হযরত উমরের শাহাদত
উমর ইবনুল খাত্তাব ছিলেন ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা এবং প্রধান সাহাবীদের অন্যতম। আবু বকর (রা) এর মৃত্যুর পর তিনি দ্বিতীয় খলিফা হিসেবে দায়িত্বপ্রাপ্ত হন। উমর (রা) ইসলামী আইনের একজন অভিজ্ঞ আইনজ্ঞ ছিলেন। ন্যায়ের পক্ষাবলম্বন করার কারণে তাঁকে আল-ফারুক (সত্য মিথ্যার পার্থক্যকারী) উপাধি দেওয়া হয়। আমীরুল মু’মিনীন উপাধিটি সর্বপ্রথম তাঁর ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়েছে। উমরের(রা) দশ বছরের শাসনামলে খিলাফতের সীমানা অকল্পনীয়ভাবে বৃদ্ধি পায়। এসময় সাসানীয় সাম্রাজ্য ও বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্যের দুই তৃতীয়াংশ মুসলিমদের নিয়ন্ত্রণে আসে। তাঁর শাসনামলে জেরুজালেম মুসলিমদের হস্তগত হয়।
তাঁর ব্যাপারে নবীজি সা. ইরশাদ করে ছিলেন, ‘আমার পরে কেউ নবী হলে উমর নবী হতো’। তিনি সেই উমর যিনি নিজে বলেছিলেন, ‘আমি বেঁচে থাকতে দিন-ধর্মের ক্ষতি হতে দেব না’
৬৪৪ সালে উমর একজন পার্সিয়ানের হাতে নিহত হন।হত্যাকাণ্ডটি কয়েকমাস ধরে পরিকল্পনা করা হয়েছিল।
পিরুজ নাহাওয়ান্দি (আবু লুলু বলেও পরিচিত) নামক এক পার্সিয়ান দাস উমরের কাছে তার মনিব মুগিরা বিন শোবার বিরুদ্ধে অভিযোগ উত্থাপন করে। তার অভিযোগ ছিল যে তার মনিব মুগিরা তার উপর বেশি কর ধার্য করেছে। উমর এরপর মুগিরার কাছে এ বিষয়ে জানতে চান। মুগিরার উত্তর সন্তোষজনক হওয়ায় উমর রায় দেন যে পিরুজের উপর ধার্য করা কর ন্যায্য। পিরুজ বায়ুকল (উইন্ডমিল) তৈরি করতে জানত। উমর তাকে বলেন যে সে যাতে তাকে একটি বায়ুকল তৈরি করে দেয়। পিরুজ এর উত্তরে বলে যে যে এমন এক বায়ুকল তৈরি করবে যা পুরো পৃথিবী মনে রাখবে।
পিরুজ উমরকে হত্যার পরিকল্পনা করে। পরিকল্পনা অনুযায়ী সে ফজরের নামাজের পূর্বে মসজিদে নববীতে প্রবেশ করে। এখানে নামাজের ইমামতি করার সময় উমরকে সে আক্রমণ করে। তাকে ছয়বার ছুরি দিয়ে আঘাত করা হয়। হামলার পর পালিয়ে যাওয়ার সময় আশেপাশের লোকেরা তাকে ঘিরে ফেলে। এসময় সে আরো কয়েকজনকে আঘাত করে যাদের কয়েকজন পরে মারা যায়। এরপর পিরুজ নিজ অস্ত্র দিয়ে আত্মহত্যা করে।
হযরত উমর নামাজ শেষ করলেন। নামাজের পর ইস্তেগফার করলেন এবং জিকির-দোআ পাঠ করলেন।
এবার উপস্থিত ব্যক্তিদের দিকে তাকিয়ে তাঁর প্রশ্ন- আমাকে আঘাত করেছে কে? নামাজ শেষ করার আগ পর্যন্ত তিনি নিজের আঘাত সম্পর্কে একটি প্রশ্নও করেননি।
উপস্থিত কেউ উত্তর দিল, মুগীরা বিন শুবার দাস অগ্নিপূজক আবু লুলু আপনাকে আঘাত করেছে। একথা শুনে তিনি বললেন- ‘আলহামদুলিল্লাহ। এমন ব্যক্তি আমাকে হত্যা করেছে যে এক আল্লাহর জন্য একটি সেজদাও করেনি।’
তিনি কোনো মুসলিমের হাতে আঘাতপ্রাপ্ত না হওয়ায় এবং মুসলমানদের অন্তদ্বন্দ্বের কারণ না হওয়ায় এই শুকরিয়া আদায় করেন।
তিনদিন পর হযরত উমর আঘাতের কারণে শাহাদত বরণ করেন।তাঁর শাহাদাতে পর পবিত্র মদীনার নারীরা আক্ষেপ করে বলত, হায়! আমীরুল মুমীনীনের বদলে যদি আমার সন্তান মারা যেত।তাঁর শাহাদাতে আয়েশা রা. এতবেশি কান্না করেন যে, ধারণা করা হয়, নিজ পিতার মৃত্যুতেও তিনি এতটা কান্না করেননি।
তার ইচ্ছানুযায়ী হযরত আয়েশার অনুমতিক্রমে তাঁকে মসজিদে নববীতে মুহাম্মদ (সাঃ) ও হযরত আবু বকরের পাশে দাফন করা হয়।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন