সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

ইসলামী স্থাপত্য শিল্পে কীর্তিমান পুরুষ মিমার সিনান




মধ্যযুগ ছিলো জ্ঞান-বিজ্ঞানে মুসলিম উম্মাহর স্বর্ণযুগ। ইতিহাসের এক সোনালী অধ্যায়। জ্ঞান-বিজ্ঞান ও শিল্প-সাহিত্যের প্রতিটি শাখায় মুসলমানরা বিরল প্রতিভার স্বাক্ষর রেখেছিলো। ইতিহাসের পাতায় অমর হয়ে আছেন এমন অসংখ্য মনীষী। তাঁদের উদ্ভাবন ও আবিষ্কার কালের ভ্রুকুটি উপেক্ষা করে পৃথিবীর দিকে দিকে আজও সগৌরবে দাঁড়িয়ে আছে।জেরুজালেমের ডোম অফ রক্‌, হিন্দুস্তানের আগ্রার তাজমহল, আল-আন্দালুস (মুসলিম স্পেন) এর গ্রানাদায় আল-হামরা এবং ওসমানী সাম্রাজ্যের ইস্তানবুলে সুলতান আহমেদ জামে মসজিদ (Blue Mosque) অন্যতম। মধ্যযুগে ইসলামী স্থাপত্য শিল্পে এমনই এক কীর্তিমান পুরুষ হলেন- মিমার সিনান আগা।
পৃথিবীটা যদি সম্পূর্ণ একটি দেশ হিসেবে ধরা হয়, তবে সে দেশের রাজধানী হবে ইস্তানবুল”। বলেছিলেন নেপোলিয়ন বোনাপার্ট। এই ইস্তানবুলেই জন্মেছিলেন অটোমান সাম্রাজ্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ স্থাপত্যবিদ মিমার সিনান। মিমার সিনান সুলতান দ্বিতীয় বাইজিদ বিন মুহাম্মাদ আল-ফাতিহ্ -এর আমলে ৮-রজব-৮৯৫ হিজরীতে (মোতাবেক ১৫-৪-১৪৮৯ খৃস্টাব্দে) জন্মগ্রহণ করেন। তিনি স্থাপত্যশিল্প নিয়ে ব্যাপক পড়াশোনা করেন। পরবর্তীতে হয়ে উঠেন স্থাপত্যশিল্পের প্রাণ-পুরুষ। এখনো তাঁকে মনে করা হয়, স্থাপত্যবিদ্যা ও প্রকৌশলীর পথিকৃত। সুলতান সুলেমান শাসনামলে তিনি রাষ্ট্রের প্রধান স্থপতি হিসাবে নিয়োগ পান।
সুলতান সুলেমান, সম্রাট দ্বিতীয় সেলিম, তৃতীয় মুরাদের রাজদরবারের স্থাপত্যবিদ এবং পুরকৌশলী কোচা মিমার সিনান আগা। মৃত্যু পর্যন্ত একাধারে ৫০ বছর এ পদে বহাল ছিলেন। এক একটি উপাখ্যান ও রহস্য দিয়ে নির্মাণ করেন প্রতিটি স্থাপনা।
ঐতিহাসিক রেকর্ড অনুযায়ী, রাজকীয় উজির ইব্রাহীম পাশার অধীনে তিনি কাজ করেছিলেন এবং পাশার বিদ্যালয়ে শিক্ষানবিশ ছিলেন। প্রাথমিকভাবে সিনান ছুতারের কাজ শেখেন এবং গণিতশাস্ত্রে নিজের বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দেন। তবে পরবর্তীতে নিজের স্বপ্ন ও চাহিদা অনুযায়ী স্থাপত্যবিদদের অধীনে কাজ শেখা শুরু করেন।
