সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

নমরুদের করুণ মৃত্যু


পৃথিবীতে প্রথম খোদা দাবিকারী নমরুদ প্রায় ৪০০বছর রাজত্ব করে। ইতিহাসবিদরা নমরুদকে আল-জব্বার বা চরম স্বেচ্ছাচারী হিসেবে বিবেচনা করে। যার স্বেচ্ছাচারিতা তার শক্তি, ক্ষমতা ও দম্ভের প্রকাশভঙ্গি ছিল। ইবরাহিম আ. কে নমরুদ অগ্নিকুণ্ডে নিক্ষেপ করেছিল।
নমরুদ আল্লাহর বাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধ করার ঘোষণা দিল। হজরত ইবরাহিম (আ.) দূরে আকাশের দিকে আঙুল দিয়ে দেখালেন। দূরে কালো রঙের একটা মেঘ দেখা যাচ্ছিল, যখন সেটা কাছে চলে এলো, লাখ লাখ মশার গুনগুন শব্দে ময়দান মুখরিত হলো। কিন্তু নমরুদ অবজ্ঞার সুরে বলল, এ তো মশা! তুচ্ছ প্রাণী, তা-ও আবার নিরস্ত্র। এ সময়ের মধ্যে প্রত্যেক সৈন্যের মাথার ওপর মশা অবস্থান নিল। অতঃপর তাদের বুঝে ওঠার আগেই মশাগুলো তাদের নাক দিয়ে মস্তিষ্কে প্রবেশ করল। তারপর দংশন করা শুরু করল। সৈন্যদের মধ্যে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হলো। হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে তীরন্দাজরা ঊর্ধ্বে তীর নিক্ষেপ আর পদাতিক সেনারা নিজেদের চারপাশে অন্ধের মতো তরবারি চালাল, যার ফলে একে অপরকে নিজেদের অজান্তেই আহত বা নিহত করে ফেলল।
মশার সঙ্গে যুদ্ধ চলাকালে নমরুদ পালিয়ে প্রাসাদে চলে এলো। এ সময় একটি দুর্বল লেংড়া মশা তাকে তাড়া করল এবং কিছুক্ষণ মাথার চারপাশে ঘুরে নাসিকাপথে মস্তিষ্কে ঢুকে পড়ল। এরপর মগজে দংশন করা শুরু করল। নমরুদ যন্ত্রণায় অস্থির হয়ে উন্মাদের মতো প্রাসাদে প্রবেশ করল এবং যন্ত্রণায় দিশাহারা হয়ে পাদুকা খুলে নিজের মাথায় আঘাত করতে শুরু করল। অবশেষে মাথায় মৃদু আঘাত করার জন্য একজন সার্বক্ষণিক কর্মচারী নিযুক্ত করল নমরুদ।
সুদীর্ঘ ৪০ বছর তাকে এই দুঃসহ যন্ত্রণা ভোগ করতে হয়েছিল। অবশেষে মাথার আঘাতের ব্যথায় নমরুদের মৃত্যু হয়। (তাফসিরে ইবনে কাসির, পৃষ্ঠা. ৬৮৬)

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

যে গাছ ইহুদিদের আশ্রয় দেবে অর্থাৎ ইহুদিদের বন্ধু গাছ

মো.আবু রায়হান:  কিয়ামত সংঘটিত হবার  পূর্বে হযরত ঈসা (আ.) এর সঙ্গে দাজ্জালের জেরুজালেমে যুদ্ধ হবে। সেই যুদ্ধে ইহুদিরা দাজ্জালের পক্ষাবলম্বন করবে। হযরত ঈসা (আ.) দাজ্জালকে হত্যা করবেন।এদিকে  ইহুদিরা প্রাণ ভয়ে পালাতে চেষ্টা করবে।  আশেপাশের গাছ ও পাথর/ দেয়ালে আশ্রয় নেবে। সেদিন গারকাদ নামক একটি গাছ ইহুদিদের আশ্রয় দেবে। গারকাদ ইহুদীবান্ধব গাছ।গারকাদ একটি আরবি শব্দ। এর অর্থ হল কাটাওয়ালা ঝোঁপ।গারকাদ এর ইংরেজী প্রতিশব্দ Boxthorn। Boxএর অর্থ সবুজ ঝোঁপ এবং thorn এর অর্থ কাঁটা। এ ধরনের গাছ বক্সথর্ন হিসেবেই পরিচিত। এই গাছ চেরি গাছের মতো এবং চেরি ফলের মতো লাল ফলে গাছটি শোভিত থাকে।  ইসরায়েলের সর্বত্র বিশেষত অধিকৃত গাজা ভূখন্ডে গারকাদ গাছ ব্যাপকহারে  দেখতে পাওয়া যায়।ইহুদিরা কোথাও পালাবার স্থান পাবে না। গাছের আড়ালে পালানোর চেষ্টা করলে গাছ বলবে, হে মুসলিম! আসো, আমার পিছনে একজন ইহুদী লুকিয়ে আছে। আসো এবং তাকে হত্যা কর। পাথর বা দেয়ালের পিছনে পলায়ন করলে পাথর বা দেয়াল বলবে, হে মুসলিম! আমার পিছনে একজন ইহুদী লুকিয়ে আছে, আসো! তাকে হত্যা কর। তবে গারকাদ নামক গাছ ইহুদিদেরকে ...

