সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

পৃথিবীর সবচেয়ে বড় কারাগার গাজা




গাজা ভূমধ্যসাগরের তীরে অবস্থিত একটি স্বশাসিত ফিলিস্তিনি অঞ্চল। গাজা ভূখণ্ডের পশ্চিমে রয়েছে ভূমধ্যসাগর, দক্ষিণ-পশ্চিমে রয়েছে মিশর, এবং উত্তরে, পূর্বে, ও দক্ষিণ-পূর্বে রয়েছে ইসরায়েল। গাজার আয়তন ৩৬৫ বর্গ কি.মি। ৫১ কি.মি. দীর্ঘ গাজা–ইসরায়েলি সীমান্ত এবং ১১ কি.মি. দীর্ঘ গাজা–মিসরীয় সীমান্ত উভয়ই বন্ধ রয়েছে, এবং গাজার আকাশসীমা ও সমুদ্রসীমা উভয়ই ইসরায়েলি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। ইসরায়েল যেকোনো মুহূর্তে গাজায় সৈন্য প্রেরণ করতে পারে; গাজার অভ্যন্তরে ইসরায়েলের একটি বৃহৎ 'বাফার জোন' রয়েছে, যেখানে ফিলিস্তিনিদের প্রবেশ নিষিদ্ধ; এবং গাজার পানি, বিদ্যুৎ, টেলিযোগাযোগ ও অন্যান্য সেবা ইসরায়েলের নিয়ন্ত্রণাধীন।

১৯৪৮–৪৯ সালের আরব–ইসরায়েলি যুদ্ধের সময় ভূখণ্ডটি মিসরের হস্তগত হয়, এবং ১৯৬৭ সালের আরব–ইসরায়েল যুদ্ধের সময় ইসরায়েল ভূখণ্ডটি মিসরের কাছ থেকে দখল করে নেয়। ১৯৯৪ সালে ইসরায়েল ও 'ফিলিস্তিনি মুক্তি সংস্থা'র (Palestine Liberation Organization, 'PLO') মধ্যে স্বাক্ষরিত 'অসলো চুক্তি' অনুযায়ী ইসরায়েল গাজা ভূখণ্ডকে 'ফিলিস্তিনি জাতীয় কর্তৃপক্ষে'র (Palestinian National Authority, 'PNA') হস্তান্তর করতে সম্মত হয়, এবং নানা সঙ্কটের পর ২০০৫ সালে ইসরায়েল এককভাবে গাজা ভূখণ্ড থেকে পশ্চাৎপসরণ করে।
২০০৬ সালের ফিলিস্তিনি আইনসভা নির্বাচনে 'হামাস' সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে এবং ক্ষমতাসীন 'ফাতাহ'–এর সঙ্গে একটি 'জাতীয় ঐক্য' সরকার গঠন করে, কিন্তু তাদের মধ্যে তীব্র দ্বন্দ্ব দেখা দেয়, এবং একটি সংক্ষিপ্ত যুদ্ধের পর ২০০৭ সালে হামাস গাজা ভূখণ্ড থেকে ফাতাহকে বিতাড়িত করে। তখন থেকে আইনত গাজা ভূখণ্ড ফাতাহ–নিয়ন্ত্রিত 'ফিলিস্তিনি জাতীয় কর্তৃপক্ষে'র অধীনস্থ, কিন্তু কার্যত হামাস গাজা নিয়ন্ত্রণ করছে, এবং ফাতাহ–এর নিয়ন্ত্রণ পশ্চিম তীরের অংশবিশেষে সীমাবদ্ধ।
হামাসের সদস্যরা গাজার নিয়ন্ত্রণ নেওয়ায় ২০০৭ সালের জুনে ইসরায়েল গাজা অবরোধ করে।মিশরের সহায়তায় ইসরায়েল গাজাকে এক উন্মুক্ত কারাগার তৈরি করে রেখেছে।ইসরায়েল ও মিশর গাজা উপত্যকা থেকে মানুষজনের যাতায়াত ও প্রয়োজনীয় পণ্যের আনা নেওয়া কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। গাজার প্রায় ২১ লাখ জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক শিশু।গাজায় পাঁচ শিশুর মধ্যে চারজন মানসিক যন্ত্রণায় ভুগছে।
সেভ দ্য চিলড্রেন বলছে, গাজার ৮ লাখের বেশি শিশু–কিশোর বাধাহীন জীবন কী, সেটাই জানে না।
২০১৮ সালের পর থেকে গাজা উপত্যকায় শিশুদের মধ্যে বিষণ্নতা, দুঃখ ও ভয় ৫৫ শতাংশ থেকে বেড়ে ৮০ শতাংশে পৌঁছেছে।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

