সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

ক্রোয়েশিয়া ইউরোপ মহাদেশের একটি রাষ্ট্র



ক্রোয়েশিয়া ইউরোপ মহাদেশের একটি রাষ্ট্র। এর সরকারি নাম প্রজাতন্ত্রী ক্রোয়েশিয়া। ক্রোয়েশিয়া দক্ষিণপূর্ব ইউরোপের কেন্দ্রে অবস্থিত। এর উত্তর পূর্ব সীমান্তে হাঙ্গেরি, পূর্বে সার্বিয়া, দক্ষিণ পূর্বে বসনিয়া, হার্জেগোভিনা ও মন্টিনিগ্রো। দেশটি দেখতে ফালি চাঁদের মত। কেন্দ্রীয় মহাদেশীয় ক্রোয়েশিয়া ও স্লাভোনিয়াতে সমভূমি, হ্রদ ও পাহাড় অবস্থিত। পশ্চিমে রয়েছে দিনারীয় আল্পস পর্বতমালার বৃক্ষ আচ্ছাদিত অংশ। আর রয়েছে আড্রিয়াটিক সাগরের পর্বতসঙ্কুল তটরেখা। এই উপকূলে আরও আছে প্রায় হাজার খানেকের মত বিভিন্ন আকৃতির দ্বীপ। এটি ৫৬.৫৯৪ বর্গ কিলোমিটার জুড়ে বিস্তৃত। এর মধ্যে ৫৬.৪১৪ বর্গ কিলোমিটার ভুমি এবং ১২৮ বর্গ কিলোমিটার জল ভাগ রয়েছে।

রাজধানী: জাগ্রেব
ভাষাঃ 'হ্‌র্‌ভাৎস্কি য়েজ়িক্‌' একটি দক্ষিণ স্লাভীয় ভাষা। এটি মূলত ক্রোয়েশিয়া, বসনিয়া ও হার্জেগোভিনা এবং অন্যান্য প্রতিবেশী রাষ্ট্রের ক্রোয়াট সম্প্রদায়ের লোকদের মধ্যে প্রচলিত। ভাষাবিজ্ঞানীরা অনেক সময় এটিকে বৃহত্তর সার্বো-ক্রোয়েশীয় ভাষার অন্তর্গত বলে গণ্য করেন।
জাতিগোষ্ঠী: ক্রোয়েট (৯০%), সার্ব (৪.৪%), অন্যান্য (৫.২%)

ক্রোয়েশিয়া ১৯৯১ সালে স্বাধীনতা অর্জন করে।পর্যটকদের জন্য ক্রোয়েশিয়া একটি স্বর্গরাজ্য।ক্রোটরা ৬ষ্ঠ শতকে এখানে আসে এবং নবম শতাব্দির মধ্যেই তারা অঞ্চলটিকে দুইটি জমিদারিত্বের মাধ্যমে সুসংগঠিত করে তোলে। ৯২৫ খ্রিস্টাব্দে তোমিসলাভ প্রথম রাজা হিসেবে আভির্ভূত হন এবং তিনি ক্রোশিয়াকে রাজ্যে উন্নীত করেন, যেটি প্রায় দুই শতকেরও বেশি সময় ধরে তার সার্বভৌমত্ব ধরে রেখেছিল।রাজা চতুর্থ পিটার ক্রেসিমির এবং দিমিতার জভনমিরির আমলে দেশটি তার উন্নতির চরম শিখরে পৌঁছায়।২০০৩ সাল থেকে ক্রোয়েশিয়া ইউরোপীয় ইউনিয়নে যোগদানের চেষ্টা শুরু করে। তবে যুদ্ধাপরাধী জেনারেল আন্তে গুতোভিনা পলাতক থাকায় সে প্রক্রিয়া সফল হয়নি। ২০০৫ সালে তিনি ধরা পড়েন। হেগে প্রতিষ্ঠিত জাতিসংঘের যু্দ্ধাপরাধ ট্রাইবুনাল ২০১১ সালে তাকে দোষী সাব্যস্ত করার পর ২০১৩ সালে দেশটি ইউরোপীয় ইউনিয়নে যোগ দেয়।

