সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

আবুল মুজাফ্ফর মুহিউদ্দীন মুহাম্মদ আওরঙ্গজেব



বাদশাহ আলমগীরের (১৬১৮-১৭০৭) পুরো নাম আবুল মুজাফ্ফর মুহিউদ্দীন মুহাম্মদ আওরঙ্গজেব। তাঁর বাবা ছিলেন মোগল সম্রাট শাহজাহান। দিল্লির সিংহাসনে অধিষ্ঠিত হওয়ার সময় ‘বাদশাহ গাজী’ উপাধি পান আলমগীর। আওরঙ্গজেবের রাজত্বকালে উত্তর-পূর্ব, উত্তর-পশ্চিম এবং দক্ষিণে মুগল সাম্রাজ্যের বিস্তৃতি ঘটে।তাঁর সময়কালে আসাম ও চট্টগ্রামে অভিযান চালায় মোগল সেনারা। চট্টগ্রামে তখন পর্তুগিজদের দাপট ছিল। চট্টগ্রাম অভিযানের আগে মোগলরা সন্দ্ব্বীপ দখল করে। চট্টগ্রাম দখলের সময় শত্রুপক্ষের হাতে বন্দি বিপুলসংখ্যক বাঙালিকে মোগলরা মুক্ত করে। সম্রাটের আদেশে তখন চট্টগ্রামের নাম দেওয়া হয় ইসলামাবাদ।

মোগল সম্রাট হিসেবে আওরঙ্গজেবের শাসনামল বিভিন্ন যুদ্ধের মাধ্যমে সাম্রাজ্যের সীমানা বহুদূর বিস্তার করেন। তাঁর আমলে দক্ষিণাঞ্চলে ৪ মিলিয়ন বর্গ কিলোমিটার মোগল সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত হয়।তিনি ১৫৮ মিলিয়ন প্রজাকে শাসন করতেন। তার সময় মুঘল সাম্রাজ্যের বাৎসরিক করের পরিমাণ ছিল ৪৫০ মিলিয়ন ডলার। যা তাঁর সমসাময়িক চতুর্দশ লুইয়ের আমলে ফ্রান্সের বাৎসরিক কর এর চেয়ে ১০ গুণ বেশি ছিল।তাঁর শাসনামলে ভারত চীনকে ছাড়িয়ে পৃথিবীর সর্ববৃহৎ অর্থনীতি হিসেবে গড়ে উঠেছিল। যার পরিমাণ ছিল ৯০ বিলিয়ন ডলার, ১৭০০ সালে সমগ্র পৃথিবীর জিডিপি'র এক চতুর্থাংশ।
আকার ও আয়তনে সর্ববৃহৎ মুগল সাম্রাজ্য শাসনের জন্য আওরঙ্গজেবের প্রশংসা করা হয়। কিন্তু একই সঙ্গে তাঁর জীবদ্দশাতেই এ বিশাল সাম্রাজ্যের ক্রম অবক্ষয় শুরু হয়। তাঁর মৃত্যুর পর উত্তরাধিকার সংঘাত, সাম্রাজ্যের বিশালত্ব, মারাঠাদের সঙ্গে যুদ্ধে প্রচুর ক্ষয়-ক্ষতি এবং সাম্রাজ্যে অভিজাতবর্গ বা আমলাতন্ত্রের দুর্বলতা প্রভৃতি মুগল সাম্রাজ্যের ক্রম পতনের প্রধান কয়েকটি কারণ।
একজন ধর্মপ্রাণ সুন্নি মুসলমান হিসেবে সম্রাট আওরঙ্গজেব তাঁর শাসনকার্য পরিচালনায় কুরআন-এর নীতিকে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করেন।
আওরঙ্গজেব একজন হাফিজ ছিলেন এবং সম্রাট হওয়া সত্ত্বেও তিনি সরল, অনাড়ম্বর ও একজন সাধারণ ধার্মিকের মতো জীবন অতিবাহিত করেন।তিনি টুপি এবং নিজের হাতের লিখা কুরআন বিক্রি করতেন আর রাজ্যের সম্পদ স্পর্শ করতেন না
আওরঙ্গজেব রাজদরবারে গান-বাজনা নিষিদ্ধ করেন এবং রাজকীয় অনুষ্ঠানাদিতে জাঁকজমক পরিহার করেন। সম্রাট আওরঙ্গজেব মুসলিম ধর্মতত্ত্বে গভীর উৎসাহী ছিলেন। তাঁর উদ্যোগে আইন সংক্রান্ত নিয়ম-নীতিসমূহের এক ব্যাপক সংকলন ফতোয়া-ই-আলমগীরী প্রনীত করা হয়।
১৬৫৮ খ্রিষ্টাব্দ থেকে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ৪৯ বছর মুঘল সাম্রাজ্যের শাসক ছিলেন প্রকৃতপক্ষে তিনি প্রায় সম্পূর্ণ ভারতীয় উপমহাদেশ শাসন করেছিলেন। তাঁর মৃত্যুর পর ভারতের মধ্যযুগীয় যুগ শেষ হয় এবং ইউরোপীয় আক্রমণ শুরু হয়। আওরঙ্গজেবকে প্রায়ই আমিরুল মুমিনিন (বিশ্বাসীদের নেতা) ডাকা হয় এবং উমর ইবনুল খাত্তাব ও সালাহউদ্দিন ইউসুফ ইবনে আইয়ুবের মত বিশিষ্ট খলিফাদের সাথে তুলনা করা হয়।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