১৫১২ সালে তাকে অটোমান সাম্রাজ্যের জন্য নিযুক্ত করা হয়। তৎকালীন কনস্টানটিনোপলে তাকে প্রশিক্ষণের জন্য পাঠানো হয় এবং জানিসারী বাহিনীতে যোগ দেন তিনি। সেখানেই ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত হন। এরপর সুলতানের জানিসারী বাহিনীতে নিয়োগ দেয়া হয় তাকে। এই বাহিনী সুলতানের দেহরক্ষী, প্রাসাদের দায়িত্বে নিয়োজিত থাকত। বলা হয়, ইউরোপের প্রথম আধুনিক রক্ষীবাহিনী হচ্ছে অটোমান সাম্রাজ্যের এই জানিসারীরা। খুব দ্রুতই কাজে নিজের পারঙ্গমতা প্রদর্শন করতে শুরু করেন সিনান। ধীরে ধীরে এই বাহিনীর কমান্ডার হন। ‘আগা’ খেতাবটি পেতে তাই বেশিদিন বেগ পেতে হয়নি সিনানের। জানিসারী বাহিনীতে থাকবার সময় নিজের প্রাযুক্তিক এবং প্রকৌশলী দক্ষতা দেখাতে শুরু করেন সিনান। কীভাবে দুর্গের রক্ষণাবেক্ষণের কাজ আরও মজবুতভাবে করা যায়, কীভাবে চারপাশে প্রাচীর আরও ভালোভাবে তুলে দেয়া যায়, তা নিয়ে কাজ করেছিলেন তিনি।
মিমার সিনানকে অটোমান সাম্রাজ্যের শ্রেষ্ঠ স্থাপত্যবিদ বলা হয়। তাকে তুলনা করা হয় পশ্চিমের মাইকেল এঞ্জেলোর সাথে। ইতিহাসের বিখ্যাত ও অর্থবহ কিছু ভবনের রুপকার ছিলেন সিনান।উসমানী খেলাফতের প্রসিদ্ধ অনেক স্থাপনাতেই মিমার সিনানের হাতের জাদুময়ী ছোঁয়া রয়েছে। এমনকি ভারতে মুসলিম শাসনের স্মৃতিবিজিড়িত ‘তাজমহলের’ নকশাতেও রয়েছে সিনানের প্রত্যক্ষ অবদান। তিনি আধুনিক যুগের পৃষ্ঠপোষকতা ছাড়াই তাঁর সময়ে বসফরাসের তলদেশ দিয়ে সুড়ঙ্গপথ নির্মানের কথা চিন্তা করেছিলেন। সেই যুগে তাঁর এমন কিছু উদ্ভাবন রয়েছে আধুনিক বিজ্ঞান আজও সেখানে পৌছতে পারেনি। তিনি তুরস্কে (ছোট-বড় মিলে) ১৩৬টি মসজিদ, ৫৭টি মাদরাসা, ১৭টি মক্তব, ২২টি (গম্বুজ বিশিষ্ট) বড় কবরস্থান, ৩টি চিকিৎসাকেন্দ্র, ৬টি ঝুলন্ত সেতু, ৯টি পানির বড় লাইন, ৮টি সেতু, ২০টি মেহমানখানা, ৩টি ব্যাংক, ১৮টি বিশ্রামাগার, ৩৫টি প্রাসাদ, ১৬টি লঙ্গরখানা, ৩টি বৃদ্ধাশ্রম, ৮টি গুদাম এবং ৪১টি হাম্মামসহ মোট ৪৪১টি স্থাপনা নির্মাণ করেছেন।
১৫৪৩ সালে সুলতান সুলেমানের এক ছেলে রাজপুত্র মেহমেদ ২১ বছর বয়সে গুটিবসন্তে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করলে, সুলতান তার সম্মানে ইস্তানবুলে স্থানীয় অধিবাসীদের জন্য বৃহৎ একটি মসজিদ নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেন। সিনানের জন্য এটি ছিলো বড় স্মরণীয় কোনও মসজিদ নির্মাণ করার প্রথম সুযোগ। পরবর্তী ৪ বছর ধরে সিনান ইস্তানবুল শহরের কেন্দ্রে এই শেহজাদে জামি (মসজিদ) তৈরি করেন। নির্মাণকাজ শেষ হলে মসজিদটি শহরের একটি প্রধান স্থাপনা এবং কেন্দ্রীয় মসজিদে পরিনত হয়। শেহজাদে জামি কেবল একটি মসজিদই ছিলোনা; পাশাপাশি এতে একটি ছিলো কমপ্লেক্স — যেখানে ছিলো একটি স্কুল, দরিদ্রদের জন্য একটি লঙ্গরখানা—যেখানে রান্নাবান্নার জন্য উৎকৃষ্ট সব আয়োজন ছিলো, ছিলো পথিকদের জন্য ঘুমানোর জায়গা এবং রাজপুত্র মেহমেদের কবরখানা। সুলতান সুলেয়মান সিনানের এই কাজে খুবই সন্তুষ্ট হলেও, সিনান একে নিজের সেরা কর্ম হিসেবে ভাবতে পারেননি। তিনি মনে করতেন যে এরচেয়েও উৎকৃষ্ট কিছু নির্মাণ করার ক্ষমতা তার আছে।