১৫শ থেকে ১৬ শ শতাব্দী পর্যন্ত চলা ক্রোয়েশীয়-উসমানীয় যুদ্ধের সময় উসমানীয় সাম্রাজ্য ক্রোয়েশিয়ার সাথে প্রথম ইসলামের পরিচয় করিয়ে দেয়। এই সময়ের মধ্যে ক্রোয়েশীয় রাজ্যের কিছু অংশ দখল করা হয় যার ফলে অসংখ্য ক্রোট ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে, কিছু যুদ্ধবন্দী নেওয়ার পরে, কিছু দেবসিরমে সিস্টেমের মাধ্যমে। তা সত্ত্বেও, ক্রোটরা এই কয়েক শতাব্দীতে তুর্কিদের বিরুদ্ধে দৃঢ়ভাবে লড়াই করেছিল যার ফলে ইউরোপের উসমানীয় সাম্রাজ্যের পশ্চিমতম সীমান্ত ক্রোয়েশিয়ার মাটিতে গেঁথে যায়।

২০১৬ সালের তথ্যানুযায়ী, দেশটির মোট জনসংখ্যা ৪২ লক্ষ ৭১ হাজারের কিছু অধিক।২০১১ সালের হিসাবে, ক্রোয়েশিয়ায় ৬২,৯৭৭ জন মুসলমান বাস করে। তাদের অধিকাংশই নিজেদের বসনিয়াক ৩১,৪৭৯ হিসেবে ঘোষণা করে এবং অন্যরা নিজেদের কে বসনিয়াক হিসেবে ঘোষণা করে: আলবেনীয় ৯,৫৯৪, রোমা ৫,০৩৯, তুর্কি ৩৪৩, ম্যাসেডোনিয়ান ২১৭, মন্টেনিগ্রিনস ১৫৯, আহ্‌মদী ১৬ এবং অন্যান্য ২,৪২০।গুনজা পৌরসভায় মুসলমানদের সর্বোচ্চ হার ৩৪,৭%, এর পরে সিটিনগ্রাদ ২০.৬২%, রাসা ১৭.৮৮%, ভোজোনিক ১৫.৫৮%, ভোডনজান ১৪.০২%, লাবিন ১০.৬৮%, ক্রাসান ৭.৯৬%, স্ভেতা নেদেলজা ৭.৪৭%, ড্রেনোভসি ৭.২৭% এবং ক্যাভে ৬.৭২%

ইসলামিক কমিউনিটি অফ ক্রোয়েশিয়া ক্রোয়েশিয়ার মুসলমানদের প্রধান সংগঠন যা আনুষ্ঠানিকভাবে রাষ্ট্র দ্বারা স্বীকৃত।ক্রোয়েশিয়ার প্রথম আধুনিক মসজিদটি ১৯৬৯ সালে গুনজায় নির্মিত হয়েছিল। আজ ক্রোয়েশিয়ায় ৪টি মসজিদ এবং ২টি ইসলামিক কেন্দ্র রয়েছে (জাগ্রেব[ ও রিজেকায়)। ঐতিহাসিকভাবে, উসমানীয় শাসনামলে, ক্রোয়েশিয়ায় উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি সংখ্যক মসজিদ ছিল। এক পর্যায়ে তাদের মধ্যে ২৫০ টি ছিল, কিন্তু ২০১৪ সালের হিসাবে মাত্র ৩টি কাঠামো দাঁড়িয়ে ছিল। তাদের মধ্যে সবচেয়ে বড় এবং সর্বাধিক প্রতিনিধি ইব্রাহিম পাশার মসজিদ, পূর্ব ক্রোয়েশিয়ার শহর ডাকোভোতে অবস্থিত কিন্তু আজ রোমান ক্যাথলিক চার্চ অফ অল সেন্টস হিসাবে ব্যবহৃত হয়। পূর্ব ক্রোয়েশিয়ার আরেকটি মসজিদ, যা আজ বিদ্যমান নয়, ওসিজেকে অবস্থিত ছিল। এটি ছিল আধুনিক দিনের চার্চ অফ সেন্ট মাইকেলের স্থানে ১৫২৬ সালের পরে নির্মিত কাসেম পাশা মসজিদ। কার্লোভিৎজের চুক্তির পর এই অঞ্চলের বেশিরভাগ উসমানীয় কাঠামো পরিকল্পিতভাবে ধ্বংস করা হয়েছিল।
ক্রোয়েশিয়ার রাজধানী জাগ্রেবে ১৯৮৭ সাল থেকে ইউরোপের অন্যতম বড় মসজিদ রয়েছে। উসমানীয সাম্রাজ্যের অস্তিত্বের সময় এর কোনটি ছিল না কারণ জাগ্রেব, পাশাপাশি ক্রোয়েশিয়ার বেশিরভাগ অংশ, হান্ড্রেড ইয়ার্স ক্রোয়েশীয়-উসমানীয় যুদ্ধের সময় উসমানীয়দের দ্বারা দখল করা হয়নি।বোসনিয়াক ইমাম শেভকো ওমরবাইস ছিলেন ক্রোয়েশিয়ার মুসলিম সম্প্রদায়ের দীর্ঘকালীন নেতা এবং জাগ্রেবের মুফতি ।২০১৩ সালের মে মাসে রিজেকায় একটি নতুন মসজিদ খোলা হয়েছিল। মুসলিম সম্প্রদায় ওসিজেক এবং সিসাকে একটি মসজিদ নির্মাণের পরিকল্পনা করছে। কার্লোভাকের একটি মসজিদও বিবেচনা করা হচ্ছে।
ক্রোয়েশিয়ার রাজনীতি একটি সংসদীয় প্রতিনিধিত্বমূলক গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র কাঠামোতে পরিচালিত হয়। প্রধানমন্ত্রী একটি বহুদলীয় ব্যবস্থাতে সরকার প্রধান। নির্বাহী ক্ষমতা সরকারের হাতে এবং আইন প্রণয়ন ক্ষমতা ক্রোয়েশীয় সংসদ বা সাবর-এর হাতে ন্যস্ত। বিচার ভাগ নির্বাহী ও আইন প্রণয়ন বিভাগ হতে স্বাধীন। ক্রোয়েশিয়ার বর্তমান সংবিধান ১৯৯০ সালের ২২ ডিসেম্বর গৃহীত হয়। দেশটি ১৯৯১ সালের ২৫ জুন প্রাক্তন ইউগোস্লাভিয়া থেকে স্বাধীনতা ঘোষণা করে।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

