সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

নাসিরুল হাদিস ইমাম শাফেয়ি (রহ.)



আবু আবদুল্লাহ মুহাম্মদ বিন ইদরিস (রহ.) ইমাম শাফেয়ি নামে পরিচিত। তাকে শায়েখ আল-ইসলাম হিসাবেও সম্বোধন করা হয় এবং তিনি ইসলামের প্রধান চারটি মাযহাবের একটি শাফেয়ি মাযহাবের প্রবক্তা।হাদিসশাস্ত্রে তাঁর দক্ষতার জন্য ইরাকবাসী তাঁকে ‘নাসিরুল হাদিস’ তথা হাদিসের সহায়ক উপাধিতে ভূষিত করেন।হাদীস সংগ্রহ, সংকলন, বিশেষ করে হাদীসের যাচাই-বাছাইয়ে তিনি সর্বপ্রথম অবদান রাখেন । তিনিই সর্ব প্রথম হাদীস শাস্ত্রের নীতিমালা প্রণয়নে কলম ধরেন আর রিসালাহ ও আল উম্ম’ গ্রন্থদ্বয়ে। অতঃপর সে পথ ধরেই পরবর্তী ইমামগণ অগ্রসর হন।তিনি ছিলেন ইমাম মালিক ইবনে আনাসের অন্যতম সেরা শিক্ষার্থী এবং তিনি নাজারাহ-এর গভর্নর হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন।
তিনি ১৫০ হিজরি মোতাবেক ৭৬৭ খ্রিস্টাব্দে ফিলিস্তিনের আসকালান প্রদেশের গাজাহ নামক স্থানে জন্মগ্রহণ করেন। কারো কারো মতে, যেদিন ইমাম আবু হানিফা (রহ.) ইন্তেকাল করেন সেদিনই ইমাম শাফেয়ি (রহ.) জন্মগ্রহণ করেন।তাঁর নাম মুহাম্মদ, উপনাম আবু আবদুল্লাহ, মাতার নাম উম্মুল হাসান। নিসবতি নাম শাফেয়ি, পিতার নাম ইদরিস, তাঁর পূর্বপুরুষ শাফেয়ি (রহ.)-এর নামানুসারে তিনি শাফেয়ি নামে পরিচিতি লাভ করেন।

