রাসুলুল্লাহর (সা.) তায়েফের দিনগুলো
সহিহ বুখারিতে বর্ণিত, আয়েশা (রা.) রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে জিজ্ঞাসা করেন, উহুদের চেয়ে কঠিন কোনো দিন কি আপনার জীবনে এসেছে? রাসুলুল্লাহ (সা.) তখন তায়েফের দিনগুলোর কথা উল্লেখ করেন। (সিরাতে মোস্তফা : ১/২৭১ ও ২৭৫)
চাচা আবু তালিবের মৃত্যুর পর মহানবী (সা.)-এর ওপর কোরাইশের অত্যাচার বৃদ্ধি পায়। ফলে তিনি মক্কার বাইরে ইসলাম ও মুসলমানের নিরাপদ কেন্দ্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে মক্কা থেকে ৭৫ মাইল দূরে অবস্থিত নবুয়তের দশম বছর শাওয়াল মাসে তায়েফ গমন করেন। তাঁর সঙ্গে ছিলেন আজাদকৃত গোলাম ও পালকপুত্র জায়িদ ইবনে হারিসা (রা.)। তায়েফে ১০ দিন তিনি গোপনে, প্রকাশ্যে, একাকী ও সামগ্রিকভাবে দাওয়াত দেন। তিনি বাজারে দাঁড়িয়ে কোরআন তিলাওয়াত করেন এবং ইসলাম ও মুসলমানের পক্ষে তাদের সাহায্য-সহযোগিতা কামনা করেন। (মুসলিম উম্মাহর ইতিহাস : ১/৩৬২)
তায়েফের অদূরে বনি সাকিফ গোত্রে মহানবী (সা.) দুধ পান করেন এবং তায়েফ সর্দারদের একজন কোরাইশ গোত্রে বিয়ে করেছিল। দুধের আত্মীয় ও গোত্রীয় সম্পর্কের কারণে মহানবী (সা.) তাদের থেকে সদাচার প্রত্যাশা করেছিলেন। কিন্তু তারা চূড়ান্ত পর্যায়ের দুর্ব্যবহার ও অত্যাচার করেছিল।তারা মহানবী (সা.)-কে তায়েফ ত্যাগের নির্দেশ দেয় এবং ফেরার সময় উচ্ছৃঙ্খল বালকদের লেলিয়ে দেয়। তারা নবীজি (সা.)-এর দিকে পাথর নিক্ষেপ করে এবং গালাগাল করে। শরীরের রক্তে তার জুতা ভরে যায়। এ সময় জায়িদ (রা.) অসামান্য আত্মত্যাগ স্বীকার করেন। তিনি মহানবী (সা.)-এর জন্য ঢালস্বরূপ হয়ে যান। যে দিক থেকে পাথর ছোড়া হচ্ছিল তিনি সেদিক থেকে তাঁকে আগলে রাখছিলেন। ফলে তার মাথার কয়েক জায়গায় কেটে যায়। কষ্টে রাসুলুলুল্লাহ (সা.) মাটিতে বসে পড়লে হতভাগারা তাঁর হাত ধরে উঠিয়ে দিত এবং সামনে চলতে বলত। আর সামনে পা বাড়ালেই পাথর নিক্ষেপ করত। (আর-রাহিকুল মাখতুম, পৃষ্ঠা ১৪৩; মুসলিম উম্মাহর ইতিহাস : ১/৩৬২)
হাজারও ব্যথা বেদনার পরে
ফিরে আসনি তুমি আপন ঘরে
দ্বীনের আলো তুমি ছড়িয়ে দিতে
চলে গেলে মদীনায় মক্কা ছেড়ে
হে রাসূল....
তোমাকে ভুলি আমি কেমন করে ।
খেয়ে না খেয়ে দ্বীন প্রচারের কাজে
নিজেকে দিয়েছো বিলিয়ে
তায়েফের কাফেরেরা চিনলো না এ আলো
দুষ্টু ছেলেদের পিছু দিল লেলিয়ে
পাথরের আঘাতে ক্ষতবিক্ষত হয়ে
সারা শরীর থেকে রক্ত ঝরে।
এ সময় আল্লাহ তায়েফের পাহাড়ের ফেরেশতাদের পাঠান। তারা মহানবী (সা.)-এর কাছে দুই পাহাড়ের মধ্যে অবস্থিত তায়েফের অধিবাসীদের পাহাড়ে পিষে ফেলার অনুমতি চাইল। কিন্তু মহানবী (সা.) তা দিতে অস্বীকার করেন এবং বলেন, আমি আশা করি, তাদের বংশধরদের মধ্যে এমন লোক জন্ম নেবে যারা এক আল্লাহর ইবাদত করবে এবং তাঁর সঙ্গে কাউকে শরিক করবে না। (নবীয়ে রহমত, পৃষ্ঠা ১৫৪)
হযরত আয়েশা (রা) একদিন লক্ষ করলেন আমাদের প্রিয় নবীর পূনির্মার মতো চেহারায় মাঝে হালকা হালকা কালো গর্তোর মতো দাগ দেখা যায়! তখন মা আয়েশা সিদ্দিকা নবীজিকে বললেন ইয়া রাসুল আল্লাহ এগুলো কি বসন্তের দাগ যদি বসন্তের দাগ হয়ে থাকে আপনি আল্লাহর কাছে দোয়া করুন আপনার এগুলো পরিষ্কার হয়ে যাক! তখন আমাদের দয়ার নবী মায়ার নবী চোখের পানি ফেলে বললেন হে আয়েশা এই দাগের কথা জানতে চেয়ো না এ দাগের কথা মনে হলে আমার কলিজা মানে না এরে আয়েশা " শুনো এগুলো বসন্তের দাগ নয় এগুলো হচ্ছে তায়েফের জমিনে যুবকদের পাথরের আঘাতের দাগ আমি যখন ইসলামের দাওয়াত দিতে গিয়েছিলাম তখন যুবকেরা আমাকে এক বার নয় দুই বার নয় তিন-তিনবার পাথরের আঘাত করে বেহুশ করে দিয়েছিল এই দাগ সেই তায়েফের জমিনের পাথরের আঘাতে দাগ, তখন মা আয়েশা বললো হে নবী আপনি আল্লাহ'র কাছে দোয়া করুন তাহলে নিশ্চয়ই এই দাগ গুলো পরিষ্কার হয়ে যাবে " তখন আমাদের প্রিয় নবিজী আরো কাঁদতে লাগলে বললো
আয়েশা না না এই দাগ আমি মুছবো না কাল যখন হাশরের মাঠ কায়েম হয়ে যাবে
আমার গুনাগার উম্মত গুলো নবী কই নবী
কই বলে খুঁজবে!! তখন আমি এই একেকটা দাগের উছিলায় আমার কোটি কোটি উম্মতকে পুলসিরাত পার করে দিবো।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন