সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

স্যার সৈয়দ আহমদ খান



ভারতীয় উপমহাদেশের বিখ্যাত দার্শনিক, শিক্ষাবিদ, রাজনীতিবিদ ও ভারতের মুসলিমদের আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত করে তোলার অগ্রদূত সৈয়দ আহমদ খান। তার চিন্তাধারা ও কাজকর্ম ভারতের মুসলিমদের মধ্যে একটি নতুন চেতনার জন্ম দিয়েছিল।

আলিগড় আন্দোলনের প্রবর্তক ছিলেন স্যার সৈয়দ আহমদ খান। পিছিয়ে পড়া মুসলমান সম্প্রদায়কে যুক্তিবাদী আধুনিক পাশ্চাত্য শিক্ষায় শিক্ষিত করে তোলার জন্য উত্তরপ্রদেশের আলিগড়ে যে আন্দোলনের সূচনা করেন তা আলিগড় আন্দোলন নামে খ্যাত। ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দে বিদ্রোহের পর অনগ্রসর মুসলিম সমাজে কিছু কিছু সংস্কারের প্রয়োজন অনুভূত হয়। হিন্দুদের তুলনায় অনগ্রসর পাশ্চাত্য শিক্ষায় উদাসীন মুসলিম সমাজের দুরবস্থার কথা সৈয়দ আহমদ অবগত ছিলেন। ইংরেজি ভাষার মাধ্যমে পাশ্চাত্য শিক্ষাকে প্রগতির যথার্থ সোপান বলে মনে করতেন তিনি এজন্য মুসলমানদের মধ্যে পাশ্চাত্য শিক্ষা ও পাশ্চাত্য সংস্কৃতির প্রসারে উদ্যোগী হয়েছিলেন।
১৮৬৪ সালে গাজীপুরে একটি ইংরেজি স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন। ইংরেজি ভাষায় লেখা মূল্যবান কিছু কিছু বই উর্দু ভাষায় অনুবাদ করে তা মুসলমানদের মধ্যে বিতরণ করার উদ্দেশ্যে বিজ্ঞান সমিতি (Scientific Society)
নামে একটি সংস্থার প্রতিষ্ঠা, মুসলমানদের মন থেকে পাশ্চাত্যের ভয় ভীতি দূর করার জন্য ও মুসলমানদের মধ্যে উদারনৈতিক ভাবধারা প্রচারের জন্য‘তাহজিব-উল-আখলাক’ (Tahzibul Akhlad বা Social Reformer) নামে একটি পত্রিকা প্রকাশ করেন। সেই সঙ্গে কমিটি ফর অ্যাডভান্সমেন্ট অফ লার্নিং নামে একটি সংস্থারও তিনি প্রতিষ্ঠা করেন।
অক্সফোর্ড ও ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুকরণে ১৮৭৫ খ্রিস্টাব্দে মে মাসে আলিগড়ে তিনি মোহামেডান অ্যাংলো ওরিয়েন্টাল কলেজের (Mahammedan Anglo Oriential College) প্রতিষ্ঠা করেন। এই কলেজটিই পরে আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয় নামে পরিচিত হয়। ইংরেজ শিক্ষাবিদদের তত্ত্বাবধানে এই কলেজে কলা ও বিজ্ঞান শিক্ষার ব্যবস্থা করা হয়। মুসলমান ছাত্রদের মধ্যে পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রসার ও প্রগতিমূলক মনোভাবের উন্মেষ ঘটানোর ক্ষেত্রে এই কলেজের অবদান অস্বীকার করা যায় না। আলিগড় আন্দোলন ভারতীয় মুসলমানদের মধ্যে যুক্তিবাদের প্রসার ঘটিয়ে তাদের ধর্মীয় ও সামাজিক গোঁড়ামি পরিত্যাগেও সাহায্য করেছিল। এই আন্দোলন মুসলিম সমাজে নারীদের মর্যাদা বৃদ্ধি, নারী শিক্ষা প্রসারের প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরেছিল।ডঃ বিশ্বনাথ প্রতাপ ভার্মা বলেছেন, “Syed Ahmad wanted to give pride of place both to secular modern education and to Islamic ideology” বা সৈয়দ আহমদ ধর্মনিরপেক্ষ, আধুনিক শিক্ষা এবং ইসলামীয় আদর্শ উভয়কেই গৌরবজনক স্থান দান করতে চেয়েছিলেন (Dr. V. P. Varma, Modern Indian Political Thought, Agra, 2002 P. 423)
নিজের বিভিন্ন উদ্যোগ ও বৃটিশদের পৃষ্ঠপোষকতার ফলে ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষভাগে সৈয়দ আহমদ ভারতবর্ষের জাতীয় নেতায় পরিণত হন। ১৮৭৮ সালে লর্ড লিটন তাঁকে রাজকীয় আইনসভায় মনোনয়ন দান করেন। ১৮৮৭ সালে লর্ড ডাফরিন তাঁকে পাবলিক সার্ভিস কমিশনের সদস্য হিসেবে নিয়োগ প্রদান করেন। ১৮৮৮ সালে বৃটিশ সরকার তার ‘নাইটহুড’ প্রদান করে। এর পর থেকে তিনি স্যার সৈয়দ আহমদ; হিসাবে পরিচিত হতে থাকেন। ১৮৯৮ সালের ২৭ মার্চ ভারতে মুসলিম জাগরণের পুরোধা ব্যক্তিত্ব স্যার সৈয়দ আহমদ খানের মৃত্যু হয়।
তিনি ১৮১৭ সালে ১৭ই অক্টোবর দিল্লি শহরের এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতৃপুরুষগণ মধ্য এশিয়া থেকে ভারতবর্ষে এসে এখানেই স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন এবং মধ্যযুগের ভারতবর্ষে বিখ্যাত মোগল সম্রাটগণের অধীনে উচ্চপদে কর্মরত হন।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

