রাজতন্ত্রে কম্পন

 

রানি এলিজাবেথ ছিলেন ১৪ টি দেশের রাষ্ট্রপ্রধান। যুক্তরাজ্য থেকে স্বাধীনতা পাওয়ার পর বেশিরভাগ দেশ গণপ্রজাতন্ত্রী দেশে পরিণত হয়েছে। কিন্তু এর পরও ১৪টি কমনওয়েলথ দেশের রাষ্ট্রপ্রধান হিসাবে রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথই ছিলেন।দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে অনেক দেশই ঔপনিবেশিক শাসন ও রাজতন্ত্রের সাথে সম্পর্ক পুরোপুরি ছিন্ন করে প্রজাতন্ত্রে পরিণত হয় এবং রাষ্ট্রপ্রধান বা প্রেসিডেন্ট হিসেবে একজন নির্বাচিত ব্যক্তিকে গ্রহণ করে। উপমহাদেশে ভারত ১৯৪৭ সালে স্বাধীন হলেও প্রজাতন্ত্রে পরিণত হয় ১৯৫০ সালে, পাকিস্তান হয় ১৯৫৬ সালে। ক্যারিবিয়ান অঞ্চলে ১৯৭০-এর দশকে গায়ানা, ত্রিনিদাদ অ্যান্ড টোবাগো এবং ডমিনিকা তাদের রাষ্ট্রপ্রধানের পদ থেকে ব্রিটেনের রানিকে সরিয়ে দেয়। এছাড়া ফিজি প্রজাতন্ত্রে পরিণত হয় ১৯৮৭ সালে, আর মরিশাস ১৯৯২ সালে।তবে ব্রিটিশ শাসনের অধীনে ছিল এমন অনেক দেশই প্রজাতন্ত্রে পরিণত হবার পরও কমনওয়েলথ জোট গঠনের মাধ্যমে ব্রিটেনের সাথে সম্পর্ক রেখেছে।
গত বছরের নভেম্বর মাস রানিকে রাষ্ট্রপ্রধানের পদ থেকে সরিয়ে পুরোপুরি প্রজাতন্ত্রে পরিণত হয় বার্বাডোস। আরও অনেক দেশেই এরকম দাবি উঠেছে।
ক্যারিবিয়ান দেশগুলোর মধ্যে আটটি দেশের রাষ্ট্রপ্রধান হিসাবে ছিলেন রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ। তার মধ্যে অন্তত ছয়টি দেশ জানিয়েছিল, তারা প্রজাতন্ত্রে পরিণত হতে চায় এবং রানিকে রাষ্ট্রপ্রধানের পদ থেকে সরিয়ে দিতে চায়।এবছর রানির সিংহাসনে আরোহণের ৭০ বছর পূর্তি উপলক্ষে যখন রাজপরিবারের সদস্যরা ক্যারিবিয়ান অঞ্চলে সফর করেন, তখন এ ধরনের দাবি বেশ জোরালো হয়ে ওঠে।
এদিকে রানি এলিজাবেথের প্রয়াণে নানাভাবে শোক পালন করা হচ্ছে সাবেক ব্রিটিশ উপনিবেশ জ্যামাইকায়।রানি ২০০২ সালে তার সুবর্ণ জয়ন্তীর আগ পর্যন্ত ক্যারিবিয় এই দ্বীপরাষ্ট্রে প্রতি দশ বছরে অন্তত একবার সফর করেছেন। নতুন রাজা হিসাবে তৃতীয় চার্লস এখন জ্যামাইকার রাষ্ট্রপ্রধান।কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোতে জ্যামাইকাতে ব্রিটিশ রাজতন্ত্রের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করে প্রজাতন্ত্র হওয়ার জন্য গণভোটের দাবি জোরালো হচ্ছে।রানির মৃত্যুর পর জ্যামাইকার প্রধানমন্ত্রী বলেছেন তার দেশের জন্য নতুন এক অধ্যায় শুরু হচ্ছে।সম্প্রতিক জরিপগুলোয় দেখা গেছে জ্যামাইকার ৫০ শতাংশ মানুষ এখন প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠার পক্ষে এবং রানি এলিজাবেথের মৃত্যু হয়তো এ প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করতে পারে।
যুক্তরাজ্যে সবশেষ জনমত জরিপে দেখা যায়, ৬১ শতাংশ লোকই এখনো রাজতন্ত্র বহাল রাখার সমর্থক, অন্যদিকে ২৪ শতাংশ চান একজন নির্বাচিত রাষ্ট্রপ্রধান।
তবে ব্রিটেনের ১৮ থেকে ২৪ বছর বয়স্কদের মধ্যে এ ব্যাপারে মত পরিবর্তন হচ্ছে বলে দেখা গেছে গত কয়েক বছরে। এই বয়সের নাগরিকদের ওপর চালানো এক জরিপে ২০১৯ সালে দেখা যায়, ৪৬ শতাংশ ব্রিটেনে একজন রাজা বা রানি থাকার পক্ষে, অন্যদিকে ৩১ শতাংশ চান নির্বাচিত রাষ্ট্রপ্রধান।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

যে গাছ ইহুদিদের আশ্রয় দেবে অর্থাৎ ইহুদিদের বন্ধু গাছ

রক্তপাতহীন মক্কা বিজয়ের দিন আজ

খন্দক যুদ্ধ কারণ ও ফলাফল