সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

দক্ষিণ কোরিয়ার শিনদোর এক রহস্যময় দ্বীপ


আল্লাহ তায়ালার এই দুনিয়ায় রহস্য আর বিস্ময়ের অন্ত নেই। তেমনি একটি বিস্ময় মোজেস মিরাকল’। মহান আল্লাহর আদেশে লোহিত সাগরের মধ্য দিয়ে রাস্তা তৈরি হওয়ার ঘটনার সঙ্গে মোজেস মিরাকলের মিল খুঁজে পাওয়া যায়। ঘটনাটি দক্ষিণ কোরিয়ার শিনদোর এক রহস্যময় দ্বীপ নিয়ে আবর্তিত। এ বিস্ময়কর দ্বীপ স্মরণ করিয়ে দেয় মহান আল্লাহর বাণী, ‘জ্ঞানের অতি সামান্যই তোমাদেরকে দেওয়া হয়েছে...’ (সুরা বানি ইসরাইল: ৮৫)। কবি বলেছেন,

বিপুলা এ পৃথিবীর কতটুকু জানি।
দেশে দেশে কত না নগর রাজধানী—
মানুষের কত কীর্তি, কত নদী গিরি সিন্ধু মরু,
কত না অজানা জীব, কত না অপরিচিত তরু।
দক্ষিণ কোরিয়ার শিনদো আইল্যান্ড এক রহস্যঘেরা স্থান। পাশেই মোদো নামের দ্বীপ। জায়গা দুটির অবস্থান পাশাপাশি হলেও দূরত্ব একেবারে কম নয়, মাঝখানে অথৈ সাগর। বসন্ত ও গ্রীষ্মের মাঝামাঝিতে দুইবার শিনদো ও মোদো দ্বীপের মধ্যবর্তী পানি সরে প্রাকৃতিক নিয়মে রাস্তা সৃষ্টি হয়। দৈর্ঘ্য ২.৮ কিলোমিটার, প্রস্থ ৪০ মিটার। যেন সংযোগ সড়ক অথচ স্থায়িত্বকাল মাত্র এক ঘণ্টা! ঘটনাটি সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক।
শিনদো আইল্যান্ডের ‘মোজেস মিরাকল’ ১৯৭৫ সালের পর ব্যাপক পরিচিতি পায়। একজন ফরাসি কূটনীতিক শিনদো ঘুরে এসে তাঁর দেশের পত্রিকায় প্রতিবেদন প্রকাশ করেন। এরপর প্রতিবছর হাজারও পর্যটক শিনদো ভ্রমণে আসেন ‘মোজেস মিরাকল’-এর টানে।
দক্ষিণ কোরিয়ানরা ‘মোজেস মিরাকল’ বা সাগর দ্বিধাবিভক্তির ঘটনাটি ‘শিনদো মিরাকল সি রোড ফেস্টিভাল’ হিসেবে পালন করেন। পর্যটকদের কাছে উৎসবটি দুর্লভ-সৌভাগ্যের ও দারুণ উপভোগ্য। সাগরের পানি সরে তৈরি হওয়া রাস্তা থেকে পর্যটকরা শামুক, ঝিনুক, ছোট ছোট মাছ ধরতে পারে। তবে খেয়াল রাখতে হয় সময়ের। কারণ রাস্তাটির স্থায়িত্বকাল মাত্র এক ঘণ্টা। সময় নষ্ট হলেই অনিবার্য মৃত্যু!
মহান আল্লাহর আদেশে লোহিত সাগরের মধ্যে রাস্তা তৈরির ঘটনার সঙ্গে ‘মোজেস মিরাকল’-এর মিল আছে। মুসা (আ.) আর ফেরাউনের ঘটনা এবং দক্ষিণ কোরিয়ার ওই দ্বীপের বাস্তবতা থেকে তৈরি ‘মোজেস মিরাকল’-এ পাওয়া যায় কোরআনের সত্যতা। ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমাদের জন্য সাগরকে দ্বিধাবিভক্ত করে দিলাম, তারপর আমি তোমাদের বাঁচিয়ে দিয়েছিলাম।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ৫০)
প্রাচীন মিশরীয় সম্রাটের রাজকীয় উপাধি ফারাও বা ফিরাউন। প্রচলিত ফিরাউন বলতে দ্বিতীয় রামসিসকে বোঝায়। ফিরাউন ১৮তম রাজবংশের তৃতীয় শাসক।পাপাচারী ফিরাউন ছয় হাজার সৈন্য নিয়ে মুসার (আ.) অনুসারীদেরকে তাড়া করে লোহিত সাগর তীরে নিয়ে আসে। মুসার (আ.) অনুসারীরা বলতে থাকে ‘আমরা তো ধরাই পড়ে গেলাম...’। তখন মহান আল্লাহর হুকুমে মুসা (আ.) তার হাতের লাঠি দিয়ে সাগরে আঘাত করেন, সঙ্গে সঙ্গেই মুসা (আ.) ও তাঁর অনুসারী বানি ইসরাইলের জন্য সাগরের মধ্য দিয়ে বারটি রাস্তা তৈরি হয়ে যায়। হযরত মুসা (আ.) ও তাঁর অনুসারীরা নিরাপদে চলে যান ওপারে, আর ডুবে মরে ফিরাউনের বাহিনী।
পবিত্র কুরআন ও বাইবেলের বিভিন্ন সুসমাচারে বর্ণিত হযরত মুসা (আ.) ও ফিরাউনের কাহিনীর সঙ্গে মিল থাকার কারণে অনেক কোরিয়ান এ ঘটনাকে ‘মোজেস মিরাকেল’ বলেন।
বৈজ্ঞানিকভাবে বলা চলে, সূর্য, চন্দ্র ও পৃথিবী নিজস্ব কক্ষপথে আবর্তনকালে তাদের অবস্থান এমন এক নির্ধারিত স্থানে এসে দাঁড়ায়, যখন চন্দ্র-সূর্যের সম্মিলিত আকর্ষণে পৃথিবীর নির্দিষ্ট স্থানে জোয়ারের পরিমাণ অনেক কম থাকে। আর শিনদো দ্বীপের ওই স্থান একটু উঁচু হওয়ার সুবাদে পানি সরে গিয়ে কিছুক্ষণের জন্য রাস্তা তৈরি হয়। এ বিষয়ে ইসলামের ভাষ্য হলো, জোয়ার-ভাটা হয় আল্লাহর আদেশে।ইরশাদ হয়েছে, ‘সূর্যের এ ক্ষমতা নেই যে, সে চাঁদকে নাগালের মধ্যে পাবে। আর রাতও দিনকে অতিক্রম করে আগে চলে যেতে পারবে না।’ (সুরা : ইয়াসিন, আয়াত : ৪০)

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

যে গাছ ইহুদিদের আশ্রয় দেবে অর্থাৎ ইহুদিদের বন্ধু গাছ

মো.আবু রায়হান:  কিয়ামত সংঘটিত হবার  পূর্বে হযরত ঈসা (আ.) এর সঙ্গে দাজ্জালের জেরুজালেমে যুদ্ধ হবে। সেই যুদ্ধে ইহুদিরা দাজ্জালের পক্ষাবলম্বন করবে। হযরত ঈসা (আ.) দাজ্জালকে হত্যা করবেন।এদিকে  ইহুদিরা প্রাণ ভয়ে পালাতে চেষ্টা করবে।  আশেপাশের গাছ ও পাথর/ দেয়ালে আশ্রয় নেবে। সেদিন গারকাদ নামক একটি গাছ ইহুদিদের আশ্রয় দেবে। গারকাদ ইহুদীবান্ধব গাছ।গারকাদ একটি আরবি শব্দ। এর অর্থ হল কাটাওয়ালা ঝোঁপ।গারকাদ এর ইংরেজী প্রতিশব্দ Boxthorn। Boxএর অর্থ সবুজ ঝোঁপ এবং thorn এর অর্থ কাঁটা। এ ধরনের গাছ বক্সথর্ন হিসেবেই পরিচিত। এই গাছ চেরি গাছের মতো এবং চেরি ফলের মতো লাল ফলে গাছটি শোভিত থাকে।  ইসরায়েলের সর্বত্র বিশেষত অধিকৃত গাজা ভূখন্ডে গারকাদ গাছ ব্যাপকহারে  দেখতে পাওয়া যায়।ইহুদিরা কোথাও পালাবার স্থান পাবে না। গাছের আড়ালে পালানোর চেষ্টা করলে গাছ বলবে, হে মুসলিম! আসো, আমার পিছনে একজন ইহুদী লুকিয়ে আছে। আসো এবং তাকে হত্যা কর। পাথর বা দেয়ালের পিছনে পলায়ন করলে পাথর বা দেয়াল বলবে, হে মুসলিম! আমার পিছনে একজন ইহুদী লুকিয়ে আছে, আসো! তাকে হত্যা কর। তবে গারকাদ নামক গাছ ইহুদিদেরকে ...