দুই বছর বয়সের সময় তাঁর পিতা ইন্তেকাল করেন। ফলে তাঁর মাতাই তাঁকে লালন-পালন করেন। বাল্যকালে তাঁর মাতা তাঁকে নিয়ে পবিত্র মক্কা শরিফে গমন করেন। ইমাম শাফেয়ি (রহ.) পবিত্র মক্কা নগরীতে কোরআন শরিফ মুখস্থ করেন। তিনি বেদুইনদের মধ্যে বেশ কিছুকাল কাটান এবং সে সময় প্রাচীন আরব কাব্য সম্পর্কে ব্যাপক ধারণা লাভ করেন। পরবর্তী সময়ে তিনি আবু খালিদ আল জিনজি এবং সুফিয়ান ইবনে উয়াইনার কাছে হাদিস ও ইসলামী আইনের ওপর পড়াশোনা করেন। তাঁর বয়স যখন মাত্র ১৩ বছর তখন ইমাম মালিক (রহ.)-এর হাদিস গ্রন্থ 'মুয়াত্তা' মুখস্থ করেন। ২০ বছর বয়সে মদিনায় ইমাম মালিক ইবনে আনাস (রহ.)-এর কাছে যান এবং তাঁর কাছে 'মুয়াত্তা' মুখস্থ বলে যান। ইমাম মালিক এতে অভিভূত হয়ে পড়েন। ৭৯৬ সালে ইমাম মালিক (রহ.)-এর ইন্তেকাল পর্যন্ত তিনি তাঁর সঙ্গেই কাটান।
পরিবারের জন্য অর্থসংস্থানের প্রয়োজনে তিনি ইয়েমেনে একটি সরকারি চাকরি গ্রহণে বাধ্য হন। ইয়েমেন ছিল আব্বাসীয় খিলাফতের একটি শক্তিশালী ঘাঁটি। সে সময় কিছু অসৎ রাজকর্মচারীর ষড়যন্ত্রে তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলা হয়, তিনি খলিফার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে জড়িয়ে পড়েছেন। এক পর্যায়ে অন্যদের সঙ্গে তাঁকেও খলিফা হারুন-অর-রশিদের সামনে অভিযুক্ত হিসেবে উপস্থিত করা হয়। মুসলিম বিশ্বে খিলাফত রাজতন্ত্রে বদল হয়ে গেছে অনেক আগেই। ফলে ফকিহ ও মুহাদ্দিসীন আমির ও সুলতানদের থেকে নিঃসম্পর্ক হয়ে যাবতীয় ফেতনা থেকে আত্মরক্ষার জন্য নিজ নিজ শহরে নিজ নিজ বাড়িতেই জ্ঞানচর্চা করতেন। ইমাম আবু হানিফা (রহ.), ইমাম মালিক (রহ.) ও ইমাম শাফেয়ি (রহ.)_তাঁরা কোনো কিছুর বিনিময়েই তথাকথিত খিলাফতের নামে তৎকালীন রাজনীতির জালে নিজেদের জড়াননি। সে সময় শাসকদের শক্তিমত্তা, জুলুম-নির্যাতন ও মৃত্যুভয়কে উপেক্ষা করে ইসলাম ধর্মের জ্ঞানসাধক ও ফকিহ্গণ ইসলামের প্রকৃত শিক্ষা তুলে ধরেছেন।
৮০৪ সালে ইমাম শাফেয়ি (রহ.) সিরিয়া ও মিসরে যান। ইমাম মালিকের অনুসারীরা মিসরে তাঁকে আন্তরিক সংবর্ধনা দেন। তিনি কায়রোতে ছয় বছর ইসলামী আইনের ওপর শিক্ষকতা করেন এবং সেখান থেকে ৮১০ সালে বাগদাদে যান এবং সেখানে শিক্ষকতাকে সাফল্যজনকভাবে প্রতিষ্ঠিত করেন। ইরাকে বিপুলসংখ্যক শিক্ষিত ব্যক্তি তাঁর ছাত্রে পরিণত হয়। ৮১৪ সালে পুনরায় মিসরে ফিরে আসেন কিন্তু তখন মিসরে রাজনৈতিক গোলযোগের কারণে তাঁকে মক্কায় চলে যেতে হয়। ৮১৫ সালে ইমাম শাফেয়ি (রহ.) মিসরে ফিরে গিয়ে সেখানে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। তাঁর পূর্বসূরি ইমাম আবু হানিফা ও ইমাম মালিক (রহ.)-এর মতো তিনিও আব্বাসীয় খিলাফতের প্রধান কাজির পদ গ্রহণে অস্বীকৃতি জানান। ইরাক ও মিসরে অবস্থানকালে তিনি খুবই কর্মব্যস্ত সময় অতিবাহিত করেন। ইসলামের ওপর গবেষণামূলক লেখা ও বক্তৃতা দেওয়ার কাজেই তাঁর অধিকাংশ সময় কাটে।
তিনি হানাফি, মালেকি ও মুহাদ্দিসদের মাজহাব মিলিয়ে মধ্যমপন্থী এক মাজহাব, তথা শাফেয়ি মাজহাব প্রবর্তন করেন। তিনি সে মতে গ্রন্থ রচনা করেন, লোকদের শিক্ষা দেন এবং এ মাজহাব অনুযায়ী ফতোয়া প্রদান করেন।
দৈনন্দিন জীবনে তিনি অত্যন্ত গোছানো ছিলেন। বিভিন্ন ধরনের কাজের জন্য তিনি সুন্দরভাবে সময়কে ভাগ করে নিতেন এবং সেই সময়সূচি নিষ্ঠার সঙ্গে অনুসরণ করতেন। 'এনসাইক্লোপেডিয়া অব ইসলামে' ইমাম শাফেয়ি রাহমাতুল্লাহি আলাইহিকে তাঁর সময়ের আইনগত ব্যাখ্যা ও প্রচলিত প্রথার মধ্যে সমন্বয় সাধনকারী হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। তিনি শুধু বিদ্যমান আইনগত উপাদান দিয়েই কাজ করতেন তা নয়, বরং আইনের নীতি ও পদ্ধতি প্রয়োগ করতেন। তাঁকে 'উসুলে ফিকাহ্'র প্রতিষ্ঠাতা বিবেচনা করা হয়। ইমাম শাফেয়ি (রহ.) তাঁর রচনায় সংলাপের ব্যবহার করেছেন দক্ষতার সঙ্গে। তাঁর 'রিসালায়' আইনশাস্ত্রের নীতিমালাকে সংশ্লিষ্ট করেছেন এবং এর মাধ্যমে হানাফি এবং মালিকি আইনের বিধানের একটি সুন্দর যোগসূত্র স্থাপনের চেষ্টা করেছেন। তাঁর লেখা 'কিতাবুল উম' গ্রন্থে তাঁর বুদ্ধিমত্তার প্রমাণ মেলে।
ইমাম শাফেয়ী অসংখ্য গ্রন্থ রেখে গেছেন, তন্মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল -
(১) ‘‘কিতাবুল উম্ম’’ মূলতঃ এটি একটি হাদীসের গ্রন্থ, যা ফিকহী পদ্ধতিতে স্বীয় সনদসহ সংকলন করেছেন, এটি একটি বিশাল গ্রন্থ। যাহা ৯টি বড় খণ্ডে প্রকাশিত।
(২) ‘‘আর রিসালাহ’’ এটা সেই গ্রন্থ যাতে ইমাম শাফেয়ী উসূলে হাদীস ও উসূলে ফিকহে সর্বপ্রথম কলম ধরেছেন।
(৩) ‘‘আহকামুল কুরআন’’।
(৪) ‘‘ইখতিলাফুল হাদীস’’।
(৫) ‘‘সিফাতুল আমরি ওয়ান্নাহী’’।
(৬) ‘‘জিমাউল ইলম’’।
(৭) ‘‘বায়ানুল ফারয’’।
(৮) ‘‘ফাযাইলু কুরাইশ’’।
(৯) ‘‘ইখতিলাফুল ইরাকিঈন’’।
(১০) ইখতিলাফু মালিক ওয়া শাফেয়ি। ইত্যাদি আরো বহু গ্রন্থ রয়েছে।
ইসলামে ইমাম শাফেয়ীর অবদান অনস্বীকার্য ।তার বিদ্যা,বুদ্ধি মেধাকে কাজে লাগিয়ে ইসলামকে প্রচার ও প্রসার ঘটিয়েছেন । ইসলাম বিশেষজ্ঞদের চোখে ইমাম শাফিঃ
(১) ইমামুল মাদীনাহ- ইমাম মালিক (রহ.) বলেন : আমার নিকট যত ছাত্র শিক্ষাপ্রাপ্ত হয়েছে তন্মধ্যে শাফেয়ির চেয়ে অধিক মেধাবী এবং বুঝমান আর কাউকে পাইনি।
(২)ইমাম আহমদ বিন হাম্বল রহ. বলেন, আমি যদি এমন বুদ্ধিমান লোকের মজলিসে না বসি তবে কিয়ামত পর্যন্ত এমন সুযোগে আর আসবে না। কোরায়েশি এ যুবকের চেয়ে কিতাবুল্লাহ হৃদয়ঙ্গম করার ক্ষমতা আমি আর কারো দেখি নি।
(৩) ইমাম ইসহাক বিন রাহ্উয়াহ (রহ.) বলেন : আমি ইমাম আহমাদ (রহ.) সহ মক্কায় ইমাম শাফেয়ি (রহ.)-এর কাছে গেলাম, তাঁকে বেশ কিছু জিজ্ঞাসা করলাম তিনি খুব ভদ্রতার সাথে সাবলীল ভাষায় প্রশ্নের জবাব দিলেন।
(৪) একদল আলেম বলেন: ইমাম শাফেয়ি হলেন স্বীয় যুগে কুরআনের ব্যাপারে সবচেয়ে বেশি জ্ঞানী মানুষ।’’
(৫) ইমাম ইসহাক বলেন : আমি যদি তাঁর কুরআনের পান্ডিত্ব সম্পর্কে আগে অবগত হতাম তাহলে তাঁর কাছে শিক্ষার জন্য থেকে যেতাম’’ ।
(৬) কাজী ইয়াহয়া বিন আকসাম বলেন, ইমাম শাফেয়ি রহ. এর চেয়ে অধিক বুদ্ধিমান আমি আর কাউকে দেখি নাই।
(৭) ইমাম মুয়ানী বলেন, অর্ধজগতের লোকের বুদ্ধি এক পাল্লায় রেখে অপর পাল্লায় ইমাম শাফেয়ি রহ. এর বুদ্ধি রাখা হলে তার বুদ্ধির পাল্লাই ভারি হবে।
(৮) আবু উবাইদ বলেন, আমি ইমাম মালেক রহ. ইমাম শাফেয়ির তেজস্বিতা স্পষ্টবাদিতায় মুগ্ধ ছিলাম।

