সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

পিতার প্রতি কর্তব্য

 অনেকের মিষ্টি ভালো লাগে না। কিন্তু মিষ্টির রস ভালো লাগে। সেক্ষেত্রে অনেকের বাপ মায়ের খেদমত করতে ভালো লাগে না। কিন্তু বাপ মায়ের জায়গা জমি সম্পত্তি ভালো লাগে।এগুলো হচ্ছে নাদান কুলাঙ্গার সন্তান।

আরবে এক সময় এক সৎ লোক বাস করতেন। তার চার জন ছেলে ছিল। যখন তিনি বার্ধক্যে উপনীত হ’লেন এবং মৃত্যু শয্যায় শায়িত হ’লেন, তখন তার ছোট ছেলে স্বীয় ভাইদেরকে বলল, তোমরা পিতার খেদমত কর এবং তার অতিরিক্ত সম্পদ গ্রহণ করা থেকে বিরত থাক। অথবা তোমরা আমাকে তার খেদমত করার সুযোগ দাও। আমি তার খেদমতের বিনিময়ে বেশী সম্পদ গ্রহণ থেকে বিরত থাকব।
অন্যান্য ভাইদের জন্য এটা ছিল সুযোগ। কারণ খেদমত না করেই বাবার সম্পদ পেয়ে যাবে। এমনকি তাদের ছোট ভাই পিতার সম্পদ থেকে খেদমতের বিনিময়ে কোন কিছু নিবে না। তাই তারা বলল, বরং তুমি পিতার খেদমত কর এবং তার সম্পদ থেকে বেশী কিছু গ্রহণ থেকে বিরত থাক। এতে আমাদের কোন আপত্তি নেই।
ছোট ভাই পিতার খেদমত করতে থাকল। লোকটি খুশি হয়ে একদিন আল্লাহর কাছে হাত তুলে ছোট ছেলের জন্য দো‘আ করে বললেন, হে আল্লাহ! আমার ছেলের সম্পদে বরকত দিয়ো। আল্লাহর ফায়ছালা অনুযায়ী তিনি একদিন মৃত্যুবরণ করলেন। ওয়াদা মাফিক ছোট ভাই সম্পদের অতিরিক্ত অংশ গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকল। এদিকে আল্লাহ তা‘আলা তাকে পিতার খেদমতের প্রতিফল এভাবে দিলেন যে, সে একদা স্বপ্নে দেখল, কেউ যেন তাকে বলছে, অমুক জায়গায় যাও সেখানে তুমি একশ’ দীনার পাবে। সে বলল, এতে কি বরকত আছে? তাকে বলা হ’ল, না।
সকালে সে তার স্ত্রীকে স্বপ্নের কথা বলল। স্ত্রী বলল, যাও একশ’ দীনার নিয়ে আস, তা দিয়ে আমরা কাপড় কিনে সেলাই করব এবং বাজারে বিক্রি করে অর্থ উপার্জন করে তা দিয়ে সুন্দরভাবে জীবন যাপন করতে পারব। কিন্তু সে অস্বীকার করল।
পরের রাতে আবার সে স্বপ্নে দেখল। কোন ব্যক্তি যেন তাকে বলছে, অমুক জায়গায় যাও তুমি সেখানে দশ দীনার পাবে। সে বলল, এতে কি বরকত আছে? তাকে বলা হ’ল, না।
সকালে সে তার স্ত্রীকে স্বপ্নের কথা বলল। তার স্ত্রী তাকে জোর দিয়ে বলল, যাও এবং তা থেকে উপকৃত হও। কিন্তু সে অস্বীকার করল। কেননা এতে বরকত নেই।
কিছুদিন পর সে আবার স্বপ্নে দেখল, কেউ যেন তাকে বলছে, অমুক স্থানে যাও, সেখানে তুমি এক দীনার পাবে। সে বলল, এতে কি বরকত আছে? তাকে বলা হ’ল, হ্যাঁ আছে।
সে সকালে সেখানে গেল এবং সত্যিই এক দীনার পেল। ফিরে আসার সময় সে বাজারে প্রবেশ করল। দেখল এক ব্যক্তি মাছ বিক্রি করছে। সে মাছের মূল্য জিজ্ঞেস করল এবং বিক্রেতার নিকট থেকে এক দীনারে দু’টি মাছ ক্রয় করে বাড়ি আসল। মাছ দু’টি কেটে-কুটে পরিস্কার করার সময় তাদের পেটে একটি করে মোতি পেল। যা অতি সুন্দর ও মূল্যবান ছিল। এত সুন্দর মোতি কম লোকেই দেখেছে। সে মোতিটি অনেক দামে বিক্রি করল। প্রাপ্ত অর্থ দিয়ে সে ব্যবসা-বাণিজ্য করে স্বাবলম্বী হ’ল। সে তার পিতার খেদমতের বদলা পেয়ে গেল। সে পিতার রেখে যাওয়া সম্পদে প্রাপ্য অংশের অতিরিক্ত গ্রহণ করেনি। কিন্তু আল্লাহ তার জন্য রিযিকের দরজাসমূহ এভাবে খুলে দিলেন।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

