সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

আসমানী কিতাব

 


আসমানী কিতাব বলতে এমন কতকগুলো গ্রন্থকে বোঝানো হয়, ইসলাম ধর্মমতে মুসলমানগণ যে গ্রন্থগুলোকে আল্লাহ্প্রদত্ত গ্রন্থ বলে বিশ্বাস করেন। ইসলাম ধর্মে যে ৭টি বিষয়ের উপর বিশেষ করে ঈমান আনতে বা বিশ্বাস স্থাপন করতে বলা হয়েছে তার মধ্যে একটি বিষয় হলো এই আসমানী কিতাব, যেগুলো সরাসরি আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে অবতীর্ণ হয়।সব আসমানি কিতাব ও সহিফার ওপর ঈমান রাখা আবশ্যক। ইরশাদ হয়েছে, ‘(মুত্তাকি তারাই) যারা আপনার প্রতি যা অবতীর্ণ হয়েছে এবং আপনার আগে যা অবতীর্ণ হয়েছে তার প্রতি ঈমান রাখে। ’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ৪)। বলা হয়, পৃথিবী সৃষ্টির পর থেকে সর্বমোট আসমানী কিতাব পাঠানো হয়েছে ১০৪টি। তার মধ্যে ৪টি হলো প্রধান আসমানী কিতাব ও বাকি ১০০টি সহীফা।ইবরাহিম (আ.)-এর ওপর ৩০টি সহিফা অবতীর্ণ হয়েছে। মুসা (আ.)-এর ওপর তাওরাতের আগে ১০টি সহিফা অবতীর্ণ করা হয়েছে। শিশ (আ.)-এর ওপর ৬০টি সহিফা অবতীর্ণ করা হয়েছে। আর বড় বড় কিতাবগুলোর মধ্যে তাওরাত মুসা (আ.)-এর ওপর অবতীর্ণ হয়েছে। জাবুর দাউদ (আ.)-এর ওপর অবতীর্ণ হয়েছে। ইনজিল ঈসা (আ.)-এর ওপর অবতীর্ণ হয়েছে। সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ আসমানি কিতাব কোরআন মজিদ মুহাম্মদ (সা.)-এর ওপর অবতীর্ণ হয়েছে। (সূত্র : সাবি : ৩/২৫৯; হাশিয়ায়ে জালালাইন : ২/৩৬৬)

রমজানে অবতীর্ণ হয়েছে প্রধান চারটি আসমানি কিতাব
হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, ‘মূলত কোরআন লাইলাতুল কদরে একসঙ্গে পৃথিবীর আসমানে অবতীর্ণ হয়েছে।অতঃপর তা দীর্ঘ ২৩ বছরব্যাপী রাসুল (সা.)-এর ওপর অবতীর্ণ হয়েছে। ’ (ইবনে কাসির ও তাফসিরে কুরতুবি) রমজানে অন্যান্য আসমানি কিতাব অবতীর্ণ হওয়া প্রসঙ্গে রাসুল (সা.) বলেন, ‘ইবরাহিম (আ.)-এর ওপর সহিফাগুলো রমজানের প্রথম রাতে অবতীর্ণ হয়। রমজানের ষষ্ঠ দিনে তাওরাত অবতীর্ণ হয়। ১৩ রমজানে ইনজিল অবতীর্ণ হয়েছে। জাবুর রমজানের ১৮তম দিনে অবতীর্ণ হয়। কোরআন অবতীর্ণ হয় রমজানের ২৪তম দিনে। ’ (মুসনাদে আহমাদ : ১৬৯৮৪)

