সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

হযরত ওমর (রা) এর চারটি কারামত


ক. পানি
যখন মিশর বিজয় সম্পন্ন হলো, তখন মিশরের বাসিন্দারা আমর ইবনুল আসের কাছে এসে বলল, আমাদের এ নীলনদে প্রতি বছর এক সুন্দরী কন্যাকে উৎসর্গ করতে হয়। অন্যথায় নদীতে পানি আসে না। ফলে আমাদের শহর ও এলাকাগুলোতে শস্য হানিজনিত আকাল দেখা দেয়। আমীরুল মু’মিনীন হযরত ওমর (রা.)-কে তিনি তখন ব্যাপারটি পত্র লিখে অবহিত করলেন। আমরের পত্র পেয়ে খলিফা ওমর রা. নীল নদকে উদ্দেশ্য করে একটি পত্র লেখেন।
“আল্লাহর বান্দা আমীরুল মুমিনীন ওমরের পক্ষ থেকে মিশরের নীল নদের প্রতি প্রেরিত এই পত্র। হে নীল নদ! তুমি যদি নিজের ক্ষমতা বলে ও নিজের পক্ষ থেকে প্রবাহিত হয়ে থাক, তাহলে তুমি আজ থেকে আর প্রবাহিত হওয়া থেতে বিরত থাক। তোমার কাছে আমাদের কোন প্রয়োজন নেই। আর তুমি যদি মহা পরাক্রমশালী এক আল্লাহর নির্দেশে প্রবাহিত হয়ে থাক, তাহলে আমরা আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করছি তিনি যেন তোমাকে প্রবাহিত করেন”।
আমর ইবনুল আস নীল নদের তীরে গিয়ে হযরত ওমরের পত্রটি নদীতে নিক্ষেপ করেন। পরদিন শনিবার। জেগে উঠে নীল নদ। সকালে মিশরবাসী অবাক নয়নে দেখেন, আল্লাহ তায়ালা এক রাতে নীল নদের পানিকে ১৬ গজ উচ্চতায় প্রবাহিত করে দিয়েছেন। চকচকে ঝকঝকে পানিতে ভরে উঠে নীল নদ। সেই থেকে আজ পর্যন্ত শুকায়নি নীল নদ। এক মিনিটের জন্যও।’
খ.বাতাস
ওমর এক অভিযানে পাঠালেন এক সেনাদলকে যার অধিপতি ছিলেন সারিয়া নামক এক ব্যক্তি। একদিন উমর খুতবা দিচ্ছিলেন, হঠাৎ তিনি খুতবার মাঝেই বলে উঠলেন: সারিয়া পাহাড়ের দিকে লক্ষ্য কর। দু’বার বললেন। লোকেরা এ ওর দিকে তাকাল, কিছুই বুঝল না। খুতবা শেষ হওয়ার পর তাঁকে এ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বললেন: আমি দেখলাম আমার সৈন্যদল একটি পাহাড়ের কাছে যুদ্ধ করছে এবং তারা সম্মুখ ও পিছন দিক থেকে আক্রান্ত হতে যাচ্ছে। তখন আমি চিৎকার করে উঠলাম যাতে তারা পাহাড়ের কাছে পৌঁছে যায়।
কিছুদিন পর সারিয়ার বার্তাবাহক খবর নিয়ে এল যে ঐ দিন জুমু‘আর সময় পর্যন্ত তারা যু্দ্ধ করে যাচ্ছিল, হঠাৎ সে সময় তারা চিৎকার শুনতে পেল: সারিয়া, পাহাড়ের দিকে লক্ষ্য কর। দু’বার শোনার পর আমরা পাহাড়ে পৌঁছে গেলাম আর আল্লাহর ইচ্ছায় বিজয় লাভ করলাম।
বস্তুত নীলনদ সে বছর থেকে শুরুতে ষোল গজ ও পরে প্রতি বছর বাড়তে বাড়তে আরও ছয় গজ উচ্চতা নিয়ে প্রবাহিত হয়ে চলল। অপর এক বর্ণনায় আছে যে, পত্রটি নিক্ষেপের পর তার চালু হওয়া প্রবাহ আর কখনও বন্ধ হয়নি।
গ. মাটি
হযরত ওমর (রাঃ) এর শাসনামলে একদিন মদিনার
রাস্তা দিয়ে হাটছিলেন। এমন সময় হঠাৎ সেখানে
ভুমিকম্প শুরু হয়। হযরত ওমর (রাঃ) তাঁর হাতে লাঠি দিয়ে মাটিতে মৃদ আঘাত দিয়ে বললেন “হে মাদিনার মাটি!স্থির হও, শান্ত হও। তুমি কি জানো না তোমার মধ্যে একজন নবী শুয়ে আছেন, একজন সিদ্দীক শুয়ে আছেন!” হযরত ওমরের এ কথা বলার সাথে সাথে
সেখানে ভূমিকম্প বন্ধ হয়ে যায়। ওলামায়ে
কেরাম বলেন, কিয়ামত পর্যন্ত মদিনার মাটিতে আর
কোনো ভূমিকম্প হবে না।
ঘ.আগুন
ওমরের শাসনামলে একটি পাহাড়ের গুহা থেকে দাবানল পরিলক্ষিত হয় এবং আশেপাশের সবকিছু পুড়িয়ে দেয়। লোকেরা খলিফার কাছে তাদের আবেদন নিয়ে গেল এবং খলিফা তামিম আদ-দারীকে তাঁর শাল দিলেন। তিনি তাকে সেই শালটি আগুনে নিয়ে যেতে বললেন। পৌঁছানোর পর তামিম আদ-দারি দেখলেন যে তিনি কাছে যাওয়ার সাথে সাথে আগুন নিজেই নিভে যেতে শুরু করে এবং যখন তিনি গুহায় প্রবেশ করেন তখন আগুন পুরোপুরি নিভে যায়। এরপর আর কখনো আগুন দেখা যায় নি।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

