সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

ব্রুনাইয়ের সুলতান হাজী হাসানাল বলকিয়াহ মুইজ্জাদ্দিন ওয়াদদৌল্লাহ

 




টুপি পরা সিংহাসনে বসা এই বনু আদমকে চিনেন? ইনি যেনতেন কোনো বনু আদম নন। এই বনু আদম এখন বাংলাদেশে আছেন দুদিনের রাষ্ট্রীয় সফরে। এই বনু আদমের পরিচয় হলো দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার মুসলিম প্রধান দেশ ব্রুনাইয়ের সুলতান হাজী হাসানাল বলকিয়াহ মুইজ্জাদ্দিন ওয়াদদৌল্লাহ। যিনি বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ও বিলাসী সুলতান হিসেবে সুপরিচিত। ১৯৬৭ সাল থেকে প্রায় ৫৫ বছর ব্রুনাই শাসন করে আসছেন সুলতান হাসানাল বলকিয়াহ। রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের পর তিনিই দীর্ঘদিন ধরে কোনো একটি দেশের সিংহাসনে রয়েছেন।

ব্রুনাইয়ের আয়তন ৫ হাজার ৭৬৫ কি.মি.। বর্তমানে জনসংখ্যা ৪ লাখ ৩৬ হাজার ৬২০ জন।ব্রুনাই একটি ছোট দেশ হলেও, এ দেশের সুলতান অত্যন্ত শক্তিশালী ও ধনী একজন ব্যক্তি। ১৯৮০ সাল পর্যন্ত বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি ছিলেন তিনি। ২০০৮ সালের ফোর্বসের তথ্য অনুসারে, বলকিয়াহর মোট সম্পদের পরিমাণ ছিল ১.৪ লাখ কোটি (২০ বিলিয়ন ডলার) টাকা।তেল সম্পদ থেকে তিনি প্রচুর অর্থ আয় করে থাকেন।প্রতি সেকেন্ডে ব্রুনাইয়ের সুলতানের আয় ১০০ মার্কিন ডলার। তেল সম্পদ ও বিনিয়োগ থেকেই তার এ আয়।
সুলতানের প্রতি মাসে চুল কাটতে ব্যয় হয় ১৭ লাখ টাকা।প্রতি মাসে একবার লন্ডন থেকে নাপিত ব্রুনাই গিয়ে তার চুল কেটে আসেন।
সুলতানের গাড়ির সংখ্যা সাত হাজার। এর মধ্যে প্রায় ৫০০ রোলস রয়েস গাড়ি রয়েছে। বিলাসবহুল কয়েকশ’ ফেরারি গাড়িও আছে তার।বহরের সবচেয়ে আকর্ষণীয় বাহন তার সোনায় মোড়ানো রাজকীয় রোলস্‌রয়েস। বিশেষ ডিজাইনের রোলস্‌রয়েসের ছাদ খোলা এবং পেছনে ছাতা সংযুক্ত করা।ধারণা করা হত, নব্বইয়ের দশকে বিক্রি হওয়া বিশ্বের অর্ধেক রোলস্‌রয়েসের মালিক সুলতান এবং তার পরিবার। এছাড়া কয়েকশ' ফেরারি গাড়ি আছে তার। এর বাইরে ল্যাম্বরগিনি, পোর্সেসহ দুর্লভ এবং লিমিটেড এডিশন গাড়িরও লোভনীয় বহর আছে সুলতানের।
ব্রনাই সুলতানের নিজস্ব জেট ও বোয়িং বিমান রয়েছে। কোনো দেশ সফরে গেলে তিনি নিজস্ব বিমান ব্যবহার করে থাকেন।সুলতানের প্রাইভেট জেট বহরে আছে বোয়িং ৭৪৭-৪০০, বোয়িং ৭৪৭-২০০ এবং একটি এয়ারবাস বিমান। বিমান বহরের মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত বোয়িংটি সোনার প্রলেপ দেয়া, যাকে বিভিন্ন গণমাধ্যমে 'উড়ন্ত প্রাসাদ' বলে অভিহিত করা হয়।
সুলতানের রাজপ্রাসাদের নাম ইস্তানা নুরুল ইমান প্যালেস।ইংরেজিতে একে ‘দ্য লাইট অব ফেইথ প্যালেস’ বলা হয়।এখানে ১৭ হাজার রুম, ২৫৭টি বাথরুম, পাঁচটি সুইমিং পুল, ১১০টি গ্যারেজ আছে।
১.৪ বিলিয়ন ডলার ব্যয়ে নির্মিত বিশ্বের সবচেয়ে বড় রাজপ্রাসাদ এটি।সুলতানের প্রাসাদ ইস্তানা নুরুল ইমান আকারে ভ্যাটিকান বা বাকিংহাম প্রাসাদের চাইতে অনেকগুণ বড়। গিনেস বুক অব রেকর্ডস অনুযায়ী এটি বিশ্বের সবচাইতে বড় প্রাসাদ।
এই বনু আদমের টাকা পয়সার অভাব নেই। গান শুনতে পছন্দ করেন। ১৯৯৬ সালে তার ৫০তম জন্মদিন উপলক্ষে ব্রুনাইয়ে মাইকেল জ্যাকসনের কনসার্ট আয়োজন করেন। এজন্য মাইকেল জ্যাকসনকে তিনি দিয়েছিলেন ১৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।
সুলতানের প্রাসাদে আছে একটি ব্যক্তিগত চিড়িয়াখানা। যেখানে প্রায় ৩০টি রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার আছে। এটি হাসানাল বলকিয়াহর দর্শনার্থীদের জন্য বিনোদনের অন্যতম সংস্থান।
জনসংখ্যার ৮০% এর বেশি, যার মধ্যে বেশিরভাগ ব্রুনিয়ান মালয় এবং কেদায়ানরা মুসলিম হিসাবে চিহ্নিত। অন্যান্য ধর্ম হল বৌদ্ধধর্ম ৭%, এবং খ্রিস্টধর্ম ৭.১%।১৯৫৯-এর সংবিধান মোতাবেক ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে ঘোষণা করা হয়।২০১৪ সালের ৩০শে এপ্রিল, সুলতান হাসানাল বলকিয়াহ ১লা মে ২০১৪ থেকে ব্রুনাইয়ে প্রথম ধাপে শরিয়া আইনকানুনকে বাস্তবায়ন এবং প্রয়োগের ঘোষণা দেন।
দেশটির আইনে পরকীয়া প্রেমের শাস্তি পাথর ছুড়ে মৃত্যুদণ্ড এবং চুরির সাজা হিসেবে হাত কেটে নেয়ার বিধান আছে।২০১৯ সালে দেশটিতে সমকামিতার জন্য কঠোর শাস্তির বিধান রেখে একটি আইন করা হয়। আইনে পুরুষে পুরুষে যৌনকর্ম এবং পরকীয়া সম্পর্কের জন্য পাথর ছুড়ে মৃত্যুর বিধান রাখা হয়েছে। পরবর্তীতে আন্দোলনের মুখে যদিও সুলতান ওই আইন থেকে মৃত্যুদণ্ডের বিধান রহিত করেন। কিন্তু ব্রুনাইয়ে আগে থেকেই সমকামিতা নিষিদ্ধ ছিল এবং এজন্য ১০ বছরের কারাদণ্ডের বিধান ছিল।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