আসমানি কিতাবের মূল বিষয়বস্তু
আসমানী কিতাব সমূহ আসমানী কিতাব সমূহ বিভিন্ন বিষয়ের উপর উপস্থাপন করেছেন। কিন্তু এই বিষয়গুলোর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং প্রধান বিষয়বস্তু গুলো হচ্ছে-
• আল্লাহতালার গুণাবলীর বর্ণনা।
• সকল নবী-রাসূলগণের বর্ণনা।
• আল্লাহতালা পরিচয়।
• অবাধ্য কাফেরদের পরিণতির বর্ণনা।
• হালাল ও হারামের বর্ণনা।
• ইসলামী বিধি-বিধান সংক্রান্ত বর্ণনা।
• উপদেশ সুসংবাদ সম্পর্কিত বর্ণনা।
• পূর্ববর্তী জাতি সমূহের বর্ণনা।
• আকিদা বিষয়বস্তু বর্ণনা।
• পরকাল সম্পর্কিত বিষয়বস্তু বর্ণনা।
• শান্তি ও সতর্কীকরণ সম্পর্কিত বর্ণনা।

বড় চারটি কিতাব হলো তাওরাত, জাবুর, ইঞ্জিল ও কোরআন। এই চার বড় গ্রন্থ নাজিল হয়েছে বিশিষ্ট চারজন নবী ও রাসুলের প্রতি।নবী (আ.)-এর ওপর অবতীর্ণ প্রধান কিতাব চারটি। তা হলো তাওরাত, জাবুর, ইনজিল ও কোরআন। রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, ‘তাওরাতের বদলে আমাকে সুরা বাকারা থেকে সুরা তাওবা তথা সাতটি বড় সুরা দেওয়া হয়েছে। জাবুরের বদলে সুরা ইউনুস থেকে সুরা কাসাস পর্যন্ত তথা শতাধিক আয়াতবিশিষ্ট সুরা দেওয়া হয়েছে। ইনজিলের বদলে আমাকে সুরা আনকাবুত থেকে সুরা হুজরাত তথা মাসানি সুরা দেওয়া হয়েছে। সুরা কফ থেকে শেষ পর্যন্ত মুফাসসাল বা ছোট সুরাগুলো আমাকে বেশি দেওয়া হয়েছে। ’ (তাবরানি, হাদিস : ৮০০৩; মুসনাদে আহমাদ, হাদিস : ১৭০৩)

তাওরাত
তাওরাত হজরত মুসা (আ.)–এর প্রতি ইবরানি বা হিব্রু ভাষায়।‘তাওরাত’ শব্দটি হিব্রু ভাষায় শিক্ষা দেওয়া, দিকনির্দেশনা প্রদান বা নীতি প্রণয়ন করার অর্থে ব্যবহৃত হয়। ইহুদি গোষ্ঠীর জীবনবিধান হিসেবে তা মুসা (আ.)-এর ওপর অবতীর্ণ হয়েছে। খ্রিস্টানদের ভাষ্য অনুযায়ী, এ গ্রন্থটি ‘আল কিতাবুল মুকাদ্দাস’ বা বাইবেলের ‘ওল্ড টেস্টামেন্ট’ (Old testament বা আল আহদুল কদিম)-এর অন্তর্ভুক্ত। ৩৮টিরও বেশি অধ্যায়ে প্রণীত ‘কিতাবুল মুকাদ্দাস’ সর্বমোট তিন ভাগে বিভক্ত।এক. সফরের পাঁচটি অধ্যায়। গবেষক ও ইহুদিদের অনেক গোষ্ঠীর কাছে এটি তাওরাত হিসেবে সমাদৃত। তাওরাত মূলত পাঁচটি ‘সফর’ বা গ্রন্থের সমন্বিত রূপ। দুই. সফরুল আনবিয়ার ২০টি অধ্যায়। তিন. মাকতুবাতের ১৩টি অধ্যায়। বাইবেলের এ অধ্যায়গুলো একসঙ্গে ‘তানাক’ (tanakh) নামেও পরিচিত। আর ইহুদিদের একটি গোষ্ঠী ‘ফিররিস’রা তাদের বিভিন্ন বিধি-বিধান মৌখিকভাবেও সংরক্ষণ করেছিল, যা ‘তালমুদ’ নামে পরিচিত। (আল আকিদাতুল ইসলামিয়্যাহ, আবদুর রহমান হাবানকাহ; আল ইয়াহুদিয়্যাহ, ড. আহমাদ শিবলি)তাওরাত আল্লাহর পক্ষ থেকে অবতীর্ণ হলেও তা কালক্রমে কিছু অসাধু ও ধর্মব্যবসায়ীর দ্বারা বিকৃত হয়েছে। আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআনে তাওরাতের বিকৃত হওয়ার কথাও বর্ণনা করেছেন। তাদের সম্পর্কে আল্লাহ বলেন, ‘তাদের মধ্যে একদল লোক আছে, যারা কিতাবকে জিব দ্বারা বিকৃত করে, যাতে তোমরা তাকে আল্লাহর কিতাবের অংশ মনে করো; কিন্তু তা কিতাবের অংশ নয় এবং তারা বলে, এটি আল্লাহর পক্ষ থেকে, অথচ তা আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রেরিত নয়, তারা জেনেশুনে আল্লাহ সম্পর্কে মিথ্যা বলে। ’ (সুরা : আলে ইমরান, আয়াত : ৭৮)সামান্য অর্থের বিনিময়ে ইহুদিদের তাওরাতের বিধি-বিধান পরিবর্তন সম্পর্কেও পবিত্র কোরআনে বর্ণনা এসেছে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘অতএব তাদের জন্য ধ্বংস, যারা নিজ হাতে কিতাব রচনা করে এবং সামান্য অর্থের জন্য বলে এটা আল্লাহর পক্ষ থেকে, নিজ হাতে তারা যা রচনা করেছে এ জন্য তাদের ধ্বংস হোক, তারা যা উপার্জন করেছে এ জন্য তাদের ধ্বংস হোক। ’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ৭৯)

জাবুর
দাউদ (আ.)-এর গোত্রের মাতৃভাষা ছিল ইউনানি। তাই ‘জাবুর’ ইউনানি বা অ্যারামাইক ভাষায় অবতীর্ণ হয়। জাবুর অর্থ লিপিবদ্ধ। পবিত্র কোরআনের ভাষ্য অনুযায়ী, জাবুর আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে দাউদ (আ.)-এর ওপর অবতীর্ণ হয়েছে। বনি ইসরাঈলের জন্য অবতীর্ণ এই কিতাবে দাউদ (আ.)-এর বিভিন্ন তাসবিহাত বা আল্লাহর গুণাবলিমূলক কথার বর্ণনা এসেছে। কথিত আছে যে জাবুর কিতাব দাউদ (আ.), সোলায়মান (আ.) ও কয়েকজন নবীর ছন্দোবদ্ধ কথামালার সমষ্টি।হজরত দাউদ (আ.)-এর ঊর্ধ্বতন একাদশ পুরুষ হজরত ইবরাহিম (আ.)-এর দুজন স্ত্রী ছিলেন। বিবি হাজেরার গর্ভজাত সন্তান হজরত ইসমাঈল (আ.)-এর বংশধারায় পৃথিবীতে শুভাগমন করেন বিশ্বনবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)। আর বিবি সারার গর্ভের সন্তান হজরত ইসহাক (আ.)-এর বংশধারায় হজরত দাউদ (আ.) জন্মগ্রহণ করেন। তিনি জালুত নামক অত্যাচারী রাজাকে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে পরাজিত ও হত্যা করে এক বিশাল রাজত্ব লাভ করেন, যার রাজধানী ছিল জেরুজালেম।হজরত দাউদ (আ.) নানা রকম মানবিক গুণে ভূষিত ছিলেন। আল্লাহ তাআলা তাঁকে এমন সুমধুর কণ্ঠস্বর দান করেছিলেন যে সুললিত ভাষায় তিনি জাবুর তিলাওয়াত করতেন। তাঁর পাঠ শুনে বনের পক্ষিকুল নেমে আসত এবং মনোযোগসহকারে তা শুনত।

ইঞ্জিল
ইঞ্জিল হজরত ঈসা (আ.)–এর প্রতি সুরিয়ানি ভাষায়। ইউনানি বা গ্রিক ভাষায় ব্যবহৃত ইনজিল (gospel) শব্দের অর্থ সুসংবাদ বা মুক্তির সুসংবাদ। খ্রিস্টানদের বিশ্বাস অনুযায়ী, ঈসা বা ইয়াসু (আ.)-এর আগমনের সুসংবাদ। পবিত্র কোরআন অনুযায়ী, আল্লাহ তাআলা বনি ইসরাঈলের হিদায়াতের জন্য ঈসা (আ.)-এর ওপর ইনজিল অবতীর্ণ করেন।খ্রিস্টানদের বিশ্বাস অনুযায়ী, ‘কিতাবুল মুকাদ্দাস’ বা বাইবেল প্রধানত দুই ভাগে বিভক্ত—এক. ‘আল আহদুল কাদিম’ বা ওল্ড টেস্টামেন্ট; দুই. ‘আল আহদুল জাদিদ’ বা নিউ টেস্টামেন্ট। খ্রিস্টানদের বিশ্বাস অনুযায়ী, ঈসা (আ.)-এর আবির্ভাবের আগ পর্যন্ত মুসা (আ.)-এর তাওরাতসহ অপরাপর গ্রন্থের সমন্বিত রূপ হলো ওল্ড টেস্টামেন্ট। এতে প্রায় ৩৮টি বা তারও বেশি গ্রন্থ থাকলেও সব কয়টি ইহুদিদের সব গোষ্ঠীর কাছে গ্রহণযোগ্য নয়।আর ঈসা (আ.)-এর ওপর অবতীর্ণ ইনজিলসহ আরো কিছু কিতাবের সমন্বিত রূপ হলো নিউ টেস্টামেন্ট (New testament)। ইনজিলের মধ্যেও চার ধরনের ইনজিল বিদ্যমান। মথি (Matthew), মার্ক (Mark), লুক (Luke) ও ইউহান্না (Jhon) নামের এ চারটি ইনজিল ঈসা (আ.)-এর মৃত্যুর অনেক পর তাঁর সঙ্গীরা রচনা করে। (আল মাসিহিয়্যাহ, ড. আহমদ শিবলি)

কোরআন
কোরআন হজরত মুহাম্মদ (সা.)–এর প্রতি আরবি ভাষায় অবতীর্ণ করা হয়। সহিফা ও কিতাবের মধ্যে কোরআন হলো সর্বশেষ আসমানি কিতাব।কোরআন সর্বশেষ আসমানি গ্রন্থ এবং হজরত মুহাম্মদ (সা.) সর্বশেষ নবী ও রাসুল। কিয়ামত পর্যন্ত আগত সব মানুষকে দুনিয়ার শান্তি ও পরকালের মুক্তির জন্য কোরআনের দর্শন ও নির্দেশনা এবং মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)–এর অনুপম আদর্শ অনুকরণ ও অনুসরণ করতে হবে।কোরআনের বিষয়বস্তু হলো মানুষ ও মানুষের জীবনের যাবতীয় বিষয়। কোরআনের বিধানগুলো মানবিক ও কল্যাণকর; সহজ, সুন্দর ও যৌক্তিক।পবিত্র কোরআনে ১১৪টি সুরা আছে, যার ৮৬টি মক্কায় অবতীর্ণ এবং ২৮টি মদিনায় অবতীর্ণ। মক্কি সুরায় সাধারণত তাওহিদ, রিসালাত, আখিরাত, জান্নাত, জাহান্নাম, হিসাব ও আমল সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। আর মাদানি সুরাগুলোতে সাধারণত হালাল, হারাম, ইসলামী বিধি-নিষেধ, আচার-ব্যবহার, সমাজ-রাষ্ট্র সম্পর্কে আলোকপাত করা হয়েছে। প্রসিদ্ধ মতানুসারে কোরআনের আয়াতের সর্বমোট সংখ্যা ছয় হাজার ২৩৬। (মাবাহিস ফি উলুমিল কোরআন, ড. মান্না কত্তান)
সর্বশেষ আসমানি কিতাব হিসেবে কোরআন পুরো মানবজাতির জন্য অবতীর্ণ হয়েছে। ফলে অতীতের সব বিধি-বিধানও রহিত হয়েছে। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘আপনি বলুন, হে লোকেরা, আমি তোমাদের সবার কাছে আল্লাহর রাসুল হিসেবে প্রেরিত হয়েছি। ’ (সুরা : আরাফ, আয়াত : ১৫৮)আল্লাহ তাআলা আরো বলেন, ‘আমি আপনার ওপর সত্যসহ কিতাব অবতীর্ণ করেছি ইতিপূর্বে অবতীর্ণ কিতাবের সত্যায়নকারী ও তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে। ’ (সুরা : মায়িদা, আয়াত : ৪৮)এখানে কোরআনকে তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। অর্থাৎ অতীতের সব কিতাবের ব্যাপারে সাক্ষ্য দেবে এবং ত্রুটি-বিচ্যুতি বর্ণনা করবে। (মাজমুউল ফাতওয়া : ৪৩/১৭) অন্যান্য আসমানি কিতাবের ব্যাপারে ইসলামের নির্দেশনা হলো, তাদের কিতাবে বর্ণিত বিষয়াদি সম্পর্কে কোনো মন্তব্য না করা। চুপ থাকাই উত্তম। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, ‘আসমানি কিতাব প্রাপ্তদের তোমরা সত্যায়ন করবে না এবং মিথ্যাবাদীও বলবে না। তোমরা শুধু বলবে, আমরা ঈমান এনেছি আল্লাহর প্রতি, আমাদের ওপর যা অবতীর্ণ হয়েছে এবং তোমাদের ওপর যা অবতীর্ণ হয়েছে তার প্রতিও। ’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৭৩৬২)





মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

সুফফা ইসলামের প্রথম আবাসিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান

মো.আবু রায়হান:  সুফফা মসজিদে নববির একটি স্থান। যেখানে একদল নিঃস্ব মুহাজির যারা মদিনায় হিজরত করেন এবং বাসস্থানের অভাবে মসজিদে নববির সেই স্থানে থাকতেন।এটি প্রথমদিকে মসজিদ উত্তর-পূর্ব কোণায় ছিল এবং রাসুলের আদেশে এটাকে পাতার ছাউনি দিয়ে ছেয়ে দেয়া হয় তখন থেকে এটি পরিচিতি পায় আল-সুফফা বা আল-জুল্লাহ নামে। ( A Suffah is a room that is covered with palm branches from date trees, which was established next to Al-Masjid al-Nabawi by Islamic prophet Muhammad during the Medina period.)। মোটকথা রাসুল (সা) মসজিদে-নববির চত্ত্বরের এক পাশে আস সুফফা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। সুফফা হলো ছাদবিশিষ্ট প্রশস্ত স্থান। সুফফার আকৃতি ছিল অনেকটা মঞ্চের মতো, মূল ভূমির উচ্চতা ছিল প্রায় অর্ধমিটার। প্রাথমিক পর্যায়ে এর দৈর্ঘ্য ছিল ১২ মিটার এবং প্রস্থ ছিল ৮ মিটার। মসজিদে নববির উত্তর-পূর্বাংশে নির্মিত সুফফার দক্ষিণ দিকে ছিল রাসুলুল্লাহ (সা.) ও তাঁর স্ত্রীদের অবস্থানের হুজরা এবং সংলগ্ন পশ্চিম পাশে ছিল মেহরাব।আসহাবে সুফফা অৰ্থ চত্বরবাসী। ঐ সকল মহৎ প্ৰাণ সাহাবি আসহাবে সুফফা নামে পরিচিত, যারা জ্ঞানার্জনের জন্য ভোগবিলাস ত্যা...

