হিজাবের দেশে হিজাব অবমাননা
হিজাব বা পর্দা নারীর সৌন্দর্য ও মর্যাদার প্রতীক। নারীর সতীত্ব ও ইজ্জত-আবরুর রক্ষাকবচ। নারী-পুরুষ উভয়ের চারিত্রিক পবিত্রতা রক্ষার অতি সহজ ও কার্যকর উপায়। ইসলাম পর্দা পালনের যে বিধান আরোপ করেছে তা মূলত অশ্লীলতা ও ব্যভিচার নিরসনের লক্ষ্যে এবং সামাজিক অনিষ্টতা ও ফেতনা-ফাসাদ থেকে বাঁচার নিমিত্তেই করেছে।
ইরানের শাসক রেজা শাহ প্রাচীন ইরানি ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি এবং পাশ্চাত্য সংস্কৃতি চালু করেন। পুরুষদের জন্য ইউরোপীয় পোশাক পরিধান করা বাধ্যতামূলক করেন। ১৯২৮ সালে প্রাশ্চাত্য ড্রেস চালু করেন। মহিলাদের হিজাব নিষিদ্ধ করা হয় এবং পাশ্চাত্য পোশাক পরতে নির্দেশ দেয়া হয়। তার স্ত্রী ও মেয়ে বিনা হিজাবে ইউরোপীয় পোশাকে জনসমক্ষে হাজির হতেন। টুপি-পাগড়ির পরিবর্তে পাহলভী শিরোভূষণ বাধ্যতামূলক করা হয়। পারস্য ভাষাকে আরবি প্রভাব মুক্ত করা হয়। রেজা শাই ধর্মীয় পোশাক পরিধানের জন্য সরকারের অনুমতি নেওয়ার বিধান চালু করেন।
১৯৩৫ সালে রেজা শাহ পাহলভি মাশহাদের গোহারশাদ আকা মসজিদে নারীদের হিজাব সরাতে বাধ্য করেন। তার এই ধরনের জঘন্য কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে গিয়ে ওই বছরের ১২ জুলাই কিছু মানুষ শহিদ হয়। সে থেকে ১২ জুলাই হিজাব ও মর্যাদা সপ্তাহ পালন করে ইরানিরা। এদিকে, আন্তর্জাতিকভাবে হিজাব দিবস পালন করা হয় প্রতি বছরের পহেলা ফেব্রুয়ারি।
পশ্চিম ঘেঁষা শাহ মোহাম্মদ রেজা পাহলাভিকে সিংহাসনচ্যুত করার আগে তেহরানের সড়কে নারীদের মিনিস্কার্ট ও চুল খোলা অবস্থায় বিচরণ ছিল। ইরানের ওই শেষ শাসকের স্ত্রী ফারাহ ছিলেন তখনকার দিনে ‘আধুনিক নারীর উদাহরণ’, তাকে প্রায়ই পশ্চিমা পোশাকে দেখা যেত।
প্রায় ৪৩ বছর আগে আয়াতুল্লাহ খোমেনি ফ্রান্সে তার নির্বাসিত জীবন থেকে দেশে ফিরে ইরানে বিপ্লবের সূচনা করেছিলেন। সেই বিপ্লবে শাহের রাজত্বের পতন ঘটে, ইসলামি শাসন প্রতিষ্ঠিত হয় ইরানে। ১৯৭৯ সালের ওই ইসলামি বিপ্লবের পরপরই দেশটিতে হিজাব এবং পোশাকে-আচারে ধর্মীয় নিয়ম চালু করা হয়।
নারীর অধিকারকে সুরক্ষার নামে শাহের আমলে যেসব আইন হয়েছিল, ইরান ইসলামী প্রজাতন্ত্র হওয়ার পর সেগুলো বাতিল করা হয়।১৯৭৯ সালের ৭ মার্চ আয়াতুল্লাহ খোমেনি ঘোষণা করেন, সব নারীর জন্য কর্মক্ষেত্রে হিজাব বাধ্যতামূলক। Following the 1979 Islamic Revolution, authorities in Iran imposed a mandatory dress code requiring all women to wear a headscarf and loose-fitting clothing that disguises their figures in public.
ইরানে ইসলামের আদর্শ ও আইন ঠিকঠাক মেনে চলা হচ্ছে কি না, সেই নজরদারি করছে বিশেষ পুলিশ বাহিনী গাশত-ই-এরশাদ। কারও পোশাক ধর্মীয় নির্দেশনার সঙ্গে ‘অসঙ্গতিপূর্ণ’ হলে তাকে আটক করে এই নীতি পুলিশ।
ইরানের ‘নীতি পুলিশের’ হেফাজতে ২২ বছরের তরুণী মাশা আমিনির মৃত্যু দেশটির হিজাব আইন এবং এর বাস্তবায়নকারীদের বিরুদ্ধে আন্দোলনকে উসকে দিচ্ছে । মাশা আমিনির বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, হিজাব পরে থাকলেও তার কিছু চুল ঠিকই দেখা যাচ্ছিল। গত ১৩ সেপ্টেম্বর এই কারণ দেখিয়েই আটক করা হয় তাকে। কারাগারে নেওয়ার পর তিনি কোমায় চলে যান। তিন দিন পর হাসপাতালে তাকে মৃত ঘোষণা করা হয়। তার মৃত প্রতিবাদে সন্ধ্যা নামার পরই তেহরানের বিভিন্ন এলাকায় জমায়েত হয় বিক্ষোভকারীরা। সরকার বিরোধী স্লোগান দেয়ার পাশাপাশি কুশপুতুল এবং হিজাব পুড়িয়েও প্রতিবাদ করতে দেখা গেছে বিক্ষোভকারীদের। পুলিশকে লক্ষ্য করে পাথর ছোড়ার পাশাপাশি পোড়ানো হয়েছে পুলিশের গাড়িও।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন