সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

রাসুলের (সা) শাফায়াত



আল্লাহর প্রিয় হাবিব হযরত মুহাম্মদ (সা.) কে আল্লাহ তায়ালা সর্বপ্রথম সুপারিশ করার আদেশ দিবেন। এ প্রসঙ্গে হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘কেয়ামতের দিন আমি আদম সন্তানের নেতা হব। সর্ব প্রথম আমাকেই কবর থেকে ওঠানো হবে। কেয়ামতের দিন আমিই সর্ব প্রথম সুপারিশ করবো এবং আমার সুপারিশই সর্ব প্রথম গ্রহণ করা হবে।’ (সহীহ মুসলিম: হাদিস: )।শাফায়াত আরবী শব্দ। শাফায়াত-এর শাব্দিক অর্থ হচ্ছে, সুপারিশ, মাধ্যম ও দোয়া বা প্রার্থনা। পরিভাষায় পরকালীন জীবনের হিসাব নিকাশের প্রাক্কালে কিয়ামত ময়দানে বিভীষিকাময় মুহুর্তে আল্লাহর ইচ্ছায় আখেরী নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) কর্তৃক উম্মতদের মুক্তির লক্ষ্যে আল্লাহর নিকট সুপারিশকে ‘শাফায়াত’ বলে। রাসুল (সা.) কর্তৃক শাফায়াত লাভ পরম সৌভাগ্যের। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন কেবলমাত্র তাঁর প্রিয়তম রাসুল হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আরাইহি ওয়া সাল্লামকে ‘মাক্বামে মাহমুদ’ দান করবেন। উল্লেখ্য যে, মাক্বামে মাহমুদ হলো, যে স্থানে অবস্থান করে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহর হুকুমে ‘শাফায়াত’ করবেন।