সুফফা ইসলামের প্রথম আবাসিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান

মো.আবু রায়হান:  সুফফা মসজিদে নববির একটি স্থান। যেখানে একদল নিঃস্ব মুহাজির যারা মদিনায় হিজরত করেন এবং বাসস্থানের অভাবে মসজিদে নববির সেই স্থানে থাকতেন।এটি প্রথমদিকে মসজিদ উত্তর-পূর্ব কোণায় ছিল এবং রাসুলের আদেশে এটাকে পাতার ছাউনি দিয়ে ছেয়ে দেয়া হয় তখন থেকে এটি পরিচিতি পায় আল-সুফফা বা আল-জুল্লাহ নামে। ( A Suffah is a room that is covered with palm branches from date trees, which was established next to Al-Masjid al-Nabawi by Islamic prophet Muhammad during the Medina period.)। মোটকথা রাসুল (সা) মসজিদে-নববির চত্ত্বরের এক পাশে আস সুফফা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। সুফফা হলো ছাদবিশিষ্ট প্রশস্ত স্থান। সুফফার আকৃতি ছিল অনেকটা মঞ্চের মতো, মূল ভূমির উচ্চতা ছিল প্রায় অর্ধমিটার। প্রাথমিক পর্যায়ে এর দৈর্ঘ্য ছিল ১২ মিটার এবং প্রস্থ ছিল ৮ মিটার। মসজিদে নববির উত্তর-পূর্বাংশে নির্মিত সুফফার দক্ষিণ দিকে ছিল রাসুলুল্লাহ (সা.) ও তাঁর স্ত্রীদের অবস্থানের হুজরা এবং সংলগ্ন পশ্চিম পাশে ছিল মেহরাব।আসহাবে সুফফা অৰ্থ চত্বরবাসী। ঐ সকল মহৎ প্ৰাণ সাহাবি আসহাবে সুফফা নামে পরিচিত, যারা জ্ঞানার্জনের জন্য ভোগবিলাস ত্যা...

খন্দক যুদ্ধ কারণ ও ফলাফল

#মো. আবু রায়হান ইসলামের যুদ্ধগুলোর মধ্যে খন্দকের যুদ্ধ অন্যতম। ৫ হিজরির শাওয়াল মাসে খন্দকের যুদ্ধ সংঘটিত হয়। নবীজি (সা.) মদিনায় আসার আগে সেখানে বড় দুটি ইহুদি সম্প্রদায় বসবাস করত। বনু নাজির ও বনু কোরায়জা। ইহুদিদের প্ররোচনায় কুরাইশ ও অন্যান্য গোত্র মদিনার মুসলমানদের সঙ্গে যুদ্ধ করার প্রস্তুতি গ্রহণ করে। খন্দকের এই যুদ্ধ ছিল মদিনার ওপরে গোটা আরব সম্প্রদায়ের এক সর্বব্যাপী হামলা এবং কষ্টকর অবরোধের এক দুঃসহ অভিজ্ঞতা। এসময় ২৭দিন ধরে আরব ও ইহুদি গোত্রগুলি মদিনা অবরোধ করে রাখে। পারস্য থেকে আগত সাহাবি সালমান ফারসির পরামর্শে হযরত মুহাম্মদ (স:) মদিনার চারপাশে পরিখা খননের নির্দেশ দেন। প্রাকৃতিকভাবে মদিনাতে যে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ছিল তার সাথে এই ব্যবস্থা যুক্ত হয়ে আক্রমণ কারীদেরকে নিষ্ক্রিয় করে ফেলে। জোটবাহিনী মুসলিমদের মিত্র মদিনার ইহুদি বনু কোরায়জা গোত্রকে নিজেদের পক্ষে আনে যাতে তারা দক্ষিণ দিক থেকে শহর আক্রমণ করে। কিন্তু মুসলিমদের তৎপরতার ফলে তাদের জোট ভেঙে যায়। মুসলিমদের সুসংগঠিত অবস্থা, জোটবাহিনীর আত্মবিশ্বাস হ্রাস ও খারাপ আবহাওয়ার কারণে শেষপর্যন্ত আক্রমণ ব্যর্থ হয়।এই যুদ্ধে জয়ের ফলে ইসল...

কাবা ঘর নির্মাণের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস

মো. আবু রায়হানঃ কাবা মুসলমানদের কিবলা, অর্থাৎ যে দিকে মুখ করে নামাজ পড়ে বা সালাত আদায় করে, পৃথিবীর যে স্থান থেকে কাবা যে দিকে মুসলমানগণ ঠিক সে দিকে মুখ করে নামাজ আদায় করেন। হজ্জ এবং উমরা পালনের সময় মুসলমানগণ কাবাকে ঘিরে তাওয়াফ বা প্রদক্ষিণ করেন।কাবা শব্দটি এসেছে আরবি শব্দ মুকাআব অর্থ ঘন থেকে।কাবা একটি বড় ঘন আকৃতির ইমারত। (The Kaaba, meaning cube in Arabic, is a square building elegantly draped in a silk and cotton veil.)।যা সৌদি আরবের মক্কা শহরের মসজিদুল হারাম মসজিদের মধ্যখানে অবস্থিত। প্রকৃতপক্ষে মসজিদটি কাবাকে ঘিরেই তৈরি করা হয়েছে।কাবার ভৌগোলিক অবস্থান ২১.৪২২৪৯৩৫° উত্তর ৩৯.৮২৬২০১৩° পূর্ব।পৃথিবীর সর্বপ্রথম ঘর বায়তুল্লাহ বা পবিত্র কাবা ঘর ।আল্লাহ বলেন, নিশ্চয় সর্বপ্রথম ঘর যা মানুষের জন্য নির্মিত হয়েছে তা মক্কা নগরীতে। (সুরা আল ইমরান - ৯৬)। “প্রথম মাসজিদ বায়তুল্লাহিল হারাম তারপর বাইতুল মাকদিস, আর এ দুয়ের মধ্যে সময়ের ব্যবধান হলো চল্লিশ বছরের”।(মুসলিম- ৫২০)। ভৌগোলিকভাবেই গোলাকার পৃথিবীর মধ্যস্থলে কাবার অবস্থান। ইসলামের রাজধানী হিসেবে কাবা একটি সুপরিচিত নাম। পৃথিবীতে মাটির সৃষ্টি ...