যে গাছ ইহুদিদের আশ্রয় দেবে অর্থাৎ ইহুদিদের বন্ধু গাছ

মো.আবু রায়হান:  কিয়ামত সংঘটিত হবার  পূর্বে হযরত ঈসা (আ.) এর সঙ্গে দাজ্জালের জেরুজালেমে যুদ্ধ হবে। সেই যুদ্ধে ইহুদিরা দাজ্জালের পক্ষাবলম্বন করবে। হযরত ঈসা (আ.) দাজ্জালকে হত্যা করবেন।এদিকে  ইহুদিরা প্রাণ ভয়ে পালাতে চেষ্টা করবে।  আশেপাশের গাছ ও পাথর/ দেয়ালে আশ্রয় নেবে। সেদিন গারকাদ নামক একটি গাছ ইহুদিদের আশ্রয় দেবে। গারকাদ ইহুদীবান্ধব গাছ।গারকাদ একটি আরবি শব্দ। এর অর্থ হল কাটাওয়ালা ঝোঁপ।গারকাদ এর ইংরেজী প্রতিশব্দ Boxthorn। Boxএর অর্থ সবুজ ঝোঁপ এবং thorn এর অর্থ কাঁটা। এ ধরনের গাছ বক্সথর্ন হিসেবেই পরিচিত। এই গাছ চেরি গাছের মতো এবং চেরি ফলের মতো লাল ফলে গাছটি শোভিত থাকে।  ইসরায়েলের সর্বত্র বিশেষত অধিকৃত গাজা ভূখন্ডে গারকাদ গাছ ব্যাপকহারে  দেখতে পাওয়া যায়।ইহুদিরা কোথাও পালাবার স্থান পাবে না। গাছের আড়ালে পালানোর চেষ্টা করলে গাছ বলবে, হে মুসলিম! আসো, আমার পিছনে একজন ইহুদী লুকিয়ে আছে। আসো এবং তাকে হত্যা কর। পাথর বা দেয়ালের পিছনে পলায়ন করলে পাথর বা দেয়াল বলবে, হে মুসলিম! আমার পিছনে একজন ইহুদী লুকিয়ে আছে, আসো! তাকে হত্যা কর। তবে গারকাদ নামক গাছ ইহুদিদেরকে ...