শাফায়াতের প্রকারভেদ-
কোরআন ও হাদিস গবেষণা করে কাজি ইয়াজ (রহ.) বলেন শাফায়াত পাঁচ প্রকার-
১. হাশরের ময়দানে হিসাব শুরুর সুপারিশ। এই শাফায়াত নবীজির সঙ্গে খাস।
২. একদল লোককে বিনা হিসাবে জান্নাতে প্রবেশেরে সুপারিশ। আর এটাও শুধু আমাদের নবীজির জন্য প্রযোজ্য। অন্য কেউ এরূপ সুপারিশের সুযোগ পাবে না।
৩. জাহান্নাম অবধারিত হয়েছে এমন একদল লোককে জাহান্নাম থেকে মুক্তির জন্য সুপারিশ। নবী আলাইহিস সালাম ছাড়াও আল্লাহর ইচ্ছানুসারে অনেকে এই সুপারিশ করবে।
৪. জাহান্নামের শাস্তি ভোগকারী লোকদের জাহান্নাম থেকে মুক্তির সুপারিশ। রাসুল আলাইহিস সালাম, ফেরেশতা, নেককার মুমিনসহ অনেকেই এ ধরনের সুপারিশ করবেন।
৫. জান্নাতে মর্যাদা বৃদ্ধির জন্য শাফায়াত। -হাশিয়ায়ে নববি : ১/১০৪
রাসুলুল্লাহর (সা) সুপারিশ -
হাদীসে এসেছে, কিয়ামতের দিন মানুষ সমুদ্রের ঢেউয়ের মত ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে পড়বে। তাই তারা আদম (আঃ)-এর কাছে এসে বলবে, আমাদের জন্য আপনার রবের নিকট সুপারিশ করুন।তিনি বলবেনঃ এ কাজের জন্য আমি নই। বরং তোমরা ইব্রাহীম (আঃ) এর কাছে যাও। কারণ, তিনি হলেন আল্লাহর খলীল। তখন তারা ইব্রাহীম (আঃ) এর কাছে আসবে। তিনি বলবেনঃ আমি এ কাজের জন্য নই। তবে তোমরা মূসা (আঃ)-এর কাছে যাও। কারণ তিনি আল্লাহর সঙ্গে কথা বলেছেন। তখন তারা মূসা (আঃ) এর কাছে আসবে। তিনি বলবেনঃ আমি তো এ কাজের জন্য নই। তোমরা ‘ঈসা (আঃ) এর কাছে যাও। কারণ তিনিই আল্লাহর রূহ ও বাণী। তারা তখন ‘ঈসা (আঃ) এর কাছে আসবে। তিনি বলবেনঃ আমি তো এ কাজের জন্য নই। তোমরা বরং মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কাছে যাও। এরপর তারা আমার কাছে আসবে। আমি বলব, আমিই এ কাজের জন্য। আমি তখন আমার রবের নিকট অনুমতি চাইব।
আমাকে অনুমতি দেয়া হবে। আমাকে প্রশংসাসূচক বাক্য ইলহাম করা হবে যা দিয়ে আমি আল্লাহর প্রশংসা করব, যেগুলো এখন আমার জানা নেই। আমি সেসব প্রশংসা বাক্য দিয়ে প্রশংসা করব এবং সিজদায় পড়ে যাব। তখন আমাকে বলা হবে, ইয়া মুহাম্মাদ! মাথা উঠাও। তুমি বল, তোমার কথা শোনা হবে। চাও, দেয়া হবে। সুপারিশ কর, গ্রহণ করা হবে। তখন আমি বলবো, হে আমার প্রতিপালক! আমার উম্মাত! আমার উম্মাত! বলা হবে, যাও, যাদের হৃদয়ে যবের দানা পরিমাণ ঈমান আছে, তাদেরকে জাহান্নাম থেকে বের করে দাও। আমি গিয়ে এমনই করব। তারপর আমি ফিরে আসব এবং পুনরায় সেসব প্রশংসা বাক্য দ্বারা আল্লাহর প্রশংসা করবো এবং সিজদায় পড়ে যাবো।
তখন বলা হবে, হে মুহাম্মাদ! মাথা উঠাও। তোমার কথা শোনা হবে। চাও, দেয়া হবে। সুপারিশ কর, গ্রহণ করা হবে। তখনো আমি বলব, হে আমার রব! আমার উম্মাত! আমার উম্মাত! তখন বলা হবে, যাও, যাদের এক অণু কিংবা সরিষা পরিমাণ ঈমান আছে তাদেরকে জাহান্নাম থেকে বের কর। আমি গিয়ে তাই করব। আমি আবার ফিরে আসব এবং সেসব প্রশংসা বাক্য দিয়ে আল্লাহর প্রশংসা করবো। আর সিজদায় পড়ে যাবো। আমাকে বলা হবে, হে মুহাম্মাদ! মাথা উঠাও। বল, তোমার কথা শোনা হবে। চাও, দেয়া হবে। সুপারিশ কর, গ্রহণ করা হবে। আমি তখন বলবো, হে আমার রব, আমার উম্মাত! আমার উম্মাত! এরপর আল্লাহ্ বলবেন, যাও, যাদের অন্তরে সরিষার দানার চেয়েও অতি ক্ষুদ্র পরিমাণও ঈমান আছে, তাদেরকেও জাহান্নাম থেকে বের করে আন। আমি যাবো এবং তাই করবো।
তখন বলা হবে, হে মুহাম্মাদ! মাথা উঠাও। বল, তোমার কথা শোনা হবে। চাও, দেয়া হবে। শাফায়াত কর, গ্রহণ করা হবে। আমি বলব, হে আমার প্রতিপালক! আমাকে তাদের সম্পর্কে শাফায়াত করার অনুমতি দান কর, যারা ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ্’ বলেছে। তখন আল্লাহ্ বলবেন, আমার ইয্যত, আমার পরাক্রম, আমার বড়ত্ব ও আমার মহত্তে¡র শপথ! যারা ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ্’ বলেছে, আমি অবশ্য অবশ্যই তাদের সবাইকে জাহান্নাম থেকে বের করব। (সহীহ বুখারী: হাদিস: ৭৫১০)।
এ হাদীস শরীফ থেকে বোঝা গেলো রাসুলে করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হচ্ছেন শাফায়াতে কোবরার অধিকারী। অর্থাৎ তাঁর পূর্বে কেউই সুপারিশ করতে পারবে না। সকল নবী, রসূল, আওলিয়ায়ে কিরাম, আলেম, নামাজ, রোজা, কুরআন, দুরূদ ইত্যাদি বিষয় সকলেই সুপারিশ করবে কিন্তু এসকল সুপারিশ হবে শাফায়াতে কোবরা রাসুলে করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুপারিশের পর। তাঁর কাছে মানুষজন সুপারিশের জন্য আসলে তিনি তাদেরকে ফিরিয়ে দেবেন না। আর এসবই হবে আল্লাহ পাকের সামনে।
কারা সুপারিশ করতে পারবেন -
রাসুলে করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন, কিয়ামতের দিন তিন শ্রেণীর লোক সুপারিশ করবে।
(১) নবী রসূল আলাইহিমুস সালাম ।
(২) উলামায়ে কিরাম রহমাতুল্লাহি আলাইহিম।
(৩) শহীদ গন।
[তথ্যসূত্রঃ- সুনানে ইবনে মাজাহ শরীফ, মিশকাত শরীফঃ ৫৩৭০]
তাছাড়া বিভিন্ন হাদিস শরীফ থেকে জানা যায় যে সকল নবী, রসূল, আওলিয়ায়ে কিরাম, আলেম, কুরআনে হাফেজ, নামাজ, রোজা, কুরআন, দুরূদ ইত্যাদি সকলেই কাল কিয়ামতের কঠিন দিনে (এমন কি কবরে) সুপারিশ করবে।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

যে গাছ ইহুদিদের আশ্রয় দেবে অর্থাৎ ইহুদিদের বন্ধু গাছ

মো.আবু রায়হান:  কিয়ামত সংঘটিত হবার  পূর্বে হযরত ঈসা (আ.) এর সঙ্গে দাজ্জালের জেরুজালেমে যুদ্ধ হবে। সেই যুদ্ধে ইহুদিরা দাজ্জালের পক্ষাবলম্বন করবে। হযরত ঈসা (আ.) দাজ্জালকে হত্যা করবেন।এদিকে  ইহুদিরা প্রাণ ভয়ে পালাতে চেষ্টা করবে।  আশেপাশের গাছ ও পাথর/ দেয়ালে আশ্রয় নেবে। সেদিন গারকাদ নামক একটি গাছ ইহুদিদের আশ্রয় দেবে। গারকাদ ইহুদীবান্ধব গাছ।গারকাদ একটি আরবি শব্দ। এর অর্থ হল কাটাওয়ালা ঝোঁপ।গারকাদ এর ইংরেজী প্রতিশব্দ Boxthorn। Boxএর অর্থ সবুজ ঝোঁপ এবং thorn এর অর্থ কাঁটা। এ ধরনের গাছ বক্সথর্ন হিসেবেই পরিচিত। এই গাছ চেরি গাছের মতো এবং চেরি ফলের মতো লাল ফলে গাছটি শোভিত থাকে।  ইসরায়েলের সর্বত্র বিশেষত অধিকৃত গাজা ভূখন্ডে গারকাদ গাছ ব্যাপকহারে  দেখতে পাওয়া যায়।ইহুদিরা কোথাও পালাবার স্থান পাবে না। গাছের আড়ালে পালানোর চেষ্টা করলে গাছ বলবে, হে মুসলিম! আসো, আমার পিছনে একজন ইহুদী লুকিয়ে আছে। আসো এবং তাকে হত্যা কর। পাথর বা দেয়ালের পিছনে পলায়ন করলে পাথর বা দেয়াল বলবে, হে মুসলিম! আমার পিছনে একজন ইহুদী লুকিয়ে আছে, আসো! তাকে হত্যা কর। তবে গারকাদ নামক গাছ ইহুদিদেরকে ...

খন্দক যুদ্ধ কারণ ও ফলাফল

#মো. আবু রায়হান ইসলামের যুদ্ধগুলোর মধ্যে খন্দকের যুদ্ধ অন্যতম। ৫ হিজরির শাওয়াল মাসে খন্দকের যুদ্ধ সংঘটিত হয়। নবীজি (সা.) মদিনায় আসার আগে সেখানে বড় দুটি ইহুদি সম্প্রদায় বসবাস করত। বনু নাজির ও বনু কোরায়জা। ইহুদিদের প্ররোচনায় কুরাইশ ও অন্যান্য গোত্র মদিনার মুসলমানদের সঙ্গে যুদ্ধ করার প্রস্তুতি গ্রহণ করে। খন্দকের এই যুদ্ধ ছিল মদিনার ওপরে গোটা আরব সম্প্রদায়ের এক সর্বব্যাপী হামলা এবং কষ্টকর অবরোধের এক দুঃসহ অভিজ্ঞতা। এসময় ২৭দিন ধরে আরব ও ইহুদি গোত্রগুলি মদিনা অবরোধ করে রাখে। পারস্য থেকে আগত সাহাবি সালমান ফারসির পরামর্শে হযরত মুহাম্মদ (স:) মদিনার চারপাশে পরিখা খননের নির্দেশ দেন। প্রাকৃতিকভাবে মদিনাতে যে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ছিল তার সাথে এই ব্যবস্থা যুক্ত হয়ে আক্রমণ কারীদেরকে নিষ্ক্রিয় করে ফেলে। জোটবাহিনী মুসলিমদের মিত্র মদিনার ইহুদি বনু কোরায়জা গোত্রকে নিজেদের পক্ষে আনে যাতে তারা দক্ষিণ দিক থেকে শহর আক্রমণ করে। কিন্তু মুসলিমদের তৎপরতার ফলে তাদের জোট ভেঙে যায়। মুসলিমদের সুসংগঠিত অবস্থা, জোটবাহিনীর আত্মবিশ্বাস হ্রাস ও খারাপ আবহাওয়ার কারণে শেষপর্যন্ত আক্রমণ ব্যর্থ হয়।এই যুদ্ধে জয়ের ফলে ইসল...

উটের যুদ্ধ ইসলামের প্রথম ভাতৃঘাতি যুদ্ধ

#মো.আবু রায়হান উটের যুদ্ধ বা উষ্ট্রের যুদ্ধ বা জামালের যুদ্ধ ( Battle of the Camel) ৬৫৬ খ্রিষ্টাব্দের শেষের দিকে ইরাকের বসরায় সংঘটিত হয়। এটি ইসলামের ইতিহাসের প্রথম গৃহযুদ্ধ।এই যুদ্ধ ছিল ইসলামের চতুর্থ খলিফা হযরত আলী এর বিরুদ্ধে হযরত তালহা-জুবায়ের ও আয়েশা (রা)সম্মলিত যুদ্ধ। পটভূমি হযরত ওসমান (রা) এর বিভিন্ন প্রদেশে প্রাদেশিক শাসনকর্তা নিয়োগ নিয়ে একদল তার বিরুদ্ধে অভিযোগ টেনে বিদ্রোহ শুরু করে।হযরত ওসমান বিভিন্নভাবে তাদের শান্ত করার চেষ্টা করতে থাকেন। তাদের কথামত মিশরের গভর্নরকে প্রতিস্থাপন করে আবু বকরের ছেলে মুহাম্মদ ইবনে আবু বকর কে নিয়োগ করলেও বিদ্রোহীরা শান্ত হয় নি। তারা নানাভাবে অভিযোগ টেনে এনে ওসমান (রা) এর অপসারণের দাবী করতে থাকে। ওসমান সবকিছু মীমাংসার আশ্বাস দিলেও তারা ৬৫৬ সালের ১৭ জুন তারা বাড়ি অবরুদ্ধ করে এবং এক পর্যায়ে তারা তার কক্ষে প্রবেশ করে কুরআন তেলাওয়াত করা অবস্থায় হত্যা করে।ওসমান (রা.)-এর হত্যাকাণ্ডের পর আলী (রা.) খলিফা হন। কিন্তু দুঃখজনকভাবে ক্ষমতা গ্রহণ করে যখনই আলী (রা.) ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার কাজে হাত দেন তখনই ধর্মীয় ও রাজনৈতিক দূরদর্শিতার অভাবের কার...