সুফফা ইসলামের প্রথম আবাসিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান

মো.আবু রায়হান:  সুফফা মসজিদে নববির একটি স্থান। যেখানে একদল নিঃস্ব মুহাজির যারা মদিনায় হিজরত করেন এবং বাসস্থানের অভাবে মসজিদে নববির সেই স্থানে থাকতেন।এটি প্রথমদিকে মসজিদ উত্তর-পূর্ব কোণায় ছিল এবং রাসুলের আদেশে এটাকে পাতার ছাউনি দিয়ে ছেয়ে দেয়া হয় তখন থেকে এটি পরিচিতি পায় আল-সুফফা বা আল-জুল্লাহ নামে। ( A Suffah is a room that is covered with palm branches from date trees, which was established next to Al-Masjid al-Nabawi by Islamic prophet Muhammad during the Medina period.)। মোটকথা রাসুল (সা) মসজিদে-নববির চত্ত্বরের এক পাশে আস সুফফা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। সুফফা হলো ছাদবিশিষ্ট প্রশস্ত স্থান। সুফফার আকৃতি ছিল অনেকটা মঞ্চের মতো, মূল ভূমির উচ্চতা ছিল প্রায় অর্ধমিটার। প্রাথমিক পর্যায়ে এর দৈর্ঘ্য ছিল ১২ মিটার এবং প্রস্থ ছিল ৮ মিটার। মসজিদে নববির উত্তর-পূর্বাংশে নির্মিত সুফফার দক্ষিণ দিকে ছিল রাসুলুল্লাহ (সা.) ও তাঁর স্ত্রীদের অবস্থানের হুজরা এবং সংলগ্ন পশ্চিম পাশে ছিল মেহরাব।আসহাবে সুফফা অৰ্থ চত্বরবাসী। ঐ সকল মহৎ প্ৰাণ সাহাবি আসহাবে সুফফা নামে পরিচিত, যারা জ্ঞানার্জনের জন্য ভোগবিলাস ত্যা...

