জান্নাতের হুর
আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘হে নবী! যারা ঈমান আনে এবং সৎকর্ম করে, তাদের সুখবর দিন, তাদের জন্য রয়েছে এমন জান্নাত, যার পাদদেশে নহরসমূহ প্রবহমান থাকবে। যখনই তাদের ফলমূল খেতে দেওয়া হবে, তারা বলবে, এরূপ ফলই তো আগে আমাদের দেওয়া হতো। তাদের বাহ্যিক দৃষ্টিতে একই ধরনের ফলমূল দেওয়া হবে (তবে স্বাদ হবে ভিন্ন)। আর সেখানে তাদের জন্য রয়েছে পবিত্র সঙ্গী। তারা সেখানে অনন্তকাল বসবাস করবে। ’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ২৫)
জান্নাতি রমণীদের কোরআনের ভাষায় বলা হয় ‘হুর’।
তারা প্রস্রাব-পায়খানা করে না। হয় না তাদের ঋতুস্রাব। তারা সবাই হবে সমবয়সী ও চিরকুমারী। তেমনি যেসব নারীরা দুনিয়া থেকে জান্নাতে যাবে, তারাও একই বয়সী হবে। তারা হবে স্বামী-সোহাগিনী ও আবেদনময়ী।
ইরশাদ হয়েছে, ‘আমি জান্নাতি রমণীদের বিশেষ রূপে সৃষ্টি করেছি। অতঃপর তাদেরকে করেছি চিরকুমারী। সোহাগিনী , সমবয়সী’ (সূরা ওয়াকিয়াহ-৩৫-৩৭)।
হুর শব্দটি কোরআন মাজিদের চারটি সুরায় ব্যবহূত হয়েছে।
প্রথমত, সুরা দোখানের ৫৪ নং আয়াতে বলা হয়েছে, ‘আমি তাদের আনতলোচনা স্ত্রী দেব। ’
দ্বিতীয়ত, সুরা তুরের ২০ নং আয়াতে বলা হয়েছে, ‘তারা সারিবদ্ধ সিংহাসনে হেলান দিয়ে বসবে। আমি তাদের আনতলোচনা হুরদের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ করে দেব। ’
তৃতীয়ত, সুরা আর রাহমানের ৭২ নং আয়াতে বলা হয়েছে, ‘(জান্নাতিদের জন্য রয়েছে) তাঁবুতে অবস্থানকারিণী হুরগণ। ’ চতুর্থত, সুরা ওয়াকেয়ার ২২ থেকে ৩৭ নং আয়াতে বলা হয়েছে, ‘তথায় (জান্নাতে থাকবে) আনতনয়না হুরগণ, যারা আবরণে রক্ষিত মোতির মতো। তারা যা কিছু করত তার পুরস্কারস্বরূপ। তারা তথায় (জান্নাতে) অবান্তর ও কোনো পাপবাক্য শুনবে না, শুনবে সালাম আর সালাম (শান্তি, শান্তি)। যারা ডান দিকের দল, কত ভাগ্যবান ডান দিকের দল। তারা থাকবে এমন উদ্যানে, যেখানে আছে কাঁটাবিহীন কুলবৃক্ষ এবং কাঁদি কাঁদি কলা এবং দীর্ঘ ছায়ায় আর সদা প্রবাহিত পানি ও প্রচুর ফলমূল, যা শেষ হওয়ার নয় এবং নিষিদ্ধও নয়। আর থাকবে সমুন্নত শয্যায়। আমি জান্নাতি হুরদের বিশেষরূপে সৃষ্টি করেছি। তাদের করেছি চিরকুমারী, কামিনী, সমবয়স্কা।
মহানবী (সা.) বলেছেন, জান্নাতি রমণীদের চার রঙে সৃষ্টি করা হয়েছে। যেমন—সাদা, হলদে, সবুজ ও লাল। তাদের দেহ জাফরান, মৃগনাভি, আম্বর ও কাফুর দ্বারা সৃষ্টি। তাদের চুল লবঙ্গ দ্বারা সৃষ্টি। পা থেকে হাঁটু পর্যন্ত সুগন্ধি জাফরানের দ্বারা সৃষ্টি। হাঁটু থেকে নাভি পর্যন্ত মৃগনাভির দ্বারা তৈরি, নাভি থেকে ঘাড় পর্যন্ত আম্বরের তৈরি, ঘাড় থেকে মাথা পর্যন্ত কাফুরের তৈরি। যদি একজন রমণী পৃথিবীতে সামান্য থুতু নিক্ষেপ করত, তাহলে সমগ্র পৃথিবী সুঘ্রাণে মুখরিত হয়ে যেত, তাদের বক্ষের মধ্যে আল্লাহর নাম ও স্বামীর নাম লেখা থাকবে। প্রত্যেকের হাতে ১০টি করে স্বর্ণের কাঁকন থাকবে। প্রত্যেক আঙুলে থাকবে মুক্তার আংটি এবং উভয় চরণে থাকবে জহরতের নূপুর।
রাসূলুল্লাহ সা: ইরশাদ করেন, ‘জান্নাতে আয়াতলোচনা হুরদের সমবেত হওয়ার একটি জায়গা রয়েছে। তারা সেখানে এমন সুরেলা আওয়াজে গান গাইবে, যে আওয়াজ কোনো মাখলুক ইতঃপূর্বে কখনো শুনেনি। তারা এই বলে গান গাইবেÑ আমরা তো চিরঙ্গিনী, আমাদের ধ্বংস নেই। আমরা তো আনন্দ-উল্লাসের জন্যই, দুঃখ-কষ্ট নেই আমাদের। আমরা চির সন্তুষ্ট, আমরা কখনো অসন্তুষ্ট হবো না। তারা কতই না সৌভাগ্যবান যাদের জন্য আমরা এবং আমাদের জন্য যারা’ (তিরমিজি-২৫৬৪)।
প্রিয় নবী সা: ইরশাদ করেন, ‘পৃথিবীর কোনো নারী যখন তার স্বামীকে কষ্ট দেয়, তখন তার জন্য নির্ধারিত হুর বলে, (হে হতভাগিনী!) তুমি তাকে কষ্ট দিও না। আল্লাহ তোমাকে ধ্বংস করুন। তিনি তো তোমার কাছে কয়েক দিনের মেহমান। অচিরেই তিনি তোমাকে ছেড়ে আমাদের কাছে চলে আসবেন (তিরমিজি-১১৭৪)।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন