জাপানে মুসলিম

 


এশিয়ার একটি দ্বীপরাষ্ট্র জাপান। প্রশান্ত মহাসাগরের বুকে জাপান সাগর, পূর্ব চীন সাগর, চীন, উত্তর কোরিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া ও রাশিয়ার পূর্ব দিকে উত্তরে ও খোত্স্ক সাগর থেকে দক্ষিণ-পূর্ব চীন সাগর ও তাইওয়ান পর্যন্ত প্রসারিত। যে কাঞ্জি অনুসারে জাপানের নামটি এসেছে, সেটির অর্থ ‘সূর্য উৎস। জাপানকে প্রায়ই ‘উদীয়মান সূর্যের দেশ’ বলে অভিহিত করা হয়।জাপানের বৃহত্তম চারটি দ্বীপ হল হোনশু, হোক্কাইদো, ক্যুশু ও শিকোকু। এই চারটি দ্বীপ জাপানের মোট ভূখণ্ডের ৯৭% এলাকা নিয়ে গঠিত। জাপানের জনসংখ্যা ১২৬ মিলিয়ন। জনসংখ্যার হিসেবে এটি বিশ্বের ১০ম বৃহত্তম রাষ্ট্র। জাপানের রাজধানী টোকিও শহরের জনসংখ্যা প্রায় ৯.১ মিলিয়ন।

জাপানের প্রধান দুইটি ধর্ম হলো শিন্তো ধর্ম ও বৌদ্ধ ধর্ম।অষ্টম শতকে চীনা মুসলিমদের সংস্পর্শে জাপানিরা সর্বপ্রথম ইসলামে দীক্ষিত হন। মেইজি শাসনামলে (১৮৬৮-১৮৯০) জাপানিরা অটোম্যান সাম্রাজ্যের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক স্থাপন করেন। এরপর থেকে মুসলিমরা জাপানে যাতায়াত করেন এবং জাপানিরা ইসলামের সান্নিধ্যে আসতে শুরু করেন।রুশ বিপ্লবের পর রাশিয়া থেকে কয়েকশ তুর্কি মুসলিম অভিবাসী ১৯২০-র দশকে জাপানে পাড়ি জমায়। ১৯৩০ সালে জাপানে বিভিন্ন দেশের এক হাজার মুসলিম ছিল।
পরবর্তীতে ১৯৮০-র দশকে ইরান, পাকিস্তান ও বাংলাদেশ থেকে অভিবাসী কর্মীরা জাপানে পাড়ি দিলে সেখানে মুসলিম জনগোষ্ঠীর সংখ্যা বৃদ্ধি পায়।
জাপানে প্রতিষ্ঠিত প্রথম মসজিদ হলো প্রসিদ্ধ ‘কোবে মসজিদ’। ‘মুসলিম সেন্টার’ নামেও এ মসজিদের ব্যাপক পরিচিতি রয়েছে।এ মসজিদটি জাপানের ষষ্ঠ বৃহত্তম নগরী ‘কোবে’তে অবস্থিত। কোবে নগরীটি হানশো দ্বীপের দক্ষিণদিকে এবং অকাসা শহর থেকে ৩০ কিলোমিটার উত্তর দিকে অর্থনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ ও ঐতিহ্যবাহী এ নগরীর অবস্থান। আশ্চর্যের বিষয় হলো১৯৪৫ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে আমেরিকান সৈন্যবাহিনী পুরো কোবে নগরীকে বোমা মেরে ধ্বংস করে দেয়। এতে কোবে নগরীর সব দালান ও স্থাপত্যগুলো ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হলো ঐ সময় কোবে নগরীর এ মসজিদটি সমহিমায় কোবে নগরীর ঐতিহ্যকে ধারণ করে মাথা উচু করে দাঁড়িয়ে ছিল। সে সময়ের আক্রমণে মসজিদটির কয়েকটি কাচের জানালা এবং কিছু আস্তর খসে পড়েছিল।
১৯৩৮ সালে অটোম্যান স্থাপত্যরীতিতে নির্মিত ‘টোকিও জামি’ জাপানের অন্যতম প্রাচীন মসজিদ।
জাপানে ১১০টির বেশি মসজিদ রয়েছে। ২০০১ সালে দেশটিতে মাত্র ২৪টি মসজিদ ছিল। সে সময় কিউশুতে কোনো মসজিদ ছিল না ।
জাপানে ক্রমে বাড়ছে ইসলাম ধর্মাবলম্বীর সংখ্যা। গত এক দশকে দেশটির মুসলিম জনসংখ্যা বেড়েছে দ্বিগুণের চেয়ে বেশি। সাম্প্রতিক সময়ে দেশটিতে মসজিদের সংখ্যাও বেড়ে গেছে কয়েকগুণ। পূর্ব এশীয় দেশগুলোর মধ্যে জাপানে সবচেয়ে দ্রুত গতিতে বিস্তার লাভ করছে ইসলাম। এক দশক আগে দেশটির মুসলিম জনসংখ্যা ছিল ১ লাখ ১০ হাজার, যা বর্তমানে ২ লাখ ৩০ হাজারে দাঁড়িয়েছে।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

যে গাছ ইহুদিদের আশ্রয় দেবে অর্থাৎ ইহুদিদের বন্ধু গাছ

রক্তপাতহীন মক্কা বিজয়ের দিন আজ

খন্দক যুদ্ধ কারণ ও ফলাফল