ইমাম শাফেয়ি (রহ.) স্বীয় যুগে বিভিন্ন দেশে অগণিত আলিম হতে শিক্ষালাভ করেন।তন্মধ্যে কিছু উল্লেখযোগ্য -
(১) ইমাম সুফইয়ান বিন উয়ায়নাহ (রহ.) - (মৃত: ১৯৮ হিঃ) (মাক্কী)।
(২) ইমাম ইসমাঈল বিন আব্দুল্লাহ (রহ.) - (মৃত: ১৭০ হিঃ) (মাক্কী)।
(৩) ইমাম মুসলিম বিন খালিদ (রহ.) - (মৃত: ১৭৯ হিঃ) (মাক্কী)।
(৪) ইমাম মালিক বিন আনাস (রহ.) - (মৃত: ১৭৯ হিঃ) (মাদানী)।
(৫) ইমাম মুহাম্মদ বিন ইসমাইল (রহ.) - (মৃত: ২০০ হিঃ) (মাদানী)।
(৬) ইমাম হিশাম বিন ইউসুফ (রহ.) - (মৃত: ১৯৭ হিঃ) (ইয়ামানী)।
(৭) ইমাম ওয়াকী বিন আল জাররাহ্ - (রহ.) (মৃত: ১৯৭ হিঃ) (কুফী)।
ইমাম শাফেয়ি (রহ.)-এর ছাত্র হওয়ার যারা সৌভাগ্য লাভ করেছেন তাদের সংখ্যা ও বর্ণনা দেয়া অসম্ভব । কারণ তিনি যে দেশেই ভ্রমণ করেছেন এবং শিক্ষার আসরে বসেছেন সেখানেই অগণিত ছাত্র তৈরী হয়েছে ।
নিম্নে কয়েকজন প্রসিদ্ধ ছাত্রের নাম উল্লেখ করা হলঃ
(১) ইমাম রাবী বিন সুলায়মান আল মাসরী।
(২) ইমাম ইসমাঈল বিন ইয়াহইয়া আল মুযানী আল মাসরী।
(৩) ইমাম আবূ আব্দুল্লাহ্ আলফাকীহ আল মাসরী।
(৪) ইমাম আবূ ইয়াকূব ইউসুফ বিন ইয়াহইয়া আল মাসরী।
(৫) ইমাম আবুল হাসান বিন মুহাম্মদ আয্যাফরানী।