খন্দক যুদ্ধ কারণ ও ফলাফল

#মো. আবু রায়হান ইসলামের যুদ্ধগুলোর মধ্যে খন্দকের যুদ্ধ অন্যতম। ৫ হিজরির শাওয়াল মাসে খন্দকের যুদ্ধ সংঘটিত হয়। নবীজি (সা.) মদিনায় আসার আগে সেখানে বড় দুটি ইহুদি সম্প্রদায় বসবাস করত। বনু নাজির ও বনু কোরায়জা। ইহুদিদের প্ররোচনায় কুরাইশ ও অন্যান্য গোত্র মদিনার মুসলমানদের সঙ্গে যুদ্ধ করার প্রস্তুতি গ্রহণ করে। খন্দকের এই যুদ্ধ ছিল মদিনার ওপরে গোটা আরব সম্প্রদায়ের এক সর্বব্যাপী হামলা এবং কষ্টকর অবরোধের এক দুঃসহ অভিজ্ঞতা। এসময় ২৭দিন ধরে আরব ও ইহুদি গোত্রগুলি মদিনা অবরোধ করে রাখে। পারস্য থেকে আগত সাহাবি সালমান ফারসির পরামর্শে হযরত মুহাম্মদ (স:) মদিনার চারপাশে পরিখা খননের নির্দেশ দেন। প্রাকৃতিকভাবে মদিনাতে যে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ছিল তার সাথে এই ব্যবস্থা যুক্ত হয়ে আক্রমণ কারীদেরকে নিষ্ক্রিয় করে ফেলে। জোটবাহিনী মুসলিমদের মিত্র মদিনার ইহুদি বনু কোরায়জা গোত্রকে নিজেদের পক্ষে আনে যাতে তারা দক্ষিণ দিক থেকে শহর আক্রমণ করে। কিন্তু মুসলিমদের তৎপরতার ফলে তাদের জোট ভেঙে যায়। মুসলিমদের সুসংগঠিত অবস্থা, জোটবাহিনীর আত্মবিশ্বাস হ্রাস ও খারাপ আবহাওয়ার কারণে শেষপর্যন্ত আক্রমণ ব্যর্থ হয়।এই যুদ্ধে জয়ের ফলে ইসল...

কাবা ঘর নির্মাণের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস

মো. আবু রায়হানঃ কাবা মুসলমানদের কিবলা, অর্থাৎ যে দিকে মুখ করে নামাজ পড়ে বা সালাত আদায় করে, পৃথিবীর যে স্থান থেকে কাবা যে দিকে মুসলমানগণ ঠিক সে দিকে মুখ করে নামাজ আদায় করেন। হজ্জ এবং উমরা পালনের সময় মুসলমানগণ কাবাকে ঘিরে তাওয়াফ বা প্রদক্ষিণ করেন।কাবা শব্দটি এসেছে আরবি শব্দ মুকাআব অর্থ ঘন থেকে।কাবা একটি বড় ঘন আকৃতির ইমারত। (The Kaaba, meaning cube in Arabic, is a square building elegantly draped in a silk and cotton veil.)।যা সৌদি আরবের মক্কা শহরের মসজিদুল হারাম মসজিদের মধ্যখানে অবস্থিত। প্রকৃতপক্ষে মসজিদটি কাবাকে ঘিরেই তৈরি করা হয়েছে।কাবার ভৌগোলিক অবস্থান ২১.৪২২৪৯৩৫° উত্তর ৩৯.৮২৬২০১৩° পূর্ব।পৃথিবীর সর্বপ্রথম ঘর বায়তুল্লাহ বা পবিত্র কাবা ঘর ।আল্লাহ বলেন, নিশ্চয় সর্বপ্রথম ঘর যা মানুষের জন্য নির্মিত হয়েছে তা মক্কা নগরীতে। (সুরা আল ইমরান - ৯৬)। “প্রথম মাসজিদ বায়তুল্লাহিল হারাম তারপর বাইতুল মাকদিস, আর এ দুয়ের মধ্যে সময়ের ব্যবধান হলো চল্লিশ বছরের”।(মুসলিম- ৫২০)। ভৌগোলিকভাবেই গোলাকার পৃথিবীর মধ্যস্থলে কাবার অবস্থান। ইসলামের রাজধানী হিসেবে কাবা একটি সুপরিচিত নাম। পৃথিবীতে মাটির সৃষ্টি ...