যে গাছ ইহুদিদের আশ্রয় দেবে অর্থাৎ ইহুদিদের বন্ধু গাছ

মো.আবু রায়হান:  কিয়ামত সংঘটিত হবার  পূর্বে হযরত ঈসা (আ.) এর সঙ্গে দাজ্জালের জেরুজালেমে যুদ্ধ হবে। সেই যুদ্ধে ইহুদিরা দাজ্জালের পক্ষাবলম্বন করবে। হযরত ঈসা (আ.) দাজ্জালকে হত্যা করবেন।এদিকে  ইহুদিরা প্রাণ ভয়ে পালাতে চেষ্টা করবে।  আশেপাশের গাছ ও পাথর/ দেয়ালে আশ্রয় নেবে। সেদিন গারকাদ নামক একটি গাছ ইহুদিদের আশ্রয় দেবে। গারকাদ ইহুদীবান্ধব গাছ।গারকাদ একটি আরবি শব্দ। এর অর্থ হল কাটাওয়ালা ঝোঁপ।গারকাদ এর ইংরেজী প্রতিশব্দ Boxthorn। Boxএর অর্থ সবুজ ঝোঁপ এবং thorn এর অর্থ কাঁটা। এ ধরনের গাছ বক্সথর্ন হিসেবেই পরিচিত। এই গাছ চেরি গাছের মতো এবং চেরি ফলের মতো লাল ফলে গাছটি শোভিত থাকে।  ইসরায়েলের সর্বত্র বিশেষত অধিকৃত গাজা ভূখন্ডে গারকাদ গাছ ব্যাপকহারে  দেখতে পাওয়া যায়।ইহুদিরা কোথাও পালাবার স্থান পাবে না। গাছের আড়ালে পালানোর চেষ্টা করলে গাছ বলবে, হে মুসলিম! আসো, আমার পিছনে একজন ইহুদী লুকিয়ে আছে। আসো এবং তাকে হত্যা কর। পাথর বা দেয়ালের পিছনে পলায়ন করলে পাথর বা দেয়াল বলবে, হে মুসলিম! আমার পিছনে একজন ইহুদী লুকিয়ে আছে, আসো! তাকে হত্যা কর। তবে গারকাদ নামক গাছ ইহুদিদেরকে ...