মিমার সিনানের অন্যতম উদ্ভাবন হলো- ওসমানি খেলাফতের সবচেয়ে বড় মসজিদ হিসাবে স্বীকৃত সুলায়মানিয়া মসজিদ। এটি স্থাপত্যশিল্পের বিচারে পৃথিবীর হাতে গোনা কয়েকটি মসজিদের একটি। মসজিদের মূল ছালাতক্ষটি দৈর্ঘ্যে ৬৯ মিটার এবং প্রস্থে ৬৩ মিটার। মসজিদে ২০-২৫ হাজার মুসল্লি একসঙ্গে নামাজ আদায় করতে পারে। সিনান কক্ষের আয়তন, ছাদের উচ্চতা, খুঁটিগুলোর দূরত্ব ও গম্বুজে এমন প্রকৌশল ব্যবহার করেছেন যেন খতীবের প্রতিটি কথা ‘লাউডস্পীকার ছাড়াই’ পুরো ছালাতকক্ষে সমান মাত্রায় শোনা যায়। মসজিদের চারটি উচু মিনার রয়েছে। প্রতিটি তিন স্তর বিশিষ্ট। আর এর গম্বুজগুলো ‘আয়াসোফিয়া’ থেকেও অনেক উচু।
উপরন্তু মুসলিম স্থপতি সিনান এ মসজিদে এমন প্রযুক্তি ব্যবহার করেছেন যা বড় বড় প্রাকৃতিক দুর্যোগগুলোকে প্রতিরোধ করবে। ভূমিকম্পে মসজিদ নৌকার মত দুলবে, কিন্তু কোন ক্ষতি হবে না। ইসলাম বিদ্বেষী প্রাচ্যবিদ বার্নাড লুইস অবশেষে বাধ্য হয়ে লিখেছেন, ‘জামে সুলায়মানিয়া হলো সিনানের সুন্দরতম স্থাপত্যকীর্তি এবং সকল ঐতিহাসিক একমত যে, তিনিই সর্বকালের সেরা স্থপতি।’
মিমার সিনানের প্রতিটি নির্মাণই এমন একেকটি উপাখ্যান ও রহস্যেঘেরা। তুরস্কের অসংখ্য মসজিদ-মাদরাসা আজও তাঁর স্মৃতি বহন করছে। মসজিদ-মাদরাসা ও ইসলামি স্থাপত্য-শিল্পের মধ্য দিয়ে ইতিহাসের পাতায় আজও অমর হয়ে আছেন মিমার সিনান ক্রন গুরলেট সিনানের স্থাপত্যশৈলীর প্রতি মুগ্ধতা প্রকাশ করে লিখেছেন, গম্বুজ নির্মাণের ক্ষেত্রে সিনান এমন নৈপুন্যতা প্রদর্শন করেছেন স্থাপত্যের ইতিহাসে যার কোন জুড়ি নেই। তিনি চৌকা, ছয়কোনী বা আটকোণী পিলার ভিত্তি প্রস্তর করেন যার উপর ভবনের ভেতরাংশ স্থাপন করে থাকেন। দূরত্ব থাকে অনেক। বিশাল বারান্দা থাকে। ভবন থাকে সুবিন্যস্ত ও সুসামঞ্জস্যপূর্ণ। প্রাসাদের ভেতরাংশের সবচে বেশী গুরুত্ব দিতেন। আর তাঁর হাতের ছোয়ায় বহিরাংশ হয়ে উঠত ঝলমলকপূর্ণ।১৫৫৭ সালে যখন মসজিদটির নির্মাণকাজ শেষ হয়, তখন এটি সত্যিকারের ‘মাস্টারপিস’ হিসেবেই বিবেচিত হয়। যা নির্মার্ণের পাঁচশত বছর পর ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ হিসেবে ঘোষণা দেয় ১৯৮৫ সালে।