খন্দক যুদ্ধ কারণ ও ফলাফল

#মো. আবু রায়হান ইসলামের যুদ্ধগুলোর মধ্যে খন্দকের যুদ্ধ অন্যতম। ৫ হিজরির শাওয়াল মাসে খন্দকের যুদ্ধ সংঘটিত হয়। নবীজি (সা.) মদিনায় আসার আগে সেখানে বড় দুটি ইহুদি সম্প্রদায় বসবাস করত। বনু নাজির ও বনু কোরায়জা। ইহুদিদের প্ররোচনায় কুরাইশ ও অন্যান্য গোত্র মদিনার মুসলমানদের সঙ্গে যুদ্ধ করার প্রস্তুতি গ্রহণ করে। খন্দকের এই যুদ্ধ ছিল মদিনার ওপরে গোটা আরব সম্প্রদায়ের এক সর্বব্যাপী হামলা এবং কষ্টকর অবরোধের এক দুঃসহ অভিজ্ঞতা। এসময় ২৭দিন ধরে আরব ও ইহুদি গোত্রগুলি মদিনা অবরোধ করে রাখে। পারস্য থেকে আগত সাহাবি সালমান ফারসির পরামর্শে হযরত মুহাম্মদ (স:) মদিনার চারপাশে পরিখা খননের নির্দেশ দেন। প্রাকৃতিকভাবে মদিনাতে যে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ছিল তার সাথে এই ব্যবস্থা যুক্ত হয়ে আক্রমণ কারীদেরকে নিষ্ক্রিয় করে ফেলে। জোটবাহিনী মুসলিমদের মিত্র মদিনার ইহুদি বনু কোরায়জা গোত্রকে নিজেদের পক্ষে আনে যাতে তারা দক্ষিণ দিক থেকে শহর আক্রমণ করে। কিন্তু মুসলিমদের তৎপরতার ফলে তাদের জোট ভেঙে যায়। মুসলিমদের সুসংগঠিত অবস্থা, জোটবাহিনীর আত্মবিশ্বাস হ্রাস ও খারাপ আবহাওয়ার কারণে শেষপর্যন্ত আক্রমণ ব্যর্থ হয়।এই যুদ্ধে জয়ের ফলে ইসল...

উটের যুদ্ধ ইসলামের প্রথম ভাতৃঘাতি যুদ্ধ

#মো.আবু রায়হান উটের যুদ্ধ বা উষ্ট্রের যুদ্ধ বা জামালের যুদ্ধ ( Battle of the Camel) ৬৫৬ খ্রিষ্টাব্দের শেষের দিকে ইরাকের বসরায় সংঘটিত হয়। এটি ইসলামের ইতিহাসের প্রথম গৃহযুদ্ধ।এই যুদ্ধ ছিল ইসলামের চতুর্থ খলিফা হযরত আলী এর বিরুদ্ধে হযরত তালহা-জুবায়ের ও আয়েশা (রা)সম্মলিত যুদ্ধ। পটভূমি হযরত ওসমান (রা) এর বিভিন্ন প্রদেশে প্রাদেশিক শাসনকর্তা নিয়োগ নিয়ে একদল তার বিরুদ্ধে অভিযোগ টেনে বিদ্রোহ শুরু করে।হযরত ওসমান বিভিন্নভাবে তাদের শান্ত করার চেষ্টা করতে থাকেন। তাদের কথামত মিশরের গভর্নরকে প্রতিস্থাপন করে আবু বকরের ছেলে মুহাম্মদ ইবনে আবু বকর কে নিয়োগ করলেও বিদ্রোহীরা শান্ত হয় নি। তারা নানাভাবে অভিযোগ টেনে এনে ওসমান (রা) এর অপসারণের দাবী করতে থাকে। ওসমান সবকিছু মীমাংসার আশ্বাস দিলেও তারা ৬৫৬ সালের ১৭ জুন তারা বাড়ি অবরুদ্ধ করে এবং এক পর্যায়ে তারা তার কক্ষে প্রবেশ করে কুরআন তেলাওয়াত করা অবস্থায় হত্যা করে।ওসমান (রা.)-এর হত্যাকাণ্ডের পর আলী (রা.) খলিফা হন। কিন্তু দুঃখজনকভাবে ক্ষমতা গ্রহণ করে যখনই আলী (রা.) ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার কাজে হাত দেন তখনই ধর্মীয় ও রাজনৈতিক দূরদর্শিতার অভাবের কার...