খন্দক যুদ্ধ কারণ ও ফলাফল

#মো. আবু রায়হান ইসলামের যুদ্ধগুলোর মধ্যে খন্দকের যুদ্ধ অন্যতম। ৫ হিজরির শাওয়াল মাসে খন্দকের যুদ্ধ সংঘটিত হয়। নবীজি (সা.) মদিনায় আসার আগে সেখানে বড় দুটি ইহুদি সম্প্রদায় বসবাস করত। বনু নাজির ও বনু কোরায়জা। ইহুদিদের প্ররোচনায় কুরাইশ ও অন্যান্য গোত্র মদিনার মুসলমানদের সঙ্গে যুদ্ধ করার প্রস্তুতি গ্রহণ করে। খন্দকের এই যুদ্ধ ছিল মদিনার ওপরে গোটা আরব সম্প্রদায়ের এক সর্বব্যাপী হামলা এবং কষ্টকর অবরোধের এক দুঃসহ অভিজ্ঞতা। এসময় ২৭দিন ধরে আরব ও ইহুদি গোত্রগুলি মদিনা অবরোধ করে রাখে। পারস্য থেকে আগত সাহাবি সালমান ফারসির পরামর্শে হযরত মুহাম্মদ (স:) মদিনার চারপাশে পরিখা খননের নির্দেশ দেন। প্রাকৃতিকভাবে মদিনাতে যে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ছিল তার সাথে এই ব্যবস্থা যুক্ত হয়ে আক্রমণ কারীদেরকে নিষ্ক্রিয় করে ফেলে। জোটবাহিনী মুসলিমদের মিত্র মদিনার ইহুদি বনু কোরায়জা গোত্রকে নিজেদের পক্ষে আনে যাতে তারা দক্ষিণ দিক থেকে শহর আক্রমণ করে। কিন্তু মুসলিমদের তৎপরতার ফলে তাদের জোট ভেঙে যায়। মুসলিমদের সুসংগঠিত অবস্থা, জোটবাহিনীর আত্মবিশ্বাস হ্রাস ও খারাপ আবহাওয়ার কারণে শেষপর্যন্ত আক্রমণ ব্যর্থ হয়।এই যুদ্ধে জয়ের ফলে ইসল...

উটের যুদ্ধ ইসলামের প্রথম ভাতৃঘাতি যুদ্ধ

#মো.আবু রায়হান উটের যুদ্ধ বা উষ্ট্রের যুদ্ধ বা জামালের যুদ্ধ ( Battle of the Camel) ৬৫৬ খ্রিষ্টাব্দের শেষের দিকে ইরাকের বসরায় সংঘটিত হয়। এটি ইসলামের ইতিহাসের প্রথম গৃহযুদ্ধ।এই যুদ্ধ ছিল ইসলামের চতুর্থ খলিফা হযরত আলী এর বিরুদ্ধে হযরত তালহা-জুবায়ের ও আয়েশা (রা)সম্মলিত যুদ্ধ। পটভূমি হযরত ওসমান (রা) এর বিভিন্ন প্রদেশে প্রাদেশিক শাসনকর্তা নিয়োগ নিয়ে একদল তার বিরুদ্ধে অভিযোগ টেনে বিদ্রোহ শুরু করে।হযরত ওসমান বিভিন্নভাবে তাদের শান্ত করার চেষ্টা করতে থাকেন। তাদের কথামত মিশরের গভর্নরকে প্রতিস্থাপন করে আবু বকরের ছেলে মুহাম্মদ ইবনে আবু বকর কে নিয়োগ করলেও বিদ্রোহীরা শান্ত হয় নি। তারা নানাভাবে অভিযোগ টেনে এনে ওসমান (রা) এর অপসারণের দাবী করতে থাকে। ওসমান সবকিছু মীমাংসার আশ্বাস দিলেও তারা ৬৫৬ সালের ১৭ জুন তারা বাড়ি অবরুদ্ধ করে এবং এক পর্যায়ে তারা তার কক্ষে প্রবেশ করে কুরআন তেলাওয়াত করা অবস্থায় হত্যা করে।ওসমান (রা.)-এর হত্যাকাণ্ডের পর আলী (রা.) খলিফা হন। কিন্তু দুঃখজনকভাবে ক্ষমতা গ্রহণ করে যখনই আলী (রা.) ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার কাজে হাত দেন তখনই ধর্মীয় ও রাজনৈতিক দূরদর্শিতার অভাবের কার...