সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

কেয়ামতের আগে জাজিরাতুল আরব


ইমাম আবু দাউদ (৪২৫২) ও ইমাম তিরমিযি (২২১৯) ছাওবান (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ্‌সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: "আল্লাহ্‌তাআলা তামাম পৃথিবীকে আমার জন্য ভাঁজ করেছিলেন; যাতে করে আমি পৃথিবীর পূর্ব প্রান্ত ও পশ্চিম প্রান্ত দেখতে পাই। পৃথিবীর যতটুকুকে আমার দেখার জন্য ভাঁজ করা হয়েছিল অচিরেই ততটুকুতে আমার উম্মতের রাজত্ব কায়েম হবে। আমাকে সাদা ও কালো দুটো গচ্ছিত ধন দেওয়া হয়েছে...। আমার উম্মতের কিছু গোত্র পৌত্তলিকদের অন্তর্ভুক্ত হওয়ার আগ পর্যন্ত এবং আমার উম্মতের কিছু গোত্র মূর্তিপূজাতে লিপ্ত হওয়ার আগ পর্যন্ত কিয়ামত কায়েম হবে না।"
ইমাম বুখারী তাঁর সহিহ গ্রন্থের একটি পরিচ্ছেদের শিরোনাম দেন এভাবে: "যামানা পরিবর্তন হওয়া; এমনকি মূর্তিপূজায় লিপ্ত হওয়া" শীর্ষক পরিচ্ছেদ। এরপর তিনি আবু হুরায়রা (রাঃ) এর হাদিস উল্লেখ করেন: তিনি বলেন: "'যুল-খাসলা'-র উপর দাওসের নারীদের নিতম্ব নাচার আগ পর্যন্ত কিয়ামত কায়েম হবে না।" 'যুল-খাসলা' হচ্ছে দাওস গোত্রের তাগুত; জাহেলী যুগে তারা যার পূজা করত।[সহিহ বুখারী (৭১১৬)]
হাদিস থেকে জানা যায় যে, শেষ যামানায় কিয়ামতের আগে পৌত্তলিকতা জাজিরাতুল আরবে ফিরে আসবে।
জাজিরাতুল আরব' হলো আরব উপদ্বীপ, যে ভূখণ্ডের তিন দিকে জল ও একদিকে স্থলভাগ তাকে উপদ্বীপ বলে। আরব উপদ্বীপগুলোকে এক সাথে 'জাজিরাতুল আরব বলা হয়'।আরব উপদ্বীপকে মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশ নিয়ে গঠিত ছিল, যা পরবর্তী সময়ে আলাদা আলাদা দেশে বিভক্ত হয়েছে। আরব উপদ্বীপের দেশগুলো হলো, সৌদি আরব, কুয়েত, বাহরাইন, কাতার, সংযুক্ত আরব আমিরাত (আরব উপদ্বীপের দক্ষিণ-পূর্ব কোণে অবস্থিত সাতটি স্বাধীন রাষ্ট্রের একটি ফেডারেশন আবুধাবি, আজমান, দুবাই, আল ফুজাইরাহ, রাআস আল খাইমাহ, আশ শারজাহ এবং উম্ম আল-কাইওয়াইন। আবুধাবি শহর ফেডারেশনের রাজধানী ও দুবাই দেশের বৃহত্তম শহর), ইয়েমেন ও ওমান।
সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ে নতুন একটি হিন্দু মন্দির ২০২২ সালা আনুষ্ঠানিকভাবে উন্মুক্ত করে দেয়া হয়েছে। ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে সংযুক্ত আরব আমিরাতের রাজধানী আবুধাবিতে প্রথম হিন্দু মন্দিরের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। ওই মন্দিরটির অবস্থান দুবাই-আবুধাবি হাইওয়ের কাছে আবু মুরেইখাহ অঞ্চলে।মন্দিরটি তৈরিতে লেগেছে প্রায় ২২৫০ টন পাথর। সুবিশাল এই মন্দিরে রয়েছে ১৬ দেবতার মূর্তি। ৯ দিনের বিশেষ পূজাপাঠের মাধ্যমে প্রাণপ্রতিষ্ঠা করা হয়েছে মূর্তিগুলোর।প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে শিখদের ধর্মগ্রন্থ- গ্রন্থসাহেব।
বাহরাইনের রাজধানী মানামায় শ্রীকৃষ্ণ মন্দির র্নিমাণে ৪২ লাখ ডলার অনুদান দেয় ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। বাংলাদেশি মুদ্রায় যার পরিমাণ প্রায় ৩৫ কোটি টাকা।বরাদ্দকৃত অর্থ খরচে মন্দিরের জন্য ৪৫ হাজার বর্গফুট ভূমি অধিগ্রহণ এবং ৩০ মিটার উঁচু চারতলা বিশাল ভবন নির্মাণ কাজ করা হয়।
আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘কিয়ামত অনুষ্ঠিত হবে না যে পর্যন্ত সম্পদের প্রাচুর্য না আসবে। এমনকি কোনো ব্যক্তি সম্পদের জাকাত নিয়ে ঘুরবে কিন্তু নেওয়ার মতো লোক পাবে না। আরবের মাঠ-ঘাট তখন চারণভূমি ও নদী-নালায় পরিণত হবে।’ (মুসলিম, হাদিস : ২২২৯)
উল্লেখ্য, মহানবী (সা.)-এর হাদিস দ্বারা শুধু বর্তমান সৌদি আরব উদ্দেশ্য নয়। কোরআন-হাদিসের ভাষায় আরব বলে গোটা আরব উপদ্বীপকে বোঝায়। এরই মধ্যে মহানবী (সা.)-এর ভবিষ্যদ্বাণী আমাদের সামনে স্পষ্ট হতে শুরু করেছে। মরু অঞ্চল মধ্যপ্রাচ্য আস্তে আস্তে সবুজ হতে শুরু করেছে।
সম্প্রতি ‘সৌদি সবুজায়ন’ ও ‘মধ্যপ্রাচ্যের সবুজায়ন’ নামে দুটি বিশাল কর্মপরিকল্পনার ঘোষণা দিয়েছে সৌদি আরব। এই কর্মপরিকল্পনার মধ্যে রয়েছে ১৩০ মিলিয়ন টন কার্বন নিঃসরণ কমানো, ৫০ শতাংশ বিদ্যুৎ সাশ্রয় করা, ৪০ মিলিয়ন হেক্টর অবক্ষয়যোগ্য জমি পুনর্বাসন করা এবং ১০ বিলিয়ন গাছ লাগানো।
ধারণা করা যায়, এর মাধ্যমে ব্যাপক আকারে আরবদ্বীপ সবুজায়নের ধারার সূচনা হলো। তবে অনেক আগে থেকেই আরবদ্বীপে বিভিন্ন কৃষ্টি খামার গড়ে উঠেছে। যেগুলোতে ব্যক্তিগত উদ্যোগে অনেক শাক-সবজি চাষ হয়েছে। কিছু অঞ্চল আগের চেয়ে অনেক বেশি সবুজ হয়েছে।
মজার বিষয় হলো, আরব উপদ্বীপের মরুর বুকে এখন মাছ চাষও করা হচ্ছে, যা একসময় অসম্ভব ছিল। এই অসম্ভবকে সম্ভব করার জন্য নিরলস কাজ করে যাচ্ছে প্রবাসী বাংলাদেশিরা। ২০১৭ সালে এ বিষয়ে গণমাধ্যমে একটি খবর প্রকাশিত হয়েছিল।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

