তাহনিক ও চিকিৎসা শাস্ত্র


হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে নবজাতক শিশুদেরকে পেশ করা হতো। তিনি তাদের জন্য বরকতের দোয়া করতেন এবং তাদেরকে মিষ্টি মুখ করাতেন।’ (মুসলিম)

আবু মুসা (রা.) বলেন, আমার একটি পুত্রসন্তান জন্মালে আমি তাকে নিয়ে নবী (সা.)-এর কাছে গেলাম। তিনি তার নাম রাখলেন ইবরাহিম। তারপর খেজুর চিবিয়ে তার মুখে দিলেন এবং তার জন্য বরকতের দোয়া করে আমার কাছে ফিরিয়ে দিলেন। সে ছিল আবু মুসার সবচেয়ে বড় ছেলে। (বুখারি, হাদিস : ৫৪৬৭)
আসমা বিনতে আবু বকর (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি আব্দুল্লাহ ইবনে যুবায়েরকে মক্কায় গর্ভে ধারণ করেন। তিনি বলেন, গর্ভকাল পূর্ণ হওয়া অবস্থায় আমি বেরিয়ে মদিনায় এলাম এবং কুবায় অবতরণ করলাম। কুবাতেই আমি তাকে প্রসব করি। তারপর তাকে নিয়ে রাসুল (সা.)-এর কাছে এসে তাকে তাঁর রাখলাম। তিনি একটি খেজুর আনতে বলেন। তা চিবিয়ে তিনি তার মুখে দিলেন। রাসুল (সা.)-এর এই লালাই সর্বপ্রথম তার পেটে প্রবেশ করেছিল। তারপর তিনি খেজুর চিবিয়ে তাহনিক করলেন এবং তার জন্য বরকতের দোয়া করলেন। (হিজরতের পরে) ইসলামে জন্মলাভকারী সেই ছিল প্রথম সন্তান। তাই তার জন্য মুসলিমরা মহা আনন্দে আনন্দিত হয়েছিলেন। কারণ তাদের বলা হতো ইহুদিরা তোমাদের জাদু করেছে, তাই তোমাদের সন্তান হয় না। (বুখারি, হাদিস : ৫৪৬৯)
নবজাতকের জন্মের পর ৩টি কাজ করা আবশ্যক ও সুন্নাত। এর মধ্যে তৃতীয় কাজটি হলো- তাহনিক করা। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নবজাতকের জন্য তাহনিক করাটা আবশ্যক করে দিয়েছেন।তাহনিক হলো- খেজুর চিবিয়ে সেই চর্বিত খেজুর নবজাতকের মুখে দেওয়া। নবজাতকের মুখের (জিহ্বার) তালুতে আলতোভাবে মালিশ করা যাতে এর কিছু রস তার পেটে পৌঁছে যায়।যদি খেজুর সহজে পাওয়ার সম্ভাবনা না থাকে তবে সুন্নাতের উপর আমল করার নিয়তে যে কোনো মিষ্টিদ্রব্য দ্বারা তাহনিক করা যায়।
তাহনিকের আমলের উপকারিতানবজাতকের প্রথম খোরাক তাহনিকের ফলে তার চরিত্র চিত্রণে জীবনভর বিশেষ প্রভাব বিস্তার করতে সক্ষম হয়। দাঁতের মাড়ি মজবুত হয়। মায়ের দুধ পানে আগ্রহ তৈরি হয়। তাহনিকে খেজুর ও মধু বহুবিধ উপকার করে। এমনকি মস্তিষ্কের ক্ষয়রোগ প্রতিহত করে।শিশুর জন্মের পর প্রত্যেককে এ ‘তাহনিক’ করা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের অন্যতম একটি সুন্নাত। চিকিৎসাবিজ্ঞানের গবেষণায় সুন্নাতি আমল ‘তাহনিক’-এর মাধ্যমে মস্তিষ্কের কার্যকারিতার বিষয়টি প্রমাণিত। এ ছাড়াও রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের অনেক সুন্নাতি আমলই বিজ্ঞানের গবেষণায় উপকারি হিসেবে প্রমাণিত।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পর থকে প্রায় সাড়ে সাড়ে চৌদ্দশত বছর পর বিজ্ঞান প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছে যে, ‘তাহনিক’ নবজাতকের মস্তিষ্কক্ষয় রোধ করে।