যে গাছ ইহুদিদের আশ্রয় দেবে অর্থাৎ ইহুদিদের বন্ধু গাছ

মো.আবু রায়হান:  কিয়ামত সংঘটিত হবার  পূর্বে হযরত ঈসা (আ.) এর সঙ্গে দাজ্জালের জেরুজালেমে যুদ্ধ হবে। সেই যুদ্ধে ইহুদিরা দাজ্জালের পক্ষাবলম্বন করবে। হযরত ঈসা (আ.) দাজ্জালকে হত্যা করবেন।এদিকে  ইহুদিরা প্রাণ ভয়ে পালাতে চেষ্টা করবে।  আশেপাশের গাছ ও পাথর/ দেয়ালে আশ্রয় নেবে। সেদিন গারকাদ নামক একটি গাছ ইহুদিদের আশ্রয় দেবে। গারকাদ ইহুদীবান্ধব গাছ।গারকাদ একটি আরবি শব্দ। এর অর্থ হল কাটাওয়ালা ঝোঁপ।গারকাদ এর ইংরেজী প্রতিশব্দ Boxthorn। Boxএর অর্থ সবুজ ঝোঁপ এবং thorn এর অর্থ কাঁটা। এ ধরনের গাছ বক্সথর্ন হিসেবেই পরিচিত। এই গাছ চেরি গাছের মতো এবং চেরি ফলের মতো লাল ফলে গাছটি শোভিত থাকে।  ইসরায়েলের সর্বত্র বিশেষত অধিকৃত গাজা ভূখন্ডে গারকাদ গাছ ব্যাপকহারে  দেখতে পাওয়া যায়।ইহুদিরা কোথাও পালাবার স্থান পাবে না। গাছের আড়ালে পালানোর চেষ্টা করলে গাছ বলবে, হে মুসলিম! আসো, আমার পিছনে একজন ইহুদী লুকিয়ে আছে। আসো এবং তাকে হত্যা কর। পাথর বা দেয়ালের পিছনে পলায়ন করলে পাথর বা দেয়াল বলবে, হে মুসলিম! আমার পিছনে একজন ইহুদী লুকিয়ে আছে, আসো! তাকে হত্যা কর। তবে গারকাদ নামক গাছ ইহুদিদেরকে ...

