খালিস্তান ও ক্রিকেটার আর্শদীপ সিং



পাঞ্জাব অঞ্চল শিখদের ঐতিহ্যগত মাতৃভূমি। ইংরেজ দ্বারা অধিকৃত হবার আগে পাঞ্জাব শিখদের দ্বারা ৮২ বছর শাসিত হয়; ১৭৬৭ থেকে ১৭৯৯ সাল পর্যন্ত সমগ্র পাঞ্জাব শিখ মিসল (সার্বভৌম শিখ রাষ্ট্র) সমূহের অধীন ছিল, তারপর মহারাজা রণজিৎ সিং শিখ মৈত্রী সঙ্ঘকে শিখ সাম্রাজ্যের মাঝে একীভূত করেন। তবে সেখানে শিখদের পাশাপাশি অনেক হিন্দু ও মুসলিমও বসবাস করত, এবং ১৯৪৭ সালের আগে শিখরা ব্রিটিশ অখণ্ড পাঞ্জাব রাজ্যের শুধুমাত্র লুধিয়ানা জেলায় সংখ্যাগরিষ্ঠ ছিল। ১৯৪০ সালে লাহোর প্রস্তাবের মাধ্যমে মুসলিম লীগ যখন মুসলিমদের জন্য একটি পৃথক রাষ্ট্রের দাবী জানায়, তখন কিছু শিখ নেতা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন যে হিন্দু ও মুসলিমের ভিত্তিতে ভারত বিভাজিত করলে শিখ সম্প্রদায়ের কোন স্বাধীন মাতৃভূমি থাকবে না। তারা তখন বৃহত্তর পাঞ্জাব অঞ্চলে বিস্তৃত খালিস্তান নামক একটি ধর্মরাষ্ট্র সৃষ্টির ধারণা পেশ করেন।পাঞ্জাব, হরিয়ানা, হিমাচল, জম্মু-কাশ্মির ও রাজস্থানের অংশ বিশেষ নিয়ে প্রস্তাবিত এই স্বাধীন রাষ্ট্রের রাজধানী হিসেবে শিখদের পছন্দ চন্দ্রিগড় শহর।
খালিস্তান হলো পাঞ্জাবি শব্দ যার অর্থ হলো বিশুদ্ধ ভূমি। পাঞ্জাবের শিখরা পাঞ্জাব অঞ্চলে জাতীয়তাবাদের ভিত্তিতে একটি স্বতন্ত্র ও সার্বভৌম রাষ্ট্র গঠনের জন্য যে আন্দোলন শুরু করে তাই মূলত খালিস্তান আন্দোলন নামে পরিচিত। প্রথমে শুধুমাত্র ভারতের পঞ্জাব প্রদেশ এবং পাক পাঞ্জাব নিয়েই পৃথক খালিস্তান রাষ্ট্র গঠনের কথা বলা হলেও, ১৯৭০-৮০'র দশকে তার মধ্যে হিমাচল প্রদেশ, হরিয়ানা এবং রাজস্থানেরও কিছু অংশ দাবি করা হয়। তবে ঐতিহাসিকদের মতে, স্বাধীনতার আগে কোনওদিনই পাঞ্জাবে শিখ ধর্মাবলম্বীরা সংখ্যালঘু ছিল না। তবে দেশভাগের পর, শিখ নেতারা বুঝেছিলেন পাকিস্তানে থাকবে মুসলিমদের আধিপত্য, ভারতে হিন্দুদের। আর তা বুঝেই, সেই সময় থেকেই পাঞ্জাবে ভিড় জমাতে শুরু করেছিলেন শিখ সম্প্রদায়ের মানুষরা।ঐতিহাসিকদের মতে, খালিস্তানি আন্দোলনের ডাক এসেছিল দুই জায়গায় - একটি ভারতে, আরেকটি ভারতের বাইরে। পরবর্তীকালে দুটি মিলেমিশেই খালিস্তানি আন্দোলন গড়ে উঠেছিল।১৯৮৪ সালের ৩১ অক্টোবর সকালে, অপারেশন ব্লু স্টারের প্রতিশোধ হিসেবে ইন্দিরা গান্ধীকে হত্যা করেছিল তাঁর দুই ব্যক্তিগত নিরাপত্তারক্ষী ।
ভারত-পাকিস্তান হাইভোল্টেজ ম্যাচে সহজ ক্যাচ মিস করে তুমুল সমালোচনার শিকার হচ্ছেন ভারতীয় দলের পেসার আর্শদীপ সিং। রোববার ম্যাচের পরেই উইকিপিডিয়াতে লিখে দেওয়া হয়, খালিস্তানিদের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন পাঞ্জাবের এই খেলোয়াড়। তবে পরের দিনই সেই তথ্য মুছে ফেলা হয় উইকিপিডিয়া থেকে। গোটা ঘটনার পরে কেন্দ্রীয় আইটি মন্ত্রণালয় থেকে উইকিপিডিয়ার কর্মকর্তাদের তলব করা হয়েছে। জানা গেছে, এত কম সময়ের জন্য উইকিপিডিয়াতে তথ্য দেওয়া যায় কী করে, সেই নিয়ে বিশদে জিজ্ঞাসাবাদ করা হতে পারে। ঘটনার সূত্রপাত রোববারের ভারত-পাকিস্তান ম্যাচের পর। ওই ম্যাচে খুব সহজ একটি ক্যাচ ছাড়েন বোলার আর্শদীপ সিং। সেই সময়ে মাঠে থাকা ভারতীয় দলের সদস্যরাও বেশ রেগে গিয়েছিলেন আর্শদীপের ওপর। কিন্তু ম্যাচের পরে সাংবাদিক সম্মেলনে এসে বিরাট কোহলি সাফ জানিয়ে দেন, এ ঘটনা ভুলে এগিয়ে যাবে আর্শদীপ। দলের সকলেই ওকে সাহায্য করবে। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে একজন শিখ ব্যক্তি ক্যাচ ফেলেছেন বলেই তার নাম উগ্রপন্থীদের সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হচ্ছে। সব মিলিয়ে পাকিস্তান ম্যাচের পর একের পর এক আঘাত নেমে আসছে ভারতের তরুণ পেসারের ওপরে।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

যে গাছ ইহুদিদের আশ্রয় দেবে অর্থাৎ ইহুদিদের বন্ধু গাছ

রক্তপাতহীন মক্কা বিজয়ের দিন আজ

খন্দক যুদ্ধ কারণ ও ফলাফল