৮২০ সালের ২০ জানুয়ারি ৫২ বছর বয়সে ইমাম শাফেয়ি (রহ.) মিসরে ইন্তেকাল করেন। কায়রোতে 'বানু আবদ আল হাকামে' তাঁকে দাফন করা হয়। আইয়ুবি বংশের এক শাসক ১২১১ সালে তাঁর কবরের ওপর একটি সৌধ নির্মাণ করেন।

তথ্যসূত্র -ইন্টারনেট

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

সুফফা ইসলামের প্রথম আবাসিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান

মো.আবু রায়হান:  সুফফা মসজিদে নববির একটি স্থান। যেখানে একদল নিঃস্ব মুহাজির যারা মদিনায় হিজরত করেন এবং বাসস্থানের অভাবে মসজিদে নববির সেই স্থানে থাকতেন।এটি প্রথমদিকে মসজিদ উত্তর-পূর্ব কোণায় ছিল এবং রাসুলের আদেশে এটাকে পাতার ছাউনি দিয়ে ছেয়ে দেয়া হয় তখন থেকে এটি পরিচিতি পায় আল-সুফফা বা আল-জুল্লাহ নামে। ( A Suffah is a room that is covered with palm branches from date trees, which was established next to Al-Masjid al-Nabawi by Islamic prophet Muhammad during the Medina period.)। মোটকথা রাসুল (সা) মসজিদে-নববির চত্ত্বরের এক পাশে আস সুফফা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। সুফফা হলো ছাদবিশিষ্ট প্রশস্ত স্থান। সুফফার আকৃতি ছিল অনেকটা মঞ্চের মতো, মূল ভূমির উচ্চতা ছিল প্রায় অর্ধমিটার। প্রাথমিক পর্যায়ে এর দৈর্ঘ্য ছিল ১২ মিটার এবং প্রস্থ ছিল ৮ মিটার। মসজিদে নববির উত্তর-পূর্বাংশে নির্মিত সুফফার দক্ষিণ দিকে ছিল রাসুলুল্লাহ (সা.) ও তাঁর স্ত্রীদের অবস্থানের হুজরা এবং সংলগ্ন পশ্চিম পাশে ছিল মেহরাব।আসহাবে সুফফা অৰ্থ চত্বরবাসী। ঐ সকল মহৎ প্ৰাণ সাহাবি আসহাবে সুফফা নামে পরিচিত, যারা জ্ঞানার্জনের জন্য ভোগবিলাস ত্যা...

খন্দক যুদ্ধ কারণ ও ফলাফল

#মো. আবু রায়হান ইসলামের যুদ্ধগুলোর মধ্যে খন্দকের যুদ্ধ অন্যতম। ৫ হিজরির শাওয়াল মাসে খন্দকের যুদ্ধ সংঘটিত হয়। নবীজি (সা.) মদিনায় আসার আগে সেখানে বড় দুটি ইহুদি সম্প্রদায় বসবাস করত। বনু নাজির ও বনু কোরায়জা। ইহুদিদের প্ররোচনায় কুরাইশ ও অন্যান্য গোত্র মদিনার মুসলমানদের সঙ্গে যুদ্ধ করার প্রস্তুতি গ্রহণ করে। খন্দকের এই যুদ্ধ ছিল মদিনার ওপরে গোটা আরব সম্প্রদায়ের এক সর্বব্যাপী হামলা এবং কষ্টকর অবরোধের এক দুঃসহ অভিজ্ঞতা। এসময় ২৭দিন ধরে আরব ও ইহুদি গোত্রগুলি মদিনা অবরোধ করে রাখে। পারস্য থেকে আগত সাহাবি সালমান ফারসির পরামর্শে হযরত মুহাম্মদ (স:) মদিনার চারপাশে পরিখা খননের নির্দেশ দেন। প্রাকৃতিকভাবে মদিনাতে যে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ছিল তার সাথে এই ব্যবস্থা যুক্ত হয়ে আক্রমণ কারীদেরকে নিষ্ক্রিয় করে ফেলে। জোটবাহিনী মুসলিমদের মিত্র মদিনার ইহুদি বনু কোরায়জা গোত্রকে নিজেদের পক্ষে আনে যাতে তারা দক্ষিণ দিক থেকে শহর আক্রমণ করে। কিন্তু মুসলিমদের তৎপরতার ফলে তাদের জোট ভেঙে যায়। মুসলিমদের সুসংগঠিত অবস্থা, জোটবাহিনীর আত্মবিশ্বাস হ্রাস ও খারাপ আবহাওয়ার কারণে শেষপর্যন্ত আক্রমণ ব্যর্থ হয়।এই যুদ্ধে জয়ের ফলে ইসল...

কাবা ঘর নির্মাণের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস

মো. আবু রায়হানঃ কাবা মুসলমানদের কিবলা, অর্থাৎ যে দিকে মুখ করে নামাজ পড়ে বা সালাত আদায় করে, পৃথিবীর যে স্থান থেকে কাবা যে দিকে মুসলমানগণ ঠিক সে দিকে মুখ করে নামাজ আদায় করেন। হজ্জ এবং উমরা পালনের সময় মুসলমানগণ কাবাকে ঘিরে তাওয়াফ বা প্রদক্ষিণ করেন।কাবা শব্দটি এসেছে আরবি শব্দ মুকাআব অর্থ ঘন থেকে।কাবা একটি বড় ঘন আকৃতির ইমারত। (The Kaaba, meaning cube in Arabic, is a square building elegantly draped in a silk and cotton veil.)।যা সৌদি আরবের মক্কা শহরের মসজিদুল হারাম মসজিদের মধ্যখানে অবস্থিত। প্রকৃতপক্ষে মসজিদটি কাবাকে ঘিরেই তৈরি করা হয়েছে।কাবার ভৌগোলিক অবস্থান ২১.৪২২৪৯৩৫° উত্তর ৩৯.৮২৬২০১৩° পূর্ব।পৃথিবীর সর্বপ্রথম ঘর বায়তুল্লাহ বা পবিত্র কাবা ঘর ।আল্লাহ বলেন, নিশ্চয় সর্বপ্রথম ঘর যা মানুষের জন্য নির্মিত হয়েছে তা মক্কা নগরীতে। (সুরা আল ইমরান - ৯৬)। “প্রথম মাসজিদ বায়তুল্লাহিল হারাম তারপর বাইতুল মাকদিস, আর এ দুয়ের মধ্যে সময়ের ব্যবধান হলো চল্লিশ বছরের”।(মুসলিম- ৫২০)। ভৌগোলিকভাবেই গোলাকার পৃথিবীর মধ্যস্থলে কাবার অবস্থান। ইসলামের রাজধানী হিসেবে কাবা একটি সুপরিচিত নাম। পৃথিবীতে মাটির সৃষ্টি ...