সুফফা ইসলামের প্রথম আবাসিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান

মো.আবু রায়হান:  সুফফা মসজিদে নববির একটি স্থান। যেখানে একদল নিঃস্ব মুহাজির যারা মদিনায় হিজরত করেন এবং বাসস্থানের অভাবে মসজিদে নববির সেই স্থানে থাকতেন।এটি প্রথমদিকে মসজিদ উত্তর-পূর্ব কোণায় ছিল এবং রাসুলের আদেশে এটাকে পাতার ছাউনি দিয়ে ছেয়ে দেয়া হয় তখন থেকে এটি পরিচিতি পায় আল-সুফফা বা আল-জুল্লাহ নামে। ( A Suffah is a room that is covered with palm branches from date trees, which was established next to Al-Masjid al-Nabawi by Islamic prophet Muhammad during the Medina period.)। মোটকথা রাসুল (সা) মসজিদে-নববির চত্ত্বরের এক পাশে আস সুফফা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। সুফফা হলো ছাদবিশিষ্ট প্রশস্ত স্থান। সুফফার আকৃতি ছিল অনেকটা মঞ্চের মতো, মূল ভূমির উচ্চতা ছিল প্রায় অর্ধমিটার। প্রাথমিক পর্যায়ে এর দৈর্ঘ্য ছিল ১২ মিটার এবং প্রস্থ ছিল ৮ মিটার। মসজিদে নববির উত্তর-পূর্বাংশে নির্মিত সুফফার দক্ষিণ দিকে ছিল রাসুলুল্লাহ (সা.) ও তাঁর স্ত্রীদের অবস্থানের হুজরা এবং সংলগ্ন পশ্চিম পাশে ছিল মেহরাব।আসহাবে সুফফা অৰ্থ চত্বরবাসী। ঐ সকল মহৎ প্ৰাণ সাহাবি আসহাবে সুফফা নামে পরিচিত, যারা জ্ঞানার্জনের জন্য ভোগবিলাস ত্যা...