দ্য ইসলামিক ইনফরমেশনের তথ্য মতে, চিকিৎসা বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, অপরিপক্ক নবজাতকের মুখে জেলের মতো এক ধরনের চিনির ডোজ দেওয়া হয়; যা তাকে মস্তিষ্কক্ষয় থেকে সুরক্ষা দান করে।
লো ব্লাড সুগার বা হাইপোগ্লাইসিমিয়া প্রতি ১০ জন অপরিপক্ক নবজাতকের মধ্যে অন্তত ১ জনকে মারাত্মকভাবে আক্রান্ত করে। যদি তৎক্ষনাৎ এর চিকিৎসা করা না হয়, তবে এটি একটি স্থায়ী ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।
২৪২ জন নবজাতককে জেল থেরাপি দেওয়া বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা মন্তব্য করেছেন, নবজাতকের মস্তিষ্কক্ষয়রোধে এটিই এখনো পর্যন্ত সবচেয়ে কার্যকরী চিকিৎসা।
নিউজিল্যান্ডের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকগণ কর্তৃক পরিচালিত এই সফল পরীক্ষামূলক থেরাপি ও এ ব্যাপারে তাদের মন্তব্য বিখ্যাত মেডিকেল জার্নাল দি ল্যানসেট-এ প্রকাশিত হয়েছে।
আবার অকল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ড. জেন ও তা সহকর্মীরা বলেছেন, প্রতিটি নবজাতকের জন্য এই ডেক্সট্রোজ জেল থেরাপিতে খরচ হয় মাত্র ১ ডলার বা তার চেয়ে কিছু বেশি যা ড্রিপারের মাধ্যমে গ্লুকোজ দেওয়ার চেয়ে অনেক সহজ। এবং বর্তমানে লো ব্লাড সুগারের চিকিৎসায় চিকিৎসকগণ এই জেল থেরাপির প্রতিই বেশি ঝুঁকছেন।
এদিকে লন্ডনের বিশিষ্ট শিশু বিশেষজ্ঞ নেইল মারলো বলেছেন, কার্যকারিতা ও সহজলভ্যতার বিচারে নবজাতকের হাইপোগ্লাইসিমিয়ার চিকিৎসায় গ্লুকোজ সেবনের ব্যবহারের চেয়ে ডেক্সট্রোজ জেল থেরাপির ব্যবহার বাড়াতে হবে। তিনি আরও বলেন, এ ব্যাপারে তার কাছে শক্তিশালি প্রমাণ আছে।
সর্বোপরি চিকিৎসাবিজ্ঞানে বিশেষজ্ঞরা আরও বলেছেন, ‘ডেক্সট্রোজ জেল থেরাপির মতো এই সাশ্রয়ী চিকিৎসা ‘লো ব্লাড সুগার’-এর কারণে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া নবজাতকের সংখ্যা অনেক কমিয়ে দেবে।
আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞানের আবিষ্কৃত নবজাতকের জন্য এই ডেক্সট্রোজ জেল থেরাপি মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের শেখানো তাহনিকের সঙ্গে হুবহু মিল।’
আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞানের আবিষ্কৃত নবজাতকের জন্য এই ডেক্সট্রোজ জেল থেরাপি মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের শেখানো তাহনিকের সঙ্গে হুবহু মিল।’
সুতরাং মুমিন মুসলমানের উচিত, নবজাতকের জন্মের পরপর যে ৩ কাজ করা সুন্নাত ও আবশ্যত তন্মধ্যে অন্যতম একটি তাহনিক করা। এর ফলে অনেক নবজাতক জন্মের পর জটিল ও কঠিন পরিস্থিতিতে রোগ-ব্যধি ও বিপদ থেকে মুক্ত থাকবে।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

যে গাছ ইহুদিদের আশ্রয় দেবে অর্থাৎ ইহুদিদের বন্ধু গাছ

রক্তপাতহীন মক্কা বিজয়ের দিন আজ

খন্দক যুদ্ধ কারণ ও ফলাফল