১৫৬৬ সালে সুলেয়মানের মৃত্যুর পর তার পুত্র খলীফা দ্বিতীয় সেলিমও নিজের নামে একটি মসজিদ নির্মাণের পরিকল্পনা করেন। তবে এবার ইস্তানবুলে নয়; বরং ইস্তানবুল থেকে ২০০ কিলোমিটার দূরে Edirne শহরে এই মসজিদের নির্মাণের স্থান নির্ধারত হয়। এর নির্মাণকাজ শুরুর সময়ে সিনান সত্তরোর্ধ এক প্রৌঢ় হওয়া সত্ত্বেও, তিনি হাজিয়া সোফিয়ার শ্রেষ্ঠত্বকে পিছনে ফেলার জন্য লক্ষ্যে ছিলেন অটল। অবশেষে ১৫৭৪ সালে মসজিদটির নির্মাণকাজ সম্পন্ন করার মধ্য দিয়ে উনি এ লক্ষ্য অর্জনে সফল হন।
সিনান ১৫২১, ১৫২২ ও ১৫৩৪ সালে ওসমানী বাহিনীর হয়ে যুদ্ধ অংশগ্রহণ করে অসাধারণ সামরিক দক্ষতা ও সাহসিকতা প্রদর্শন করেন। কীর্তিমান খোদাভিরু এ স্থপতি ১২-জুমাদাল উলা-৯৮৬ সালে (মোতাবেক ১৭-জুলাই-১৫৮৮ খৃস্টাব্দ) ইন্তেকাল করেন। সুলায়মানিয়া মসজিদের লাগোয়া কবরস্থানে সুলতান সুলেমানের অদূরে তিনি চিরনিদ্রায় শায়িত রয়েছেন।
পরবর্তীতে তার শিষ্যগণ সমগ্র বিশ্বজুড়েই নির্মাণকাজের শ্রেষ্ঠত্ব ধরে রেখেছিলেন, যার অন্যতম উদাহরণ হলো ইস্তানবুলের সুলতান আহমেদ মসজিদ (Blue Mosque) এবং ভারতের আগ্রার তাজমহল।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

যে গাছ ইহুদিদের আশ্রয় দেবে অর্থাৎ ইহুদিদের বন্ধু গাছ

মো.আবু রায়হান:  কিয়ামত সংঘটিত হবার  পূর্বে হযরত ঈসা (আ.) এর সঙ্গে দাজ্জালের জেরুজালেমে যুদ্ধ হবে। সেই যুদ্ধে ইহুদিরা দাজ্জালের পক্ষাবলম্বন করবে। হযরত ঈসা (আ.) দাজ্জালকে হত্যা করবেন।এদিকে  ইহুদিরা প্রাণ ভয়ে পালাতে চেষ্টা করবে।  আশেপাশের গাছ ও পাথর/ দেয়ালে আশ্রয় নেবে। সেদিন গারকাদ নামক একটি গাছ ইহুদিদের আশ্রয় দেবে। গারকাদ ইহুদীবান্ধব গাছ।গারকাদ একটি আরবি শব্দ। এর অর্থ হল কাটাওয়ালা ঝোঁপ।গারকাদ এর ইংরেজী প্রতিশব্দ Boxthorn। Boxএর অর্থ সবুজ ঝোঁপ এবং thorn এর অর্থ কাঁটা। এ ধরনের গাছ বক্সথর্ন হিসেবেই পরিচিত। এই গাছ চেরি গাছের মতো এবং চেরি ফলের মতো লাল ফলে গাছটি শোভিত থাকে।  ইসরায়েলের সর্বত্র বিশেষত অধিকৃত গাজা ভূখন্ডে গারকাদ গাছ ব্যাপকহারে  দেখতে পাওয়া যায়।ইহুদিরা কোথাও পালাবার স্থান পাবে না। গাছের আড়ালে পালানোর চেষ্টা করলে গাছ বলবে, হে মুসলিম! আসো, আমার পিছনে একজন ইহুদী লুকিয়ে আছে। আসো এবং তাকে হত্যা কর। পাথর বা দেয়ালের পিছনে পলায়ন করলে পাথর বা দেয়াল বলবে, হে মুসলিম! আমার পিছনে একজন ইহুদী লুকিয়ে আছে, আসো! তাকে হত্যা কর। তবে গারকাদ নামক গাছ ইহুদিদেরকে ...

