আঙ্কারার যুদ্ধ ১৪০২

 



আঙ্কারার যুদ্ধ ১৪০২ সালের ২৮ জুলাই সংঘটিত হয়।আঙ্কারার নিকটে চুবুকের যুদ্ধক্ষেত্রে উসমানীয় সাম্রাজ্য ও তৈমুরি সাম্রাজ্যের মধ্যে এই যুদ্ধ হয়। তৈমুরিরা এই যুদ্ধে জয়ী হয়। ফলশ্রুতিতে উসমানীয় সাম্রাজ্যে গৃহযুদ্ধ দেখা দেয়। যুদ্ধের তিন বছর পর তৈমুর বেগ মারা যান। এরপর তৈমুরি সাম্রাজ্যের অবনতি হতে থাকে এবং উসমানীয় সাম্রাজ্য ক্রমান্বয়ে শক্তিশালী হতে থাকে।

তৈমুর লং ছিলেন তিমুরীয় সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা। ১৩৭০ থেকে ১৪০৫ সাল পর্যন্ত পঁয়ত্রিশ বছর ছিলো তার রাজত্ব। আজকের দিনের তুরষ্ক, সিরিয়া, ইরাক, কুয়েত, ইরান থেকে মধ্য এশিয়ার অধিকাংশ অংশ (কাজাখস্তান, আফগানিস্তান, রাশিয়া, তুর্কমেনিস্তান, উজবেকিস্তান, কিরগিজস্তান, পাকিস্তান, ভারত, এমনকি চীনের কাশগর পর্যন্ত) তার সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত ছিলো। তার সাম্রাজ্যের সীমানা উসমানীয় সাম্রাজ্য পর্যন্ত পৌছায়। এই দুই শক্তির মধ্যে দ্রুত প্রতিদ্বন্দ্বিতা দেখা দেয়। তৈমুরের প্রতি অনুগত একটি আনাতোলীয় বেইলিকের কাছে উসমানীয় সুলতান বায়েজিদ কর দাবি করেছিলেন।তৈমুর একে নিজের প্রতি অপমান হিসেবে নেন এবং ১৪০০ সালে উসমানীয় শহর সেবাস্তে হামলা করেন।১৪০২ সালে উসমানীয়রা ইউরোপে অভিযান চালায়। তৈমুর এই সুযোগকে কাজে লাগাতে তৎপর হন। তৈমুরের হামলার ফলে বায়েজিদ ইউরোপ থেকে ফিরে এসে তৈমুরের মুখোমুখি হন। তৈমুর খুব দ্রুত আনাতোলিয়ার মধ্য দিয়ে অগ্রসর হচ্ছিলেন এবং উসমানীয় শহরগুলিতে হামলা চালান। সংঘর্ষের পূর্বে তৈমুর ও বায়েজিদের মধ্যে অনেক বছর উত্তপ্ত পত্রবিনিময় হয়েছিল।
দুই পক্ষের বাহিনীর প্রকৃত সংখ্যা জানা যায় না। তৈমুরের এশিয়া মাইনরে হামলার সময় তার বাহিনী পদাতিকবিহীন এবং সকলেই অশ্বারোহী। ফলে তিনি দ্রুত অগ্রসর হতে পেরেছিলেন। তবে পরবর্তীতে বায়েজিদের বেশ কিছু মিত্র তৈমুরের সাথে যোগ দেয়। ১৮৮০ সালে প্রকাশিত "টার্কি ওল্ড এন্ড নিউ: হিস্টিকাল, জিওগ্রাফিকাল এন্ড স্ট্যাটিস্টিকাল" এ সাদারল্যান্ড মেনজিস বলেছেন যে দুই বাহিনীতে প্রায় ১০ লক্ষ সৈনিক ছিল।পিটার ফ্রেডেটের মতে তৈমুর ও বায়েজিদের দলে যথাক্রমে ৮,০০,০০০ ও ৪,০০,০০০ সৈনিক ছিল।রবার্ট হেনলোপেন লেবারটনের মতে তৈমুরের বাহিনীতে ৬,০০,০০০ ও বায়েজিদের বাহিনীতে ১,২০,০০০ সৈনিক ছিল।
এই যুদ্ধ উসমানীয়দের জন্য বিপর্যয় ডেকে আনে। এর ফলশ্রুতিতে বায়েজিদের ছেলেদের মধ্যে গৃহযুদ্ধ দেখা দেয়। এরপর ১১ বছর এই গৃহযুদ্ধ চলমান ছিল। বায়েজিদ ছিলেন কোনো যুদ্ধে বন্দী একমাত্র উসমানীয় সুলতান। বন্দী অবস্থায় ১৪০৩ সালের মার্চে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।ছেলে মুস্তফা সেলেবিও সেদিন বন্দী হয়েছিলেন। তাকে ১৪০৫ সাল পর্যন্ত সমরকন্দে আটকে রাখা হয়েছিলো। ফলে উসমানীয় ইতিহাসেও এই যুদ্ধের গুরুত্ব ছিল।ধারণা করা হয় এ যুদ্ধের সময় কয়েক ঘণ্টার মধ্যে ৫০,০০০ তুর্কি নিহত হয়েছিল।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

যে গাছ ইহুদিদের আশ্রয় দেবে অর্থাৎ ইহুদিদের বন্ধু গাছ

রক্তপাতহীন মক্কা বিজয়ের দিন আজ

খন্দক যুদ্ধ কারণ ও ফলাফল