খন্দক যুদ্ধ কারণ ও ফলাফল

#মো. আবু রায়হান ইসলামের যুদ্ধগুলোর মধ্যে খন্দকের যুদ্ধ অন্যতম। ৫ হিজরির শাওয়াল মাসে খন্দকের যুদ্ধ সংঘটিত হয়। নবীজি (সা.) মদিনায় আসার আগে সেখানে বড় দুটি ইহুদি সম্প্রদায় বসবাস করত। বনু নাজির ও বনু কোরায়জা। ইহুদিদের প্ররোচনায় কুরাইশ ও অন্যান্য গোত্র মদিনার মুসলমানদের সঙ্গে যুদ্ধ করার প্রস্তুতি গ্রহণ করে। খন্দকের এই যুদ্ধ ছিল মদিনার ওপরে গোটা আরব সম্প্রদায়ের এক সর্বব্যাপী হামলা এবং কষ্টকর অবরোধের এক দুঃসহ অভিজ্ঞতা। এসময় ২৭দিন ধরে আরব ও ইহুদি গোত্রগুলি মদিনা অবরোধ করে রাখে। পারস্য থেকে আগত সাহাবি সালমান ফারসির পরামর্শে হযরত মুহাম্মদ (স:) মদিনার চারপাশে পরিখা খননের নির্দেশ দেন। প্রাকৃতিকভাবে মদিনাতে যে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ছিল তার সাথে এই ব্যবস্থা যুক্ত হয়ে আক্রমণ কারীদেরকে নিষ্ক্রিয় করে ফেলে। জোটবাহিনী মুসলিমদের মিত্র মদিনার ইহুদি বনু কোরায়জা গোত্রকে নিজেদের পক্ষে আনে যাতে তারা দক্ষিণ দিক থেকে শহর আক্রমণ করে। কিন্তু মুসলিমদের তৎপরতার ফলে তাদের জোট ভেঙে যায়। মুসলিমদের সুসংগঠিত অবস্থা, জোটবাহিনীর আত্মবিশ্বাস হ্রাস ও খারাপ আবহাওয়ার কারণে শেষপর্যন্ত আক্রমণ ব্যর্থ হয়।এই যুদ্ধে জয়ের ফলে ইসল...

উটের যুদ্ধ ইসলামের প্রথম ভাতৃঘাতি যুদ্ধ

#মো.আবু রায়হান উটের যুদ্ধ বা উষ্ট্রের যুদ্ধ বা জামালের যুদ্ধ ( Battle of the Camel) ৬৫৬ খ্রিষ্টাব্দের শেষের দিকে ইরাকের বসরায় সংঘটিত হয়। এটি ইসলামের ইতিহাসের প্রথম গৃহযুদ্ধ।এই যুদ্ধ ছিল ইসলামের চতুর্থ খলিফা হযরত আলী এর বিরুদ্ধে হযরত তালহা-জুবায়ের ও আয়েশা (রা)সম্মলিত যুদ্ধ। পটভূমি হযরত ওসমান (রা) এর বিভিন্ন প্রদেশে প্রাদেশিক শাসনকর্তা নিয়োগ নিয়ে একদল তার বিরুদ্ধে অভিযোগ টেনে বিদ্রোহ শুরু করে।হযরত ওসমান বিভিন্নভাবে তাদের শান্ত করার চেষ্টা করতে থাকেন। তাদের কথামত মিশরের গভর্নরকে প্রতিস্থাপন করে আবু বকরের ছেলে মুহাম্মদ ইবনে আবু বকর কে নিয়োগ করলেও বিদ্রোহীরা শান্ত হয় নি। তারা নানাভাবে অভিযোগ টেনে এনে ওসমান (রা) এর অপসারণের দাবী করতে থাকে। ওসমান সবকিছু মীমাংসার আশ্বাস দিলেও তারা ৬৫৬ সালের ১৭ জুন তারা বাড়ি অবরুদ্ধ করে এবং এক পর্যায়ে তারা তার কক্ষে প্রবেশ করে কুরআন তেলাওয়াত করা অবস্থায় হত্যা করে।ওসমান (রা.)-এর হত্যাকাণ্ডের পর আলী (রা.) খলিফা হন। কিন্তু দুঃখজনকভাবে ক্ষমতা গ্রহণ করে যখনই আলী (রা.) ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার কাজে হাত দেন তখনই ধর্মীয় ও রাজনৈতিক দূরদর্শিতার অভাবের কার...