সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

অক্ষত দুই সাহাবির লাশ



ছবিটি ১৯৩০ সালের। ইরাকে দুজন সাহাবি হযরত হুজাইফা ইবনে আল-ইয়ামান এবং হযরত জাবের বিন আবদুল্লাহ আনসারী (রা.)-এর দেহ মোবারক কবর থেকে উত্তোলনের সময়ের দৃশ্য। ইরাকের বাদশাহ ফয়সাল স্বপ্নে এক বুজুর্গকে দেখতে পান। তিনি নিজেকে হুজাইফা ইবনে ইয়ামান (রা.) বলে পরিচয় দেন এবং বলেন যে, তার মাজারে নদীর পানি এসে গেছে এবং হযরত জাবের বিন আবদুল্লাহ আনসারী (রা.)-এর মাজারেও আর্দ্রতা এসে গেছে। তাই তাঁদের দুজনকে সেখান থেকে সরানো হোক। বাদশাহ লাগাতার তিন রাত একই স্বপ্ন দেখেন। এতে তিনি দারুণ হতভম্ব হয়ে পড়েন। মুফতিয়ে আজম কবরদ্বয় সরানোর পক্ষে ফতোয়া দান করেন, যা শাহী ফরমান হিসেবে প্রচার করে দেওয়া হয়।লাশ উত্তোলনের দিন আগত মুসলিম-অমুসলিমের সংখ্যা ছিল প্রায় পাঁচ-ছয় লাখ। এ বিশাল জনস্রোতের উপস্থিতিতে কবর দুটি খোলা হয়।

কবরদ্বয় খোলার পর দেখা যায়, দুই সাহাবির লাশ অক্ষত অবস্থায় বিদ্যমান। তাদের দেহ-কাফনে কোনো পরিবর্তন ঘটেনি, মনে হচ্ছিল যেন কিছুক্ষণ আগে তাদের দাফন করা হয়েছে।আশ্চর্যের ব্যাপার হলো, শতশত বছর পেরিয়ে গেলেও শুধু দেহ মোবারকই নয়, কাফন বাধার ফিতাগুলোর মধ্যেও কোন প্রকারের পরিবর্তনের ছোঁয়া লাগে নি। দেহ-দুটিকে দেখে কেউ কল্পনাও করতে পারছিল না যে, এগুলো দীর্ঘ তেরশত বছর আগে মৃত্যুবরণ করা মানব-দেহ। আরো বিস্ময়ের ব্যাপার হলো, তাদের চোখ গুলো খোলা ছিল। সেই খোলা চোখ থেকে এমন রহস্যজনক অপার্থিব উজ্জ্বল জ্যোতি ঠিকরে পড়ছিল যে, কেউই সরাসরি তাদের চোখের দিকে স্থির-দৃষ্টি দিতে পারছিল না। বের হচ্ছিল বেহেশতি ঘ্রাণ।
দাফনের এত শতাব্দী পরও তাদের লাশ এভাবে অপরিবর্তনীয় থাকার এক বিস্ময়কর দৃশ্য দেখে তখন ইহুদি-খৃস্টানদের বিপুলসংখ্যক লোক ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে।
দীর্ঘ চার ঘণ্টায় পরম ভক্তি ও শ্রদ্ধার সাথে পবিত্র লাশ দুটি সালমান পার্কে এসে পৌঁছে। যে সৌভাগ্যবানরা লাশ দুটিকে প্রথমে কফিনে রেখেছিল তারাই কফিন দুটিকে নব নির্মিত কবরে নামিয়ে রাখেন। সালমান পার্ক, একটি প্রাচীন জনপদ, যার অবস্থান ইরাকের রাজধানী বাগদাদ থেকে ৪০ মাইল দূরে। এক সময় এটি ছিল পারস্য সম্রাজ্যের রাজধানী। সালমান পার্কে সাহাবায়ে কেরামের মধ্যে সর্বপ্রথম কবরস্থ হন বিখ্যাত সাহাবী হযরত সালমান ফার্সী (রা.)। এর প্রায় তেরশত বছর পর সেখানে সমাহিত হন আরো দুজন সাহাবী ! একজন হলেন হযরত হুজাইফা (রা.) এবং অপরজন হলেন হযরত জাবের বিন আবদুল্লাহ আনসারী (রা.)।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

সুফফা ইসলামের প্রথম আবাসিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান

মো.আবু রায়হান:  সুফফা মসজিদে নববির একটি স্থান। যেখানে একদল নিঃস্ব মুহাজির যারা মদিনায় হিজরত করেন এবং বাসস্থানের অভাবে মসজিদে নববির সেই স্থানে থাকতেন।এটি প্রথমদিকে মসজিদ উত্তর-পূর্ব কোণায় ছিল এবং রাসুলের আদেশে এটাকে পাতার ছাউনি দিয়ে ছেয়ে দেয়া হয় তখন থেকে এটি পরিচিতি পায় আল-সুফফা বা আল-জুল্লাহ নামে। ( A Suffah is a room that is covered with palm branches from date trees, which was established next to Al-Masjid al-Nabawi by Islamic prophet Muhammad during the Medina period.)। মোটকথা রাসুল (সা) মসজিদে-নববির চত্ত্বরের এক পাশে আস সুফফা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। সুফফা হলো ছাদবিশিষ্ট প্রশস্ত স্থান। সুফফার আকৃতি ছিল অনেকটা মঞ্চের মতো, মূল ভূমির উচ্চতা ছিল প্রায় অর্ধমিটার। প্রাথমিক পর্যায়ে এর দৈর্ঘ্য ছিল ১২ মিটার এবং প্রস্থ ছিল ৮ মিটার। মসজিদে নববির উত্তর-পূর্বাংশে নির্মিত সুফফার দক্ষিণ দিকে ছিল রাসুলুল্লাহ (সা.) ও তাঁর স্ত্রীদের অবস্থানের হুজরা এবং সংলগ্ন পশ্চিম পাশে ছিল মেহরাব।আসহাবে সুফফা অৰ্থ চত্বরবাসী। ঐ সকল মহৎ প্ৰাণ সাহাবি আসহাবে সুফফা নামে পরিচিত, যারা জ্ঞানার্জনের জন্য ভোগবিলাস ত্যা...

খন্দক যুদ্ধ কারণ ও ফলাফল

#মো. আবু রায়হান ইসলামের যুদ্ধগুলোর মধ্যে খন্দকের যুদ্ধ অন্যতম। ৫ হিজরির শাওয়াল মাসে খন্দকের যুদ্ধ সংঘটিত হয়। নবীজি (সা.) মদিনায় আসার আগে সেখানে বড় দুটি ইহুদি সম্প্রদায় বসবাস করত। বনু নাজির ও বনু কোরায়জা। ইহুদিদের প্ররোচনায় কুরাইশ ও অন্যান্য গোত্র মদিনার মুসলমানদের সঙ্গে যুদ্ধ করার প্রস্তুতি গ্রহণ করে। খন্দকের এই যুদ্ধ ছিল মদিনার ওপরে গোটা আরব সম্প্রদায়ের এক সর্বব্যাপী হামলা এবং কষ্টকর অবরোধের এক দুঃসহ অভিজ্ঞতা। এসময় ২৭দিন ধরে আরব ও ইহুদি গোত্রগুলি মদিনা অবরোধ করে রাখে। পারস্য থেকে আগত সাহাবি সালমান ফারসির পরামর্শে হযরত মুহাম্মদ (স:) মদিনার চারপাশে পরিখা খননের নির্দেশ দেন। প্রাকৃতিকভাবে মদিনাতে যে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ছিল তার সাথে এই ব্যবস্থা যুক্ত হয়ে আক্রমণ কারীদেরকে নিষ্ক্রিয় করে ফেলে। জোটবাহিনী মুসলিমদের মিত্র মদিনার ইহুদি বনু কোরায়জা গোত্রকে নিজেদের পক্ষে আনে যাতে তারা দক্ষিণ দিক থেকে শহর আক্রমণ করে। কিন্তু মুসলিমদের তৎপরতার ফলে তাদের জোট ভেঙে যায়। মুসলিমদের সুসংগঠিত অবস্থা, জোটবাহিনীর আত্মবিশ্বাস হ্রাস ও খারাপ আবহাওয়ার কারণে শেষপর্যন্ত আক্রমণ ব্যর্থ হয়।এই যুদ্ধে জয়ের ফলে ইসল...

কাবা ঘর নির্মাণের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস

মো. আবু রায়হানঃ কাবা মুসলমানদের কিবলা, অর্থাৎ যে দিকে মুখ করে নামাজ পড়ে বা সালাত আদায় করে, পৃথিবীর যে স্থান থেকে কাবা যে দিকে মুসলমানগণ ঠিক সে দিকে মুখ করে নামাজ আদায় করেন। হজ্জ এবং উমরা পালনের সময় মুসলমানগণ কাবাকে ঘিরে তাওয়াফ বা প্রদক্ষিণ করেন।কাবা শব্দটি এসেছে আরবি শব্দ মুকাআব অর্থ ঘন থেকে।কাবা একটি বড় ঘন আকৃতির ইমারত। (The Kaaba, meaning cube in Arabic, is a square building elegantly draped in a silk and cotton veil.)।যা সৌদি আরবের মক্কা শহরের মসজিদুল হারাম মসজিদের মধ্যখানে অবস্থিত। প্রকৃতপক্ষে মসজিদটি কাবাকে ঘিরেই তৈরি করা হয়েছে।কাবার ভৌগোলিক অবস্থান ২১.৪২২৪৯৩৫° উত্তর ৩৯.৮২৬২০১৩° পূর্ব।পৃথিবীর সর্বপ্রথম ঘর বায়তুল্লাহ বা পবিত্র কাবা ঘর ।আল্লাহ বলেন, নিশ্চয় সর্বপ্রথম ঘর যা মানুষের জন্য নির্মিত হয়েছে তা মক্কা নগরীতে। (সুরা আল ইমরান - ৯৬)। “প্রথম মাসজিদ বায়তুল্লাহিল হারাম তারপর বাইতুল মাকদিস, আর এ দুয়ের মধ্যে সময়ের ব্যবধান হলো চল্লিশ বছরের”।(মুসলিম- ৫২০)। ভৌগোলিকভাবেই গোলাকার পৃথিবীর মধ্যস্থলে কাবার অবস্থান। ইসলামের রাজধানী হিসেবে কাবা একটি সুপরিচিত নাম। পৃথিবীতে মাটির সৃষ্টি ...