খন্দক যুদ্ধ কারণ ও ফলাফল

#মো. আবু রায়হান ইসলামের যুদ্ধগুলোর মধ্যে খন্দকের যুদ্ধ অন্যতম। ৫ হিজরির শাওয়াল মাসে খন্দকের যুদ্ধ সংঘটিত হয়। নবীজি (সা.) মদিনায় আসার আগে সেখানে বড় দুটি ইহুদি সম্প্রদায় বসবাস করত। বনু নাজির ও বনু কোরায়জা। ইহুদিদের প্ররোচনায় কুরাইশ ও অন্যান্য গোত্র মদিনার মুসলমানদের সঙ্গে যুদ্ধ করার প্রস্তুতি গ্রহণ করে। খন্দকের এই যুদ্ধ ছিল মদিনার ওপরে গোটা আরব সম্প্রদায়ের এক সর্বব্যাপী হামলা এবং কষ্টকর অবরোধের এক দুঃসহ অভিজ্ঞতা। এসময় ২৭দিন ধরে আরব ও ইহুদি গোত্রগুলি মদিনা অবরোধ করে রাখে। পারস্য থেকে আগত সাহাবি সালমান ফারসির পরামর্শে হযরত মুহাম্মদ (স:) মদিনার চারপাশে পরিখা খননের নির্দেশ দেন। প্রাকৃতিকভাবে মদিনাতে যে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ছিল তার সাথে এই ব্যবস্থা যুক্ত হয়ে আক্রমণ কারীদেরকে নিষ্ক্রিয় করে ফেলে। জোটবাহিনী মুসলিমদের মিত্র মদিনার ইহুদি বনু কোরায়জা গোত্রকে নিজেদের পক্ষে আনে যাতে তারা দক্ষিণ দিক থেকে শহর আক্রমণ করে। কিন্তু মুসলিমদের তৎপরতার ফলে তাদের জোট ভেঙে যায়। মুসলিমদের সুসংগঠিত অবস্থা, জোটবাহিনীর আত্মবিশ্বাস হ্রাস ও খারাপ আবহাওয়ার কারণে শেষপর্যন্ত আক্রমণ ব্যর্থ হয়।এই যুদ্ধে জয়ের ফলে ইসল...

রক্তপাতহীন মক্কা বিজয়ের দিন আজ

মো.আবু রায়হানঃ আজ ২০ রমজান ঐতিহাসিক মক্কা বিজয়ের ১৪৩৩ তম বার্ষিকী।আজ থেকে ১৪৩৩ বছর আগে হিজরতের ৮ম বছরে ২০ রমজান তথা ৬৩০ খৃস্টাব্দে রাসুল (সা.) মক্কা বিজয় করেন। ইতিহাসে এই ঘটনা মক্কা বিজয় বা ফতেহ মক্কা নামে খ্যাত।২০ রমজান শুধু মক্কা বিজয়ই হয়নি বরং প্রিয় নবি স্বমহিমায় নিজ জন্মভূমিতে ফিরে এসেছিলেন।তাই ২০ রমজান ইসলামের ইতিহাসে অত্যন্ত তাৎপর্যবহ ঘটনার সাক্ষী হয়ে আছে।শুধু ইসলামের ইতিহাসে নয়, বিশ্ব ইতিহাসে অনন্য সাধারণ বৈশিষ্ট্য ও মর্যাদার অধিকারী হলো মক্কা বিজয়ের এ ঘটনা। পৃথিবীর আরম্ভ থেকে আজ পর্যন্ত যত যুদ্ধ ,বিজয় অভিযান, হয়েছে এসব যুদ্ধ ও অভিযানে একদল বিজয়ী হয়েছে আরেক দল পরাজয়কে বরণ করেছে। এসব যুদ্ধ পরিচালনা করেছেন দিগ্বিজয়ী ইতিহাসের মহানায়কেরা। তাদের মধ্যে হিটলার,আলেকজেন্ডার,আর নেপোলিয়ান বেনাপোর্টের বিজয় অভিযানগুলো ছিল রক্তপাতের ইতিহাস,মানুষের রক্তে হাত রঞ্জিত হবার ইতিহাস।একমাত্র ব্যতিক্রম ছিল হযরত মুহাম্মাদ (সা.) এর রক্তপাতহীন মক্কা বিজয়। ঐতিহাসিকদের মতে মক্কা বিজয় ইসলামের ইতিহাসে সর্বশ্রেষ্ঠ বিজয় যদিও আল কুরআনে হুদাইবি য়ার সন্ধিকেই ফাতহুম মুবিন বা প্রকাশ্য বিজয় বলে উল্লেখ করা হয়েছ...