খন্দক যুদ্ধ কারণ ও ফলাফল

#মো. আবু রায়হান ইসলামের যুদ্ধগুলোর মধ্যে খন্দকের যুদ্ধ অন্যতম। ৫ হিজরির শাওয়াল মাসে খন্দকের যুদ্ধ সংঘটিত হয়। নবীজি (সা.) মদিনায় আসার আগে সেখানে বড় দুটি ইহুদি সম্প্রদায় বসবাস করত। বনু নাজির ও বনু কোরায়জা। ইহুদিদের প্ররোচনায় কুরাইশ ও অন্যান্য গোত্র মদিনার মুসলমানদের সঙ্গে যুদ্ধ করার প্রস্তুতি গ্রহণ করে। খন্দকের এই যুদ্ধ ছিল মদিনার ওপরে গোটা আরব সম্প্রদায়ের এক সর্বব্যাপী হামলা এবং কষ্টকর অবরোধের এক দুঃসহ অভিজ্ঞতা। এসময় ২৭দিন ধরে আরব ও ইহুদি গোত্রগুলি মদিনা অবরোধ করে রাখে। পারস্য থেকে আগত সাহাবি সালমান ফারসির পরামর্শে হযরত মুহাম্মদ (স:) মদিনার চারপাশে পরিখা খননের নির্দেশ দেন। প্রাকৃতিকভাবে মদিনাতে যে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ছিল তার সাথে এই ব্যবস্থা যুক্ত হয়ে আক্রমণ কারীদেরকে নিষ্ক্রিয় করে ফেলে। জোটবাহিনী মুসলিমদের মিত্র মদিনার ইহুদি বনু কোরায়জা গোত্রকে নিজেদের পক্ষে আনে যাতে তারা দক্ষিণ দিক থেকে শহর আক্রমণ করে। কিন্তু মুসলিমদের তৎপরতার ফলে তাদের জোট ভেঙে যায়। মুসলিমদের সুসংগঠিত অবস্থা, জোটবাহিনীর আত্মবিশ্বাস হ্রাস ও খারাপ আবহাওয়ার কারণে শেষপর্যন্ত আক্রমণ ব্যর্থ হয়।এই যুদ্ধে জয়ের ফলে ইসল...

কাবা ঘর নির্মাণের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস

মো. আবু রায়হানঃ কাবা মুসলমানদের কিবলা, অর্থাৎ যে দিকে মুখ করে নামাজ পড়ে বা সালাত আদায় করে, পৃথিবীর যে স্থান থেকে কাবা যে দিকে মুসলমানগণ ঠিক সে দিকে মুখ করে নামাজ আদায় করেন। হজ্জ এবং উমরা পালনের সময় মুসলমানগণ কাবাকে ঘিরে তাওয়াফ বা প্রদক্ষিণ করেন।কাবা শব্দটি এসেছে আরবি শব্দ মুকাআব অর্থ ঘন থেকে।কাবা একটি বড় ঘন আকৃতির ইমারত। (The Kaaba, meaning cube in Arabic, is a square building elegantly draped in a silk and cotton veil.)।যা সৌদি আরবের মক্কা শহরের মসজিদুল হারাম মসজিদের মধ্যখানে অবস্থিত। প্রকৃতপক্ষে মসজিদটি কাবাকে ঘিরেই তৈরি করা হয়েছে।কাবার ভৌগোলিক অবস্থান ২১.৪২২৪৯৩৫° উত্তর ৩৯.৮২৬২০১৩° পূর্ব।পৃথিবীর সর্বপ্রথম ঘর বায়তুল্লাহ বা পবিত্র কাবা ঘর ।আল্লাহ বলেন, নিশ্চয় সর্বপ্রথম ঘর যা মানুষের জন্য নির্মিত হয়েছে তা মক্কা নগরীতে। (সুরা আল ইমরান - ৯৬)। “প্রথম মাসজিদ বায়তুল্লাহিল হারাম তারপর বাইতুল মাকদিস, আর এ দুয়ের মধ্যে সময়ের ব্যবধান হলো চল্লিশ বছরের”।(মুসলিম- ৫২০)। ভৌগোলিকভাবেই গোলাকার পৃথিবীর মধ্যস্থলে কাবার অবস্থান। ইসলামের রাজধানী হিসেবে কাবা একটি সুপরিচিত নাম। পৃথিবীতে মাটির সৃষ্টি ...