হাফেজ আইয়ুবা সুলাইমান দিয়ালো

 





তিনি ছিলেন সম্ভ্রান্ত পরিবারের সন্তান, ছিলেন কুরআনে হাফেজ, তিনি ছিলেন একজন দাস। তিনি হলেন সেনেগালের হাফেজ আইয়ুবা সুলাইমান দিয়ালো। মাত্র ১৫ বছর বয়সেই তিনি সম্পূর্ণ কুরআন মুখস্ত করে ফেলেন এবং মালিকি মাযহাব অনুযায়ী ধর্মীয় বিধি-নিষেধ অনুশীলন করতে শুরু করেন।

কিন্তু পরিহাসের বিষয়, ১৭৩০ সালে দিয়ালো নিজেই প্রতিদ্বন্দ্বী গোত্রদের হাতে বন্দী হয়ে যান এবং দাস হিসেবে বিক্রি হয়ে যান।
একাধিকবার হাত বদলের পর দিয়ালোর স্থান হয় মিস্টার টলসি নামে ম্যারিল্যান্ডের এক তামাক ক্ষেতের মালিকের বাড়িতে।
সে সময় দাসদের নিজস্ব ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান পালনের স্বাধীনতা ছিল না। ফলে তাদেরকে অত্যন্ত গোপনীয়তার সাথে ধর্ম পালন করতে হতো। দিয়ালো তার কাজের ফাঁকে ফাঁকে গোপনে নামায আদায় করতেন এবং কুরআন তিলাওয়াত করতেন। প্রায় এক বছর পর্যন্ত দিয়ালো তার ধর্ম গোপন রাখতে সক্ষম হয়েছিলেন। কিন্তু এরপর একদিন গোপনে নামায পড়ার সময় তিনি ধরা পড়ে যান।
নিজের ধর্ম পালনের জন্য দিয়ালোকে প্রচুর অপমান এবং নির্যাতন সহ্য করতে হয়। নামায পড়া অবস্থাতেই মালিকের ছেলেরা তার শরীরে কাদা নিক্ষেপ করতে থাকে। পরিস্থিতি অসহনীয় হয়ে উঠলে ১৭৩১ সালে দিয়ালো তার মালিকের খামার থেকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু শীঘ্রই তিনি ধরা পড়েন। তাকে ফিরিয়ে এনে ম্যারিল্যান্ডের কেন্ট কাউন্টির আদালতে তার বিচার করা হয় এবং বিচার শেষে তাকে কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
১৭৩৩ সালে ব্লুয়েটের সাথে দিয়ালো ইংল্যান্ডে পাড়ি জমান। সেখানে তিনি শ্বেতাঙ্গদের সমমর্যাদা লাভ করেন। ইংল্যান্ডে যাওয়ার পথে তিনি ব্লুয়েটের সহায়তায় ইংরেজি ভাষা শিখে ফেলেন। সেই জ্ঞান দিয়ে তিনি ইংল্যান্ডে খ্রিস্টান পাদ্রীদের সাথে ধর্মীয় বিষয়ে আলোচনা এবং বিতর্কে অংশগ্রহণ করতেন। তিনি কিছুদিন ব্রিটিশ মিউজিয়ামে আরবি পান্ডুলিপি সংগ্রহ ও সজ্জিতকরণের কাজেও নিযুক্ত ছিলেন। ইংল্যান্ডের রাজপরিবারের সদস্যদের সাথেও তিনি সাক্ষাৎ করতে সক্ষম হন।
১৭৩৪ সালে স্বাধীন মানুষ হিসেবে দিয়ালো গাম্বিয়া হয়ে সেনেগালে নিজের বাড়িতে ফিরে আসেন।
আইয়ুবা সুলাইমান দিয়ালো ছিলেন অত্যন্ত ভাগ্যবান এবং ব্যতিক্রমী একজন দাস। অধিকাংশ দাসদের সাথেই সে সময় অমানবিক আচরণ করা হতো। কঠোর পরিশ্রমে জর্জরিত হয়ে অথবা নির্মম নির্যাতনের শিকার হয়েই তারা মৃত্যুবরণ করত। এবং তাদের কাহিনী বিশ্ববাসীর কাছে অজানাই রয়ে যেত। কিন্তু দিয়ালোর কাহিনী ব্যতিক্রমী হওয়ায় আইনজীবি থমাস ব্লুয়েট তার জীবনী প্রকাশ করেন। এই জীবনীর মাধ্যমেই তার গল্প দেশ-বিদেশে ছড়িয়ে পড়ে। তাঁর স্মৃতিশক্তি এতটাই অসাধারণ ছিল যে, তিনি ইংল্যান্ডে সম্পূর্ণরূপে স্মৃতি দিয়ে কুরআনের তিনটি কপি লিখেছিলেন।
ইংরেজ পরিচিত জনরা দিয়ালোকে খ্রিস্টান ধর্মে ধর্মান্তরিত করার চেষ্টা করেছিল। তাকে নিউ টেস্টামেন্টের একটি আরবি কপি উপহার দেওয়া হয়েছিল। তিনি ইতোমধ্যেই খ্রিস্টধর্মের সাথে পরিচিত ছিলেন। কিন্তু দিয়ালো ইসলাম ধর্ম ত্যাগ করতে অস্বীকার করেছিলেন এবং তার ধার্মিকতা এবং দৃঢ় বিশ্বাসের কারণে মদ পানের প্রস্তাবও প্রত্যাখ্যান করেছিলেন।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

যে গাছ ইহুদিদের আশ্রয় দেবে অর্থাৎ ইহুদিদের বন্ধু গাছ

রক্তপাতহীন মক্কা বিজয়ের দিন আজ

খন্দক যুদ্ধ কারণ ও ফলাফল