নৃশংস ও ভয়াবহ গণহত্যা হিসেবে অভিহিত করা হয়।দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নাজিদের হাতে ৬০ লাখ ইহুদির মৃত্যুর পর এটাই ছিল গণহত্যার নিকৃষ্টতম উদাহরণ।
কসোভোর স্বাধীনতা
কসোভো সর্বশেষ স্বাধীন মুসলিম রাষ্ট্র। ইউরোপের বুকে ইসলামের স্মারক বুকে নিয়ে টিকে আছে।বহুত্যাগ ও সংগ্রামের বিনিময়ে কসোভোর মানুষ তাদের ঈমান ও ইসলাম টিকিয়ে রেখেছে। ইউরোপের ইসলাম বিদ্বেষী শক্তিগুলোর আক্রমণের শিকার হয়েছে অত্র অঞ্চলের মুসলিম জনগণ।গত শতকের নববই দশকে সোসালিস্ট রিপাবলিক অব যুগোস্লাভিয়ার পতনের পর জাতিগত পরিচয়ের ভিত্তিতে স্লোভেনিয়া, ক্রোয়েশিয়া, মেসিডোনিয়া, বসনিয়া হার্জেগোভিনা এবং সার্বিয়া নামে পাঁচটি নতুন রাষ্ট্রের জন্ম হলেও মুসলিম জনসংখ্যা অধ্যুষিত কসোভোর স্বাধীনতাকে অস্ত্র ও নৃশংসতার মাধ্যমে দমিয়ে রাখার অভিনব কৌশল গ্রহণ করেছিল সার্বিয়রা। কিন্তু সে প্রচেষ্টা তাদের সফল হয়নি। কসোভোর মুসলমানরা প্রতিবেশী আলবেনিয়ার সমর্থন নিয়ে শুরু করে তাদের প্রতিরোধ যুদ্ধ। কসোভো লিবারেশন আর্মি [কেএলএ] নামে গেরিলা সংগঠনের মাধ্যমে তারা শুরু করে হানাদার সার্বিয়ার বিরুদ্ধে সশস্ত্র যুদ্ধ। ১৯৯১ সালে যুগোস্লাভিয়ার ভাঙনের সময়ই কসোভোর নির্বাচিত পার্লামেন্ট স্বাধীনতার পক্ষে রায় দিয়েছিল। কিন্তু আন্তর্জাতিকভাবে তারা তেমন সমর্থন লাভ করতে পারেনি। যুগোস্লাভ যুদ্ধ বা তৃতীয় বলকান যুদ্ধেহানাদার সার্ব বাহিনীর হাতে লাখ লাখ মুসলিম প্রাণ হারায় এবং গৃহহারা হয় অসংখ্য মানুষ।কসোভোও বসনিয়া-হার্জেগোভিনার পরিণতি ভোগ করে। মুসলিম হত্যার ক্ষত কসোভোতে এখনো শুকায়নি। বসনিয়া-হার্জেগোভিনার সরকারের হাতে সে দেশের দুই লাখ মুসলমান জঘন্য হত্যাযজ্ঞের শিকার হয়। আর কসোভোতে নারকীয় হত্যার শিকার হয় প্রায় ১০ হাজার নিরীহ মুসলমান। সার্ব নেতা মিলোসোভিচের এ বর্বর হত্যাকান্ড বন্ধ করতে ১৯৯৯ সালেন্যাটো বাহিনী সার্বিয়ার ওপর বিমান হামলা চালায়। কসোভোর শান্তি স্থাপনের জন্য জাতিসংঘ ১২৪৪ নম্বর রেজুলেশন অনুসারে সেখানে একটি অন্তবর্তী শাসন প্রতিষ্ঠা করে। ২০০৫ সালে মারটি আতিসারির নেতৃত্বে গঠিত জাতিসংঘের বিশেষ কমিটি কসোভোর ভবিষ্যৎ নির্ধারণের জন্য কাজ শুরু করে। জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে খুব দ্রুত এ বিষয়ে একটি সমাধানের লক্ষ্যে মারটি যথেষ্ট যোগ্যতার পরিচয় দিলেও রাশিয়ার ভেটোর কারণে তা বার বার ব্যর্থ হয়ে যায়।কসোভোর দুই জনগোষ্ঠী আলবেনিয়ান ও সার্বদের মধ্যে কখনোই বনিবনা ছিল না। তবে ব্যাপক আন্তর্জাতিক চাপের মুখে সার্বিয়া কসোভোর স্বাধীনতার ব্যাপারে নমনীয়তা প্রকাশ করে।এদের দীর্ঘ দিনের রেষারেষির এক পর্যায়ে ২০০৮ সালে সার্বিয়ার অধিকৃত আলবেনীয় অংশেরকসোভোর পার্লামেন্টে এক ঐতিহাসিক অধিবেশনে সর্বসম্মতিক্রমে দেশটির স্বাধীনতা ঘোষণা করে।নতুন রাষ্ট্রের নাম দেওয়া হয় কসোভো। সার্বিয়া এখনো কসোভোকে নিজেদের অংশ হিসেবে দাবি করে এবং কসোভোর এ স্বাধীনতা দাবিকে অস্বীকার করে।রাশিয়ার মদদ পেয়ে সার্বিয়া কাসোভোর স্বাধীনতাকে স্বীকৃতি দিতে রাজি নয়। কসোভোয় বসবাসকারী সার্বরাও কসোভোর স্বাধীনতা চায় না ।গ্রিস, চীন ও স্পেনের মতো দেশগুলো এখনো স্বাধীন দেশ হিসেবে কসোভোকে স্বীকৃতি দেয়নি।এ পর্যন্ত পৃথিবীর ১১৫টি দেশ কসোভোকে স্বীকৃতি দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যসহ ইউরোপীয় ইউনিয়নের বেশিরভাগ দেশই সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে কসোভোকে স্বীকৃতি দিয়েছে।হেগের আন্তর্জাতিক আদালত ২০১০ সালে কসোভোর স্বাধীনতাকে বৈধ হিসেবে রায় দিয়ে জানায়, সার্বিয়া সরকারের অনুমতি ছাড়াই স্বাধীন দেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশে কসোভোর বাধা নেই। বিশ্বব্যাংক এবং আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের মতো বড় আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোরও সদস্যপদ পেয়েছে দেশটি।কসোভো এখনো জাতিসংঘের সদস্য দেশ নয়। রাশিয়া এবং চীনের হস্তক্ষেপের কারণে তারা এই সদস্যপদ পাচ্ছে না। ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন এর সদস্যপদ পেতে মুখিয়ে থাকলেও ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের ৫টি সদস্যদেশ এখনো কসোভোকে স্বীকৃতি না দেওয়ায় তা হয়ে উঠছে না।২০১৭ সালের ২৭ ফেব্রয়ারি কসোভোকে স্বাধীন সার্বভৌম দেশ হিসেবে ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ। কসোভোকে স্বীকৃতি প্রদানকারী দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ ১১৪তম। ওআইসির ৫৭টি দেশের মধ্যে তাদের স্বীকৃতি প্রদানকারী দেশ হিসেবে বাংলাদেশ ছিল ৩৭তম।কসোভোর স্বাধীনতার ১০ বছর পূর্তিতে সে দেশের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করে বাংলাদেশ।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন