সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

মুসলমানদের স্বর্ণালী অতীত

 ঘটনা -১

কলকাতার কালীঘাটে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়িতে সোমবার কালীপুজো ছিল। আর সেই উপলক্ষ্যে মুখ্যমন্ত্রী বাড়ির পুজোয় গিয়েছিলেন পশ্চিমবঙ্গের ভারপ্রাপ্ত রাজ্যপাল লা গণেশন। সেই সময় রাজ্যপালকে নিজের বাড়ি ঘুরিয়ে দেখান মুখ্যমন্ত্রী। নিজে যে ঘরে থাকেন, সেই ঘরটিও দেখাতে নিয়ে যান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আর মুখ্যমন্ত্রীর থাকার ঘর দেখে খানিক অবাক রাজ্যপাল লা গণেশন। এত ছোট্ট ঘর! কীভাবে থাকেন? এমন প্রশ্নও বেরিয়ে আসে তাঁর মুখ থেকে।
সোমবার সন্ধে সাতটা নাগাদ কালীঘাটে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়িতে এসে পৌঁছান রাজ্যপাল লা গণেশন। রাজ্যপালকে নিয়ে নিজের বাড়ি ঘুরিয়ে দেখালেন মুখ্যমন্ত্রী। প্রায় ৩৫ মিনিট কালীঘাটে মুখ্যমন্ত্রীর বাড়িতে ছিলেন লা গণেশন। এর আগে কখনও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কালীঘাটের বাড়িতে আসা হয়ে ওঠেনি রাজ্যপাল লা গণেশনের। মমতার বাড়ির কালীপুজো উপলক্ষ্যেই গতকাল প্রথমবার কালীঘাটের বাড়িতে আসেন তিনি। সেখান বেশ কিছুক্ষণ সময় কাটান পশ্চিমবঙ্গের অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত রাজ্যপাল লা গণেশন। তাঁকে নিজের বাড়ি ঘুরে দেখান মমতা। আর তা দেখেই তাজ্জব হয়ে গিয়েছেন রাজ্যপাল। কীভাবে এত ছোট ঘরে মুখ্যমন্ত্রী থাকেন? তা নিয়ে বিষ্ময়ও লুকিয়ে রাখেননি তিনি। রাজ্য তথা গোটা দেশের এমন হেভিওয়েট নেত্রী, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীয়… তাঁর থাকার ঘর এত ছোট? এ যেন কল্পনাই করতে পারছেন না রাজ্যপাল লা গণেশন। এদিন প্রায় আধ ঘণ্টার কিছু বেশি সময় কালীঘাটে মমতার বাড়িতে থাকেন রাজ্যপাল লা গণেশন। সৌজন্য বিনিয়ম করেন রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধান ও সাংবিধানিক প্রধান। প্রায় মিনিট পয়ত্রিশ কালীঘাটে মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ির পুজোয় কাটানোর পর বেরিয়ে যান রাজ্যপাল।
ঘটনা -২
হযরত উমর রা. - এর খেলাফতকালে সিরিয়ার গভর্নর ছিলেন হযরত উবাইদা ইবনুল জাররাহ রা. । সিরিয়ায় অধিকাংশ এলাকা তার হাতেই বিজয় হয়েছে । তবে সে যুগের সিরিয়া আর আজকের সিরিয়া এক নয় । বর্তমানের সিরিয়া , জর্দান , ফিলিস্তিন , লেবানন পুরাটা ছিল সে যুগের সিরিয়া । এ চারটি দেশ মিলে তখন ইসলামী খেলাফতের একটি প্রদেশ ছিল । প্রদেশটি খুব উর্বর ছিল । অর্থ- সম্পদের ছড়াছড়ি ছিল । রোজরাজ্যের পছন্দনীয় ও লোভনীয় ভূমি ছিল এ সিরিয়ার ভূমি । হযরত উবাইদা ইবনুল জাররাহ ছিলেন এ এলাকার গভর্নর । খলিফাতুল মুসলিমীন হযরত উমর রা. মদীনাতে বসে এ বিশাল ইসলামী সাম্রাজ্য পরিচালনা করতেন । একবার তিনি পর্যবেক্ষণের উদ্দেশ্যে সিরিয়া গমন করলেন । সেই সুবাদে একদিন তিনি হযরত আবু উবাইদা রা. কে বললেন , ভাই আবু উবাইদা ! আমার মন চায় , আমার ভাইয়ের সেই বাড়িটি একটু দেখি , যেখানে তুমি থাক ।
উমর রা. ধারণা করছিলেন , আবু উবাইদাকে এত বিশাল প্রদেশের গভর্নর বানানো হয়েছে , তাই তার বাড়িটি দেখা দরকার । না জানি কত সম্পদ তার বাড়িতে পুঞ্জীভূত আছে ।
হযরত উমর রা. -এর মুখে এ কথা শুনে হযরত আবু উবাইদা ইবনুল জাররাহ বললেন , আমীরুল মুমিনীন ! আপনি আমার বাড়ি দেখে কি করবেন । কারণ , আমার বাড়ি দেখার পর চোখ মোছা ছাড়া আর কিছুই হবে না । তবুও হযরত উমর পীড়াপীড়ি করলেন । বললেন , আমি দেখতে চাই । অবশেষে হযরত আবু উবাইদা রা. আমীরুল মুমিনীনকে নিয়ে চললেন । যেতে যেতে শহরের পথ অতিক্রম করে তারা অনাবাদি ভূমিতে প্রবেশ করলেন । উমর রা. বললেন , ভাই , আমাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছে । আবু উবাইদা উত্তর দিলেন , এই তো আর সামান্য পথ । এভাবে চলতে চলতে তারা পার্থিব প্রাচুর্যে ভরা দামেশক শহর পেছনে ফেলে রেখে এক জনমানবহীন প্রান্তরে গিয়ে পৌঁছলেন । হযরত আবু উবাইদা রা. সেখানে পৌঁছে একটি খেজুর পাতার ঝুপড়ির দিকে ইশারা করে বললেন , আমীরুল মুমিনীন ! আমি এ গৃহে বাস করি । হযরত উমর খেজুর পাতার ছাউনিটিতে প্রবেশ করে চারিদিকে চোখ বুলিয়ে দেখতে পেলেন , একটি মাত্র জায়নামায ছাড়া ঘরে আর কিছুই নেই । এ দৃশ্য দেখে হযরত উমর বলে উঠলেন , আবু উবাইদা! তুমি কি এখানেই থাক ? থাকা-খাওয়ার আসবাবপত্র বলতে কিছুই তো এখানে নেই । তাহলে তুমি এখানে থাক কীভাবে ? আবু উবাইদা উত্তর দিলেন , আমীরুল মুমিনীন , প্রয়োজনীয় সকল আসবাবপত্র আলহামদুলিল্লাহ এখানেই আছে । এইযে জায়নামাযটি দেখছেন , রাতের বেলা এটাতে দাঁড়িয়ে নামায পড়ি , আর ঘুমের দরকার হলে এটার উপরেই শুয়ে পড়ি । এই বলে তিনি ঝুপড়ির চালের দিকে হাত বাড়িয়ে একটি পাত্র বের করলেন । ঝুপড়ির অভ্যন্তরে অন্ধকারের কারণে পাত্রটি স্পষ্টভাবে দেখা যাচ্ছিল না । পাত্রটি বের করে বললেন , আমীরুল মুমিনীন ! এইযে আহারের পাত্র । উমর রা. লক্ষ্য করলেন , পাত্রটি পানি দ্বারা ভর্তি । রুটির শুকনো দুটি টুকরো তাতে ভিজিয়ে রাখা হয়েছে । তার পর আবু উবাইদা বললেন , আমীরুল মুমিনীন ! দিন- রাত তো রাষ্ট্রীয় কাজে ব্যস্ত থাকি । তাই পানাহারের আয়োজন করার ফুরসত পাই না । এক মহিলা এক সাথে দু' তিন দিনের রুটি পাকিয়ে দেয় , আমি সেই রুটিগুলো রেখে দেই আর শুকিয়ে গেলে পানিতে ভিজিয়ে রাখি , যেন রাতে ঘুমানোর পূর্বে খেয়ে নিতে পারি ।
এই মর্মভেদি দৃশ্য অবলোকন করে খলিফাতুল মুসলিমীন হযরত উমর চোখের পানি সংবরণ করতে পারলেন না । আবু উবাইদা রা. বললেন , আমীরুল মুমিনীন ! আমি তো আগেই বলেছিলাম , আমার বাড়ি দেখলে চোখ নিংড়ানো ছাড়া কিছুই পাওয়া যাবে না ।
(সিয়রু আ' লা- মিন নুবালা , খণ্ড ১, পৃষ্ঠা ৭)
ঘটনা দুটো কারো সঙ্গে কাউকে তুলনা দেয়ার জন্য বর্ণনা করিনি। উদ্দেশ্য হলো মুসলমানদের একটি সোনালী অতীত ছিল যা অনুসরণ করে অমুসলিমরা এগিয়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে মুসলিমরা অতীত ইতিহাস ভুলে ভোগ বিলাসে ব্যস্ত। আজ মুসলিমদের চরিত্র অনুশীলন করছে অমুসলিমরা। এদিকে মুসলমানরা অনুসরণ করছে অমুসলিমদের জীবনাচার।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

সুফফা ইসলামের প্রথম আবাসিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান

মো.আবু রায়হান:  সুফফা মসজিদে নববির একটি স্থান। যেখানে একদল নিঃস্ব মুহাজির যারা মদিনায় হিজরত করেন এবং বাসস্থানের অভাবে মসজিদে নববির সেই স্থানে থাকতেন।এটি প্রথমদিকে মসজিদ উত্তর-পূর্ব কোণায় ছিল এবং রাসুলের আদেশে এটাকে পাতার ছাউনি দিয়ে ছেয়ে দেয়া হয় তখন থেকে এটি পরিচিতি পায় আল-সুফফা বা আল-জুল্লাহ নামে। ( A Suffah is a room that is covered with palm branches from date trees, which was established next to Al-Masjid al-Nabawi by Islamic prophet Muhammad during the Medina period.)। মোটকথা রাসুল (সা) মসজিদে-নববির চত্ত্বরের এক পাশে আস সুফফা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। সুফফা হলো ছাদবিশিষ্ট প্রশস্ত স্থান। সুফফার আকৃতি ছিল অনেকটা মঞ্চের মতো, মূল ভূমির উচ্চতা ছিল প্রায় অর্ধমিটার। প্রাথমিক পর্যায়ে এর দৈর্ঘ্য ছিল ১২ মিটার এবং প্রস্থ ছিল ৮ মিটার। মসজিদে নববির উত্তর-পূর্বাংশে নির্মিত সুফফার দক্ষিণ দিকে ছিল রাসুলুল্লাহ (সা.) ও তাঁর স্ত্রীদের অবস্থানের হুজরা এবং সংলগ্ন পশ্চিম পাশে ছিল মেহরাব।আসহাবে সুফফা অৰ্থ চত্বরবাসী। ঐ সকল মহৎ প্ৰাণ সাহাবি আসহাবে সুফফা নামে পরিচিত, যারা জ্ঞানার্জনের জন্য ভোগবিলাস ত্যা...

খন্দক যুদ্ধ কারণ ও ফলাফল

#মো. আবু রায়হান ইসলামের যুদ্ধগুলোর মধ্যে খন্দকের যুদ্ধ অন্যতম। ৫ হিজরির শাওয়াল মাসে খন্দকের যুদ্ধ সংঘটিত হয়। নবীজি (সা.) মদিনায় আসার আগে সেখানে বড় দুটি ইহুদি সম্প্রদায় বসবাস করত। বনু নাজির ও বনু কোরায়জা। ইহুদিদের প্ররোচনায় কুরাইশ ও অন্যান্য গোত্র মদিনার মুসলমানদের সঙ্গে যুদ্ধ করার প্রস্তুতি গ্রহণ করে। খন্দকের এই যুদ্ধ ছিল মদিনার ওপরে গোটা আরব সম্প্রদায়ের এক সর্বব্যাপী হামলা এবং কষ্টকর অবরোধের এক দুঃসহ অভিজ্ঞতা। এসময় ২৭দিন ধরে আরব ও ইহুদি গোত্রগুলি মদিনা অবরোধ করে রাখে। পারস্য থেকে আগত সাহাবি সালমান ফারসির পরামর্শে হযরত মুহাম্মদ (স:) মদিনার চারপাশে পরিখা খননের নির্দেশ দেন। প্রাকৃতিকভাবে মদিনাতে যে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ছিল তার সাথে এই ব্যবস্থা যুক্ত হয়ে আক্রমণ কারীদেরকে নিষ্ক্রিয় করে ফেলে। জোটবাহিনী মুসলিমদের মিত্র মদিনার ইহুদি বনু কোরায়জা গোত্রকে নিজেদের পক্ষে আনে যাতে তারা দক্ষিণ দিক থেকে শহর আক্রমণ করে। কিন্তু মুসলিমদের তৎপরতার ফলে তাদের জোট ভেঙে যায়। মুসলিমদের সুসংগঠিত অবস্থা, জোটবাহিনীর আত্মবিশ্বাস হ্রাস ও খারাপ আবহাওয়ার কারণে শেষপর্যন্ত আক্রমণ ব্যর্থ হয়।এই যুদ্ধে জয়ের ফলে ইসল...

কাবা ঘর নির্মাণের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস

মো. আবু রায়হানঃ কাবা মুসলমানদের কিবলা, অর্থাৎ যে দিকে মুখ করে নামাজ পড়ে বা সালাত আদায় করে, পৃথিবীর যে স্থান থেকে কাবা যে দিকে মুসলমানগণ ঠিক সে দিকে মুখ করে নামাজ আদায় করেন। হজ্জ এবং উমরা পালনের সময় মুসলমানগণ কাবাকে ঘিরে তাওয়াফ বা প্রদক্ষিণ করেন।কাবা শব্দটি এসেছে আরবি শব্দ মুকাআব অর্থ ঘন থেকে।কাবা একটি বড় ঘন আকৃতির ইমারত। (The Kaaba, meaning cube in Arabic, is a square building elegantly draped in a silk and cotton veil.)।যা সৌদি আরবের মক্কা শহরের মসজিদুল হারাম মসজিদের মধ্যখানে অবস্থিত। প্রকৃতপক্ষে মসজিদটি কাবাকে ঘিরেই তৈরি করা হয়েছে।কাবার ভৌগোলিক অবস্থান ২১.৪২২৪৯৩৫° উত্তর ৩৯.৮২৬২০১৩° পূর্ব।পৃথিবীর সর্বপ্রথম ঘর বায়তুল্লাহ বা পবিত্র কাবা ঘর ।আল্লাহ বলেন, নিশ্চয় সর্বপ্রথম ঘর যা মানুষের জন্য নির্মিত হয়েছে তা মক্কা নগরীতে। (সুরা আল ইমরান - ৯৬)। “প্রথম মাসজিদ বায়তুল্লাহিল হারাম তারপর বাইতুল মাকদিস, আর এ দুয়ের মধ্যে সময়ের ব্যবধান হলো চল্লিশ বছরের”।(মুসলিম- ৫২০)। ভৌগোলিকভাবেই গোলাকার পৃথিবীর মধ্যস্থলে কাবার অবস্থান। ইসলামের রাজধানী হিসেবে কাবা একটি সুপরিচিত নাম। পৃথিবীতে মাটির সৃষ্টি ...