খন্দক যুদ্ধ কারণ ও ফলাফল

#মো. আবু রায়হান ইসলামের যুদ্ধগুলোর মধ্যে খন্দকের যুদ্ধ অন্যতম। ৫ হিজরির শাওয়াল মাসে খন্দকের যুদ্ধ সংঘটিত হয়। নবীজি (সা.) মদিনায় আসার আগে সেখানে বড় দুটি ইহুদি সম্প্রদায় বসবাস করত। বনু নাজির ও বনু কোরায়জা। ইহুদিদের প্ররোচনায় কুরাইশ ও অন্যান্য গোত্র মদিনার মুসলমানদের সঙ্গে যুদ্ধ করার প্রস্তুতি গ্রহণ করে। খন্দকের এই যুদ্ধ ছিল মদিনার ওপরে গোটা আরব সম্প্রদায়ের এক সর্বব্যাপী হামলা এবং কষ্টকর অবরোধের এক দুঃসহ অভিজ্ঞতা। এসময় ২৭দিন ধরে আরব ও ইহুদি গোত্রগুলি মদিনা অবরোধ করে রাখে। পারস্য থেকে আগত সাহাবি সালমান ফারসির পরামর্শে হযরত মুহাম্মদ (স:) মদিনার চারপাশে পরিখা খননের নির্দেশ দেন। প্রাকৃতিকভাবে মদিনাতে যে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ছিল তার সাথে এই ব্যবস্থা যুক্ত হয়ে আক্রমণ কারীদেরকে নিষ্ক্রিয় করে ফেলে। জোটবাহিনী মুসলিমদের মিত্র মদিনার ইহুদি বনু কোরায়জা গোত্রকে নিজেদের পক্ষে আনে যাতে তারা দক্ষিণ দিক থেকে শহর আক্রমণ করে। কিন্তু মুসলিমদের তৎপরতার ফলে তাদের জোট ভেঙে যায়। মুসলিমদের সুসংগঠিত অবস্থা, জোটবাহিনীর আত্মবিশ্বাস হ্রাস ও খারাপ আবহাওয়ার কারণে শেষপর্যন্ত আক্রমণ ব্যর্থ হয়।এই যুদ্ধে জয়ের ফলে ইসল...

উটের যুদ্ধ ইসলামের প্রথম ভাতৃঘাতি যুদ্ধ

#মো.আবু রায়হান উটের যুদ্ধ বা উষ্ট্রের যুদ্ধ বা জামালের যুদ্ধ ( Battle of the Camel) ৬৫৬ খ্রিষ্টাব্দের শেষের দিকে ইরাকের বসরায় সংঘটিত হয়। এটি ইসলামের ইতিহাসের প্রথম গৃহযুদ্ধ।এই যুদ্ধ ছিল ইসলামের চতুর্থ খলিফা হযরত আলী এর বিরুদ্ধে হযরত তালহা-জুবায়ের ও আয়েশা (রা)সম্মলিত যুদ্ধ। পটভূমি হযরত ওসমান (রা) এর বিভিন্ন প্রদেশে প্রাদেশিক শাসনকর্তা নিয়োগ নিয়ে একদল তার বিরুদ্ধে অভিযোগ টেনে বিদ্রোহ শুরু করে।হযরত ওসমান বিভিন্নভাবে তাদের শান্ত করার চেষ্টা করতে থাকেন। তাদের কথামত মিশরের গভর্নরকে প্রতিস্থাপন করে আবু বকরের ছেলে মুহাম্মদ ইবনে আবু বকর কে নিয়োগ করলেও বিদ্রোহীরা শান্ত হয় নি। তারা নানাভাবে অভিযোগ টেনে এনে ওসমান (রা) এর অপসারণের দাবী করতে থাকে। ওসমান সবকিছু মীমাংসার আশ্বাস দিলেও তারা ৬৫৬ সালের ১৭ জুন তারা বাড়ি অবরুদ্ধ করে এবং এক পর্যায়ে তারা তার কক্ষে প্রবেশ করে কুরআন তেলাওয়াত করা অবস্থায় হত্যা করে।ওসমান (রা.)-এর হত্যাকাণ্ডের পর আলী (রা.) খলিফা হন। কিন্তু দুঃখজনকভাবে ক্ষমতা গ্রহণ করে যখনই আলী (রা.) ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার কাজে হাত দেন তখনই ধর্মীয় ও রাজনৈতিক দূরদর্শিতার অভাবের কার...