টুরসের যুদ্ধ ও ইউরোপে ইসলামিকরণ ব্যাহত



মহানবীর ওফাতের ১০০ বছরের মধ্যে টুরসের যুদ্ধ সংঘটিত হয়। সময়টা ৭৩২ সালের ১০ই অক্টোবর। স্থানটা বর্তমান ফ্রান্সের পয়েটিয়ার্স ও টুরস শহরের মধ্যবর্তী মুসাইস লা বাটাইলি নামক গ্রাম। রচিত হয়ে গেলো ইতিহাসের গতিমুখ বদলে দেয়া এক আখ্যান। কর্ডোবার উমাইয়া গভর্নরের নেতৃত্বে আরব বাহিনীর সাথে ফ্রান্সের রাজা চার্লসের নেতৃত্বে ফ্রাঙ্কিশ ও বুরগুন্ডিয়ানদের মধ্যে সংঘর্ষ। যুদ্ধে উমাইয়া সেনাপতি আবদ আল-রহমান গাফিকী নিহত হন। ফরাসীদের কাছে ব্যাটল অব টুরস নামে পরিচিতি পেলেও আরবদের কাছে ‘মাআরাকাতে বালাতুশ শুহাদা’ বা শহীদী সৌধের যুদ্ধ হিসাবে স্বীকৃত হয়। সৈন্য সংখ্যা নিয়ে ঐতিহাসিকদের মধ্যে মতবিরোধ থাকলেও মুসলিমদের সংখ্যা বেশি ছিল বলেই দাবি করা হয়। উদাহরণ স্বরূপ পল ডেভিসের মতে, মুসলিম সৈন্য সংখ্যা ৮০ হাজার এবং ফরাসি সৈন্য ৩০ হাজার। যদিও ভিক্টর ডি হ্যানসন উভয়পক্ষে সৈন্য সংখ্যা প্রায় সমান এবং তা ৩০ হাজারের কাছাকাছি বলে যৌক্তিকতা দেখাতে চেয়েছেন।শত্রুর সামনে প্রবল প্রতাপ প্রদর্শনের কারণে চার্লস ‘মার্টেল’ বা হাতুরী উপাধি লাভ করেন।
Encyclopedia Britannica এর ভাষ্য মতে, টুরসের যুদ্ধে উমাইয়াদের নিহত সৈন্য সংখ্যা ১০ হাজারের মত, যেখানে ফ্রাঙ্কিশ বাহিনীতে মাত্র ১ হাজার। চার্লসকে মার্টেল বা হাতুরি উপাধি দেয়া হয় মুসলিম বাহিনীকে গুড়িয়ে দেবার জন্য।
টুরসের যুদ্ধকে ইউরোপীয় ইতিহাসবিদরা একটি সিদ্ধান্তমূলক বলে মনে করেন। কারও কারও মতে, যুদ্ধ ইউরোপের ভাগ্য নির্ধারণ করেছিল।
মানুষের মধ্যে টুরসের যুদ্ধের তাৎপর্য নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। কেউ কেউ মনে করেন, চার্লস পরাজিত হলে সমগ্র ইউরোপ মুসলমানদের নিয়ন্ত্রণে যেত এবং সেখানে ইসলামি সংস্কৃতির প্রচলন হত। কেউ কেউ বলেন, টুরস যুদ্ধে মুসলমানদের বিজয় পশ্চিম ইউরোপে খ্রিস্টান ধর্মের অবসান ঘটাত।
ইংরেজ ঐতিহাসিক হেনরি হ্যালাম যুক্তি দিয়েছিলেন, কোন শার্লেমেন, কোন পবিত্র রোমান সাম্রাজ্য বা পাপল রাজ্য থাকত না। হ্যাঁ, তিনি সেই একই শার্লেমেন যাকে "ইউরোপের পিতা" (পেটার ইউরোপা) বলা হয়।
এডওয়ার্ড গিবন তার The History of the Decline and Fall of the Roman Empire গ্রন্থে বলেন,
"এই যুদ্ধে চার্লস্ বিজয়ী না হলে উমাইয়া সৈন্যবাহিনী স্বচ্ছন্দে জাপান থেকে রাইন পর্যন্ত জয় করতে পারত, এমনকি ইংলিশ চ্যানেল অতিক্রম করে ইংল্যান্ড পর্যন্ত। রক অব জিব্রাল্টার থেকে লোয়ার নদীর তীর পর্যন্ত অগ্রযাত্রার এক হাজার মাইল দীর্ঘ রেখা। অনুরূপ লাইনের পুনরাবৃত্তি ঘটলে আরবরা পৌঁছে যেত পোল্যান্ডের সীমান্ত ও স্কটল্যান্ডের উচুভূমিতে। নীল ও ফোরাতের চেয়ে রাইন বেশি অগম্য ছিল না।"
কেউ কেউ এটিকে একটি সাধারণ সীমান্ত সংঘর্ষ হিসাবে দেখেন। টুরসের যুদ্ধে মুসলমানরা জিতলে কী হতো? ধারণা করা যায়? তাহলে শুনুন- বালাতুশ শুহাদা যুদ্ধে মুসলমানরা জিতলে আজ ইউরোপের ইতিহাস ভিন্নভাবে রচিত হতো। ইউরোপিয়ান ঐতিহাসিক গিবন ও লেনপুলদের মতে, সে যুদ্ধে মুসলমানরা জিতলে প্যারিস ও লন্ডনে, ক্যাথলিক গির্জার পরিবর্তে গড়ে উঠত মসজিদ। অক্সফোর্ড ও অন্যান্য শিক্ষাকেন্দ্রে বাইবেলের পরিবর্তে শোনা যেত কোরআনের বাণী!

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

যে গাছ ইহুদিদের আশ্রয় দেবে অর্থাৎ ইহুদিদের বন্ধু গাছ

রক্তপাতহীন মক্কা বিজয়ের দিন আজ

খন্দক যুদ্ধ কারণ ও ফলাফল