যে গাছ ইহুদিদের আশ্রয় দেবে অর্থাৎ ইহুদিদের বন্ধু গাছ

মো.আবু রায়হান:  কিয়ামত সংঘটিত হবার  পূর্বে হযরত ঈসা (আ.) এর সঙ্গে দাজ্জালের জেরুজালেমে যুদ্ধ হবে। সেই যুদ্ধে ইহুদিরা দাজ্জালের পক্ষাবলম্বন করবে। হযরত ঈসা (আ.) দাজ্জালকে হত্যা করবেন।এদিকে  ইহুদিরা প্রাণ ভয়ে পালাতে চেষ্টা করবে।  আশেপাশের গাছ ও পাথর/ দেয়ালে আশ্রয় নেবে। সেদিন গারকাদ নামক একটি গাছ ইহুদিদের আশ্রয় দেবে। গারকাদ ইহুদীবান্ধব গাছ।গারকাদ একটি আরবি শব্দ। এর অর্থ হল কাটাওয়ালা ঝোঁপ।গারকাদ এর ইংরেজী প্রতিশব্দ Boxthorn। Boxএর অর্থ সবুজ ঝোঁপ এবং thorn এর অর্থ কাঁটা। এ ধরনের গাছ বক্সথর্ন হিসেবেই পরিচিত। এই গাছ চেরি গাছের মতো এবং চেরি ফলের মতো লাল ফলে গাছটি শোভিত থাকে।  ইসরায়েলের সর্বত্র বিশেষত অধিকৃত গাজা ভূখন্ডে গারকাদ গাছ ব্যাপকহারে  দেখতে পাওয়া যায়।ইহুদিরা কোথাও পালাবার স্থান পাবে না। গাছের আড়ালে পালানোর চেষ্টা করলে গাছ বলবে, হে মুসলিম! আসো, আমার পিছনে একজন ইহুদী লুকিয়ে আছে। আসো এবং তাকে হত্যা কর। পাথর বা দেয়ালের পিছনে পলায়ন করলে পাথর বা দেয়াল বলবে, হে মুসলিম! আমার পিছনে একজন ইহুদী লুকিয়ে আছে, আসো! তাকে হত্যা কর। তবে গারকাদ নামক গাছ ইহুদিদেরকে ...

খন্দক যুদ্ধ কারণ ও ফলাফল

#মো. আবু রায়হান ইসলামের যুদ্ধগুলোর মধ্যে খন্দকের যুদ্ধ অন্যতম। ৫ হিজরির শাওয়াল মাসে খন্দকের যুদ্ধ সংঘটিত হয়। নবীজি (সা.) মদিনায় আসার আগে সেখানে বড় দুটি ইহুদি সম্প্রদায় বসবাস করত। বনু নাজির ও বনু কোরায়জা। ইহুদিদের প্ররোচনায় কুরাইশ ও অন্যান্য গোত্র মদিনার মুসলমানদের সঙ্গে যুদ্ধ করার প্রস্তুতি গ্রহণ করে। খন্দকের এই যুদ্ধ ছিল মদিনার ওপরে গোটা আরব সম্প্রদায়ের এক সর্বব্যাপী হামলা এবং কষ্টকর অবরোধের এক দুঃসহ অভিজ্ঞতা। এসময় ২৭দিন ধরে আরব ও ইহুদি গোত্রগুলি মদিনা অবরোধ করে রাখে। পারস্য থেকে আগত সাহাবি সালমান ফারসির পরামর্শে হযরত মুহাম্মদ (স:) মদিনার চারপাশে পরিখা খননের নির্দেশ দেন। প্রাকৃতিকভাবে মদিনাতে যে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ছিল তার সাথে এই ব্যবস্থা যুক্ত হয়ে আক্রমণ কারীদেরকে নিষ্ক্রিয় করে ফেলে। জোটবাহিনী মুসলিমদের মিত্র মদিনার ইহুদি বনু কোরায়জা গোত্রকে নিজেদের পক্ষে আনে যাতে তারা দক্ষিণ দিক থেকে শহর আক্রমণ করে। কিন্তু মুসলিমদের তৎপরতার ফলে তাদের জোট ভেঙে যায়। মুসলিমদের সুসংগঠিত অবস্থা, জোটবাহিনীর আত্মবিশ্বাস হ্রাস ও খারাপ আবহাওয়ার কারণে শেষপর্যন্ত আক্রমণ ব্যর্থ হয়।এই যুদ্ধে জয়ের ফলে ইসল...

উটের যুদ্ধ ইসলামের প্রথম ভাতৃঘাতি যুদ্ধ

#মো.আবু রায়হান উটের যুদ্ধ বা উষ্ট্রের যুদ্ধ বা জামালের যুদ্ধ ( Battle of the Camel) ৬৫৬ খ্রিষ্টাব্দের শেষের দিকে ইরাকের বসরায় সংঘটিত হয়। এটি ইসলামের ইতিহাসের প্রথম গৃহযুদ্ধ।এই যুদ্ধ ছিল ইসলামের চতুর্থ খলিফা হযরত আলী এর বিরুদ্ধে হযরত তালহা-জুবায়ের ও আয়েশা (রা)সম্মলিত যুদ্ধ। পটভূমি হযরত ওসমান (রা) এর বিভিন্ন প্রদেশে প্রাদেশিক শাসনকর্তা নিয়োগ নিয়ে একদল তার বিরুদ্ধে অভিযোগ টেনে বিদ্রোহ শুরু করে।হযরত ওসমান বিভিন্নভাবে তাদের শান্ত করার চেষ্টা করতে থাকেন। তাদের কথামত মিশরের গভর্নরকে প্রতিস্থাপন করে আবু বকরের ছেলে মুহাম্মদ ইবনে আবু বকর কে নিয়োগ করলেও বিদ্রোহীরা শান্ত হয় নি। তারা নানাভাবে অভিযোগ টেনে এনে ওসমান (রা) এর অপসারণের দাবী করতে থাকে। ওসমান সবকিছু মীমাংসার আশ্বাস দিলেও তারা ৬৫৬ সালের ১৭ জুন তারা বাড়ি অবরুদ্ধ করে এবং এক পর্যায়ে তারা তার কক্ষে প্রবেশ করে কুরআন তেলাওয়াত করা অবস্থায় হত্যা করে।ওসমান (রা.)-এর হত্যাকাণ্ডের পর আলী (রা.) খলিফা হন। কিন্তু দুঃখজনকভাবে ক্ষমতা গ্রহণ করে যখনই আলী (রা.) ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার কাজে হাত দেন তখনই ধর্মীয় ও রাজনৈতিক দূরদর্শিতার অভাবের কার...