খন্দক যুদ্ধ কারণ ও ফলাফল

#মো. আবু রায়হান ইসলামের যুদ্ধগুলোর মধ্যে খন্দকের যুদ্ধ অন্যতম। ৫ হিজরির শাওয়াল মাসে খন্দকের যুদ্ধ সংঘটিত হয়। নবীজি (সা.) মদিনায় আসার আগে সেখানে বড় দুটি ইহুদি সম্প্রদায় বসবাস করত। বনু নাজির ও বনু কোরায়জা। ইহুদিদের প্ররোচনায় কুরাইশ ও অন্যান্য গোত্র মদিনার মুসলমানদের সঙ্গে যুদ্ধ করার প্রস্তুতি গ্রহণ করে। খন্দকের এই যুদ্ধ ছিল মদিনার ওপরে গোটা আরব সম্প্রদায়ের এক সর্বব্যাপী হামলা এবং কষ্টকর অবরোধের এক দুঃসহ অভিজ্ঞতা। এসময় ২৭দিন ধরে আরব ও ইহুদি গোত্রগুলি মদিনা অবরোধ করে রাখে। পারস্য থেকে আগত সাহাবি সালমান ফারসির পরামর্শে হযরত মুহাম্মদ (স:) মদিনার চারপাশে পরিখা খননের নির্দেশ দেন। প্রাকৃতিকভাবে মদিনাতে যে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ছিল তার সাথে এই ব্যবস্থা যুক্ত হয়ে আক্রমণ কারীদেরকে নিষ্ক্রিয় করে ফেলে। জোটবাহিনী মুসলিমদের মিত্র মদিনার ইহুদি বনু কোরায়জা গোত্রকে নিজেদের পক্ষে আনে যাতে তারা দক্ষিণ দিক থেকে শহর আক্রমণ করে। কিন্তু মুসলিমদের তৎপরতার ফলে তাদের জোট ভেঙে যায়। মুসলিমদের সুসংগঠিত অবস্থা, জোটবাহিনীর আত্মবিশ্বাস হ্রাস ও খারাপ আবহাওয়ার কারণে শেষপর্যন্ত আক্রমণ ব্যর্থ হয়।এই যুদ্ধে জয়ের ফলে ইসল...

কাবা ঘর নির্মাণের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস

মো. আবু রায়হানঃ কাবা মুসলমানদের কিবলা, অর্থাৎ যে দিকে মুখ করে নামাজ পড়ে বা সালাত আদায় করে, পৃথিবীর যে স্থান থেকে কাবা যে দিকে মুসলমানগণ ঠিক সে দিকে মুখ করে নামাজ আদায় করেন। হজ্জ এবং উমরা পালনের সময় মুসলমানগণ কাবাকে ঘিরে তাওয়াফ বা প্রদক্ষিণ করেন।কাবা শব্দটি এসেছে আরবি শব্দ মুকাআব অর্থ ঘন থেকে।কাবা একটি বড় ঘন আকৃতির ইমারত। (The Kaaba, meaning cube in Arabic, is a square building elegantly draped in a silk and cotton veil.)।যা সৌদি আরবের মক্কা শহরের মসজিদুল হারাম মসজিদের মধ্যখানে অবস্থিত। প্রকৃতপক্ষে মসজিদটি কাবাকে ঘিরেই তৈরি করা হয়েছে।কাবার ভৌগোলিক অবস্থান ২১.৪২২৪৯৩৫° উত্তর ৩৯.৮২৬২০১৩° পূর্ব।পৃথিবীর সর্বপ্রথম ঘর বায়তুল্লাহ বা পবিত্র কাবা ঘর ।আল্লাহ বলেন, নিশ্চয় সর্বপ্রথম ঘর যা মানুষের জন্য নির্মিত হয়েছে তা মক্কা নগরীতে। (সুরা আল ইমরান - ৯৬)। “প্রথম মাসজিদ বায়তুল্লাহিল হারাম তারপর বাইতুল মাকদিস, আর এ দুয়ের মধ্যে সময়ের ব্যবধান হলো চল্লিশ বছরের”।(মুসলিম- ৫২০)। ভৌগোলিকভাবেই গোলাকার পৃথিবীর মধ্যস্থলে কাবার অবস্থান। ইসলামের রাজধানী হিসেবে কাবা একটি সুপরিচিত নাম। পৃথিবীতে মাটির সৃষ্টি ...