যে গাছ ইহুদিদের আশ্রয় দেবে অর্থাৎ ইহুদিদের বন্ধু গাছ

মো.আবু রায়হান:  কিয়ামত সংঘটিত হবার  পূর্বে হযরত ঈসা (আ.) এর সঙ্গে দাজ্জালের জেরুজালেমে যুদ্ধ হবে। সেই যুদ্ধে ইহুদিরা দাজ্জালের পক্ষাবলম্বন করবে। হযরত ঈসা (আ.) দাজ্জালকে হত্যা করবেন।এদিকে  ইহুদিরা প্রাণ ভয়ে পালাতে চেষ্টা করবে।  আশেপাশের গাছ ও পাথর/ দেয়ালে আশ্রয় নেবে। সেদিন গারকাদ নামক একটি গাছ ইহুদিদের আশ্রয় দেবে। গারকাদ ইহুদীবান্ধব গাছ।গারকাদ একটি আরবি শব্দ। এর অর্থ হল কাটাওয়ালা ঝোঁপ।গারকাদ এর ইংরেজী প্রতিশব্দ Boxthorn। Boxএর অর্থ সবুজ ঝোঁপ এবং thorn এর অর্থ কাঁটা। এ ধরনের গাছ বক্সথর্ন হিসেবেই পরিচিত। এই গাছ চেরি গাছের মতো এবং চেরি ফলের মতো লাল ফলে গাছটি শোভিত থাকে।  ইসরায়েলের সর্বত্র বিশেষত অধিকৃত গাজা ভূখন্ডে গারকাদ গাছ ব্যাপকহারে  দেখতে পাওয়া যায়।ইহুদিরা কোথাও পালাবার স্থান পাবে না। গাছের আড়ালে পালানোর চেষ্টা করলে গাছ বলবে, হে মুসলিম! আসো, আমার পিছনে একজন ইহুদী লুকিয়ে আছে। আসো এবং তাকে হত্যা কর। পাথর বা দেয়ালের পিছনে পলায়ন করলে পাথর বা দেয়াল বলবে, হে মুসলিম! আমার পিছনে একজন ইহুদী লুকিয়ে আছে, আসো! তাকে হত্যা কর। তবে গারকাদ নামক গাছ ইহুদিদেরকে ...

খন্দক যুদ্ধ কারণ ও ফলাফল

#মো. আবু রায়হান ইসলামের যুদ্ধগুলোর মধ্যে খন্দকের যুদ্ধ অন্যতম। ৫ হিজরির শাওয়াল মাসে খন্দকের যুদ্ধ সংঘটিত হয়। নবীজি (সা.) মদিনায় আসার আগে সেখানে বড় দুটি ইহুদি সম্প্রদায় বসবাস করত। বনু নাজির ও বনু কোরায়জা। ইহুদিদের প্ররোচনায় কুরাইশ ও অন্যান্য গোত্র মদিনার মুসলমানদের সঙ্গে যুদ্ধ করার প্রস্তুতি গ্রহণ করে। খন্দকের এই যুদ্ধ ছিল মদিনার ওপরে গোটা আরব সম্প্রদায়ের এক সর্বব্যাপী হামলা এবং কষ্টকর অবরোধের এক দুঃসহ অভিজ্ঞতা। এসময় ২৭দিন ধরে আরব ও ইহুদি গোত্রগুলি মদিনা অবরোধ করে রাখে। পারস্য থেকে আগত সাহাবি সালমান ফারসির পরামর্শে হযরত মুহাম্মদ (স:) মদিনার চারপাশে পরিখা খননের নির্দেশ দেন। প্রাকৃতিকভাবে মদিনাতে যে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ছিল তার সাথে এই ব্যবস্থা যুক্ত হয়ে আক্রমণ কারীদেরকে নিষ্ক্রিয় করে ফেলে। জোটবাহিনী মুসলিমদের মিত্র মদিনার ইহুদি বনু কোরায়জা গোত্রকে নিজেদের পক্ষে আনে যাতে তারা দক্ষিণ দিক থেকে শহর আক্রমণ করে। কিন্তু মুসলিমদের তৎপরতার ফলে তাদের জোট ভেঙে যায়। মুসলিমদের সুসংগঠিত অবস্থা, জোটবাহিনীর আত্মবিশ্বাস হ্রাস ও খারাপ আবহাওয়ার কারণে শেষপর্যন্ত আক্রমণ ব্যর্থ হয়।এই যুদ্ধে জয়ের ফলে ইসল...

উটের যুদ্ধ ইসলামের প্রথম ভাতৃঘাতি যুদ্ধ

#মো.আবু রায়হান উটের যুদ্ধ বা উষ্ট্রের যুদ্ধ বা জামালের যুদ্ধ ( Battle of the Camel) ৬৫৬ খ্রিষ্টাব্দের শেষের দিকে ইরাকের বসরায় সংঘটিত হয়। এটি ইসলামের ইতিহাসের প্রথম গৃহযুদ্ধ।এই যুদ্ধ ছিল ইসলামের চতুর্থ খলিফা হযরত আলী এর বিরুদ্ধে হযরত তালহা-জুবায়ের ও আয়েশা (রা)সম্মলিত যুদ্ধ। পটভূমি হযরত ওসমান (রা) এর বিভিন্ন প্রদেশে প্রাদেশিক শাসনকর্তা নিয়োগ নিয়ে একদল তার বিরুদ্ধে অভিযোগ টেনে বিদ্রোহ শুরু করে।হযরত ওসমান বিভিন্নভাবে তাদের শান্ত করার চেষ্টা করতে থাকেন। তাদের কথামত মিশরের গভর্নরকে প্রতিস্থাপন করে আবু বকরের ছেলে মুহাম্মদ ইবনে আবু বকর কে নিয়োগ করলেও বিদ্রোহীরা শান্ত হয় নি। তারা নানাভাবে অভিযোগ টেনে এনে ওসমান (রা) এর অপসারণের দাবী করতে থাকে। ওসমান সবকিছু মীমাংসার আশ্বাস দিলেও তারা ৬৫৬ সালের ১৭ জুন তারা বাড়ি অবরুদ্ধ করে এবং এক পর্যায়ে তারা তার কক্ষে প্রবেশ করে কুরআন তেলাওয়াত করা অবস্থায় হত্যা করে।ওসমান (রা.)-এর হত্যাকাণ্ডের পর আলী (রা.) খলিফা হন। কিন্তু দুঃখজনকভাবে ক্ষমতা গ্রহণ করে যখনই আলী (রা.) ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার কাজে হাত দেন তখনই ধর্মীয় ও রাজনৈতিক দূরদর্শিতার অভাবের কার...