খন্দক যুদ্ধ কারণ ও ফলাফল

#মো. আবু রায়হান ইসলামের যুদ্ধগুলোর মধ্যে খন্দকের যুদ্ধ অন্যতম। ৫ হিজরির শাওয়াল মাসে খন্দকের যুদ্ধ সংঘটিত হয়। নবীজি (সা.) মদিনায় আসার আগে সেখানে বড় দুটি ইহুদি সম্প্রদায় বসবাস করত। বনু নাজির ও বনু কোরায়জা। ইহুদিদের প্ররোচনায় কুরাইশ ও অন্যান্য গোত্র মদিনার মুসলমানদের সঙ্গে যুদ্ধ করার প্রস্তুতি গ্রহণ করে। খন্দকের এই যুদ্ধ ছিল মদিনার ওপরে গোটা আরব সম্প্রদায়ের এক সর্বব্যাপী হামলা এবং কষ্টকর অবরোধের এক দুঃসহ অভিজ্ঞতা। এসময় ২৭দিন ধরে আরব ও ইহুদি গোত্রগুলি মদিনা অবরোধ করে রাখে। পারস্য থেকে আগত সাহাবি সালমান ফারসির পরামর্শে হযরত মুহাম্মদ (স:) মদিনার চারপাশে পরিখা খননের নির্দেশ দেন। প্রাকৃতিকভাবে মদিনাতে যে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ছিল তার সাথে এই ব্যবস্থা যুক্ত হয়ে আক্রমণ কারীদেরকে নিষ্ক্রিয় করে ফেলে। জোটবাহিনী মুসলিমদের মিত্র মদিনার ইহুদি বনু কোরায়জা গোত্রকে নিজেদের পক্ষে আনে যাতে তারা দক্ষিণ দিক থেকে শহর আক্রমণ করে। কিন্তু মুসলিমদের তৎপরতার ফলে তাদের জোট ভেঙে যায়। মুসলিমদের সুসংগঠিত অবস্থা, জোটবাহিনীর আত্মবিশ্বাস হ্রাস ও খারাপ আবহাওয়ার কারণে শেষপর্যন্ত আক্রমণ ব্যর্থ হয়।এই যুদ্ধে জয়ের ফলে ইসল...

উটের যুদ্ধ ইসলামের প্রথম ভাতৃঘাতি যুদ্ধ

#মো.আবু রায়হান উটের যুদ্ধ বা উষ্ট্রের যুদ্ধ বা জামালের যুদ্ধ ( Battle of the Camel) ৬৫৬ খ্রিষ্টাব্দের শেষের দিকে ইরাকের বসরায় সংঘটিত হয়। এটি ইসলামের ইতিহাসের প্রথম গৃহযুদ্ধ।এই যুদ্ধ ছিল ইসলামের চতুর্থ খলিফা হযরত আলী এর বিরুদ্ধে হযরত তালহা-জুবায়ের ও আয়েশা (রা)সম্মলিত যুদ্ধ। পটভূমি হযরত ওসমান (রা) এর বিভিন্ন প্রদেশে প্রাদেশিক শাসনকর্তা নিয়োগ নিয়ে একদল তার বিরুদ্ধে অভিযোগ টেনে বিদ্রোহ শুরু করে।হযরত ওসমান বিভিন্নভাবে তাদের শান্ত করার চেষ্টা করতে থাকেন। তাদের কথামত মিশরের গভর্নরকে প্রতিস্থাপন করে আবু বকরের ছেলে মুহাম্মদ ইবনে আবু বকর কে নিয়োগ করলেও বিদ্রোহীরা শান্ত হয় নি। তারা নানাভাবে অভিযোগ টেনে এনে ওসমান (রা) এর অপসারণের দাবী করতে থাকে। ওসমান সবকিছু মীমাংসার আশ্বাস দিলেও তারা ৬৫৬ সালের ১৭ জুন তারা বাড়ি অবরুদ্ধ করে এবং এক পর্যায়ে তারা তার কক্ষে প্রবেশ করে কুরআন তেলাওয়াত করা অবস্থায় হত্যা করে।ওসমান (রা.)-এর হত্যাকাণ্ডের পর আলী (রা.) খলিফা হন। কিন্তু দুঃখজনকভাবে ক্ষমতা গ্রহণ করে যখনই আলী (রা.) ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার কাজে হাত দেন তখনই ধর্মীয় ও রাজনৈতিক দূরদর্শিতার অভাবের কার...